উইন্ডোজের জন্য ফ্রি কিছু অ্যাপ যা আপনার কাজে লাগবে

মাইক্রোসফট উইন্ডোজ স্টোর প্রায় ১০ বছর ধরে চালু আছে। উইন্ডোজ ৮ এর সাথে চালু হয়েছিলো এই স্টোর। গুগল প্লেস্টোর বা অন্যান্য সকল অ্যাপস্টোরের মতো সকল সফটওয়্যার বা অ্যাপকে একই জায়গায় নিয়ে আসার ইচ্ছা ছিল মাইক্রোসফটের যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই প্রয়োজনীয় অ্যাপ খুঁজে পেতে পারেন উইন্ডোজের জন্য। এটি আগে উইন্ডোজ স্টোর হিসেবে পরিচিত ছিল যা বর্তমানে মাইক্রোসফট স্টোর বলে রিব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে।

উইন্ডোজ ১১ হতে মাইক্রোসফট এই স্টোরকে নতুন করে সাজাতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা ডেভেলপারদের বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অ্যাপগুলোকে তাদের স্টোরে এক জায়গায় নিয়ে আসতে চাইছে। আর তারই ফলে এখন মাইক্রোসফটের অ্যাপস্টোরে বেশ কিছু কাজের অ্যাপ চলে এসেছে যা আপনার উইন্ডোজ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আজকের এই পোস্টে তেমনই কিছু কাজের অ্যাপ নিয়ে কথা বলবো যা মাইক্রোসফট স্টোর থেকে সহজেই ইন্সটল করে নিতে পারবেন।

মাইক্রোসফট পাওয়ারটয়েস

মাইক্রোসফট নিজেই পাওয়ারটয়েস অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে। অ্যাপটিতে বেশ কিছু টুলস দিয়েছে মাইক্রোসফট যেগুলো ব্যবহার করে কিছু কাজ খুব সহজে করে ফেলতে পারবেন।

যেমনঃ 

  • ফ্যান্সি জোনস নামের একটি ফিচার ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন কাস্টম উইন্ডোজ লেআউট তৈরি করতে পারবেন সহজে মাল্টিটাস্ক করার জন্য। 
  • ভিডিও কনফারেন্স মুড দিয়ে একদম সিস্টেম লেভেল থেকে আপনার ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন বন্ধ করে দিতে পারবেন যে কোন অ্যাপের জন্য। 
  • অলয়েজ অন টপ ফিচার ব্যবহার করে যে কোন অ্যাপ উইন্ডো সবার উপরে রেখে দিতে পারবেন। 
  • ইমেজ রিসাইজার টুলও দেয়া আছে এখানে। 
  • কীবোর্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে কীবোর্ডের বিভিন্ন বাটন নিজের ইচ্ছামতো কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। নষ্ট হওয়া বাটনকে চাইলে ডিজাবল করেও দিতে পারেন এই টুল ব্যবহার করে।
  • পাওয়াররিনেম টুল দিয়ে অনেকগুলো ফাইলের নাম চাইলে এক ক্লিকে পরিবর্তন করতে পারবেন।
  • ফাইল এক্সপ্লোরারের জন্য কিছু এডঅনও দেয়া আছে এখানে।

এছাড়াও আরও বেশ কিছু কাজের ফিচার এখানে আছে। মাইক্রোসফট এই অ্যাপটি নিয়মিত আপডেট করছে এবং বিভিন্ন ফিচার এড করছে। উইন্ডোজ ১০ হতে যেকোনো উইন্ডোজ ভার্সনে এটি ব্যবহার করতে পারবেন অ্যাপস্টোর হতে। এই অ্যাপ উইন্ডোজ স্টোর হতে ইন্সটল করে নিতে এখানে ক্লিক করতে পারেন।

ফাইলস অ্যাপ

অসাধারন এই হালকা অ্যাপটি মাইক্রোসফটের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারের বিকল্প। মাইক্রোসফটের ফাইল এক্সপ্লোরার দিয়ে সব কাজ সহজেই করা গেলেও বেশ কিছু আধুনিক ফিচার সেখানে নেই। উইন্ডোজ ১১ এর মাধ্যমে এই ফাইল এক্সপ্লোরারে মাইক্রোসফট বেশ কিছু ফিচার যুক্ত করলেও এখনও তা অনেক আধুনিক এক্সপ্লোরারের মতো নয়। ফাইলস অ্যাপের ডিজাইন ও লুক পুরোপুরি মাইক্রোসফটের ফাইল ম্যানেজারের মতো হলেও এতে বেশ কিছু আলাদা ফিচার আছে।

আপনি ব্রাউজারের মতো করে এখানে ট্যাব তৈরি করে ফাইল ব্রাউজ করতে পারবেন যা মাল্টিটাস্কের ক্ষেত্রে বেশ কাজে দিয়ে থাকে। এছাড়া আছে বিভিন্ন থিম ব্যবহারের সুবিধা। যেকোন ফোল্ডারকে ফেভারিট করে সাইড পেনে রেখে দিতে পারেন দ্রুত প্রবেশের জন্য। এছাড়া ট্যাগ ফিচারটিও বেশ কাজের। হালকা সফটওয়্যার হওয়ায় এটি খুব দ্রুত কাজ করতে পারে এবং ফাইলগুলোকে লোড করতে পারে। ফাইল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও খুব ভালো এই অ্যাপে।

এটিও উইন্ডোজ ১০ হতে পরবর্তী ভার্সনে উইন্ডোজ স্টোর থেকে ইন্সটল করা যায় পুরোপুরি ফ্রিতে। ইন্সটল করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন।

ফোন লিঙ্ক

এটি মাইক্রোসফটের একটি অ্যাপ যা সাধারনত ডিফল্টভাবেই ইন্সটলড থাকে উইন্ডোজ ১০ বা ১১ তে। যে কোন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর জন্য খুব কাজের একটি অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনার ফোনের সকল নোটিফিকেশন, কল, মেসেজ পিসিতেই পেয়ে যাবেন। এমনকি চাইলে আপনি পিসি হতে কল রিসিভ করে কথাও বলতে পারবেন (ব্লুটুথ দরকার হবে)। অর্থাৎ পিসিতে আপনি কাজে ব্যস্ত থাকলে ফোন হাতে নেবার কোন দরকারই পড়বে না।

পিসি হতেই সকল মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারবেন। আপনার ফোনের গ্যালারিও ব্যবহার করতে পারবেন এই অ্যাপ হতে। যেকোনো ছবি সাথে সাথেই পিসিতে নিয়ে নিতে পারবেন। এই কাজের অ্যাপটি আপনার জীবনকে সহজ করে দেবে এবং সময় বাঁচাবে। আপনার যদি স্যামসাংয়ের কোন সাপোর্টেড ডিভাইস থাকে তবে এই অ্যাপ ব্যবহার করে আপনার ফোনের অ্যাপগুলোকেও ব্যবহার করতে পারবেন ফোন আনলক না করেই। এই অ্যাপটিও উইন্ডোজ ১০ হতে পরবর্তী ভার্সনগুলোতে ব্যবহার করতে পারবেন। ইন্সটল করে নিন এখান থেকে

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

শেয়ারএক্স

এটা একটা এডভান্স লেভেলের স্ক্রিনশট নেয়ার অ্যাপ। দৈনন্দিন কাজে যাদেরকে অনেক স্ক্রিনশট নিতে হয় এবং স্ক্রিন রেকর্ড করতে হয় তাদের জন্য খুব কাজের একটি জিনিস। শর্টকাট ব্যবহার করে এক ক্লিকেই স্ক্রিনশট নিয়ে বিভিন্ন ইমেজ হোস্টিং সাইটে আপলোড করে দিতে পারবেন শেয়ারের জন্য। এছাড়া জিফ ফাইল হিসেবে স্ক্রিন রেকর্ড করার সুবিধা আছে এখানে।

স্ক্রিনের নির্দিষ্ট অংশ সিলেক্ট করেও দিতে পারবেন রেকর্ড বা স্ক্রিনশটের জন্য। এছাড়া স্ক্রিনশট নেবার পরে ছবি ক্রপ করা, ডুডল বা মার্ক করা ইত্যাদি কাজগুলো খুব সহজেই করে ফেলা যায়। মোটকথা স্ক্রিনশট শেয়ারের জন্য সবরকমের টুল এতে আছে। তাই সহজে ও দ্রুত স্ক্রিনশট নিতে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। উইন্ডোজ ১০ হতে পরের উইন্ডোজে এই অ্যাপটি ইন্সটল করে নিতে পারেন মাইক্রোসফট স্টোর হতে। এখানে ক্লিক করে ইন্সটল করতে পারবেন।

স্প্ল্যাস!

অনেকেই আছেন আপনার ডেস্কটপকে নতুন লুক দিতে পছন্দ করেন। কিন্তু সময়ের অভাবে নিয়মিত ওয়ালপেপার পরিবর্তন সম্ভব হয় না। অনেকে উইন্ডোজের ডিফল্ট ওয়ালপেপার দিয়েই কাজ চালিয়ে নেন। কিন্তু সুন্দর ওয়ালপেপার আপনার পুরো পিসি ব্যবহারকে আনন্দময় করে তুলতে পারে। তাই নিয়মিত যদি একটি অ্যাপ আপনার হয়ে এই ওয়ালপেপার পরিবর্তন করে দেয় সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে তবে কেমন হয়?

স্প্ল্যাস অ্যাপটি ঠিক সেই কাজই করে থাকে। তাদের স্টক ফটোগ্রাফি সাইট আনস্প্ল্যাস হতে বিভিন্ন সুন্দর ছবি তারা নিয়মিত ভাবে ওয়ালপেপার ও লকস্ক্রিনে দিয়ে দিতে পারে সময়মতো। কতক্ষন পরপর আপনার ওয়ালপেপার পরিবর্তন হবে তা আপনি নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন ১৫ মিনিট হতে ১ সপ্তাহ পর্যন্ত । ফ্রি ভার্সনে ১০৮০পি পর্যন্ত রেজুলেশনের ওয়ালপেপার পেয়ে যাবেন। এটিও উইন্ডোজ ১০ হতে ইন্সটল করা যায়। মাইক্রোসফট স্টোর হতে ইন্সটল করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন।

👉 উইন্ডোজের গতি বাড়াতে ‘পিসি ম্যানেজার’ অ্যাপ আনছে মাইক্রোসফট

ভিএলসি

ভিএলসি খুবই পরিচিত একটি ফ্রি ও ওপেন সোর্স ভিডিও প্লেয়ার। মাইক্রোসফট স্টোর হতে এটি খুব সহজেই ইন্সটল করে ভিডিও চালাতে পারবেন। উইন্ডোজের ডিফল্ট মিডিয়া প্লেয়ারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক ভিডিও ফাইলই চালাতে পারে না উইন্ডোজের ডিফল্ট মিডিয়া প্লেয়ার। কিন্তু ভিএলসি ব্যবহার করে এই সীমাবদ্ধতা খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারবেন। যে কোন ভিডিও ফাইল এই প্লেয়ারে ওপেন হয়। এটি দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া স্ট্রিম করা যায় খুব সুন্দরভাবে। অডিও ও মিউজিক ফাইলগুলোও বেশ সহজে প্লে করা যায়। হালকা ও সিম্পল দেখতে এই প্লেয়ার আপনার ভিডিও প্লেব্যাককে সহজ করবে। 

ভিডিওল্যান এর ওয়েবসাইট থেকে সকল উইন্ডোজ ভার্সনের জন্য এটি ডাউনলোড করতে পারবেন। তবে মাইক্রোসফট স্টোর ভার্সনটি পাবেন উইন্ডোজ ১০ হতে। এখান থেকে ইন্সটল করে নিতে পারেন।

ড্রবোর্ড পিডিএফ

উইন্ডোজের জন্য অনেকদিন থেকেই সেরা পিডিএফ অ্যাপ এটি। যারা টাচ ল্যাপটপ বা স্টাইলাস ব্যবহার করেন তাদের জন্য খুবই কাজের জিনিস এটি। পিডিএফ মার্কআপ ও এডিটের জন্য এটি অসাধারন ফিচার সমৃদ্ধ। এটি উইন্ডোজের জন্য সেরা পিডিএফ ভিউয়ার। যেকোন পিডিএফ খুব সহজেই পড়া যাবে এর মাধ্যমে। এর মধ্যে এনোটেট টুল, পিডিএফ সাইনিং ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের ফিচার আছে। ফ্রি ভার্সনে ব্যাসিক সবরকম কাজই করা যায়। পেইড ভার্সনে আরও অনেক ফিচার রয়েছে। 

উইন্ডোজ ১০ বা তার পরের ভার্সনের পিসি দরকার হবে এটি ইন্সটল করতে। এই লিঙ্ক থেকে সহজেই ইন্সটল করে নিতে পারবেন।

👉 পিসির সাথে স্মার্টফোন যুক্ত করার নতুন অ্যাপ এলো

হোয়াটসঅ্যাপ ফর ডেস্কটপ

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন না এমন খুব কম মানুষই হয়তো আছেন। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য খুব কাজের একটি অ্যাপ এটি। আপনি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ একবার কানেক্ট করে নিলে আপনার পিসি হতেই হোয়াটসঅ্যাপের সমস্ত কাজ করতে পারবেন। আপনি চাইলে পিসি থেকেই কল বা মেসেজ দিতে পারবেন আপনার সকল কন্টাক্টদের। নতুন ভার্সনে আপনাকে ফোন ও পিসি উভয় জায়গায় ইন্টারনেট কানেক্টেড থাকতে হবে না, আগে এই ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখন শুধু পিসিতে নেট কানেকশন থাকলেই আপনি সকল ফিচার মোবাইলের মতো করেই ব্যবহার করতে পারবেন।

হোয়াটসঅ্যাপের মাইক্রোসফট স্টোর ভার্সনটি উইন্ডোজ ১০ ও এরপরের ভার্সনে ইন্সটল করতে পারবেন। এই লিঙ্ক অনুসরন করে ইন্সটল করে নিতে পারেন কাজের এই অ্যাপটি।

এই অ্যাপগুলো ছাড়াও মাইক্রোসফট স্টোরে নিয়মিত আরও অনেক কাজের অ্যাপ যুক্ত হচ্ছে। ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রামের অফিসিয়াল অ্যাপগুলো বেশ কাজের এবং সেগুলোও চাইলে ইন্সটল করে নিতে পারেন স্টোর থেকেই।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,573 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *