ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটায় স্মার্টফোনে। সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল, নোটিফিকেশন চেক, কিংবা অবিরাম ভিডিও দেখা, সবকিছু মিলিয়ে ফোন যেন হাতের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু যদি এমন কিছু করা যায়, যাতে ফোন ব্যবহারটাই কষ্টকর হয়ে ওঠে? একদল নির্মাতা ঠিক সেই ধারণা নিয়েই হাজির হয়েছে 6 Pound Phone Case নামে এক অদ্ভুত উদ্ভাবন নিয়ে।
এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছে Kickstarter-এ, যেখানে নির্মাতারা একে বলেছেন “একটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, যা আপনাকে ফোন কম ধরতে বাধ্য করবে।” কেসটি বানানো হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল ও ব্রাস ধাতু দিয়ে, যার ওজন প্রায় ৬ পাউন্ড বা ২.৭ কেজি। ভাবুন তো, একটি ফোন হাতে তোলার জন্য এত ভারী কেস ব্যবহার করলে কেমন লাগবে!
প্রকল্পের নির্মাতারা জানিয়েছেন, এই কেসের মাধ্যমে তারা মানুষকে নিজেদের ফোন ব্যবহারের ওপর নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করতে চান। তারা বলছেন, সফটওয়্যারভিত্তিক স্ক্রিন টাইম সীমাবদ্ধতা বা নোটিফিকেশন বন্ধ করার চেয়ে, এই ধরনের শারীরিক বাধা অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে।
মজার হলেও গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য
৬ পাউন্ড ফোন কেস শুনতে হয়তো রসিকতার মতো লাগতে পারে, কিন্তু এর পেছনের উদ্দেশ্য মোটেও হালকা নয়। অনেকেই প্রতিদিন ফোনের কারণে মনোযোগ হারান, সময় নষ্ট করেন, এমনকি মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন। এই প্রকল্পের নির্মাতারা বলেন, “আমরা চাই মানুষ ফোনকে আবার টুল হিসেবে ব্যবহার করুক, নির্ভরতা হিসেবে নয়।” তাদের ধারণা অনুযায়ী, যখন আপনি ফোন তুলতে যাবেন, তখন কেসের ওজনই আপনাকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করবে “আসলে এখন এটা ধরার দরকার আছে তো?”
ডিজাইন
এই কেসটি কোনো সাধারণ প্লাস্টিক বা সিলিকন কভার নয়। এটি তৈরি করা হয়েছে ধাতব ব্লক কেটে, পালিশ করে এবং বিশেষ স্ক্রু দিয়ে জোড়া লাগিয়ে। কেসটি খুলতে বা লাগাতে Allen Wrench নামের বিশেষ যন্ত্র দরকার হয়, অর্থাৎ আপনি সহজে এটি খুলে ফেলতে পারবেন না।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
কেসটির পুরুত্বও এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে এটি পকেটে ঢোকানো সম্ভব না হয়। ফলে বাইরে যাওয়ার সময়ও ফোন পকেটে নেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। নির্মাতারা একে এক ধরনের “ফোন ব্যবহারের প্রতিরোধক ডিভাইস” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
এই ভারী কেসটি মূলত iPhone 13 থেকে iPhone 17 সিরিজ পর্যন্ত (রেগুলার, প্রো এবং প্রো ম্যাক্স মডেলসহ) তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি মডেলের জন্য আলাদা ফিটিং রয়েছে। Kickstarter পেজে বলা হয়েছে, এটি প্রি-অর্ডারের মাধ্যমে সীমিত পরিমাণে উৎপাদন করা হবে।
কেন মানুষ আগ্রহী হচ্ছে?
এই কেসটি একদিকে মজার, অন্যদিকে চিন্তাশীল একটি প্রতীক। আধুনিক জীবনে যেখানে ফোন থেকে দূরে থাকা প্রায় অসম্ভব, সেখানে এমন একটি কেস আমাদের মনে করিয়ে দেয় “সবকিছু সহজলভ্য হওয়াই সবসময় ভালো নয়।”
অনেকে বলছেন, ভারী এই কেসটি হয়তো একপ্রকার “মাইন্ডফুলনেস রিমাইন্ডার”। প্রতিবার ফোন ধরার সময় শরীর ক্লান্ত হয়ে গেলে মস্তিষ্কও সচেতন হয়ে ওঠে।
👉 এক চার্জে এক সপ্তাহ চলবে এই স্মার্টফোন (২২০০০ mAh ব্যাটারি)
সমালোচনা ও বিতর্ক
তবে সমালোচকরাও পিছিয়ে নেই। অনেকেই বলছেন, এটি বাস্তব সমস্যার কোনো কার্যকর সমাধান নয়, বরং একধরনের ব্যঙ্গাত্মক প্রচেষ্টা। আবার অনেকেই একে সামাজিক বার্তা হিসেবেই দেখছেন — প্রযুক্তি আমাদের জীবন কতটা দখল করে ফেলেছে, সেই বাস্তবতা দেখাতে এই প্রকল্প সফল।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা
বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহার এখন দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। সকাল থেকে রাত অফিস, ক্লাস, এমনকি বিশ্রাম সময়েও আমরা ফোনে। এই কেসটি হয়তো বাস্তবে এখানে তেমন কার্যকর হবে না, কারণ ২.৭ কেজির ফোন কেউ বহন করবে না। তবে এর চিন্তাধারা আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
আমরা চাইলে এর ভাবনা থেকে শিখতে পারি, যেমন:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ফোন দূরে রাখা
- খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর আগে ফোন না ধরা
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা
এই সহজ অভ্যাসগুলোও অনেক সময় ভারী ফোন কেসের চেয়েও কার্যকর হতে পারে।
প্রযুক্তি গবেষকরা বলেন, ফোন আসক্তি আসলে আমাদের মস্তিষ্কে “ডোপামিন লুপ” তৈরি করে। মানে, আমরা নোটিফিকেশন বা নতুন কন্টেন্ট দেখলে একধরনের আনন্দ পাই, যা আমাদের বারবার ফোন ধরতে বাধ্য করে।
৬ পাউন্ড ফোন কেস সেই চক্রে একটি শারীরিক বিরতি এনে দিতে পারে। আপনি হয়তো বলবেন, “এটা তো অদ্ভুত!” কিন্তু ঠিক এই অদ্ভুতভাবটাই আপনাকে এক মুহূর্ত থামতে শেখায়।
👉 শর্ট ভিডিও থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায়
তবে, প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। সমর্থনকারীরা প্রি-অর্ডার দিলেও, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে কিছু সময় লাগবে।
৬ পাউন্ড ফোন কেস নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী উদ্ভাবন। এটি হয়তো সবার জন্য নয়, কিন্তু আমাদের চিন্তার খোরাক জোগায়। প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অংশ, কিন্তু সেটি যেন নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণ না হয়। এটাই এই প্রকল্পের বার্তা।
অর্থাৎ, ফোনের ভার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আসল ভার আমাদের নিজের হাতে। আমরা চাইলে প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। শুধু প্রয়োজন সামান্য সচেতনতা, আর মাঝে মাঝে “অতিরিক্ত সহজতা” থেকে একটু দূরে থাকা।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।

আমাদের যেকোনো প্রশ্ন করুন!