বেটাভোল্ট নামে এক চীনা কোম্পানি একটি নতুন নিউক্লিয়ার ব্যাটারি তৈরী করেছে যা চার্জ করা ছাড়াই ফোনকে ৫০ বছর পর্যন্ত চালাতে পারবে। উক্ত কোম্পানি দাবি করছে এই মিনিয়েচার এটমিক এনার্জি ব্যাটারি যা কিনা একটি কয়েনের চেয়ে ছোট। এই কম্প্যাক্ট ব্যাটারিতে ৬৯ টি নিউক্লিয়ার আইসোটোপ রয়েছে যা ১০০ মাইক্রোওয়াট জেনারেট করতে পারে ও ৩ ভোল্ট এর ইলেক্ট্রিসিটি ভোল্টেজ প্রদান করবে। চলুন জানি ব্যাটারি প্রযুক্তিতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আনতে চলা এই অসাধারণ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত।
ব্যাটারিটি এখনো পাইলট টেস্টিং পর্যায়ে রয়েছে। তবে বেটাভোল্ট এর পরিকল্পনা হলো ফোন ও ড্রোন এর পাশাপাশি এরোস্পেস ইকুইপমেন্ট, এআই, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট, এডভান্সড সেন্সর, ও মাইক্রো-রোবোটেও এই ব্যাটারি ব্যবহার করা। বেইজিং-ভিত্তিক কোম্পানিটি এই ব্যাটারি তৈরীতে পেসমেকার ও স্যাটেলাইট এর মত ডিভাইস থেকে ইন্সপিরেশন পেয়েছে বলে জানায়।
বেটাভোল্ট জানায় তারা ২০২৫ নাগাদ ১-ওয়াট ব্যাটারি প্রডিউস করতে চায়। যদিওবা এখনো অনেক লম্বা পথ পারি দেওয়া বাকি এই প্রযুক্তি গ্রাহকের হাতের আসার জন্য, কিন্তু কোম্পানিটি দাবি করছে তারা অনেক ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান সাইন্টিফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট ও এন্টারপ্রাইজ থেকে এগিয়ে আছে গবেষণার দিক দিয়ে।
নিউক্লিয়ার ব্যাটারি: ছোট কিন্তু শক্তিশালী
ইলেকট্রিক পণ্যের জগতে বিপ্লব নিয়ে আসার মত ক্ষমতা রাখে এই নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তি, যার ফলে চার্জার বা পোর্টেবল পাওয়ার ব্যাংক এর মত এক্সেসরিজের প্রয়োজনই হবেনা। এই ব্যাটারির ক্যাপাসিটি ও জীবনকালে চার্জ দিয়ে চলা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির চেয়ে অনেক বেশি। বর্তমানে অনেক ব্যাটারি অধিক তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসলে কিংবা সামান্য ড্যামেজ হয়ে গেলে অকেজো হয়ে যায়। বেটাভোল্ট জানায় তাদের BV100 নিউক্লিয়ার ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো সমস্যাই নেই, এটি পাংচার হয়ে গেলে কিংবা গানশট এর সংস্পর্শে আসলেও আগুন ধরবেনা কিংবা বিস্ফরিত হবেনা।
এই আনলিমিটেড শক্তি দ্বারা কোনো ড্রোন অবিরত চলতে পারবে, ফোন ইচ্ছামত ব্যবহার করা যাবে চার্জ ফুরোনোর চিন্তা ছাড়াই, ইলেকট্রিক কার রিচার্জ এর প্রয়োজন হবেনা। বর্তমানে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার ব্যাটারি মহাকাশযান, পানির নিচের সিস্টেম, স্বয়ংক্রিয় বৈজ্ঞানিক স্টেশনের পাশাপাশি মার্স রোভারের মতো স্পেসক্রাফটে ব্যবহৃত হয়, তবে সেগুলি বড়, ভারী এবং প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে, সেইসাথে ব্যয়বহুলও। বেটাভোল্ট জানিয়েছে তাদের ব্যাটারি অন্যভাবে বানানো হয়েছে।
বেটাভোল্ট এর রেডিওএকটিভ ব্যাটারি যেভাবে কাজ করে
নিকেল-৬৩ নামে একটি রেডিওএকটিভ উপাদান ব্যবহার করে বেটাভোল্ট এর বিজ্ঞানীগণ এই ব্যাটারি তৈরি করেছেন। এই উপাদানকে এনার্জি সোর্স হিসেবে ও ডায়মন্ড সেমিকন্ডাক্টরকে এনার্জি কনভার্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
বেটাভোল্ট এর ভাষ্যমতে এর এটমিক এনার্জি ব্যাটারির সুবিধা হলো ওজনে হালকা হওয়া, লম্বা সময় ধরে ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করা ও হাই এনার্জি ডেনসিটি, ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হলো এই ব্যাটারি মাইনাস ৬০ কিংবা ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেও ঠিকঠাক কাজ করবে। 👉 সারা রাত ফোন চার্জ দেওয়া কি ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর?
মডিউলার ডিজাইনের কল্যাণে একাধিক অ্যাটোমিক বেটারি একই ডিভাইসে ব্যবহার করা যাবে যার মাধ্যমে অধিক এনার্জি আউটপুট প্রদান করা সম্ভব হবে। এর ফলে অটোমেটিক টেকনোলজি কিংবা এর মত ক্ষেত্রগুলোতেও এর ব্যবহার সম্ভব হবে।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
তবে সমস্যা যেখানে!
অধিকাংশ মানুষ তাদের পকেটে নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়াল অবশ্যই বহন করতে চাইবে না। বিশেষ করে যারা ইতিমধ্যে এইচবিওর চেরনোবিল সিরিজটি দেখেছেন তারা নিউক্লিয়ার এক্সপ্লোশন এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ভালোভাবেই আন্দাজ করে থাকতে পারবেন। তবে বেটাভোল্ট রেডিয়েশনের ব্যাপারে জানিয়েছে তাদের তৈরি এই ব্যাটারি কোন ধরনের বাহ্যিক রেডিয়েশন নির্গমন করে না এবং মানুষের শরীরের মধ্যে ব্যবহৃত হওয়া পেসমেকার এর মত মেডিকেল ডিভাইসেও ব্যবহারের উপযোগী।
যদিও শুনতে মনে হতে পারে এটি পঞ্চাশের দশকের কোন সাইন্স ফিকশন থেকে উঠে আসা কোন প্রযুক্তি, কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে উক্ত প্রযুক্তির হাত ধরে নিউক্লিয়ার এনার্জির ব্যবহারের ক্ষেত্রে এক নতুন বিপ্লব আসতে পারে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।