গুগল পিক্সেল ৬এ ব্যাটারি সমস্যা? গুগল ১০০ ডলার দিতে পারে আপনাকেও!

গুগলের তৈরি পিক্সেল ৬এ স্মার্টফোনটি পুরোনো হতে থাকলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা হঠাৎ কমে যাওয়ার অভিযোগ অনেকের। কেউ কেউ বলছেন ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে। ব্যবহারকারীদের এই অভিযোগ আমলে নিয়ে গুগল সম্প্রতি একটি বিশেষ প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার নাম “Pixel 6a Battery Performance Program”।

এই প্রোগ্রামের অধীনে নির্দিষ্ট কিছু পিক্সেল ৬এ ব্যবহারকারী তাদের ফোনের ব্যাটারি সমস্যা সংশোধনের জন্য গুগলের কাছ থেকে বিনামূল্যে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট, ১০০ ডলার নগদ অর্থ বা ১৫০ ডলার সমমূল্যের গুগল স্টোর ক্রেডিট পেতে পারেন। তবে এর জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আবেদন করতে হবে।

ব্যাটারি সমস্যা কোথায়?

গুগলের ভাষ্যমতে, কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক পিক্সেল ৬এ ফোনে একটি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে। এটি তখনই করা হচ্ছে যখন ব্যাটারির আয়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ সাইকেল অতিক্রম করে ফেলে। সাধারণত একটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির চার্জ সাইকেল ৪০০ পার হলে ব্যাটারির ক্ষমতা কমে যায়। এ বিষয়টি মাথায় রেখে গুগল Android 16–এর মাধ্যমে এমন একটি ফিচার এনেছে, যা ডিভাইসটির ব্যাটারি ৪০০ সাইকেলের কাছাকাছি পৌঁছালে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।

যখন এই সীমাবদ্ধতা সক্রিয় হয়, তখন ব্যবহারকারী ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া, চার্জ ধীরে ওঠা, হঠাৎ ব্যাটারি লেভেল পরিবর্তন ইত্যাদি সমস্যা লক্ষ্য করেন। এটি মূলত ব্যাটারির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুগলের একটি পদক্ষেপ।

কারা এই প্রোগ্রামের আওতায় পড়বেন?

এই সুবিধা সবাই পাবেন না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু “impacted” বা প্রভাবিত ডিভাইস এই প্রোগ্রামের আওতায় পড়বে। গুগলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যবহারকারীরা তাদের ফোনের IMEI নম্বর ও গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে চেক করতে পারবেন, তাদের ডিভাইস এই প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত কিনা।

গুগল পিক্সেল ৬এ স্মার্টফোন

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

তবে ডিভাইসটি অবশ্যই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা উচিত এবং ২০২৫ সালের জুলাই মাসের আগেই কেনা হওয়া উচিত। আর হ্যাঁ, প্রথমেই ফোনটির সফটওয়্যার আপডেট করে নিতে হবে।

এই প্রোগ্রামে কী সুবিধা পাওয়া যাবে?

যদি আপনার ডিভাইস প্রোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে আপনি তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।

প্রথমত, আপনি চাইলে বিনামূল্যে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট নিতে পারবেন। এই সার্ভিসটি ওয়াক-ইন বা মেইল-ইন পদ্ধতিতে নেওয়া যাবে, নির্ভর করবে আপনি কোন দেশে আছেন তার উপর। দ্বিতীয়ত, আপনি যদি এভাবে ব্যাটারি পরিবর্তন না করে অন্য কোনো ভাবে ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করেন, তাহলে গুগল আপনাকে সরাসরি ১০০ ডলার ক্যাশ ব্যাক দেবে। তৃতীয়ত, আপনি চাইলে Google Store–এ ব্যবহারযোগ্য ১৫০ ডলারের স্টোর ক্রেডিট নিতে পারেন, যা দিয়ে আপনি পিক্সেল বা অন্যান্য গুগল পণ্য কিনতে পারবেন।

কীভাবে এই সুবিধা নিতে পারবেন?

এই সুবিধা নিতে হলে আপনাকে প্রথমেই eligibility চেক করতে হবে গুগলের ওয়েবসাইটে। যদি দেখা যায় আপনার ফোন এই প্রোগ্রামের আওতায় পড়ছে, তাহলে গুগলের নির্দেশিত ফর্ম পূরণ করে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী অপশন নির্বাচন করতে পারবেন। যাদের ব্যাটারির চার্জ সাইকেল ইতোমধ্যে ৪০০ ছাড়িয়েছে বা খুব কাছাকাছি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ফিচার অনেক দ্রুত কার্যকর হবে এবং পারফরম্যান্সেও এর প্রভাব পড়বে।

যদি আপনি ক্যাশ ব্যাক বেছে নেন, তাহলে আপনার প্রদানকৃত পেমেন্ট মেথড অনুযায়ী (Payoneer বা ব্যাংক) গুগল সরাসরি টাকা পাঠাবে। আর যদি আপনি স্টোর ক্রেডিট বেছে নেন, তাহলে একটি ইউনিক কোড আপনার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে, যেটি দিয়ে আপনি গুগল স্টোরে কেনাকাটা করতে পারবেন। আর যদি আপনার সুবিধাজনক এলাকায় অফিসিয়ালভাবে গুগল পিক্সেল এর ব্যাটারি রিপ্লেস করার সুবিধা থাকে তাহলে সেই অপশন বাছাই করতে পারবেন। সেবাটি পেতে এই গুগল অফিসিয়াল লিংক ভিজিট করুন। সেখানে দেখানো স্টেপগুলো অনুসরণ করলে গুগল আপনাকে ইমেইল করে জানাবে আপনি ১০০ ডলার পাবেন কি না। যদি পান তাহলে পেওনিয়ারের মাধ্যমে টাকা আনতে পারবেন। ইমেইলে বিস্তারিত বলা থাকবে।

👉 গুগল পিক্সেল ফোনের সেরা কিছু ফিচার যা আপনি জানতেন না

প্রোগ্রামটি কতদিন চলবে?

গুগলের ঘোষণানুযায়ী, এই প্রোগ্রামের রেজিস্ট্রেশন চলবে জুলাই ৮, ২০২৬ পর্যন্ত। তবে যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করাই ভালো, কারণ ওয়ারেন্টি, সার্ভিস সেন্টারের অ্যাভেইলেবিলিটি, ও স্থানীয় আইনি সীমাবদ্ধতা ইত্যাদির কারণে পরে এই সুবিধা পাওয়াটা জটিল হয়ে যেতে পারে।

বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, অনেক দেশে এই প্রোগ্রাম ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি Google Store না থাকলেও যদি কেউ আন্তর্জাতিকভাবে ফোন কিনে থাকেন (যেমন Amazon বা eBay–এর মাধ্যমে), তাহলে সেই ক্ষেত্রে eligibility থাকতে পারে। অনেক বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরাও গুগলের কাছ থেকে এই ক্যাশব্যাক প্রাপ্তিস্বীকার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিচ্ছেন

ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া

অনেক ব্যবহারকারী এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, কেউ কেউ এটিকে আংশিক সমাধান হিসেবে দেখছেন। তবে একথা মানতেই হবে, বেশিরভাগ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমন সমস্যাকে খুব সহজে উপেক্ষা করে থাকে। সেখানে গুগলের পক্ষ থেকে ব্যবহারকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও বিকল্প সুবিধা প্রদান নিঃসন্দেহে একটি দায়িত্বশীল ও গ্রাহক-বান্ধব পদক্ষেপ। এমনকি বাংলাদেশে অফিসিয়াল গুগল স্টোর না থাকা সত্ত্বেও ক্যাশ ব্যাক দেওয়াটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

👉 গুগল পে নাকি অ্যাপল পে? কোনটি সেরা? পার্থক্য কী?

শেষ কথা

পিক্সেল ৬এ–এর ব্যাটারি সমস্যার প্রেক্ষিতে গুগলের এই Battery Performance Program অনেকের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ফোনটি ব্যবহার করছেন এবং ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমে গেছে বলে অনুভব করছেন, তাদের উচিত হবে দ্রুত eligibility চেক করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন নতুন ব্যাটারি, অথবা নগদ অর্থ বা স্টোর ক্রেডিট – আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনুযায়ী।

আপনার যদি পিক্সেল ৬এ ফোন থাকে এবং ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়, তাহলে দেরি না করে আজই গুগলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখে নিন, আপনি এই প্রোগ্রামের জন্য উপযুক্ত কিনা।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,497 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *