অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে গুগল ডিজাইন করেছে পুরোপুরি কাস্টমাইজ করা যায় এমন অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে। তবে এর পুরো সুযোগ আপনি সাধারণত নিতে পারেন না বেশ কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে। অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্ম ওপেন সোর্স হলেও স্মার্টফোনের অ্যান্ড্রয়েডের কোর অ্যাকসেস ব্যবহারকারীকে শুরু থেকেই দেয় না এই ওএস।
তবে আপনি যদি একটু বাড়তি ঝুঁকি নিতে চান এবং এই বিষয়ে একটু বেশি ধারণা রাখেন তবে চাইলেই আপনার এন্ড্রয়েড ফোন রুট করে ফোনকে নিজের ইচ্ছামতো ঢেলে সাজানো সম্ভব। কিন্তু রুট করা ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্যাপার। এতে করে আপনার ফোন হারিয়ে গেলে আপনার ফোনের মধ্যে প্রবেশ করা সহজ হয়ে যায়। তাই আপনার ব্যক্তিগত ফাইল ও তথ্য হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে।
এছাড়া রুট করা অবস্থায় ভুল কিছু করে ফেলে আপনার ফোনের সফটওয়্যারকে পুরোপুরি অকেজো করে ফেলাও সম্ভব। তাই সাধারন ব্যবহারকারীদের জন্য রুট কোনো ভালো ব্যাপার নয়। তবে কি রুট ছাড়া আপনার ফোনের ইউআই বা পুরো ফোনকে নতুন করে সাজানো সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব।
বর্তমানে বাজারে থাকা সকল অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই কিছু না কিছু কাস্টমাইজ করার অপশন দেয়া থাকে। এছাড়া একটু কষ্ট করে কিছু ধাপ অনুসরন করলে আপনি নিজেই আপনার ফোনকে খুব সুন্দরভাবে সাজাতে পারেন রুট ছাড়াই – ফোনকে আলাদা কোনো ঝুঁকিতে না ফেলে। এই পোস্টে আমরা রুট ছাড়া আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনকে কীভাবে ঢেলে সাজানো সম্ভব সেটা নিয়ে আলোচনা করবো।
ফোনের হোম স্ক্রিন নিজের মতো করে সাজানো
আপনার ফোনের হোম স্ক্রিন সবসময় আপনার সামনে থাকে এবং এটিই আপনি সবথেকে বেশি দেখে থাকেন। তাই হোমস্ক্রিনকে সুন্দরভাবে সাজানো গেলে পুরো ফোন চালানোর অভিজ্ঞতাই পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। হোম স্ক্রিন নতুনভাবে সাজানোর অনেক রকমের উপায় আছে যা আপনার হোম স্ক্রিনকে আরও সুন্দর দেখাতে পারে এবং আরো কার্যকরীও করে তুলতে পারে।
- প্রথম উপায়টি হচ্ছে একটি নতুন লঞ্চার ইনস্টল করা। বর্তমানে প্লেস্টোরে অসংখ্য থার্ড পার্টি লঞ্চার আছে যা বিভিন্ন ফিচার দিতে পারে আপনাকে। কিছু লঞ্চার আছে যেগুলো খুবই হালকা ধরনের এবং দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম। যেমন: নোভা, স্মার্ট লঞ্চার, হাইপেরিয়ন, অ্যাকশন ইত্যাদি নামের লঞ্চারগুলো। আবার কিছু লঞ্চার আছে যা তাদের সৌন্দর্য বা বিশেষ ফিচারের জন্য বিখ্যাত। আপনি প্লেস্টোরে সার্চ দেয়ার মাধ্যমে জনপ্রিয় লঞ্চারগুলো ইনস্টল করে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন কোনটি আপনার পছন্দ।
- আপনার হোম স্ক্রিনকে নতুন করে সাজানোর আরেকটি উপায় হলো আইকন প্যাক ব্যবহার করে সমস্ত অ্যাপের আইকন পরিবর্তন করে ফেলা। আইকন সবসময় আপনি দেখছেন এবং একই আইকন বারবার দেখবার ফলে তা সহজেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। তাই নতুন আইকন আপনার ফোনে নতুন জীবন দিতে পারে। প্লেস্টোরে অসংখ্য সুন্দর আইকন প্যাক রয়েছে। থার্ড পার্টি লঞ্চার ব্যবহার করে এই আইকন প্যাক ইনস্টল করে আপনি সমস্ত আইকন পরিবর্তন করতে পারবেন। কোনো কোনো ফোনে আইকন পরিবর্তন করতে থার্ড পার্টি লঞ্চারের প্রয়োজন হয় না। যেমন স্যামসাং নিজে থেকেই তাদের ফোনে এই ফিচারটি দিয়ে রেখেছে। শুধু আইকন প্যাক ইনস্টল করে নিলেই স্যামসাং ফোনে পুরো ফোনের আইকন পরিবর্তন সম্ভব।
- লাইভ ওয়ালেপার দিয়েও আপনি পুরো হোম স্ক্রিন পরিবর্তন করে ফেলতে পারবেন। ভালো ওয়ালপেপার একটি ফোনের চেহারাকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলতে পারে। অপরিবর্তিত ওয়ালপেপারের প্রতি আকর্ষণ খুব দ্রুতই চলে যায়। লাইভ ওয়লপেপার সেখানে আলাদা। এই ওয়ালপেপারগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে একটা আলাদা আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে লাইভ ওয়ালপেপার সাধারণ ওয়ালপেপার হতে বেশি ব্যাটারি খরচ করতে পারে। প্লেস্টোরে অসংখ্য লাইভ ওয়ালপেপার খুঁজে পাবেন।
- আরেকটি সুন্দর ও কার্যকরী উপায় হলো উইজেট। উইজেট এমন একটি জিনিস যা সবসময় আপনার হোম স্ক্রিনের উপর অবস্থান করে বিভিন্ন কাজ দ্রুত করে ফেলতে আপনাকে সহায়তা করে। কিছু উইজেট আপনাকে বিভিন্ন তথ্য দ্রুত দেখে নিতে সাহায্য করবে যেমন: আবহাওয়ার উইজেট বা সময়ের উইজেট। আবার কিছু উইজেট আপনাকে বিভিন্ন কাজ দ্রুত করতে সাহায্য করবে যেমন: ফোনের অডিও প্লেয়ারের উইজেট। উইজেটগুলো আপনার ফোনের পুরো চেহারাই পাল্টে দিতে সক্ষম।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
ফোনের লক স্ক্রিন সাজানো
হোম স্ক্রিনের পর যেদিকে আপনি দৃষ্টি দিতে পারেন সেটা হচ্ছে আপনার লক স্ক্রিন। এটিও সারাদিন অসংখ্যবার আপনার সামনে আসে। তাই সুন্দর দেখতে একটি লক স্ক্রিন অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। বর্তমানে সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে লকস্ক্রিনের বিভিন্ন অপশন পরিবর্তন করার জন্য আলাদা সেটিংস রয়েছে।
লক স্ক্রিনের সেটিংস থেকে যেটি আপনি প্রথমেই পরিবর্তন করতে পারেন সেটি হচ্ছে আপনার লক স্ক্রিনের নোটিফিকেশনগুলো কীভাবে আসবে। সবথেকে ভালো হয় যদি ‘Show Notifications But Hide Content’ এই অপশনটি সিলেক্ট করে দেন। এতে করে যখন নোটিফিকেশন আসবে তখন ফোন আপনাকে জানিয়ে দিবে, কিন্তু নোটিফিকেশন এর মধ্যে কী আছে সেটি জানাবে আপনার ফোন আনলক করলে।
আরেকটি অপশন যেটি আপনি লক স্ক্রিনের সেটিংসে গিয়ে পরিবর্তন করতে পারেন সেটি হল লক স্ক্রিনের ওয়ালপেপার। লকস্ক্রিনের ওয়ালপেপারটি পরিবর্তন করে নিয়ে আপনার পছন্দমতো কোন একটি ওয়ালপেপার এখানে দিয়ে দিতে পারেন। লক স্ক্রিনে একটি সুন্দর ওয়ালপেপার আপনার পুরো ফোনের চেহারা পাল্টে দিতে পারে।
এছাড়াও বিভিন্ন ফোন ম্যানুফ্যাকচারারভেদে লক স্ক্রিনের বিভিন্ন সেটিংস পরিবর্তন করার জন্য আলাদা আলাদা বিভিন্ন অপশন রয়েছে। স্যামসাং ফোনে আপনি চাইলে লক স্ক্রিনের উইজেটগুলো পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
👉 মোবাইলে নিজের অবস্থান জানুন সহজেই!
👉 স্মার্টফোনে সেরা পারফর্মেন্স পেতে করণীয়
ব্যাটারি লাইফের উন্নতি
ব্লটওয়্যার বা আগে থেকে ইন্সটল থাকা কিছু কিছু অ্যাপ বেশ বিরক্তিকর হতে পারে। এসব অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে আপনার ফোনের ব্যাটারি এবং রিসোর্স খরচ করতে পারে। অনেক সময় অ্যাপগুলো চাইলেও আনইন্সটল করা যায় না। তবে যেসব বাড়তি অ্যাপ আপনার দরকার হয় না এবং আনইন্সটল করা যায় সেগুলো চাইলেই আপনি আনইন্সটল করে নিতে পারেন। এতে করে ফোনের স্টোরেজ এবং ক্ষেত্রবিশেষ ব্যাটারিও কম খরচ হবে।
ব্যাটারি কম খরচ করতে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো লিমিট করে দিতে পারেন। এছাড়া ব্রাইটনেস কম রাখলেও ব্যাটারি কম খরচ হয়।
ফোনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি
ফোন আপনার সবথেকে ব্যক্তিগত জিনিস। তাই এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আপনার ফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সময়ই লক স্ক্রীন ব্যবহার করুন। ফোনে সবসময় একটি পাসওয়ার্ড, পিন অথবা প্যাটার্ন রাখলে ফোন চুরি গেলেও তথ্য চুরি হওয়ার ভয় কমে যায়। এছাড়া চাইলে আপনি ফোনের জন্য আলাদা অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপ এবং চুরি ঠেকানোর বিভিন্ন অ্যাপ ইন্সটল করতে পারেন।
👉 এন্ড্রয়েড ফোনের নিরাপত্তায় সবচেয়ে কার্যকর কিছু টিপস
যোগাযোগের অ্যাপগুলো পরিবর্তন
ফোনের প্রধান কাজই হচ্ছে যোগাযোগ রক্ষা। তাই ফোনে থাকা বিভিন্ন যোগাযোগের অ্যাপগুলো আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তন করে নিতে পারেন। সব অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সাধারণত ডিফল্ট যোগাযোগের অ্যাপগুলো ভালো কাজ করে। তবে বাড়তি কিছু ফিচার বা সুবিধার জন্য আপনি থার্ড-পার্টি বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
- যদি ফোনে থাকা ডিফল্ট ডায়ালার অ্যাপটি আপনার পছন্দ না হয় তাহলে প্লেস্টোর হতে বিভিন্ন ডায়ালার অ্যাপ ইন্সটল করতে পারেন। গুগলের ফোন অ্যাপ বেশিরভাগ অ্যান্ড্রয়েড ফোনেরই ডিফল্ট ডায়ালার। তবে এটি যদি আপনার ফোনে না থাকে তবে প্লেস্টোরে পেয়ে যাবেন। এছাড়া ট্রুকলার, ট্রুফোন, ড্রুপ, সিম্পল ডায়ালার, সিম্পল কলার আইডি ইত্যাদি বিভিন্ন অ্যাপ খুব ভালো ফিচারযুক্ত।
- গুগল ম্যাসেজ অ্যাপটি ভালো ফিচারযুক্ত টেক্সট মেসেজিং অ্যাপ। এটিও বেশিরভাগ এন্ড্রয়েড ফোনে ডিফল্ট মেসেজিং অ্যাপ। তবে আপনার ফোনে না থাকলে এটিও আপনি প্লেস্টোরে পেয়ে যাবেন।
- ফোনের কীবোর্ড একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ। চাইলে এই অ্যাপটিও নিজের ইচ্ছামত আপনি পরিবর্তন করে নিতে পারেন। বেশিরভাগ ফোনে জিবোর্ড কিবোর্ড অ্যাপটি দেওয়া থাকে যেটি গুগলের নিজস্ব কীবোর্ড অ্যাপ। জিবোর্ড অনেক ফিচারযুক্ত একটি অ্যাপ। তবে জীবোর্ডের মতো আরো অনেক কিবোর্ড অ্যাপ রয়েছে। মাইক্রোসফটের সুইফটকি ভালো একটি কীবোর্ড অ্যাপ। এছাড়া গ্রামার চেকিং ফিচার ভালো চাইলে গ্রামারলি কীবোর্ড দেখতে পারেন।
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই পরিবর্তনগুলো করে নিলে আপনার নিজের ডিভাইসটি আপনার কাছে নতুনের মতো মনে হবে। আপনার স্মার্টফোনটি আপনি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করেন। তাই সময় নিয়ে কিছু জিনিস পরিবর্তন করে নিলে তা যেমন আপনার জীবনকে সহজ করবে, তেমনি ফোনের ব্যবহারকেও আনন্দময় করে দিবে।
👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।