বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বা যাকে সংক্ষেপে বিমান নামেও ডাকা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা। আমরা যারা নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ বা দেশের মধ্যে বিমানে ভ্রমণ করে থাকি তাদের কাছে এটি খুবই পরিচিত একটি নাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিদেশে ও দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে নিয়মিত বিমান সেবা পরিচালনা করছে। বর্তমানে বিমানের সেবা আরও উন্নত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে পরিধিও বাড়ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের জাতীয় বিমান সংস্থা। কাজেই ভ্রমণের ক্ষেত্রে যারা নিয়মিত উড়োজাহাজ ভ্রমণ করে থাকেন তাদের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়ে বিস্তারিত জানা থাকা প্রয়োজন। আজকের পোস্ট থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সকল বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যাবেন। জেনে নিতে পারবেন বিমান টিকেটের মূল্য, বিমানবহরের পরিচিতি সহ অনেক কিছুই।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচিতি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এটি ছিল বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো একমাত্র দেশীয় বিমান সংস্থা। সরকারীভাবে এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত ছিল ২০০৭ সাল পর্যন্ত। এরপর এই বিমান সংস্থাটিকে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রুপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্স সফলতার সাথে ১৪ টি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিমান ৩০ টি গন্তব্যে নিয়মিত তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রায় ৭০ টি দেশের সাথে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান সেবা চুক্তি রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মূল কার্যক্রম পরিচালিত হয় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে। এছাড়া চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও এটি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে এর মূল কার্যালয় অবস্থিত ঢাকার কুর্মিটোলায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বেশিরভাগ বৈদেশিক যাত্রী মূলত হজ্জ যাত্রী, পর্যটক, প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অভ্যন্তরীণ রুটেও নিয়মিত বিভিন্ন জেলায় তারা যাত্রী পরিবহন করে থাকে। বাংলাদেশে থাকা বেসরকারি বিভিন্ন বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিমান বহর

বর্তমান হিসাব অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান বহরে মোট ২১ টি বিমান রয়েছে। এই বিমান বহরে মোট ৪ টি সিরিজ বা ৪ টি ক্যাটাগরির বিমান রয়েছে। বোয়িং ৭২৭-৮০০ সিরিজে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট ৬ টি বিমান রয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব বিমান ২ টি। বিমান দুটির নাম মেঘদূত ও ময়ূরপঙ্খী। বাকি ৪ টি বিমান ইজারা নেয়া হয়েছে। এই ৪ টি বিমানের নাম S2-AFL, S2-AFM, S2-AEQ এবং S2-AEW। এসব বিমানে আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। ৬ টি বিমান মিলিয়ে এখানে মোট ১২ টি বিজনেস ক্লাস আসন ও ১৫০ টি ইকোনমি ক্লাস আসন রয়েছে।

বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর সিরিজে আছে মোট ৪ টি বিমান। এগুলো সবই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব মালিকানায় রয়েছে। ৪ টি বিমানের নাম হচ্ছেঃ পাল্কি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ এবং রাঙ্গা প্রভাত। ৪ টি বিমান মিলিয়ে এখানে বিজনেস ক্লাসের মোট ৩৫ টি আসন এবং ইকোনমি ক্লাসের মোট ৩৮৪ টি আসন রয়েছে।

বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজে মোট বিমান রয়েছে ৬ টি। এই বিমানগুলোও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিজস্ব মালিকানায় রয়েছে। এই সিরিজের বিমানগুলো আরও আধুনিক ও উন্নত। ৬ টি বিমানের নাম হচ্ছেঃ আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাংচিল, রাজহংস, সোনার তরী এবং অচিন পাখি। এখানে আপনি তিন ধরণের আসন পাবেন। বিজনেস ক্লাস আসন রয়েছে ৭৮৭-৮ মডেলের বিমানে মোট ২৪ টি এবং ৭৮৭-৯ মডেলের বিমানে ৩০ টি। প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের আসন পাবেন ৭৮৭-৯ মডেলের বিমানে মোট ২১ টি। এছাড়া সাধারণ ইকোনমি ক্লাসের আসন রয়েছে ৭৮৭-৮ মডেলের বিমানে মোট ২৪৭ টি এবং ৭৮৭-৯ মডেলের বিমানে ২৪৭ টি।

ড্যাশ ৮ সিরিজে আছে মোট ৫ টি বিমান। এই বিমানগুলো ছোট এবং মূলত অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে থাকে। বিমান ৫ টি হলঃ ধ্রুবতারা, আকাশ তরী, শ্বেতবলাকা, হংস মিঠুন এবং S2-AJW। এখানে বিজনেস ক্লাসের কোন আসন নেই। ইকোনমি ক্লাসের মোট ৭৪ টি আসন রয়েছে।

Biman Bangladesh Airlines

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

বিমানের রুট

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ৩০ টি রুট বা গন্তব্যে চলাচল করছে বর্তমানে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ দুই ধরণের রুটই রয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে রুট সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রমেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লাভজনক বিভিন্ন রুটে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে। গন্তব্যের তালিকা থেকে দেখে নিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেবা কোথায় কোথায় পাওয়া যাচ্ছে বর্তমানে।

অভ্যন্তরীণ রুটে বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সিলেট এবং সৈয়দপুর এই ৮ টি গন্তব্যে নিয়মিত চলাচল করছে।

এছাড়া উপমহাদেশের মধ্যে বিমান বাংলাদেশের সেবা পাওয়া যাবে ভারত ও নেপাল এই ২ টি দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশেও বর্তমানে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশ তিনটি হল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং থাইল্যান্ড। এছাড়া পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনেও নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান।

ইউরোপ মহাদেশে শুধুমাত্র ইংল্যান্ডের দুটি গন্তব্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সুবিধা উপভোগ করা যাবে। এই দুটি রুট হলঃ লন্ডন এবং ম্যানচেস্টার। উত্তর আমেরিকায় শুধুমাত্র কানাডার টরন্টোতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা।

তবে মিডল ইস্টের বেশ কয়েকটি দেশে আপনি বিমান বাংলাদেশের সেবা নিতে পারবেন। কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নিয়ে মোট ৫ টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা। আরও জানুনঃ মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে লাফ দিয়েছিলেন যিনি – ফেলিক্স বমগার্টনার

টিকেট খরচ

 যে কোন বিমানের টিকেটের খরচ মূলত চাহিদা ও সময়ের উপর নির্ভর করে থাকে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিভিন্ন বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাদের টিকেটের খরচ নির্ধারণ করে থাকে। টিকেটের নিয়মিত মূল্য জানতে আপনাকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে আপনি সরাসরি বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে টিকেট কেটে রাখতে বা ফ্লাইট বুক করতে পারবেন। অনলাইনে কার্ডের মাধ্যমেই পেমেন্টের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। 👉 বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটার নিয়ম (ঘরে বসেই)

এছাড়া ওয়েবসাইট থেকে প্রতিটি ফ্লাইটের শিডিউল, বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পেয়ে যাবেন সহজেই।

ক্যারিয়ার

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে সুযোগ রয়েছে বেশ সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার গড়ার। সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আলাদাভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। নিয়োগ প্রাপ্ত হলে সরকারি চাকরির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। নিয়োগের জন্য মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত হতে হয় অন্যান্য যে কোন সরকারি চাকরির মতো করেই। এছাড়া ক্যাবিন ক্রু ও ফ্লাইট স্টুয়ার্ড হয়ে দেশে বিদেশে ঘুরবার সুযোগও রয়েছে। ফলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাকরি অন্যতম চাহিদা সম্পন্ন একটি চাকরি। এখানে বিভিন্ন পদের জন্য নিয়মিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। বিজ্ঞপ্তিগুলো দেখে নিতে পারেন এই লিঙ্ক থেকে।

সুতরাং বিমান বাংলদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের সরকারি বিমান সংস্থা হলেও বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত তাদের বিমান বহরে নতুন বিমান সংযোজন করার মাধ্যমে যুগের সাথেও তাল মিলিয়ে চলছে তারা। দেশীয় বিমান সংস্থা বলে একে সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। কাজেই সুযোগ হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমানে ভ্রমণ করা যেতে পারে। টিকিট বুকিং থেকে শুরু করে সকল কিছুই অনলাইনে নিয়ে আসায় বর্তমানে ভ্রমণ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে।

তথ্যসূত্রঃ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং উইকিপিডিয়া

👉 স্পেসএক্স সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা উচিত

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,568 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *