কম্পিউটার নিয়ে কিছু ভুল ধারণা যা আপনার দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে

সংশ্লিষ্ট আর সব জিনিসের মতই কম্পিউটার নিয়েও প্রচলিত কিছু বিভ্রান্তি বা ভুল ধারণা রয়েছে যেগুলো আদতে সত্য না হলেও অনেকেই সেগুলো বিশ্বাস করেন। কম্পিউটার নিয়ে তেমনি কিছু ভুল ধারণা বা ‘মিথ’ নিয়ে এই আর্টিকেল। আশা করি আপনি এগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানবেন এবং অন্যদেরও জানাবেন। তো, চলুন শুরু করি।

‘হ্যাকাররা আপনার পিসি হ্যাক করার জন্য বসে আছে’

আমেরিকান সাইফাই মুভি দেখে থাকলে হ্যাকিং শব্দটি শুনলেই আপনার চোখে যে দৃশ্যটি ভেসে ওঠার কথা তা হলো হুডি পড়া এক লোক পিসির সামনে বসে টার্মিনাল উইন্ডোতে লাইনের পর লাইন কোড লিখে চলেছে। আসলে ব্যাপারটা এমন না। হ্যাকিং মানে এটা না যে কোন একজন বা কয়েকজন ব্যক্তি রিয়েলটাইমে আপনার পিসি হ্যাক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বরং হ্যাকাররা কিছু অটোমেটেড প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে হ্যাকিং করে, যে প্রোগ্রামগুলো হয়তো সারাক্ষণ শুধু আপনার উপরই না বরং অসাবধান সকলের উপরই নজর রেখে যাচ্ছে। তাই এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আপনি যদি খুব হাই-প্রোফাইল কেউ না হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পিসি হ্যাক করার জন্য রিয়েলটাইমে কেউ বসে নেই!

‘বেশি র‍্যাম ব্যবহার হওয়া খারাপ’

এটি আরেকটি ভুল ধারণা। অনেকেই ভাবেন ‘পিসির বিভিন্ন প্রসেস বেশি মেমোরি দখল করে রাখছে তাই টাস্ক কিলার ইউজ করবো’। আসলে এইসব টাস্ক-কিলার প্রোগ্রাম তেমন কোন কাজেই লাগে না। বরং এগুলো মেমোরি অপটিমাইজেশনের নাম করে দরকারি প্রসেস বন্ধ করে দিয়ে আপনার পিসিকেই স্লো করে দিতে পারে। খালি র‍্যাম এর আদতে কোন কাজই নেই। তাই র‍্যাম একটু ব্যবহার হওয়া নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ নেই!

‘ডিফ্রাগমেন্টেশন প্রোগ্রামগুলো বেশ কাজের’

উইন্ডোজ ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্টেশনের জন্য অনেক প্রোগ্রামই পাওয়া যায়। অনেকেই ভাবেন যে এই প্রোগ্রামগুলো নিয়মিত বিরতিতে পিসিতে রান করানো উচিত। কিন্তু এটাও একটা মিথ বা ভুল ধারণা। বরং উইন্ডোজ ১০, ৮ এবং ৭ যথেষ্ট স্মার্ট এবং এগুলো কোনো থার্ড পার্টি প্রোগ্রাম ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্ট করতে পারে। তার উপর আপনি যদি হার্ড ডিস্কের বদলে এসএসডি স্টোরেজ ব্যবহার করেন তাহলে এসএসডি’কে ডিফ্র্যাগমেন্ট করলে বরং ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং পুরাতন ধ্যানধারণা একটু নতুন করে ঝালাই করে নিতে হবে। হার্ড ডিস্ক ও এসএসডির ব্যাপারে আরও জানতে পড়তে পারেনঃ হার্ড ডিস্ক নাকি এসএসডি স্টোরেজ? কম্পিউটারে কোনটি ভাল হবে?

‘ভাইরাসগুলোই আপনার পিসিকে স্লো করে দেয়ার জন্য দায়ী’

ভাইরাস ও অন্যান্য ম্যালওয়ারই শুধুমাত্র আপনার পিসিকে স্লো করে দেয় না। বরং আপনি যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রামকে নিরীহ মনে করেন হয়তো এগুলোই ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চালিয়ে আপনার পিসিকে স্লো করে দিচ্ছে। আপনার ব্রাউজারে অনেকগুলো ট্যাব খুলে রাখলে এবং মিডিয়া প্লেয়ার/এডিটিং সফটওয়্যার উইন্ডো চালু রাখলেও পিসি স্লো কাজ করে। অনেক ভাইরাস চুপিচুপি পিসি স্লো না করেও কুকর্ম সাধন করতে পারে।

‘এন্টিভাইরাস আপনাকে নিরাপদ রাখবে’

প্রকৃতপক্ষে কোনো এন্টিভাইরাসই আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারবেনা যদি আপনি নিজে সতর্ক না হন। থার্ড-পার্টি এন্টিভাইরাসগুলো যেমন আপনাকে নিরাপত্তা দেবে তেমনি আপনার পিসি’র পারফরমেন্সেও আঘাত করবে। উইন্ডোজ ১০ পিসিতে পারতপক্ষে থার্ড-পার্টি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার না করাই ভাল। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার তো আছেই। আর আপনার যদি তাতেও আত্নবিশ্বাস না আসে (যদি অত্যাধিক পরিমাণ ফাইল আনানেওয়া/ডাউনলোড করেন) তাহলে আলাদা এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে পারেন। ২০১৮ সালের সেরা ৫ ফ্রি এন্টিভাইরাস সম্পর্কে জানতে এই পোস্টটি পড়ুন।

‘কাজ শেষে পিসি অফ করতে হবে’

এটিও একটি ভুল ধারণা। প্রতি রাতে বা নিয়মিত কাজ শেষে পিসি বন্ধ (শাট ডাউন) করে রাখা খুব জরুরি কিছু না। বরং পিসি বন্ধ করে আবার চালু করার পর কাজ শুরু করতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়। আপনি যদি একান্তই বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান তাহলে পিসি শাটডাউন না করে স্লিপ কিংবা হাইবারনেট মোড ইউজ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আরও জানতে পড়তে পারেনঃ প্রতিদিন কম্পিউটার শাট ডাউন করা উচিত নাকি সবসময় চালুই রাখবেন?

‘অটো আপডেট পিসি’র ক্ষতি করতে পারে’

সবসময় অটোমেটিক আপডেট খারাপ নয়। এটা ঠিক যে অনেকসময় আপনি পিসি অটো আপডেট করে অনেক বাগ এবং ইস্যু ফেইস করতে পারেন। কিন্তু এই আপডেটগুলো আপনার পিসিকে সুরক্ষিত রাখার জন্যই দেয়া। তাই অটো আপডেট ডিজেবল করে না রাখাটাই যুক্তিযুক্ত। যদিও, যারা ক্র্যাক করা সফটওয়্যার চালান এবং/অথবা অন্য আরেকদল যাদের ইন্টারনেট ডেটা সীমিত, তারা সব সময়ই অটো আপডেট বন্ধ করে রাখতে চান। এ ব্যাপারে আরও জানতে পড়তে পারেনঃ উইন্ডোজ ১০ এর অটোম্যাটিক আপডেট বন্ধ করার উপায়

‘ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ভালো নয়’

এটা ঠিক যে গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্সের এই জমানায় এসে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার আপনাকে খুব বেশি কিছু দিবে না। কিন্তু এটা একদম ফেলনা কিছুও নয়। যদিও মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে রিপ্লেস করে এজ ব্রাউজার লঞ্চ করেছে কিন্তু ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ১১ ও খুব ভালো একটি ব্রাউজার। মাইক্রোসফট এজ আরও চমৎকার একটি ইন্টারনেট ব্রাউজার যেটি উইন্ডোজ ১০ এর সাথে যাত্রা শুরু করেছে।

‘সি-ক্লিনার ও রেজিস্ট্রি ক্লিনার সফটওয়্যার পিসির স্পিড বৃদ্ধি করে’

আসলে পিসি ক্লিনিং প্রোগ্রামগুলো যতটুকু না কাজ করে তার চেয়ে বেশি এই প্রোগ্রামগুলো নিজেই আপনার পিসির মেমোরি দখল করে রাখে। এগুলো খুব একটা কাজের না। একই কথা আনইন্সটলার সফটওয়্যারের ক্ষেত্রেও চলে। উইন্ডোজের ডিফল্ট আনইন্সটলারই যথেষ্ট। খুব বেশি না ঠেকে গেলে এর জন্য আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার না করাই ভালো। তাছাড়া ঘন ঘন পিসির ব্রাউজার ক্যাশ ক্লিয়ার করলে তা আপনার ব্রাউজিং স্পিড কমিয়ে দেবে, কারণ ব্রাউজারের ক্যাশ কিছু কনটেন্ট ধরে রেখে সাইট লোড টাইম কমাতে সাহায্য করে। এ ব্যাপারে আরও জানতে পড়তে পারেনঃ সি-ক্লিনার সফটওয়্যার কি পিসির জন্য ক্ষতিকর?

আশা করি এই পোস্টটি আপনার কাজে লাগবে। বাংলাটেক টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক আরো অনেক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইল ইনবক্সে পেতে এখানে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করে নিন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *