ভূমিকম্প চলাকালীন করণীয় (জরুরি সচেতনতা)

সম্প্রতি বাংলাদেশ হঠাৎ করেই একাধিক ভূকম্পনের সম্মুখীন হয়। ৫.৭ মাত্রার প্রধান কম্পনের পাশাপাশি আরও কয়েকবার ছোট কম্পন মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে। বিভিন্ন এলাকায় ভবন দুলে ওঠা, মানুষজনের দ্রুত রাস্তায় নেমে আসা, মোবাইল নেটওয়ার্ক সাময়িক ব্যাহত হওয়া, সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল বেশ উদ্বেগজনক।

এমন সময়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সবাইকে আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে আহ্বান জানায়। কারণ ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না, তবে সঠিক প্রস্তুতি মানবিক ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমাতে পারে। এই পোস্টে ভূমিকম্প চলাকালীন নিরাপদ থাকতে কী কী করণীয় অনুসরণ করতে হবে, সাম্প্রতিক ঘটনার আলোকে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো। 

ভূমিকম্পের সময় শান্ত ও স্থির থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকম্প শুরু হলে আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করলে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথম এক মিনিটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি বাড়ির নিচতলায় থাকেন, দ্রুত বাইরে বেরিয়ে খোলা জায়গায় যেতে পারেন। তবে তা হবে শুধুমাত্র তখনই, যখন নিরাপদে বের হওয়ার মতো সময় ও সুযোগ থাকবে। দৌড়ে সিঁড়ি থেকে নামার সময় পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও কম নয়, তাই স্থিরতা বজায় রাখা জরুরি।

বহুতল ভবনে থাকলে Drop–Cover–Hold পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর

বহুতল ভবনে ২-৩ তলায় বা আরো উপরে থাকলে বিশ্বব্যাপী গৃহীত একটি নিরাপত্তা পদ্ধতি হলো Drop, Cover, Hold: নিচু হয়ে যান, শক্তপোক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন এবং পা বা কাঠামো শক্ত করে ধরে থাকুন। যদি টেবিল না থাকে, তাহলে কলামের পাশে, বিমের নিচে বা তুলনামূলক শক্ত কাঠামোর পাশে বসে মাথা রক্ষা করুন। বালিশ বা কুশন মাথায় ধরলে ভাঙা কাচ বা আসবাবপত্র পড়ে গেলে অতিরিক্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়। অনেকেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে যান বা বারান্দায় দাঁড়ান, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কাঁচ ভেঙে আসার সম্ভাবনা থাকে যে কোনো মুহূর্তে।

লিফট নয়, সিঁড়িই নিরাপদ, তাও ভূকম্পন থামার পর

ভূমিকম্প চলাকালীন লিফট ব্যবহার করা সম্পূর্ণ অনিরাপদ। লিফট আটকে যেতে পারে, বিদ্যুৎ চলে গেলে আরও বিপদ বাড়ে। কম্পন থামার পরই কেবল ভবন থেকে নামার সিদ্ধান্ত নিন। একই সঙ্গে প্রধান গ্যাস লাইন ও বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করা জরুরি, যাতে অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমে।

earthquake wave

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ভারী জিনিস ও ঝুলন্ত বস্তু থেকে দূরে থাকুন

বুকশেলফ, আলমিরা, আলমারি, বড় কাঠের আসবাব, ঝাড়বাতি বা ঝুলন্ত ভারী ফিটিংস—এসব ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি করে। ঘরের সেসব অংশ থেকে দূরে থাকা এবং হাতে টর্চ, হেলমেট বা ছোট নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখা উপকারী। জরুরি ওষুধ, বাঁশি বা টর্চ রাখা থাকলে ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লেও উদ্ধারকারী দলকে সংকেত দেওয়া সহজ হয়।

বাইরে থাকলে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেওয়া শ্রেয়

যদি আপনি ইতিমধ্যে রাস্তায় বা বাইরে থাকেন, তবে গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, উঁচু ভবন, সাইনবোর্ড বা বিলবোর্ড থেকে দূরে সরে যান। খোলা মাঠ, পার্ক বা প্রশস্ত জায়গা সবচেয়ে নিরাপদ। রাস্তার মাঝামাঝি অবস্থানও তুলনামূলক নিরাপদ হতে পারে, যদি চারপাশে কোনো ভেঙে পড়ার মতো কাঠামো না থাকে।

গাড়িতে থাকলে গাড়ি থামান, ওভারব্রিজ বা খুঁটি থেকে দূরে

ভূমিকম্পের সময় চালকেরা হঠাৎ ব্রেক কষে বিভ্রান্ত হতে পারেন, কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই। গাড়ি ধীরে থামিয়ে ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, বড় গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে রাখুন। গাড়ির ভেতরেই থাকা নিরাপদ, কারণ বাহিরে দৌড়ালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং উপর থেকে ভাঙা জিনিস পড়ার সম্ভাবনাও থাকে।

👉 এন্ড্রয়েড ফোনে ভূমিকম্পের নোটিফিকেশন কিভাবে আসে?

প্রধান ভূমিকম্পের পর আফটারশকের ঝুঁকি থাকে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন ধরে ছোট ছোট কম্পন বা আফটারশক অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে তাড়াহুড়া করে প্রবেশ করা একেবারেই উচিত নয়। সেতু, কালভার্ট, পুরোনো ভবন বা অবকাঠামো আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী কম্পনে ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে এবং জরুরি প্রয়োজনে ১০২ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে

জনসচেতনতা বাড়লে কমানো সম্ভব ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ

ভূমিকম্প ঠেকানো যায় না, কিন্তু প্রস্তুতি ও সচেতনতা বাড়িয়ে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যেতে পারে। বিশ্বের ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলো নিয়মিত মহড়া, নিরাপদ ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ এবং গণসচেতনতা প্রচারের মাধ্যমেই বিপদ কমিয়েছে।

বাংলাদেশেও একই পথ অনুসরণ করে পরিবার ও সমাজ পর্যায়ে জরুরি প্রস্তুতি তৈরি করা প্রয়োজন। পরিবারের সবাইকে নিরাপদ জায়গা, সিঁড়ির রুট, বিদ্যুৎ–গ্যাসের মূল সুইচ কোথায় এসব জেনে রাখা উচিত। স্কুল, অফিস ও ফ্যাক্টরিতে নিয়মিত মহড়া হলে মানুষ বাস্তব পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,360 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *