ইউটিউবারের বিরুদ্ধে মামলা করলো অ্যাপল, কিন্তু কেন?

বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সম্প্রতি একটি বহুল আলোচিত মামলা দায়ের করেছে জনপ্রিয় ইউটিউবার জন প্রোসার এবং তার সহযোগী মাইকেল রামাসিওটির বিরুদ্ধে। অভিযোগটি ঘিরে আছে গোপন তথ্য চুরি, এক পরিকল্পিত চক্রান্ত, এবং একটি পরীক্ষামূলক আইফোন। ফাঁস হওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল আইওএস ২৬-এর রেন্ডার ভিডিও, যেগুলো জন প্রোসার প্রকাশ করেন তার ইউটিউব চ্যানেল Front Page Tech-এ। এসব ঘটনার সূত্র ধরে এখন অ্যাপল চাইছে ক্ষতিপূরণ এবং ভবিষ্যতে আরও তথ্য ফাঁস বন্ধে আদালতের হস্তক্ষেপ।

ঘটনাটি শুরু হয় ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে, যখন জন প্রোসার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন যেখানে তিনি দাবি করেন, এটি আসন্ন আইওএস ১৯-এর রেন্ডার। পরবর্তীতে জানা যায়, সেটিই ছিল আসলে আইওএস ২৬-এর ডিজাইন, যেটি অ্যাপল জুন মাসে WWDC ইভেন্টে উন্মোচন করে। 

ভিডিওতে তিনি একটি নতুন ক্যামেরা অ্যাপের ইন্টারফেস দেখান, যেখানে সহজে বাটন দিয়ে ফটো এবং ভিডিও মোডে সুইচ করা যায়। মার্চে তিনি তার জিনিয়াস বার পডকাস্টে মেসেজেস অ্যাপের নতুন রূপ দেখান, যেখানে গোলাকার নেভিগেশন বাটন এবং গোলাকৃতি কীবোর্ড কর্নার ছিল। এরপর এপ্রিলের একটি ভিডিওতে তিনি ‘লিকুইড গ্লাস’ ডিজাইনের প্রিভিউ দেখান, যেটি পরবর্তীতে আইওএস ২৬-এ বেশ মিল রেখেই আসে।

যদিও কিছু পরিবর্তন ছিল, কিন্তু প্রোসারের দেখানো ডিজাইনগুলো এতটাই বাস্তবসম্মত ছিল যে অ্যাপল এগুলো সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হয়। এর পরেই মামলার সূত্রপাত।

অ্যাপল যে মামলাটি করেছে, তাতে বলা হয়েছে—এই তথ্য ফাঁসের মূল সূত্র ছিল অ্যাপল কর্মচারী ইথান লিপনিকের কাছ থাকা একটি ডেভলপমেন্ট আইফোন (যেখানে আইওএস ২৬ পরীক্ষাধীন ছিল)। মাইকেল রামাসিওটি, যিনি লিপনিকের বন্ধু, ওই ফোনের পাসকোড সংগ্রহ করেন এবং এমন একটি সময়ে ফোনটি অ্যাক্সেস করেন, যখন লিপনিক বাসায় ছিলেন না। তিনি ফোনটি চালু করে ফেইসটাইমের মাধ্যমে জন প্রোসারকে কল করেন এবং পুরো অপারেটিং সিস্টেম দেখান। প্রোসার সেই ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করেন এবং তার ভিত্তিতে রেন্ডার তৈরি করেন যা পরবর্তীতে ইউটিউবে প্রকাশিত হয়।

iOS 26 new features
Image: Apple iOS 26, Credit: Apple

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

অ্যাপলের আইনজীবীদের দাবি, ওই ডেভেলপমেন্ট আইফোনে ছিল অনেক গোপন ফিচার ও সফটওয়্যার উপাদান যা এখনো জনসম্মুখে প্রকাশ হয়নি। এই কারণে তারা শঙ্কিত যে—আরও গোপন তথ্য হয়তো জন প্রোসার ও রামাসিওটির কাছে রয়েছে। এই সম্ভাবনার ভিত্তিতেই অ্যাপল আদালতের কাছে আবেদন করেছে যেন ভবিষ্যতে তারা আর কোনো তথ্য প্রকাশ করতে না পারেন এবং তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ইথান লিপনিক যখন বুঝতে পারেন যে তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে করা ফেইসটাইম ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে এবং তার পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে, তখনও তিনি বিষয়টি অ্যাপলকে জানাননি। বরং অ্যাপল বিষয়টি জানতে পারে একটি অজানা ইমেইলের মাধ্যমে, যেখানে কেউ ভিডিও দেখে তার অ্যাপার্টমেন্ট চিনে ফেলেছিল। এর ফলে অ্যাপল তার চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করে

👉 iOS 26 যেসব নতুন ফিচার নিয়ে আসছে আইফোনে

এই ঘটনাটি অ্যাপলের জন্য কেবল একটি লিক বা গুজব ছড়ানোর বিষয় ছিল না—তারা এটিকে তাদের গোপনীয়তা এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের বিরুদ্ধে এক আঘাত হিসেবে দেখছে। 

অন্যদিকে, জন প্রোসার নিজের পক্ষ থেকে দাবি করেছেন, তিনি “কারো ফোন অ্যাক্সেস করার জন্য কোনো পরিকল্পনা করেননি এবং ঘটনার পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।” তিনি টুইটে আরও বলেন যে, তিনি অ্যাপলের সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায় আছেন। 

এই মামলার ফলাফল প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্য এক বড় বার্তা হতে পারে। গোপন প্রযুক্তি বা তথ্য চুরি কিংবা ফাঁস করাকে অনেক সময় “কনটেন্ট” বা “লিক” হিসেবে হালকাভাবে দেখা হলেও, বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এটি কোনোভাবেই বরদাস্ত করে না।

এখন দেখার বিষয়, আদালত কোন পক্ষের যুক্তিকে গ্রহণ করে এবং এই মামলা ভবিষ্যতের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য কী বার্তা দিয়ে যায়।

👉 আইফোন ১৭ এয়ার তথ্য ফাঁস: হতাশ সম্ভাব্য ব্যবহারকারীরা

আপনার মতামত কী?
জন প্রোসারের কাজ কি নৈতিক ছিল? নাকি অ্যাপলের এই আইনি পদক্ষেপ যথার্থ? আপনি কি মনে করেন প্রযুক্তি লিকের দায়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরও জবাবদিহি করা উচিত? নিচে কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,497 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *