বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দুটি শব্দকেই পাশাপাশি রাখা হয় অনেক সময়। বর্তমান যুগে এই দুটি বহুল প্রচলিত শব্দ। অনেক সময় আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শব্দ দুটিকে এক করে ফেলে একটির জায়গায় আরেকটি ব্যবহার করে ফেলি। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দুটি ব্যাপার কি ভিন্ন না এরা আলাদা? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে স্বাভাবিক এই প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আসলে এক নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শব্দ দুটি পাশাপাশি ব্যবহার হলেও দুটি ব্যাপার আলাদা। তবে এদের মধ্যে সম্পর্কও রয়েছে বেশ। বিজ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তি বা প্রযুক্তি ছাড়া বিজ্ঞান আসলে কল্পনা করা যায় না। দুটি বিষয়ই পাশাপাশি একসাথে এগিয়ে যায়।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতেই আমাদের আজকের এই পোস্ট। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কোথায় সেটি নিয়েই আমরা জানবো। সেই সঙ্গে কোনটিকে আপনি প্রযুক্তি বলবেন সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা পেতে পারেন পুরো পোস্ট থেকে। তাই প্রথমেই আমরা জেনে নেই বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি কী সেই বিষয়ে।

বিজ্ঞান কী?

বিজ্ঞান বলতে আমরা সাধারণত বুঝি বিশেষভাবে প্রাপ্ত জ্ঞান। তবে এই জ্ঞান আসলে কীভাবে লাভ করে? এর পিছনে আছে গবেষণা ও তত্ত্ব। মানুষের কৌতূহলের ফসল হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের মূলে রয়েছে অজানাকে জানতে চাওয়ার ইচ্ছা। বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রশ্ন করা। প্রকৃতিতে কোনো ঘটনা কেন হচ্ছে বা কীভাবে হচ্ছে এই বিষয়ে জানতে চায় বিজ্ঞান। আর এইসব ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান করতেই বিজ্ঞান তত্ত্বের সাহায্য নেয়।

পৃথিবীর সকল কিছুই কোনো না কোন কারণে হয়। পৃথিবী ও প্রকৃতিতে ঘটা বিভিন্ন ব্যাপার কখনোই এলোমেলো ভাবে ঘটে না। বরং সবকিছুর পিছনেই কারণ থাকে। আর বিজ্ঞানের লক্ষ্যই হচ্ছে এই কারণগুলোকে খুঁজে বের করে তার ব্যাখ্যা প্রদান করা।

যেমন বহু যুগ ধরে মানুষ ভেবেছে কেন পৃথিবীতে কোনো বস্তুই ভেসে থাকে না। যার ভর আছে সেটি সবসময় নিচে নেমে আসে। এই ঘটনা কেন হয় তার কৌতূহল থেকেই মানুষ অভিকর্ষ বলের সন্ধান পেয়েছে। আর অভিকর্ষের সূত্র থেকে মানুষ অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছে। এই জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান সকল কিছুকেই একটি ছকে ফেলে জানতে ও বুঝতে চায়। বিজ্ঞানের গবেষণা তাই এলোমেলো কিছু নয়। 

প্রকৃতিকে জানাই বিজ্ঞানের লক্ষ্য। প্রকৃতির জটিল বিষয়গুলো কীভাবে কাজ করে সেটি জানার মাধ্যমেই শুধুমাত্র মানুষের সামনে থাকা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বিজ্ঞান থেকে এই জ্ঞান লাভ করার মাধ্যমে তবেই তৈরি করা হয় প্রযুক্তি। অর্থাৎ বিজ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তির কথা চিন্তা করা যায় না। এবার জানা যাক প্রযুক্তি আসলে কী।

প্রযুক্তি কী?

সোজা কথায় প্রযুক্তি হচ্ছে বিজ্ঞানের সাহায্যে তৈরি কোনো টুল বা যন্ত্র/কৌশল যা মানুষের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে জীবনকে আরও সহজ করে দেয়। তবে প্রযুক্তি কোনো জড় কিছু হতে হবে এমন নয়, ধরা বা ছোঁয়া যায় না এমন কিছুও প্রযুক্তি হয়ে উঠতে পারে। প্রযুক্তি সরাসরি মানুষের জীবনে অবদান রাখে। অর্থাৎ প্রযুক্তির লক্ষ্য মানুষের জীবনকে সহজ করা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা।

বিজ্ঞান থেকে ধারণা নিয়েই প্রযুক্তি তৈরি হয়। বিজ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তি তৈরি সম্ভব নয়। তেমনি প্রযুক্তি না হলে বিজ্ঞানও মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। অর্থাৎ প্রযুক্তি আর বিজ্ঞান সবসময় একই সাথে এগিয়ে যায়। বিজ্ঞান যে তত্ত্ব তৈরি করে প্রযুক্তি তার বাস্তব ব্যবহার করে।

যেমন অভিকর্ষ বল সম্পর্কে জানা বিজ্ঞানের অবদান। তবে অভিকর্ষ বল সম্পর্কে জেনে তা থেকে তৈরি কোনো প্রযুক্তি হচ্ছে উড়োজাহাজ। প্লেন আকাশে ওড়ার ক্ষেত্রে অভিকর্ষের জ্ঞান ছাড়াও আরও অনেক ধরনের তত্ত্ব কাজে লাগানো হয়। তাই উড়োজাহাজ হচ্ছে আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা একটি প্রযুক্তি যা যাতায়াতের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে পেরেছে। উড়োজাহাজ কীভাবে আকাশে ওড়ে সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আমাদের বিস্তারিত পোস্ট থেকে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

science technology explained

👉 ভূমিকম্প কেন হয়? ভূমিকম্প হলে করণীয় কী?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কোথায় আলাদা আশা করি সে সম্পর্কে এতক্ষণে ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। বিজ্ঞান ছাড়া প্রযুক্তি অচল আবার প্রযুক্তি ছাড়া বিজ্ঞানও আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে খুব একটা উপকারে আসেনা। আর তাই দুটি একসাথে কাজ করলেই মানব সভ্যতার উন্নতি সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানের লক্ষ্য অজানাকে জানা, প্রকৃতিতে কোনো ঘটনা কেন ঘটে তাই বিশ্লেষণ করা। আর প্রযুক্তি এই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েই তা বাস্তবে মানুষের কল্যাণে কাজে লাগে এমনভাবে তাকে প্রয়োগ করে। বিজ্ঞান মানুষকে কোনো প্রযুক্তি তৈরির ধারণা দেয়। আর প্রযুক্তি সেটিকে বাস্তবে পরিণত করে। 

বিজ্ঞান হচ্ছে একটা প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে অজানাকে জানা সম্ভব। আর প্রযুক্তি হচ্ছে প্রয়োগ। বিজ্ঞান থেকে জানা বিষয়ের ব্যবহার বিভিন্নভাবে করা সম্ভব। বিজ্ঞানের জ্ঞানকে নিজের সুবিধামতো কাজে লাগিয়েই তৈরি হয় প্রযুক্তি। মানুষ যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে সংখ্যার মাধ্যমে নির্দেশনা দেয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞানের মাধ্যমে। আজ সেই জ্ঞানকেই কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে কম্পিউটার। শুধু কম্পিউটার নয় বরং সকল ডিজিটাল ডিভাইস আজ তৈরি হচ্ছে এই বিজ্ঞানলদ্ধ জ্ঞান থেকে।

সুতরাং প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে। বিজ্ঞান হচ্ছে প্রযুক্তি তৈরির প্রথম ধাপ। বিজ্ঞানকে জানার মাধ্যমেই প্রযুক্তি তৈরি করা সম্ভব হয়। আর প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে মানব কল্যাণে কাজে লাগায়। দুটি ব্যাপারই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে আলাদা করে ভাবাটাই শ্রেয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এক করে ফেলা উচিত নয়। যদিও আমাদের মাঝে দুটি শব্দকে এক করে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়, তবে মৌলিক জায়গায় দুটি ব্যাপার আলাদা। প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন আমাদের ডেডিকেটেড পোস্ট থেকে 👉 টেকনোলজি কি? প্রযুক্তি মানে জানুন

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 7,992 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.