এমিরেটস এয়ারলাইন্স সম্পর্কে চমকপ্রদ কিছু তথ্য

নিয়মিত বিমান ভ্রমণকারীদের কাছে এমিরেটস এয়ারলাইন্স খুব পরিচিত এক নাম। অনেকেই একে বিশ্বের সেরা বিমান সংস্থা বলে থাকেন। শুধু সেরাই নয় বিশ্বের অন্যতম বড় ফ্লিট রয়েছে এমিরেটসের। দুবাই ভিত্তিক এই বিমান সংস্থাটি উচ্চমানের সেবার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অসংখ্য জায়গাতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বর্তমানে তারা সারা বিশ্বের মোট ১৫২ টি গন্তব্যে নিয়মিত তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এমিরেটসের এই জনপ্রিয়তা থেকে তাদের সম্পর্কে বাড়তি কৌতূহল আছে অনেকের মনেই। এমিরেটস এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য থাকবে আজকের পোস্টে।

সবথেকে বড় ওয়াইড বডি ফ্লাইট অপারেটর

বিমানে কত যাত্রী নেয়া যাবে সেটি বোঝা যায় বিমানের পাশে কতটা জায়গা আছে তার উপর নির্ভর করে। আকার অনুসারে বিমানের নানা ধরনের ভাগ হয়ে থাকে। যেমন: ন্যারো বডি, ওয়াইড বডি ইত্যাদি। ওয়াইড বডি বিমান বড় হয়ে থাকে এবং যাত্রী নেয়ার ক্ষমতাও বেশি হয়ে থাকে। এমিরেটসকে বলা হয় ওয়াইড বডির সবথেকে বড় ফ্লাইট অপারেটর। কেননা এমিরেটসের ২৬২টি বিমানের একটিও ন্যারো বডি বিমান নয়।

মূলত এমিরেটসের ফ্লিটে এ৩৮০ মডেলের বিমান সবথেকে বেশি। এমিরেটস এ৩৮০ মডেলের সবথেকে বড় অপারেটর। এছাড়া বোয়িং ৭৭৭ মডেলেরও সবথেকে বড় অপারেটর তারা। অর্থাৎ এমিরেটস বিশ্বের সবথেকে বড় বিমানগুলোর ফ্লিট পরিচালনা করছে বর্তমানে। সংখ্যার দিক দিয়ে আমেরিকা, ডেল্টা, সাউথ ওয়েস্ট ইত্যাদি এয়ারলাইন্সের বিমান সংখ্যা বেশি হলেও তারা ছোট ন্যারো বডি বিমান পরিচালনা করে থাকে। আরবের সবথেকে বড় ফ্লাইট অপারেটরও তারা।

এমিরেটসের শুরু

এমিরেটসের শুরুর ইতিহাসটাও বেশ চমকপ্রদ। এমিরেটসের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানের সাথে মিলে। পাকিস্তান প্রথম নিজেদের দুটি বোয়িং ৭২৭ দিয়েছিল এমিরেটসের যাত্রা শুরুর জন্য। প্রথমে ১০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে শুরু হয়েছিল এমিরেটসের যাত্রা। এর মূল স্পন্সর ছিলো দুবাইয়ের রাজপরিবার। বর্তমানে এটি দুবাই সরকারের নিজস্ব ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব দুবাই -এর মালিকানাধীন রয়েছে। ১৯৮৫ সাল থেকেই তারা ঢাকাসহ করাচি, কলম্বো, আম্মান এবং কায়রোতে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। অর্থাৎ ঢাকা এমিরেটসের প্রথম রুটগুলোর একটি!

গালফ এয়ার তখন বড় একটি বিমান সংস্থা ছিলো। কিন্তু হঠাৎ তাদের ব্যবসায় ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত লাভ কমে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই এমিরেটস লন্ডন, সিঙ্গাপুর, ফ্রাঙ্কফুর্ট ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে ১৯৮৬ সালে। এরপর থেকেই তাদের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯১ সালের মধ্যেই গালফ যুদ্ধের ফলে আরবের বেশিরভাগ বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু এই সময়েও এমিরেটসের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ আসতে থাকে। ১৯৯৩ এর মধ্যে তারা ১০ মিলিয়নের প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

সবথেকে দীর্ঘ চারটি ফ্লাইট

২০২০ সালে এমিরেটস চালু করে পৃথিবীর সবথেকে দীর্ঘ সরাসরি কমার্শিয়াল ফ্লাইট। মোট ৪ টি ফ্লাইট দুবাই থেকে আমেরিকার স্যান ফ্রান্সিসকো, হিউস্টন, ডালাস এবং লস এঞ্জেলেসে নিয়মিত যাতায়াত করে সরাসরি। এই ফ্লাইটগুলো বিশ্বের সবথেকে দীর্ঘ ফ্লাইট। সপ্তাহে ৪ বার পাওয়া যায় এই ফ্লাইটগুলো।

দুনিয়ার সবথেকে বড় ইনফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম

বিমানে প্রত্যেক আসনের সামনেই একটি ডিসপ্লে সহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। এই ডিসপ্লের মাধ্যমে আপনি সিনেমা, গান, সিরিজ ইত্যাদি অনেক কিছুই উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া ইমেইল পাঠানো, খবর দেখা ইত্যাদি জরুরি কাজও এর মাধ্যমে করা যায়। এই এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমের নাম হচ্ছে আইসিই বা ইনফরমেশন কমিউনিকেশন এন্টারটেইনমেন্ট। বিশ্বের সবথেকে বড় আইসিই রয়েছে এমিরেটসের। অর্থাৎ এমিরেটসের যাত্রীরা বিনোদনের সবথেকে বড় লাইব্রেরী উপভোগ করে থাকেন।

এছাড়া এমিরেটস প্রথম আলাদা ইন ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম সুবিধা নিয়ে আসে ১৯৯২-৯৩ সালে। এর আগে পর্যন্ত সবসময় আসনের পিছনে ডিসপ্লে লাগানো থাকতো।

কোনো অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত নয়

পৃথিবীর অনেক এয়ারলাইন্সই বিভিন্ন অ্যালায়েন্স বা সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকে। অ্যালায়েন্সের সদস্য হলে এক টিকেট দিয়েই ওই অ্যালায়েন্সের অন্য যে কোনো বিমানে ভ্রমণ করার সুবিধা থাকে। তবে এমিরেটস তাদের নিজেদের সতন্ত্রতা বজায় রাখতে কখনোই কোনো অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ভবিষ্যতেও যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ⭐️ দুবাই থেকে ঢাকা বিমান ভাড়া | দুবাই টু ঢাকা টিকেটের দাম কত জানুন

Emirates airlines surprising facts

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

নিজেদের আলাদা টার্মিনাল

এমিরেটসের ফ্লাইটের সংখ্যা এতটাই বেশি যে দুবাই এয়ারপোর্টে ২০০৮ সালে তাদের জন্য আলাদা একটি টার্মিনাল তৈরি করা হয়। এই টার্মিনালের নাম টার্মিনাল ৩। এটি তৈরি করতে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। এখানে প্রায় ১৮০ টি কাউন্টার রয়েছে এবং ২৬০০ গাড়ি একসঙ্গে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এই কাউন্টার মূলত এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে সমগ্র আরবকে যুক্ত করে।

এমিরেটস বিশ্ববিদ্যালয়

এমিরেটসের নিজস্ব একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। এর নাম এমিরেটস এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ হচ্ছে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের জন্য কেবিন ক্রু, পাইলট, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশার জনবল তৈরি করা। এর মাধ্যমে এমিরেটস নিজেদের মান বজায় রাখতে চায়। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি অবস্থিত দুবাইতে।

অসংখ্য জাতীয়তার মানুষ

এমিরেটসের সঙ্গে কাজ করেন অসংখ্য জাতীয়তার মানুষ। ১৬০ দেশ থেকে প্রায় ৪৫,৮৪৩ জন কর্মী রয়েছে তাদের। এমনকি ২০১৯ সালে একটি বিশ্বরেকর্ডও করে এমিরেটস। ৫৪০ যাত্রী নিয়ে একই বিমানে ১৪৫ দেশের মানুষের সমাবেশ ঘটায় তারা। তখন এটি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে সংযুক্ত করা হয়েছিল। ⭐️ সৌদি আরব থেকে ঢাকা প্লেন ভাড়া কত? জানুন এখানে

স্কাইওয়ার্ডস

এমিরেটসের লয়ালটি প্রোগ্রামের নাম হচ্ছে স্কাইওয়ার্ডস। লয়ালটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলো তাদের নিয়মিত যাত্রীদের বিভিন্ন রকম উপহার ও রিওয়ার্ড দিয়ে থাকে যার মধ্যে আছে এয়ারলাইন্স মাইলেজ, ফ্রি বিজনেস ক্লাস টিকেট, ডিসকাউন্ট সহ আরো অনেক কিছু। এমিরেটসের স্কাইওয়ার্ডস বিশ্বের অন্যতম বড় একটি লয়ালটি প্রোগ্রাম। ৩০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত আছেন বর্তমানে।

দুবাইয়ের ফ্রি ট্রানজিট ভিসা

যারা দীর্ঘ যাত্রায় দুবাইয়ে এমিরেটসের ফ্লাইটের মাধ্যমে লেওভার করেন বা অপেক্ষা করেন তাদের জন্য এমিরেটস পুরপুরি বিনামূল্যে ট্রানজিট ভিসা ব্যবস্থা করে থাকে। দুবাই একটি অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। তাই এমিরেটসের যাত্রীরা চাইলেই তাদের লেওভারের সময় বাড়িয়ে নিয়ে বিনামূল্যে ট্রানজিট ভিসা পেতে পারেন। এমনকি এমিরেটস আপনার জন্য পুরো ট্রিপের সকল রকম প্ল্যান, হোটেল বুকিং ইত্যাদি করে দেবে।

উড়ন্ত অবস্থায় গোসল

এমিরেটসের এ৩৮০ মডেলের ফ্লাইটগুলোতে রয়েছে আকাশে উড়ন্ত অবস্থাতেই গোসল করব ব্যবস্থা। এই স্পা শাওয়ার পাওয়া যাবে এমিরেটসের বেশিরভাগ এ৩৮০ ফ্লাইটে। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় এই গোসল খুবই অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা দিতে পারে যাত্রীদের। ⭐️ বিমান টিকেট মূল্য | বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স টিকেট দাম

ইকোনমি ক্লাসেও কমপ্লিমেন্টারি কিট

সাধারণত সকল এয়ারলাইন্স তাদের বিজনেস ক্লাস কিংবা প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসে কমপ্লিমেন্টারি কিট দিয়ে থাকে যা যাত্রীদের দীর্ঘ ভ্রমণে ক্লান্তি দুর করতে সাহায্য করে। তবে এমিরেটস এয়ারলাইন্স ইকোনমি ক্লাসেও এই কিট বিনামূল্যেই প্রদান করে থাকে। এই কিটে থাকে মোজা, টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, আইশেড, বুকমার্ক ইত্যাদি।

অর্থাৎ অনেকভাবেই এমিরেটস এয়ারলাইন্স নিজেদেরকে আলাদা করেছে অন্যান্য এয়ারলাইন্স হতে। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই এয়ারলাইন্স যাত্রীদের প্রিয় হয়ে উঠেছে সেরা সেবা ও সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে। অনেকেই তাই বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে এমিরেটসকেই তাদের প্রথম পছন্দ বিবেচনা করে থাকেন। এমিরেটস তাই হয়ে উঠেছে অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

2 comments

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      Please subscribe to find more interesting articles.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *