যেভাবে স্মার্টফোনের ব্যাটারি ভালো রাখে অ্যাডাপ্টিভ চার্জিং

স্মার্টফোন ব্যবহারের সম্পুর্ণ অভিজ্ঞতাকে নষ্ট করে দিতে পারে খারাপ ব্যাটারি লাইফ। তবে ব্যাটারি যত বড় হোক বা ছোট, ফোন তো চার্জ করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সমস্যা হলো সময়ের সাথে সাথে ফোনের ব্যাটারি ডিগ্রেড হয়ে যায়। ফোনে থাকা Adapative Charging বা Optimized Charging সুবিধা এই ধরনের সমস্যা দূরে রাখার চেষ্টা করে।

সময়ের সাথে সাথে ব্যাটারি লাইফ খারাপ হয় কেনো?

আপনার হাতের স্মার্টফোনটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে নিশ্চয় খেয়াল করে থাকবেন যে সময়ের সাথে সাথে এর ব্যাটারি লাইফ কমতির দিকে যাচ্ছে। মূলত সময়ের সাথে সাথে ব্যাটারি এর ক্যাপাসিটি হারায় বলে দীর্ঘ সময় ধরে চার্জ টিকে থাকেনা। এই বিষয়টি মূলত “ব্যাটারি হেলথ” বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত।

একটি নতুন ব্যাটারির ব্যাটারি হেলথ শতভাগ পূর্ণ থাকে, অর্থাৎ এই ব্যাটারির পুরো ক্যাপাসিটি ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে। নিয়মিত চার্জিং ও ডিসচার্জিং সাইকেল এর কারণে ফোনের ব্যাটারি হেলথ কমে যেতে থাকে। তবে এই সমস্যা থেকে আংশিক পরিত্রান পাওয়া তেমন কঠিন নয়। ফোনের ব্যাটারি ২০% এ এসে পৌছালে চার্জ করা ও ৮০% হলে চার্জ থেকে খুলে ফেলার মাধ্যমে ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখা যায়৷ যদিও বাস্তব জীবনে এই বিষয় মেনে চলা অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

আমাদের মধ্যে অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোন চার্জে বসিয়ে দেন ও ঘুম থেকে উঠে দেখেন ফোনে ১০০% চার্জ রয়েছে। ঘুমানো সময় ফোনের চার্জ অনেকবার ৯৯-১০০% এর মধ্যে উঠানামা করেছে। একটি ফোনের ব্যাটারি সাধারণত ৫০০ চার্জ সাইকেল কমপ্লিট করলে তার ব্যাটারি হেলথ ৮০% পর্যন্ত টিকে থাকে। অর্থাৎ ৫০০বার ১০০% চার্জ করার পর ফোনের ব্যাটারি হেলথ ৮০% এ এসে পৌঁছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সাইকেল বড় সংখ্যায় পৌঁছানোর আগে আমরা ফোন বদলে ফেলি। কিন্তু রাতে ফোন চার্জে দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাটারি ৯৯-১০০% এ উঠানামা করার ক্ষেত্রেও কিন্তু চার্জিং সাইকেল গণ্য হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এডাপ্টিভ চার্জিং। যদিও এটা কোনো ফিউচার-প্রুফ পদ্ধতি না। আপনার ফোন ৮০% চার্জ দিলেও এর সাইকেল একসময় পূর্ণ হবে। তবে এডাপ্টিভ চার্জিং পদ্ধতিতে সাইকেল কিছুটা ধীরগতির করে রাখা যায়।

👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি হেলথ চেক করার নিয়ম

👉 আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ সম্পর্কে বিস্তারিত

এডাপ্টিভ চার্জিং কি?

ফোনের চার্জ ২০-৮০% এ রাখা তো বেশ ভালো, কিন্তু রাতে ফোন চার্জ করলে সেক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা সম্ভব নয়। আর এডাপ্টিভ চার্জিং ফোনের চার্জিং যাতে ইন্টেলিজেন্ট উপায়ে হয় সে বিষয়টি খেয়াল রাখে।

এডাপ্টিভ চার্জিং অপশন চালু করে ফোন রাতে চার্জ করলে রাতের অধিকাংশ সময় ধরে চার্জ ৮০% এ থাকে। ঘুম থেকে উঠার আগে পুনরায় ব্যাটারি চার্জ হওয়া শুরু করে ও সবশেষে ১০০% ফুল চার্জ হয়ে যায়। আর এর মাধ্যমে বেশ সহজে ফোনের চার্জ ৯৯-১০০% উঠানামা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও ব্যাটারি লাইফ দ্রুত কমে যাওয়া থেকে রক্ষা করা যায়।

এছাড়া আপনার ফোন যদি ৯৯-১০০% এর মধ্যে ওঠানামা নাও করে তবুও দীর্ঘক্ষন ১০০% চার্জে রাখার কারণে এর ব্যাটারির রাসায়নিক অবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এডাপ্টিভ চার্জিং এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। কেননা এডাপ্টিভ চার্জিংয়ের ফলে এর চার্জ লেভেল ৮০% পর্যন্ত এসে থেমে যায়। এরপর আপনি চাইলে নিজেই এটি চার্জ থেকে খুলে নিতে পারেন।

তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনি যদি এটি চার্জ থেকে খুলে না নেন তাহলে অনেকক্ষণ ৮০% এ থামিয়ে রেখে সিস্টেম ধরে নেবে আপনি আসলে ১০০% চার্জ চাচ্ছেন। তখন এটি ১০০% পর্যন্ত চার্জ করবে। অবশ্য ফোনের ব্র্যান্ড ভেদে এই পলিসি আলাদা হতে পারে।

এডাপ্টিভ চার্জিং হলো গুগল পিক্সেল ফোনগুলোর একটি ফিচার। তবে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই ফিচারটি রয়েছে। কিছু ডিভাইসে এই ফিচারটি অটোমেটিক চালু রয়েছে, আবার কিছু ডিভাইসে এই ফিচার চালু বা বন্ধ করা যায়। আপনার এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতে ফিচারটি আছে কিনা চেক করে দেখতে ভুলবেন না।

ওয়ানপ্লাস ডিভাইসগুলোতে Optimized Charging, স্যামসাং গ্যালাক্সি ডিভাইসগুলোতে Adaptive Battery, ও আইফোনে Optimized Charging নামে একই ফিচার খুঁজে পাবেন। আইফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতেও এটা বেশ কাজে দেয়।

এডাপ্টিভ চার্জিং মুলত ব্যবহারকারীর ফোনের এলার্ম ও ব্যবহারের রুটিনকে অনুসরণ করে ফোন ফুল চার্জের সেরা সময় নির্বাচন করে। প্রয়োজনের সময় ফোন ফুল চার্জ না হলে এই ফিচারকে কিছুটা সময় প্রদান করতে হয় ব্যবহারকারীর রুটিনের সাথে মানিয়ে চলতে। এইসব ফিচার চার্জিং সাইকেলের কারণে ফোনের ব্যাটারি ডিগ্রেড হওয়া থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা করে ফোনের ব্যাটারি হেলথ দীর্ঘ সময় ধরে রক্ষার উদ্দেশ্যে কাজ করে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

অতিরিক্ত অপটিমাইজেশন ভালো নয়

এডাপ্টিভ চার্জিং একটি চার্জিং অপটিমাইজেশন ফিচার। ব্যাটারি অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ফোনের ব্যাকাপ হয়ত কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে, তবে অতিরিক্ত অপটিমাইজেশন ভালো কিছু নয়। স্যামসাং ও শাওমি’র মত কোম্পানিগুলো তাদের ফোনের ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করতে ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অ্যাপ কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুব বেশি পরিমাণে ব্লক করে রাখে। স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোর এই অতিরিক্ত অপটিমাইজেশনের কারণে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ থেকে আসা নোটিফিকেশন পর্যন্ত মিস হয়ে যায়। 

Don’t Kill My App! নামে একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ম্যানুফ্যাকচারারগণ তাদের ব্যাটারিকে কি পরিমান অপটিমাইজ করেন ও তাতে ফোন ব্যবহারে কি সমস্যা হয় সে সম্পর্কে জানা যায়। অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাপ ক্লোজ করার কারণে অ্যাপের খারাপ পারফরম্যান্স বা নোটিফিকেশন মিস করার মত বিরক্তিকর ঘটনা ঘটে থাকে।

প্রায় সকল ডিভাইস ব্যাটারি অপটমাইজেশনকে বেশ ভালোভাবে পরিচালনা করে। ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে অসাধারণ করার পাশাপাশি সবার চেয়ে সেরা ব্যাটারি লাইফ প্রদান করার চেষ্টা করে থাকে সকল ম্যানুফ্যাকচারার। স্যামসাং বা শাওমির ফোনের ব্যাটারি লাইফ যদি খারাপ হয়, তাহলে এদের বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে অতিরিক্ত ভালো বিষয়ও অনেক সময় সমস্যার কারণ হতে পারে।

মোট কথা হলো এডাপ্টিভ চার্জিং স্মার্টফোনের বেশ অসাধারণ একটি ফিচার। আপনার ফোনে এই ফিচারটি থাকলে অবশ্যই চালু করে রাখুন, এতে ফোনের ব্যাটারি হেলথ দীর্ঘদিন ধরে ভালো থাকবে।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,572 other subscribers

2 comments

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      Thanks a lot for your kind words! Please stay with us…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *