ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় ও কেনার আগে করণীয়

ল্যাপটপ আমাদের নিত্যদিনের ব্যবহারের একটা ডিভাইস। একটা সময় ডেস্কটপের জয়জয়কার থাকলেও এখন মানুষ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপই বেশী পছন্দ করে। কারন এটার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে যা ডেস্কটপে পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। তবে আজকে আমরা ল্যাপটপের সুবিধা নিয়ে কথা বলবো না, আমরা কথা বলবো, ল্যাপটপ কিনতে চাইলে আপনার কি করা উচিত বা ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় কি।

আজকের পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনি বুঝতে পারবেন যে, কোন ল্যাপটপটি আপনার জন্য একদম পারফেক্ট। ভালো ল্যাপটপের বৈশিষ্ট্যগুলো এখানে আমরা উল্লেখ করবো এবং আশা করি এটা আপনাদের যথেষ্ট সাহায্য করবে। তো ল্যাপটপ কেনার আগে জেনে নিন এই ফ্যাক্টর গুলো।

ল্যাপটপ কেনার আগে যে ৭ টি বিষয়ে জেনে নিতে হবে

ল্যাপটপ কেনার আগে যদি আপনি ৭ টি বিষয়ে ভালোভাবে বুঝে নেন, তাহলে আপনাকে ডিসিশন নিতে খুব বেশী বেগ পেতে হবে না এবং আপনি অনেক সহজেই একটা ভাল মানের ল্যাপটপ বাছাই করে নিতে পারবেন আপনার নিজের জন্য।

আপনার দরকারি কনফিগারেশন এবং স্পেসিফিকেশন নোট করুন

একেক ধরনের কাজের জন্য একেক ধরনের স্পেকস এবং কনফিগারেশন থাকে। ধরুন আপনি বাসায় একান্তই নিজে ব্যবহার করবেন। কিংবা শুধু মাত্র কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে কাজ করবেন, লেখা-লেখি, প্রিন্টিং এসব। তখন আপনার খুব বেশী হাই-কনফিগারড ল্যাপটপ লাগবে না। কিন্তু আপনি যদি গেম খেলতে যান কিংবা ভিডিও এডিটিং করতে যান, তাহলে আপনাকে একটু ভালো কনফিগারেশনওয়ালা ল্যাপটপ কিনতে হবে।

তাই ল্যাপটপ কেনার আগে শুরুতেই আপনার প্রয়োজন অনুসারে স্পেকস একটু নোট করে নিতে হবে। যদি আপনার দরকার হয় ৪ জিবি র‍্যাম, সেখানে ১৬ জিবি নিয়ে টাকা নষ্ট করার কোনই দরকার নাই। আবার আপনার দরকার ১৬ জিবি র‍্যাম কিংবা আপনি নিলেন ৪ জিবি, সেটা আপনার কাজের গতি কমিয়ে দিবে। এই জন্য সব গুলো পার্টস এর স্পেকস ভালো করে এনালাইজ করে নেওয়া উচিত। 

আপনার ল্যাপটপের সঠিক সাইজ বাছাই করুন

ল্যাপটপের বিভিন্ন সাইজ রয়েছে। সাধারন ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ গুলো ছোট, ১৫ ইঞ্চি গুলো মাঝারি এবং ১৬ ইঞ্চি গুলো বড় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। আপনাকে এই ৩টা ক্যাটাগরি থেকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে আপনার প্রয়োজন অনুসারে। আপনি যদি ভিডিও ইডিটিং করেন, তাহলে হয়তো আপনার একটু বড় স্ক্রিনের প্রয়োজন হবে। দেখা গেছে, সাইজের সাথে দাম অনেক উঠানামা করে। 

তাই খুব বেশী প্রয়োজন না হলে বেশী বড় সাইজের ল্যাপটপ ইউজ না করাটাই ভাল। এছাড়াও ছোট সাইজের ল্যাপটপ হলে সেটা অনেক পোর্টেবল হয়, আপনি খুব সহজেই সেটাকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে পারেন। এবং আপনাকে যদি ল্যাপটপ নিয়ে অনেক সময় এদিকে ওদিকে চলা ফেরা করতে হয় তাহলে ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপের কোনই বিকল্প নেই।

কিবোর্ড এবং টাচপ্যাড পরীক্ষা করুন

অনেকে একটা ভুল করে থাকেন, তারা ভাবেন ল্যাপটপের কিবোর্ড বা টাচপ্যাড ভালো না হলে ও সমস্যা নাই, কারন কাজের জন্য এক্সটার্নাল ইউজ করতে হবে। কিন্তু এটা আসলে ঠিক না। আমরা এমন কিছু সিচুয়েশনে ল্যাপটপ নিয়ে কাজে বসেছি, যেখানে কোন ভাবেই এক্সটার্নাল কিবোর্ড বা মাউজ ইউজ করার সুযোগ নেই। অতএব, এই দুইটা পার্ট খুবই জরুরি। 

আপনি যে মডেলের ল্যাপটপ কিনতে যাচ্ছেন, সেটার টাচপ্যাডের পারফর্মেন্স কি সেটা আপনি নিজে পরীক্ষা করবেন এবং এর পাশাপাশি অনলাইনে কিছু রিভিউ ও দেখে নিতে পারেন। অনলাইনে রিভিউ দেখলে আপনার মধ্যে অনেক ভালো একটা ধারনা চলে আসবে সেটা নিয়ে। 👉 ডেল নাকি এইচপি? কোন ল্যাপটপ বেশি ভাল?

laptop tips

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ডিসপ্লে কোয়ালিটি 

ডিসপ্লে কোয়ালিটি একটা অনেক বড় ইস্যু, যখন আমরা ল্যাপটপ নিয়ে কথা বলছি। নানা ধরনের ডিসপ্লে টাইপ এবং সাইজওয়ালা ল্যাপটপ এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আপনার প্রয়োজন অনুসারে আপনাকে ডিসিশন নিতে হবে কোন সাইজের ডিসপ্লে আপনার জন্য উপযুক্ত। অবশ্যই Full HD অথবা 1920-by-1080p এই রেজুলেশনের ডিসপ্লে থাকলে ভাল হবে। এটা হচ্ছে মিনিমাম রিকুয়ারমেন্ট, এর চেয়ে বেটার যদি পাওয়া যায় তাহলে আরো ভালো।

ল্যাপটপের ডিসপ্লের ৩ টা টাইপ আছে, সেগুলো হচ্ছে- Twisted Nematic (TN), In-Plane Switching (IPS), and Organic Light-emitting Diode (OLED)। এই ৩ টা টাইপেরই নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ল্যাপটপ কেনার আগে আপনাকে ডিসাইড করতে হবে কোন টাইপের স্ক্রিন আপনার প্রয়োজন, সে অনুযায়ী আপনাকে ডিসিশন নিতে হবে।

ব্যাটারি লাইফ/ব্যাকআপ

যদিও ল্যাপটপ সব সময় বিদ্যুৎ সংযুক্ত করে ব্যবহার করাই শ্রেয়, তবুও ব্যাটারি লাইফ অনেক বড় একটা ইস্যু। কারন দেখা গেলো, আপনার জরুরি একটা কাজের সময় বিদ্যুৎ চলে গেলো কিন্তু আপনাকে কাজটা শেষ করেই উঠতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপে যদি ব্যাটারি ব্যাকাপ ভালো থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই কাজটা সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন। তাই অবশ্যই, ব্যাটারির লাইফ, ব্যাটারির ক্যাপাসিটি এবং ব্যাটারির ব্যাকআপ এই বিষয়গুলো ক্লিয়ার হয়ে নিবেন ভালো করে। তাহলে খুব সহজেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন আপনার কি ল্যাপটপ দরকার।

ব্র্যান্ড

ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড অনেক বড় একটা ব্যাপার। পরিচিত এবং নামীদামী কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ কেনাই ভাল। দেখা যাবে হয়তো অন্য কোন অখ্যাত ব্র্যান্ড আপনাকে অনেক কম দামে অনেক হাই কনফিগারেশন অফার করতে পারে, তবে ওসব এভয়েড করাটাই শ্রেয়। 👉 ম্যাকবুক কী? অ্যাপলের ম্যাকবুক ল্যাপটপ এত জনপ্রিয় কেন?

বাজেট

পরিশেষে হচ্ছে বাজেট, কারন সব কিছুর মুলে রয়েছে আপনার ঠিক কত টাকা খরচ করার ইচ্ছা রয়েছে একটা ল্যাপটপ কিনতে। আপনার বাজেট অনুযায়ী আপনার পছন্দের ল্যাপটপ মিলবে কি না সেটাও একটা ইস্যু। সেজন্য আপনাকে কেনার আগে অবশ্যই আপনার বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ল্যাপটপগুলো অনলাইনে চেক করে বাছাই করে রাখতে হবে।

উপরোক্ত ৭টি ফ্যাক্টর এনাইলাইজ করলেই আপনি আপনার জন্য একদম আদর্শ একটা ল্যাপটপ পেয়ে যাবেন, যা আপনি খুব ভালো ভাবেই আপনার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করছি আমাদের এই গাইড আপনাকে ল্যাপটপ পছন্দ করতে সাহায্য করবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,569 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *