বর্তমান সময়ে যেকোনো জায়গায় বসে একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করা সম্ভব। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ট্রাডিশনাল ডেস্ক জবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। এসকল মানুষদের জন্য অনলাইনে কাজ করা অনেক বেশি স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে। অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কিংবা কোনো কোম্পানির আওতায় কাজ করলেও নিজের এবং ফ্যামিলির জন্য আলাদা করে কিছু সময় বের করা যায়। এখনকার ইন্টারনেটের যুগে অনেকেই অনলাইনে জব করার কথা চিন্তা করে থাকেন। তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অনলাইনে যে সকল কাজের চাহিদা বেশি থাকে সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
অনলাইনে কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?
অনলাইনে নানা ধরনের কাজেরই চাহিদা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অতি প্রচলিত কিছু কাজের সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
ফ্রিল্যান্স রাইটার
ছোট-বড় যেকোনো বিষয়ে জানতে হলে এখন আমরা ইন্টারনেটে সার্চ করে থাকি। কিন্তু ইন্টারনেটে থাকা যেসকল আর্টিকেল আমাদের নতুন নতুন তথ্য জানতে বা কোনো বিষয় সম্পর্কে বিশদে জানতে সাহায্য করে তা কিন্তু লিখে থাকেন ওয়েব পোর্টালগুলির রাইটার বা লেখকেরা। ফলে সময়ের সাথে মানুষ যত ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়ছেন, ততই তাদের জিজ্ঞাসা মেটাতে গজিয়ে উঠছে একটার পর একটা নতুন সাইট। যার ফলে লেখকদের চাহিদাও থাকছে।
উক্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আপনি ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসাবে লেখালিখির কাজ শুরু করতে পারেন। অথবা কোনো সংস্থায় ভ্যাকেন্সি থাকলে তাদের সাথেও যুক্ত হতে পারেন। একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসাবে আপনাকে – আর্টিকেল রাইটিং, কনটেন্ট রাইটিং এবং ‘ক্রিয়েটিভ’ বা ব্যতিক্রমী আর্টিকেল লেখার আইডিয়া প্রস্তাব করতে হতে পারে। তাই কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আপনার যথাযথ জ্ঞান থাকলে বা লেখার হাত ভালো হলে লেখালেখি পেশা আপনার জন্যই। আর যদি ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসাবে আপনি দীর্ঘ দিন কাজ করে থাকেন, তবে চাকরি ও বেতনের অভাব হবে না।
ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট বা সংক্ষেপে VA -কে একজন স্ব-নিযুক্ত পেশাদার বলা যেতে পারে। এই পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা ছোট-বড় ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির হয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে সহায়তা করে থাকেন। তবে হ্যাঁ, প্রত্যেক ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্টের কাজ কিন্তু সমান হয় না। মূলত ক্লায়েন্টের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার উপর নির্ভর করে কাজের প্রক্রিয়া। তবে একটা ধারণা দেওয়ার জন্য উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ হন এবং এই পেশায় নিযুক্ত হতে চান তবে আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টের হয়ে মিটিং শিডিউল, প্রেজেন্টেশন বানানো, ফোন কল রিসিভ এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার মতো কাজ করতে হতে পারে।
এছাড়া ইমেলের উত্তর দেওয়া বা ছোটোখাটো কনটেন্ট লেখার কাজও করতে বলা হতে পারে। তবে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট হওয়ার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনাকে ভালো কমিউনিকেশন স্কিল, যথাযথ টাইম ম্যানেজমেন্ট স্কিল এবং মাইক্রোসফট অফিসে কাজ করা জানতে হবে।
ওয়েব ডিজাইনার/ডেভেলপার
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ ব্যবসায়িক সংস্থা ট্র্যাডিশনাল মার্কেটিংয়ের পরিবর্তে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রোডাক্ট বা পরিষেবার প্রচার করতে পছন্দ করছে। কেননা এখন প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই দিনের বেশিরভাগ সময় তাদের মোবাইল দেখেই কাটিয়ে দেন। তাই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রচার কার্য পরিচালনা করলে স্বল্প সময়ে বিস্তৃত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। আর এমনটা করার জন্য সবথেকে আগে যেই জিনিসটি দরকার, তা হলো একটি ওয়েবসাইট। তাই এখন বিশেষভাবে ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপারদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফলে আপনি যদি কোনো ইনস্টিটিউশন থেকে ওয়েব ডিজাইনিং কোর্স করে থাকেন এবং কোনো সংস্থার অধীনে কাজ করতে না চান, তাহলে পার্সোনাল কন্ট্রাক্ট জোগাড় করার মাধ্যমে বাড়িতে বসেই ওয়েব ডেভলপমেন্ট সংক্রান্ত কাজ করতে পারেন। তবে বলে রাখা ভালো যে, একজন আদর্শ ওয়েব ডিজাইনার হওয়ার জন্য আপনার মধ্যে সৃজনশীলতা এবং ব্যতিক্রমী ভাবনাচিন্তা থাকা আবশ্যক। কেননা একটি ওয়েবসাইটের ডিজাইন যত আকর্ষণীয় এবং অনন্য হবে ততই ভিজিটররা সেই সংস্থার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করবে এবং ‘পেইড কাস্টমার’ এ পরিণত হবে। এক্ষেত্রে নতুন নতুন ডিজাইন তৈরীর জন্য আপনি ইন্টারনেটে থাকা ওয়েব ডিজাইন টেমপ্লেটগুলির থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন। 👉 ওয়েবসাইট কি? কেন আপনার একটি ওয়েবসাইট দরকার?
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
এখন ছোট-বড় প্রায় প্রত্যেক সংস্থাই স্বল্প খরচ ও সময়ে প্রচারকার্য চালানোর জন্য ইন্টারনেটের উপর বিশেষভাবে আস্থা রেখেছে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মগুলিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সময়ে প্রায় প্রত্যেকটি বিজনেস বা ব্রান্ডস গুলো সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে সক্রিয় থাকে। সেক্ষেত্রে তারা এমন কিছু মানুষ খুঁজে বের করে যারা তাদের হয়ে নিয়মিত কনটেন্ট পোস্ট করা, ফলোয়ার্স দের রিপ্লাই করা, প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ইত্যাদির মতো কাজ করে থাকে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
ইমেইল মার্কেটার
ইমেইল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ বা ইমেইল মার্কেটারের কাজ হলো, একটি ব্যবসায়িক সংগঠনের ইমেল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ক্যাম্পেইন বা প্রচারকার্যের প্ল্যানিং করা এবং সংস্থার নির্দিষ্ট কাস্টমার বেসের একটি তালিকা তৈরী করে প্রত্যেক ক্লায়েন্টকে নতুন প্রোডাক্ট বা পরিষেবা সম্পর্কে প্রতিনিয়ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া। তাই প্রোডাক্ট বিক্রি করার জন্য একজন ইমেল মার্কেটারকে যথেষ্ট দায়িত্ববান ও অভিজ্ঞ হতে হবে।
তাই এই পেশায় শুধুমাত্র তাদেরই নিয়োগ করা হয়, যারা পাবলিক রিলেশন বা মার্কেটিং নিয়ে পড়াশোনা করেছে বা দীর্ঘ দিন এই কাজের সাথে যুক্ত। প্রসঙ্গত, আপনার কমিউনিকেশন স্কিলও এক্ষেত্রে ভালো হতে হবে।আর যদি গ্রাফিক ডিজাইন এবং ওয়েব ডিজাইনের মতো কাজ জেনে থাকেন তবে ইমেল মার্কেটার হিসাবে আপনার কাজের অভাব হবে না।
অ্যানিমেশন নির্মাতা
বিগত কয়েক বছর যাবৎ অ্যানিমেশন ইন্ডাস্ট্রি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যার দরুন শয়ে শয়ে ছেলেমেয়েরা এখন পড়াশোনার পাশাপাশি অ্যানিম্যাশন থেকে ইনকাম সংক্রান্ত কোর্স করছে। আপনিও যদি এমনি কোনো কোর্স করে থাকেন তবে ঘরে বসেই অ্যানিমেশন ক্রিয়েটর হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
অ্যানিমেশন তৈরীর মাধ্যমে আপনি নিজের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাতে পারবেন এবং একই সাথে আশেপাশের ঘটনাবলীর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নানাবিধ ‘ক্রিয়েটিভ’ অ্যানিমেশন তৈরী করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার ভাবনা ও প্রজেক্ট যদি ব্যতিক্রমী হয় তবে বিভিন্ন গেম ডেভলপমেন্ট সংস্থায় অ্যানিমেশন নির্মাতা হিসাবে নিযুক্ত হতে পারেন। অথবা আলাদা করে নিজের একটা ব্যবসাও শুরু করতে পারেন।
এগুলো বাদেও আপনি স্ক্রিপ্ট রাইটিং, ভিডিও এডিটিং, ফটোগ্রাফি, লোগো ডিজাইন, ট্রান্সলেশনের মতো কাজ করতে পারেন। বর্তমান সময়ে এসব কাজের চাহিদাও বেশ ভালো ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারবেন। এছাড়াও নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং প্রয়োজনীয় সকল ধরনের টিপস এন্ড ট্রিকস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।