স্মার্টফোনে সেরা পারফর্মেন্স পেতে করণীয়

আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে করতে অনেক সময় ভুলে যাই যে আসলে আমরা হাতে একটা ছোট কম্পিউটার নিয়ে ঘুরছি। কম্পিউটারের পারফরমেন্স ঠিক রাখবার জন্য যেমন আপনাকে নিয়মিত তার পরিচর্যা করতে হয় তেমনি ফোনের পারফরমেন্স ঠিক রাখতেও পরিচর্যা করা প্রয়োজন।

আপনার ফোন যেমন ইচ্ছা তেমন করে ব্যবহার করলে ফোনটি একদম পুরনো হবার অনেক আগে থেকেই পারফরমেন্স খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই যত্ন নিয়ে ব্যবহার করলে আপনার স্মার্টফোনটি অনেকদিন ধরে সেবা দিতে পারবে। বারবার ফোন পরিবর্তন করা কোনো সমাধান নয়। তাই কীভাবে আপনার ফোনের যত্ন নেবেন এবং পারফরমেন্স ঠিক রাখবেন জেনে নিন এখান থেকে।

ফোনের হার্ডওয়্যারের যত্ন নেবেন যেভাবে

ফোনের দুটি অংশ। একটি তার হার্ডওয়্যার ও আরেকটি সফটওয়্যার। আমাদের পোস্টে প্রথমে ফোনের হার্ডওয়্যারের যত্ন আপনি কীভাবে নিতে পারেন সেটি নিয়ে আলোচনা করবো।

১. ব্যাটারির হেলথ ঠিক রাখতে করণীয়

আপনার ফোন বা অন্য যেকোনো গ্যাজেটের ব্যাটারি কীভাবে কাজ করে এটি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখা জরুরি। তাহলে আপনি ব্যাটারিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে এর লাইফ স্প্যান বাড়াতে পারবেন। নিচের কাজগুলো আপনার ব্যাটারিকে দীর্ঘদিন ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

  • অনেক বেশি গরম বা অনেক বেশি ঠান্ডায় ফোন ব্যবহার না করাই ভালো। আপনার ফোনের তাপমাত্রা ০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা উচিত সবসময়।
  • চার্জ দেয়ার সময় ফোন ব্যবহার করা এড়িয়ে চলতে পারলে ভাল, যেহেতু ফোন এসময় গরম হয়ে যায়।
  • তারের মাধ্যমে চার্জ দেয়াই সবথেকে ভালো। ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের সময় অপ্রয়োজনীয় তাপ উৎপন্ন হয় যা ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।
  • ফোনে পুরোপুরি চার্জ দেয়া বা পুরোপুরি চার্জ শেষ করে ফেলা উচিত নয়। চার্জ সবসময় ৩০ থেকে ৮০ ভাগের মধ্যে রাখা ভালো। ব্যালেন্স নষ্ট যত বেশি হয় ব্যাটারির স্বাস্থ্য ততই কমতে থাকে।
  • সারা রাত ধরে ফোনে চার্জ দিয়ে রাখাও উচিত নয়। যদিও এটা আহামরি ক্ষতিকর কিছু নয়, তবে এটা দীর্ঘমেয়াদে ফোনের জন্য ভাল নয়।

আমাদের অন্যান্য পোস্ট থেকে জেনে নিন এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি হেলথ কিভাবে ভাল রাখতে হয়। এছাড়া আইফোনের ব্যাটারি হেলথ ভাল রাখার উপায় আমাদের অন্য পোস্টে জানতে পারবেন।

২. ধূলাবালি এবং পানি হতে দূরে থাকা

ফোনকে ধূলাবালি ও পানি হতে সবসময় দূরে রাখুন। কখনও কখনও ধূলাবালি বা পানি থেকে কোনো ক্ষতি হলে আপনি সাথে সাথে তা বুঝতেও পারবেন না। ধীরে ধীরে এসবের দ্বারা ক্ষতি বুঝতে পারা যায়। কিন্তু ততক্ষণে আর কিছু করার থাকে না।

তবে কিছু ফোনে আইপি৬৮ রেটিং থাকে। এর মানে হলো এসব ফোন পানি ও ধূলাবালিতে সহজে নষ্ট হবে না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে এসব ফোন কোনোভাবেই নষ্ট হবে না। বেশি সময় পানিতে থাকলে বা বেশি ধূলা লাগলে এসব ফোনেও সমস্যা হতে পারে। তাই ফোন যেমনই হোক ধূলাবালি ও পানি হতে দূরে রাখাই ভালো।

৩. কেস ও স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার

কেস ও স্ক্রিন প্রটেক্টর সকল ফোনের জন্যই খুব কম মূল্যে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকম ফ্যাশনেবল কেস আপনার ফোনের সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দিতে পারে। অবশ্য অনেকেই কেস ও স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করতে চান না ফোন ভারী ও মোটা হয়ে যায় বলে। তবে কেস ও স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার ভালো একটি অভ্যাস। এতে করে ফোন হাত থেকে পড়ে গেলে সহজেই রক্ষা পায়। তাই এগুলো ব্যবহার করুন ফোনের যত্ন নিতে।

৪. ফোনের ছিদ্রগুলো নিয়মিত পরিষ্কার

ফোনে চারপাশে অনেক ছিদ্র থাকে বিভিন্ন কাজের জন্য। যেমন স্পিকার গ্রিল থাকে সাউন্ড বের হবার জন্য। এছাড়া মাইক্রোফোন, চার্জিং, হেডফোন জ্যাকের জন্যও আলাদা আলাদা ছিদ্র থাকে বিভিন্ন ফোনে। এসব ছিদ্রগুলো নিয়মিত টুথপিক বা সিম ইজেক্টর টুল দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন হালকা ভাবে। তাছাড়া বাজারে অ্যান্টি ডাস্ট প্লাগ নামের টুল পাওয়া যায় ধূলাবালি হতে বাঁচতে। এসবে ময়লা জমে গিয়ে আপনার ফোনে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. স্ক্রিন, ক্যামেরা এবং পাশ পরিষ্কার রাখা

স্ক্রিন, ক্যামেরা ও ফোনের পাশে ফ্রেমগুলো ব্যবহার করতে করতে ময়লা হয়ে যায় এবং তা থেকে অনেকরকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার ফোনের এইসব অংশগুলো পরিষ্কার করা জরুরি।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

vivo smartphone

👉 এন্ড্রয়েড সেফ মোড কি? চালু করার উপায় ও সুবিধা জানুন

ফোনের সফটওয়্যারের যত্ন নেবেন যেভাবে

এবার আসা যাক ফোনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার অংশের যত্নের ব্যাপারে। নিচের কাজগুলো করার মাধ্যমে ফোনের সটওয়্যারকেও ভালো রাখতে পারেন।

৬. অযাচিত জিনিস দিয়ে স্টোরেজ না ভরে ফেলা

যদি আপনাকে কিছু সময় পর পরই ফোনের স্টোরেজ খালি করতে হয় বা এ সংক্রান্ত নোটিফিকেশন পেতে থাকেন তবে বুঝে নিতে পারেন ফোন থেকে আপনি পুরো পারফরমেন্স পাচ্ছেন না। ফোনের স্টোরেজ বেশি ভরে গেলে ফোন ল্যাগ করা শুরু করে এবং ধীর হয় যায় সকল কাজই। তাই এ থেকে বাঁচতে ফোনের বাড়তি অ্যাপ ও ফাইলগুলো ডিলিট করে দিয়ে বড় একটা জায়গা ফাঁকা করে রাখতে পারেন।

৭. ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপগুলো আপডেটেড রাখা

ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ও অ্যাপগুলো আপডেটেড রাখা খুবই জরুরি। নতুন আপডেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বাগ ঠিক করা হয়। আরো অপটিমাইজড করে দ্রুত ও কম চার্জ খরচ করে ফোন কাজ করতে পারে। এছাড়াও নতুন বিভিন্ন ফিচারও পাবেন আপডেট করার মাধ্যমে। তাই অ্যাপ ও অপারেটিং সিস্টেম সবসময় আপডেট করে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করতে পারবেন ফোনের সেটিংস হতে। আর অ্যাপ আপডেট করতে প্লেস্টোর বা অ্যাপ স্টোরে অপশন পেয়ে যাবেন।

👉 অ্যান্ড্রয়েড ফোন আপডেট করার নিয়ম

👉 এন্ড্রয়েড অ্যাপ আপডেট করার নিয়ম (এবং উপকারিতা)

৮. ফোন অনুযায়ী গেম খেলা

আপনার ফোন যদি কম মূল্যের এবং কম শক্তিশালী হয়ে থাকে তবুও অনেক গেমস আছে যা আপনি ডাউনলোড করে একদম লো সেটিংসে খেলতে পারবেন। বিশেষ করে বাজেট ও মিডরেঞ্জ ফোনগুলোতে। এসব ফোনে এরকম ভারী গেমস না খেলাই ভালো। এতে ফোন অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং পারফরমেন্সেও সমস্যা দেখা দেয়। তাই গেমিং ফোন না হলে ভারী গেম খেলা থেকে বিরত থাকা উচিত।

👉 সেরা কিছু গেমস যা কম র‍্যামের এন্ড্রয়েড ফোনেও ভাল চলবে

৯. অনিরাপদ ও আনঅফিসিয়াল উৎস থেকে অ্যাপ ইনস্টল না করা

ম্যালওয়্যার ও ভাইরাস থেকে বাঁচতে ফোনের অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোর হতেই শুধুমাত্র অ্যাপ ডাউনলোড করা উচিত। অনিরাপদ উৎস হতে অ্যাপ ডাউনলোড করে ফোনের তথ্য চুরি হবার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ফোনের পারফরমেন্সেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্লেস্টোর নিরাপদ উৎস।

👉 এন্ড্রয়েডে বাইরের APK ফাইল ইনস্টলের বিপদগুলো জানুন

১০. প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ফোন রিস্টার্ট করা

দীর্ঘ সময় চালু থাকলে সফটওয়্যার পূর্ণ শক্তিতে কাজ করতে পারে না। মাঝে মধ্যে তাই এতে বিরতি দেয়া প্রয়োজন। আর তাই সব ফোন সপ্তাহে অন্তত একবার রিস্টার্ট (মানে বন্ধ করে চালু করা) ভালো। এতে করে সফটওয়্যার নতুন ভাবে চালু হয় এবং সব কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারে।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,568 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *