বিভিন্ন জরুরি কাজে আমাদের হঠাৎ করে অনেক সময় বড় পরিমাণের অর্থের দরকার হতে পারে। এই অর্থ নিজের কাছে না থাকলেও আমরা ধার নিয়ে থাকি অনেকভাবেই। সাধারণভাবে বড় পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হলে ঋণ নেয়ার জন্য সবথেকে নিরাপদ ও প্রচলিত মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক। ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের জন্য ঋণ বা লোন নেয়া সম্ভব। তবে আমাদের অনেকেরই এই ব্যাপারে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। কাজেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে সঠিক তথ্য জানা থাকলে উপকার হতে পারে।
ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার ব্যাপারটি কিছুটা জটিল। আমরা অনেকেই এই ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা রাখি না। আজকের পোস্ট থেকে ব্যাংকের ঋণ পাবার জন্য করণীয় কী এবং কীভাবে এই ঋণ পেতে হয় সেই ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।
ব্যাংক ঋণ কী এবং কেন?
ব্যাংক ঋণ বা ব্যাংক লোন বলতে সোজা কথায় ধার নেয়া বোঝানো হয়। আমরা অনেক কাজেই অনেক সময় অর্থ ধার করে থাকি। তবে বড় পরিমাণের অর্থ ধার করার ক্ষেত্রে ব্যাংক বিশ্বস্ত জায়গা। ব্যাংক এই ঋণ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে দিয়ে থাকে। যে কেউ চাইলেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এজন্য বেশ ভালো ক্রেডিট হিস্টোরি, ভালো চাকরি, সক্ষমতা অনেক দিক বিবেচনা করা হয়। ব্যাংক ঋণ দেয়ার ব্যাপারে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করে থাকে।
প্রতিটি ব্যাংকই কিছু শর্ত পূরণ করলে তবেই গ্রাহককে ঋণ দেবার জন্য বিবেচনা করে থাকে। এক্ষেত্রে এই অর্থ ঠিক কী কাজে ব্যবহৃত হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হয়। সাধারণত অনেক পরিমাণ খরচ হবে এমন সব কাজের জন্যই আমরা ঋণ নিয়ে থাকি যাতে করে ধীরে ধীরে এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়। ঋণ পরিশোধ করা যায় মাসিক বা অন্যান্য বিভিন্ন কিস্তিতে। এর জন্য ব্যাংক আলাদা করে সুদ বা মুনাফা গ্রহণ করে থাকে। কাজেই ঋণ নেয়ার আগে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতার ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে চায় ব্যাংক। গ্রাহক এই ঋণ সঠিকভাবে পরিশোধ করতে সক্ষম এটি মনে হলে তবেই ব্যাংক গ্রাহককে ঋণ প্রদান করতে সম্মত হয়।
ব্যাংক ঋণের ধরণ
ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন ধরণ হতে পারে। ব্যাংক বিভিন্ন ভাবে ঋণ প্রদান করে থাকে। দুই ভাবে ব্যাংক ঋণ পাওয়া যেতে পারে। একটি হচ্ছে সিকিউরড ঋণ ও অপরটি আনসিকিউরড ঋণ। আনসিকিউরড ঋণ ব্যাংক সাধারণত ক্রেডিট হিস্টোরি, গ্রাহকের চাকরির তথ্য, গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর ইত্যাদির উপর নির্ভর করে দেয়া হয়। অর্থাৎ গ্রাহকের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য নিয়ে ব্যাংক বিবেচনা করে থাকে যে গ্রাহক এই ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন কিনা। এক্ষেত্রে ব্যাংক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে থাকে। মূলত ভালো চাকরি, ভালো ক্রেডিট হিস্টোরি ও দীর্ঘদিন ব্যাংক একাউন্ট এর নিয়মিত গ্রাহক হলে ব্যাংক এভাবে ঋণ দিতে পারে। তবে এভাবে ঋণ পাবার ব্যাপারটি নিশ্চিত নয়, ব্যাংক সকল দিক বিবেচনা করে আপনাকে ঋণ দিতে সম্মত হতেও পারে কিংবা নাও পারে।
অপরদিকে সিকিউরড ঋণ গ্রহনের ক্ষেত্রে ব্যাংক আপনার বিভিন্ন সম্পদ বন্ধক রাখতে পারে। একে জামানত বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ না করলে আপনার সম্পদ ব্যাংককে দিতে আপনি বাধ্য হবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার বাড়ি, জমি ইত্যাদি সম্পদ ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে পারেন আপনার সম্পদ ব্যাংকের বন্ধকমুক্ত হবে পুরো ঋণ পরিশোধ হলে। এভাবে ঋণ পাওয়া সহজ এবং জনপ্রিয়। তবে এতে করে আপনার সম্পদের মালিকানা হারানোর শঙ্কা থেকে যায় ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের মুনাফা বা সুদের পরিমাণ সাধারণত আনসিকিউরড ঋণ থেকে কম হয়ে থাকে।
এছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমেও আপনি ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে নগদ টাকায় ব্যাংক ঋণ না নিয়ে কার্ডের মাধ্যমে তা নেয়া হয়। এটি ব্যাংক ঋণ পাবার সাধারণ পদ্ধতি না হলেও এটিও আসলে এক প্রকার ব্যাংক ঋণ।
ঋণ কত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করবেন সেটির উপর ভিত্তি করেও ব্যাংক ঋণের আলাদা ধরণ রয়েছে। আপনি স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী ইত্যাদি ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। সাধারণত ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধ করলে তা স্বল্পমেয়াদী ঋণ, ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে পারলে মধ্যমেয়াদী ঋণ এবং ৫ বছরের বেশি সময়ের জন্য নিলে তা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ব্যাংক ঋণ যেসব কারণে দেয়া হয়ে থাকে
সব কাজের জন্য আপনি ব্যাংক ঋণ পাবেন না। ব্যাংক ঋণ পেতে হলে আপনার ব্যাংককে ঋণ নেয়ার স্পষ্ট কারণ জানাতে হয়। ব্যাংক সাধারণত ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু কারণকে বিবেচনা করে থাকে।
সবথেকে জনপ্রিয় ধরণের ব্যাংক লোন হচ্ছে পার্সোনাল বা ব্যক্তিগত ঋণ। সাধারণত এই ঋণের পরিমাণ কিছুটা কম হয়ে থাকে এবং এটি ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে খরচ করবার জন্য নেয়া হয়। ব্যাংক ঋণের আরেকটি জনপ্রিয় কারণ হচ্ছে বাড়ি নির্মাণ। বাড়ি কেনা বা নির্মাণের জন্য ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদে হোম লোন বা ঋণ দিয়ে থাকে। সাধারণত বাড়ি তৈরির পূর্ণ খরচ ঋণ হিসেবে পাওয়া সম্ভব হয় সবকিছু ঠিক থাকলে। বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে প্রচুর খরচ হয় বলে অনেকেই এই ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করে থাকেন।
গাড়ি কেনার জন্যও ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে পারেন আপনি। অটো লোন নামের এই ধরণের লোন সারা বিশ্বেই বেশ জনপ্রিয়। বিদেশে বা দেশের মধ্যেই পড়াশোনার জন্য আপনি ব্যাংক ঋণ পেতে পারেন। এডুকেশন বা স্টুডেন্ট লোন বেশ জনপ্রিয়। ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় এসএমই লোন। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় সহায়তার জন্য এই ঋণ দিয়ে থাকে ব্যাংক। কৃষিকাজের জন্য কৃষি লোন কৃষক ও জমি মালিকদের কাছে জনপ্রিয়। প্রবাসে যেতে প্রবাসী লোন দেয়া হয়। বিভিন্ন দুর্যোগ বা বিপদে হঠাৎ প্রয়োজনে আছে কুইক লোন নেয়ার সুবিধা।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
ব্যাংক ঋণ পাবার জন্য যোগ্যতা ও যেভাবে পাবেন
ব্যাংক ঋণ পাবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা থাকা আবশ্যক। আপনি ব্যাংকের শর্তগুলো পূরণ করলে তবেই ঋণ পেতে পারেন। ব্যাংক এক্ষেত্রে প্রথমেই জানতে চায় ঋণ আপনার কী কারণে দরকার সেই তথ্য। এরপর ব্যাংক আপনার ক্রেডিট হিস্টোরি বা আগের সকল লেনদেন বিবেচনা করে। ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্যও ব্যাংককে প্রদান করতে হয়। আপনার কর্মক্ষেত্র বা আয়ের উৎস ঋণ পাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার মাসিক আয়ের তথ্য থেকেই ব্যাংক বুঝতে চেষ্টা করে আপনি ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কিনা।
এছাড়া ঋণ থেকে প্রাপ্ত টাকা আপনি কীভাবে খরচ করবেন এবং পরিশোধ করবেন সেই ব্যাপারেও ব্যাংক বাড়তি কিছু জানতে চাইতে পারে। আপনার লেনদেনের সমস্ত ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও তারা দেখবে। এছাড়া বর্তমান বা পূর্বের বিভিন্ন ঋণ থাকলে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য ব্যাংককে দিতে হবে। পূর্বে নেয়া ঋণ সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পরিশোধ করলে তা ঋণ পাবার ক্ষেত্রে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। তেমনি পূর্বে নেয়া কোন ঋণ আপনি সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নতুন ঋণ পাবার সম্ভাব্যতা কমে যায়। ব্যাংক লোন কীভাবে পাওয়া যায় তার আরও বিস্তারিত জানুন এখানে।
ব্যাংক ঋণ নেবার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাপারে বাড়তি খেয়াল রাখা উচিত
ব্যাংক ঋণ নেবার ক্ষেত্রে নিজে থেকেই ঋণ শোধ করবার ব্যাপারটি পুরোপুরি পরিকল্পনা করে রাখা উচিত। শুধু তাই নয় বরং আপনি কী পরিমাণ ঋণ কী মেয়াদে নিলে তা আপনার জন্য বাড়তি বোঝা হবে না তার ব্যাপারে সঠিক ধারণা রাখা উচিত। ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ, ব্যাংকের মুনাফা বা সুদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য জেনে নেয়া উচিত। ব্যাংক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকলে অযাচিত আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
এভাবেই সকল বিষয়ে সঠিক ধারণা নিয়ে তবেই ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করা উচিত। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলো আজকাল সবাই ঋণ প্রদান করে থাকে। প্রতিটি ব্যাংকের চার্জ, মুনাফার পরিমাণ নিয়ে ধারণা নিয়ে তবেই ব্যাংক ঋণ নেবার ব্যাপারে অগ্রসর হতে পারেন।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Ami Probash Jete Loon Nite Cai Ki Ki doguments Lagbe