আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ নিয়ে ব্যবহারকারীদের চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ করে যারা প্রথমবার আইফোন ব্যবহার করছেন, তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। নতুন মডেলের আইফোনগুলো বাজারের অন্য যেকোনো ফোনের মতোই ভাল ব্যাটারি ব্যাকাপ প্রদান করলেও আগের মডেলের আইফোনগুলোর ব্যাটারি ব্যাকাপ নিয়ে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ করতে দেখা যায়।
আইফোন থেকে সন্তোষজনক ব্যাটারি ব্যাকাপ না পেলে ব্যাটারি কেস বা পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই। তবে আইফোনের মধ্যে থাকা সেটিংস ও কিছু নিয়ম মেনে চললে যেকোনো আইফোন থেকেই ভালো ব্যাটারি ব্যাকাপ পাওয়া সম্ভব। আর বেশি ব্যাটারি ব্যাকাপ পাওয়া মানেই ব্যাটারি ডিসচার্জ সাইকেল ও ব্যাটারির ব্যবহার অপেক্ষাকৃত কমে যাবে। ফলে ব্যাটারি হেলথ ভাল থাকবে। এই পোস্টে জানবেন কিভাবে আপনার আইফোন ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখবেন। চলুন শুরু করি।
অ্যাপ এর ব্যাটারি ইউসেজ চেক
আইফোন এর ব্যাটারি ভালো রাখতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগে সেটিংস থেকে “Battery” সেকশনে প্রবেশ করুন। এই সেকশনে “Last 24 Hours” এ ট্যাপ করলে গত ২৪ঘন্টায় কোন অ্যাপ কি পরিমাণ ব্যাটারি ব্যবহার করেছে তা দেখতে পাবেন। আবার “Last 10 Days” এ ট্যাপ করলে গত ১০দিনে কোন অ্যাপ কি পরিমাণে ব্যাটারি খরচ করছে, তা দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন করতে পারেন এসব তথ্য দেখে কি লাভ। খুব সহজ, কোন অ্যাপসমূহ কম ব্যবহারের পরও অধিক ব্যাটারি ব্যবহার করছে তা খুঁজে বের করুন। এরপর উক্ত অ্যাপসমূহের ব্যাটারি ইউসেজ অপটিমাইজ করার চেষ্টা করুন। তবুও যদি অ্যাপসমূহের ব্যাটারি ব্যবহার না কমে, তবে উক্ত অ্যাপের বিকল্প অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসমূহের ব্যবহার অন্য কোনো অ্যাপ দ্বারা মেটানো সম্ভব নয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসমূহ অতিরিক্ত ব্যাটারি খরচ করলে এসব অ্যাপসমূহকে টাস্ক ম্যানেজার থেকে ক্লিয়ার করে দেওয়াই শ্রেয়।
ডার্ক মোড ব্যবহার
আধুনিক আইফোনের ব্যাটারি লাইফে উল্লেখযোগ্য হারে উন্নতি আনতে পারে ডার্ক মোড এর ব্যবহার। ডার্ক মোড চালু থাকা অবস্থায় স্মার্টফোন ব্যবহার চোখের জন্য বেশ সুবিধাজনক হওয়ার পাশাপাশি কম ব্যাটারি পাওয়ার ব্যবহার করে। ডার্ক মোড ব্যবহারে স্ক্রিনে অনেক অপ্রয়োজনীয় কালার অফ থাকার কারণে অপেক্ষাকৃত কম ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়, ফলে ব্যাটারি ব্যাকাপ বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, আইফোন এর ব্যাটারি ব্যাকাপ বৃদ্ধি করতে ডার্ক মোড ব্যবহার করা উত্তম। আইফোন এর ডার্ক মোড অন করতেঃ
- সেটিংস অ্যাপে প্রবেশ করুন
- Display & Brightness অপশনে ট্যাপ করুন
- ডার্ক মোড চালু করতে “Dark” অপশনে ট্যাপ করুন
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
লো পাওয়ার মোড
প্রয়োজনের সময়ে ব্যাটারি লাইফ কিছুটা বাড়াতে লো পাওয়ার মোড বেশ কাজে আসতে পারে। Low Power Mode চালু থাকলে Email Fetching, ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ অটো-ডাউনলোড, ইত্যাদি ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস বন্ধ হয়ে যায়।
সেটিংস থেকে Battery মেন্যুতে প্রবেশ করে Low Power Mode চালু করা যাবে। দ্রুত লো পাওয়ার মোড চালু বা বন্ধ করতে কন্ট্রোল সেন্টারে শর্টকাট এড করে নিতে পারেন। সেটিংস থেকে Control Center সেকশনে প্রবেশ করে Low Power Mode এর পাশে থাকা প্লাস (+) আইকনে ট্যাপ করুন। প্রয়োজন ছাড়া লো পাওয়ার মোড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ দেখতে সেটিংস থেকে প্রথমে Battery ও এরপর Battery Health অপশনে ট্যাপ করুন।
অটো-লক ও ব্রাইটনেস
ব্যাটারি ইউসেজ সেকশনে খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন “হোমস্ক্রিন ও লকস্ক্রিন” এর ব্যাটারি ইউসেজ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়ে থাকে। এর কারণে ফোনের অটো-লক সেটিংসে নির্দিষ্ট টাইম সেট করে দেওয়া ভালো। অটো স্ক্রিন লক সেটিং করতেঃ
- আইফোনের সেটিংসে প্রবেশ করুন
- Display & Brightness মেন্যুতে প্রবেশ করুন
- Auto-Lock সিলেক্ট করুন
- ফোন অটোমেটিক লক হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় সিলেক্ট করুন
আবার স্ক্রিন ব্রাইটনেস অপটিমাইজ করেও আইফোনের ব্যাটারি লাইফ ভালো রাখা যায়। কন্ট্রোল সেন্টার থেকে খুব সহজে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস এডজাস্ট করা যাবে।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
অ্যাপল এর প্রদত্ত তথ্যমতে আইফোন ও অনন্য অ্যাপল ডিভাইসের জন্য আদর্শ এমবিয়েন্ট তাপমাত্রা হলো ৬২ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ৭২ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ১৬ডিগ্রি সেলসিয়াস ২২ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯৫ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা ফোনের ব্যাটারি ক্যাপাসিটির স্থায়ীভাবে ক্ষতি করতে পারে।
আবার খুব কম তাপমাত্রা যেমন ৩২ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মতো তাপমাত্রা ফোনের ব্যাটারি ড্যামেজ করতে পারে। এমন ঠান্ডা তাপমাত্রায় ক্ষেত্রে ফোন শরীরের কাছে বা পকেটে রেখে উষ্ণ রাখা যেতে পারে।
👉 স্মার্টফোন চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ
লো পাওয়ার মোড চালু করলে ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপ রিফ্রেশ এর ফিচারটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এই ফিচারটির সুষ্ঠ ব্যবহার নিশ্চিতে এটি আরো কাস্টমাইজ করা যাবে। সেটিংস থেকে General সেকশনে প্রবেশ করুন। এরপর Background App Refresh এ ট্যাপ করে আলাদা অ্যাপের জন্য সেটিংসসমূহ ঠিক করতে পারবেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ ফিচারটি চালু থাকলে ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অ্যাপসমূহ আপডেট হতে থাকে, যা প্রচুর ব্যাটারি ব্যবহার করতে পারে। তাই এসএমএস, ফোন ও ইমেইল এর গুরুত্বপূর্ণ সেবা ছাড়া বাকিসব অ্যাপের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ রিফ্রেশ ফিচারটি বন্ধ রাখা উত্তম।
না, আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ একবার কমে গেলে তা আর বাড়ানো যায়না। তবে ব্যাটারি হেলথ অত্যাধিক পরিমাণে কমে গেলে সেক্ষেত্রে ব্যাটারি পরিবর্তন করা যেতে পারে, যার মাধ্যমে ব্যাটারি হেলথ আবার ফুল হয়ে যায়।
নোটিফিকেশন
যেকোনো অ্যাপের নোটিফিকেশন চালু থাকলে উক্ত অ্যাপের লেটেস্ট নোটিফিকেশনের জন্য ব্যাটারি ও ডাটা ব্যবহার করে সিস্টেম। তাই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসমূহের নোটিফিকেশন বন্ধ রেখে আইফোনের ব্যাটারি উল্লেখযোগ্যহারে সেভ করা যেতে পারে। আইফোন এর সেটিংসে প্রবেশ করে Notifications সেকশনে সকল অ্যাপের নোটিফিকেশন ম্যানেজ করা যাবে।
চার্জিং টিপস
আইফোনে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির ব্যাটারি লাইফ নির্ভর করে উক্ত ব্যাটারি কিভাবে চার্জ করা হয়েছে তার উপর। আদর্শ তাপমাত্রার হেরফের বা ওভারচার্জিং এর কারণে আইফোনের ব্যাটারি লাইফে প্রভাব পড়তে পারে। আপনার আইফোনের বক্সে দেওয়া চার্জার ব্যবহারের চেষ্টা করুন সবসময়। চার্জার দেওয়া না থাকলে সেক্ষেত্রে অফিসিয়াল অ্যাপল চার্জার দিয়ে তবেই আইফোন চার্জ করুন। যদিওবা ২৯ওয়াট এর ম্যাকবুক চার্জার দিয়ে আইফোন দ্রুত চার্জ করা যায়, (তাতে আইফোনের ব্যাটারিতে ইফেক্ট পড়তে পারে এমন শোনা যায়)। অর্থাৎ অ্যাপল কতৃক পরামর্শকৃত চার্জার ব্যবহার করাই উত্তম।
👉 অ্যাপল আইডি কি? Apple ID কেন দরকার?
চার্জিং এর ক্ষত্রে আইফোন এর ব্যাটারির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং ফিচারটি ব্যবহার করতে পারেন। ব্যাটারির সুরক্ষার পাশাপাশি ব্যাটারি হেলথ বজায় রাখতে সাহায্য করে এই ফিচার। অপটিমাইজড ব্যাটারি চার্জিং ফিচারটি চালু করতেঃ
- আইফোনের সেটিংসে প্রবেশ করুন
- Battery অপশনে ট্যাপ করুন
- Battery Health এ ট্যাপ করুন
- Optimised Battery Charging অপশনটি চালু করে দিন
ফোন কেস এর মধ্যে রেখে চার্জ করার কারণে অনেক সময় ওভারহিট হতে দেখা যায়। এমন কিছু হলে সম্ভব হলে আইফোন চার্জ করার সময় বাড়তি কভারটি খুলে রাখুন।
আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খেয়াল রাখার মাধ্যমে আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতে পারেন। যেমনঃ
- প্রয়োজন না হলে ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই, মোবাইল ডাটা, লোকেশন, ইত্যাদি ফিচার সরাসরি সেটিংস থেকে বন্ধ করে রাখুন
- আইওএস এর বেটা ভার্সনে ফোন আপডেট করা এড়িয়ে চলুন
- আইওএস স্ট্যাবল আপডেটসমূহ যথাসময়ে ডাউনলোড ও ইন্সটল করা জরুরি
- ফোনের চার্জ একদম শূণ্যে এনে চার্জ করা কিংবা সম্পূর্ণ ১০০% পর্যন্ত চার্জ করা থেকে বিরত থাকুন
- আইফোনের ব্যাটারি হেলথ ভালো রাখতে ৩০% এর নিচে এলে ফোন চার্জে বসান ও ৮০-৮৫% চার্জ হয়ে গেলে তা চার্জ থেকে খুলে ফেলুন (বেশিরভাগ সময় এটা অনুসরণ করুন। মাসে কয়েকবার ১০০% পর্যন্ত চার্জ দিতে পারেন আবার ০% এ চার্জ নিতে পারেন।)
বোনাস
👉 মোবাইলের ব্যাটারি ও চার্জ নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো জেনে নিন
👉 স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধির অজানা কিছু কৌশল
👉 স্মার্টফোনের ব্যাটারি ভাল রাখার উপায়
👉 মোবাইলের ডাটা খরচ কমানোর উপায়
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।