দুবাই এ ব্যবহৃত কিছু অবাক করা প্রযুক্তি

দুবাইকে বলা হয় বিশ্বের সবথেকে বিলাসবহুল শহর। অত্যাধুনিক হোটেল, সুবিশাল শপিং মল থেকে শুরু করে চোখ কপালে তুলে ফেলার মতো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, কী নেই এখানে!

দুবাই এ পেয়ে যাবেন সবথেকে বিলাসবহুল ও অত্যাধুনিক সকল কিছুই। বসবাসের জন্য দুবাই খুবই খরুচে জায়গা হলেও তার বিনিময়ে পেয়ে যাবেন আরামদায়ক সকল সুবিধা ও সেবা। আর সেই সেবা প্রদান করতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন রকম প্রযুক্তি। আজকে আমরা জানবো দুবাইয়ে ব্যবহার হওয়া অত্যাধুনিক সেসব প্রযুক্তি নিয়ে যা আপনি কখনও কল্পনাও করেন নি।

জেটপ্যাকযুক্ত ফায়ারফাইটার

জেটপ্যাক সরাসরি সায়েন্স ফিকশন হতে উঠে আসা প্রযুক্তি। এটি সাধারণত নভোচারীরা ব্যবহার করে থাকেন। এটা এমন এক প্রযুক্তি যা গ্যাস বা লিকুইড ব্যবহার করে শূন্যে ভেসে থাকতে ব্যবহার করা হয়। এই অত্যাধুনিক জেটপ্যাক ব্যবহার করেই দুবাইতে দমকল কর্মীরা তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে ভালো অবস্থান থেকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন দমকল কর্মীরা।

আর তাই দুবাই সিভিল ডিফেন্স মার্টিন এয়ারক্রাফট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে এই জেটপ্যাক ব্যবহারের। জেটপ্যাকগুলো পানির মাধ্যমে কাজ করে। পানি খুব দ্রুত বেগে নিচে ছুড়ে দিয়ে একটি বিপরীত শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিকর্ষ বল ও ওজনের বিপরীতে শূন্যে ভেসে থাকার জন্য এই জেটপ্যাক ব্যবহার করছে ডিসিডি (দুবাই সিভিল ডিফেন্স)। প্রতিটি জেটপ্যাক তৈরিতে খরচ প্রায় ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। 

জেটপ্যাক পদ্ধতিতে আগুন নেভানোর প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে ‘দ্য ডলফিন’। প্রযুক্তিটির মাধ্যমে সকল বাঁধা অতিক্রম করে সুবিধাজনক জায়গা থেকে অগ্নি নির্বাপণ করা সহজ হয়ে যায়। ফলে রাস্তায় জ্যাম থেকেও সহজে বাঁচা যায় এবং পানি পথেই দ্রুত অগ্নি নির্বাপণ সম্ভব হয়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

কীভাবে এই পদ্ধতিতে দমকল কর্মীরা কাজ করে থাকেন তার একটি মহড়া দেখে নিতে পারেন তাদের ভিডিও হতে

অটোনোমাস ড্রোন ট্যাক্সি

অটোনোমাস এয়ার ট্যাক্সি বা এএটি যাকে অন্য কথায় বলা যায় ‘নিজে চালিত উড়ন্ত ট্যাক্সি সার্ভিস’। শুনলে মনে হতে পারে একদম সায়েন্স ফিকশন মুভি থেকে উঠে আসা কিছু! কিন্তু এটাই সম্ভব করতে যাচ্ছে দুবাই। পৃথিবীর প্রথম এয়ার ট্যাক্সি চালু করতে পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছে তারা। যেখানে এখনও পর্যন্ত নিজ চালিত গাড়ির প্রযুক্তি পুরোপুরি তৈরি হয় নি, সেখানে এই এয়ার ট্যাক্সি তৈরির চিন্তা অনেকটাই দিবা স্বপ্নের মতো মনে হলেও ২০১৭ সালেই এটি তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং এর একদম প্রাথমিক মডেলটি চালিয়ে দেখা হয়েছে।

১৮ রোটর বিশিষ্ট এই ড্রোন ২ জন মানুষকে বহন করার ক্ষমতা রাখে। এতে আলাদা কোন চালকের প্রয়োজন হবে না, নিজে নিজেই চলতে পারবে এই এয়ার ট্যাক্সি। এটি সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত উড়তে পারবে। ৫০ কিমি পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় চলবে এই এয়ার ট্যাক্সি, সর্বোচ্চ গতি তুলতে পারবে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।  দুবাই এর রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড অথোরিটি এই নতুন ধরণের যানবাহন চলার জন্য নীতিমালা ঠিক করছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এটি বাজারে আসতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। তবে এটি হবে পরিবেশের জন্য ভালো এবং দূষণমুক্ত একটি প্রযুক্তি।

👉 সায়েন্স ফিকশনের উড়ন্ত মোটরসাইকেল এখন বাস্তবে!

চালকবিহীন গাড়ি

চালকবিহীন গাড়ির ধারণা নতুন কিছু নয়। এই প্রযুক্তি নিয়ে টেসলা ছাড়াও অনেক টেক প্রতিষ্ঠানই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দুবাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতোমধ্যেই ট্যাক্সি সেবা দেয়ার পরিকল্পনায় অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে। গত বছরের জুলাই মাস হতে তারা দুটি মানুষ চালিত গাড়ির মাধ্যমে রাস্তার ম্যাপ তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকান প্রতিষ্ঠান ক্রুজ এই কাজের জন্য দুটি চেভ্রলেট বোল্ট ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার করছে। এই গাড়ি দুটিতে আছে অসংখ্য সেন্সর এবং ক্যামেরা যার মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে। জুমেরিয়া এলাকার মধ্যে এই গাড়ি দুটি বর্তমানে চলাচল করছে। ক্রুজ তাদের এই চালকবিহীন ট্যাক্সি পরের বছরের মধ্যেই চালু করবার পরিকল্পনা করেছে। প্রথম দিকে তারা সল্প পরিমান গাড়ি দিয়ে যাত্রা শুরু করতে চায়।

মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার

দুবাইয়ে অবস্থিত মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার বা ভবিষ্যতের জাদুঘর -এর দালানটি দেখলে আপনার মনে হবে হঠাৎ করে ভবিষ্যতে চলে এসেছেন। এই মিউজিয়ামে ‘টুমরো টুডে’ নামক প্রদর্শনী দেখলে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন নতুন প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ আসলে কেমন হতে পারে।

পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, সমাজ ইত্যাদি সকল জিনিস নিয়েই এখানে ধারণা দেয়া হয়। প্রযুক্তি কীভাবে সকল কিছু বদলে দিতে পারে সেটি এখানে দেখানো হয়। এছাড়া আপনি ভার্চুয়াল ভাবেই ঘুরে আসতে পারবেন মহাশূন্য হতে। নভোচারীরা কীভাবে সকল কাজ করে থাকেন তার স্বাদ আপনি পেতে পারেন এই মিউজিয়াম থেকেই। প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ বুঝতে আপনার এখানে যাওয়া প্রয়োজন।

রিয়েল লাইফ রোবো-কপ

হলিউড ছবি অনুরাগী হয়ে থাকলে ১৯৮৭ সালে বের হওয়া সায়েন্স ফিকশন ছবি ‘রোবোকপ’ নিশ্চয়ই দেখেছেন। এবার সেই সায়েন্স ফিকশনকেই সত্যি করলো দুবাই। ২০১৭ সালে দুবাই পুলিশ তাদের সেবা দেয়ার লক্ষে রোবট নিয়োগ করে। এই রোবটকে তারা লেফটেন্যান্ট পদবি দিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার শুরু করেছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘দুবাই পুলিশ রোবট’। মানুষের মতো দেখতে এই রোবট অপরাধ সংগঠিত হলে তা রিপোর্ট করতে পারে, জরিমানা করতে পারে, এমনকি আরবি ও ইংরেজিতে কথা বলতেও সক্ষম। ২০১৭ সালে ঘোষণা দেয়া হলেও এই রোবটের সাথে ২০২১ সাল থেকে সাধারন মানুষ কথা বলতে পারছে।

বর্তমানে বিভিন্ন শপিং মলেও এই রোবটকে টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। এই রোবটের দেহের চারদিকে অসংখ্য ক্যামেরা রয়েছে যার মাধ্যমে কন্ট্রোল সেন্টার হতে রোবটের চারপাশের পরিবেশের দিকে লক্ষ্য রাখা যায় এবং সে অনুযায়ী এই রোবটকে পরিচালনা করা যায়। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে এই রোবট একা একাই চলফেরা করতে পারে। তাছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট ব্যবহার করেও একে নিয়ন্ত্রন করা যায়। দুবাই পুলিশের জন্য এই রোবট তৈরি করেছে স্পেনের রোবট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্যাল রোবোটিক্স।

👉 মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে লাফ দিয়েছিলেন যিনি – ফেলিক্স বমগার্টনার

মেগা সোলার প্ল্যান্ট

পৃথিবীর সবথেকে বড় সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে দুবাই। মোহাম্মাদ বিন রশিদ আল মখতুম সোলার পার্ক ৭৭ স্কয়ার কিলোমিটার জুড়ে তৈরি এবং ৩০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্নের পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এটি বর্তমানে প্রায় ২১৫০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী এই পুরো প্রকল্প ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ হবে। এই সুবিশাল সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার পরিকল্পনা অবিশ্বাস্য। এখানে প্রায় ৩ মিলিয়ন সৌর প্যানেল স্থাপন করা হবে এবং প্রতিটি প্যানেলে ট্র্যাকার ব্যবহার করা হবে যার মাধ্যমে প্যানেলগুলো একাই ঘুরে নিজের দিক ঠিক করে নিতে পারবে। এই পুরো প্রকল্পটি শেষ হলে প্রতি বছর প্রায় ১.৪ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ বন্ধ করা সম্ভব হবে।

বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা বিল্ডিং

দুবাইয়ের সেরা প্রযুক্তির কথা হচ্ছে, আর বুর্জ খলিফার কথা আসবে না তা কি করে সম্ভব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্কাইস্ক্র‍্যাপার এর দখল কিন্তু দুবাইয়ের হাতে। ২,৭২২ফিট উচ্চতার এই টাওয়ারটি অত্যাশ্চর্য সব প্রযুক্তিতে ভরা।

প্রকৌশল বিদ্যার এক অসাধারণ উদাহরণ এই বুর্জ খলিফা। অনেকটা ব্লেড রানার সিনেমার নিও-ফিউচারিস্টিক ওয়ার্ল্ডের সাথে তুলনা করা চলে এই স্থানকে। বিলাসবহুল হোটেল, অবজারবেশন ডেক, এপার্টমেন্ট, কর্পোরেট অফিস, রেস্টুরেন্ট ও বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নাইটক্লাব রয়েছে এই আকাশচুম্বী ভবনে

👉 দ্য লাইন – মরুভূমিতে সায়েন্স ফিকশনের শহর বানাচ্ছে সৌদি আরব

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,573 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *