গুগল ডকসের লুকানো কিছু ফিচার যা আপনার জানা উচিত

গুগল ডকস হলো গুগল এর একটি ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন সেবা যাকে মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ডের অনলাইন ভার্শনের সাথে তুলনা করা যায়। এটি একটি অনলাইন প্রোগ্রাম হওয়ায় গুগল ডকসের সকল ফাইল ক্লাউডে জমা হয়ে থাকে। এর ফলে স্টোরেজ এর জন্য আলাদা করে কোনো জায়গা দখল না করার পাশাপাশি একাধিক ডিভাইসে একই ফাইল নিয়ে গুগল ডকস ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করা সম্ভব। 

এছাড়াও গুগল ডকস অন্যদের সাথে শেয়ার করা যায় বিধায় একাধিক ব্যক্তি একই ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করতে পারে। গুগল ডকসের এতো সুবিধা থাকলেও আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা গুগল ডকসের কিছু লুকানো ফিচার সম্পর্কে জানে না। এসকল লুকানো ফিচার ব্যবহার করলে আপনার গুগল ডকসে কাজের গতি অনেকাংশে বেড়ে যাবে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা গুগল ডকসের এমনই কিছু লুকানো ফিচার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

Doc.new : দ্রুত নতুন ডক তৈরি করা

একটি ফ্রেশ এবং ফাঁকা ডকুমেন্ট তৈরি করার জন্য আপনাকে সব সময় গুগল ড্রাইভ কিংবা ডক হোমপেজ ভিজিট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই কাজটি আপনার ব্রাউজার থেকে একটি মাত্র ক্লিকের মাধ্যমেই সম্পন্ন করতে পারবেন। যাতে করে আপনার অতিরিক্ত সময় নষ্ট হবে না। আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ব্রাউজারে গিয়ে তার সার্চ বারে শুধু মাত্র “doc.new” টাইপ করে এন্টার প্রেস করুন। আপনার যেই গুগল একাউন্টটি ব্রাউজারে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটি থেকে ডক সাথে সাথেই একটি নতুন ফাকা ডকুমেন্ট তৈরি করে ফেলবে।

টুল ফাইন্ডার

গুগল ডকে এমন অনেক কম পরিচিত ফিচার রয়েছে যেগুলো আপনি দেখলে অবাক হয়ে যাবেন যে সেগুলো ছাড়া আপনি এতো দিন কিভাবে ডক চালিয়েছেন। দ্রুত ডক ফাইল তৈরি করা থেকে বিভ্রান্তি মুক্ত লেখা তৈরি করা পর্যন্ত সকল বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা ট্রিকস রয়েছে। তবে ডকে কোন জিনিস কোথায় আছে সেটা খুঁজে বের করা অনেক সময় বেশ কষ্টসাধ্য। এই কাজের জন্য টুল ফাইন্ডার অনেক ভালো একটি বিকল্প হতে পারে। প্রত্যেকটি মেনুতে ম্যানুয়ালি স্ক্রল করা বাদ দিয়ে আপনি এটি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মেনু থেকে সার্চ বার ব্যবহার করে আপনার প্রয়োজনীয় টুল খুঁজে নিতে পারেন। 

টুল ফাইন্ডার ব্যবহার করার জন্য  আপনার ডকের উপরে থাকা হেল্প মেনুতে ক্লিক করে সার্চ দা মেনুস নির্বাচন করুন। আপনি চাইলে এক্ষেত্রে শর্টকাটও ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে Alt + / শর্টকাট আপনাকে সাহায্য করবে। এর পরে টুল ফাইন্ডার আপনার স্ক্রিনের বামে উপরের দিকে চলে আসবে। আপনার যেই টুল প্রয়োজন সেই টুলের নাম লিখলে টুল ফাইন্ডার ড্রপ ডাউনের মাধ্যমে সেই টুলটি দেখাবে।

পেজলেস ফরম্যাট

গুগল ডক বাই ডিফল্ট একটি পেজ ফরম্যাট ব্যবহার করে যা আপনার ডকুমেন্ট প্রিন্ট করানোর সময় কেমন দেখাবে সেটার অনুকরণ করে থাকে। তবে বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সাধারণত ডকুমেন্টের হার্ড কপির খুব বেশি একটা প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি প্রাথমিক ভাবে ডিজিটালি কাজ করতে চান তাহলে আপনার ডকের পেজ গুলোর বিরতি মুছে ফেলে পেজলেস ফরম্যাট তৈরি করতে পারেন। এতে করে আপনি বিস্তৃত ছবি খুব সহজেই পেজের ভিতরে রাখতে পারবেন।

আপনার ডকে এই পেজলেস ফরম্যাট চালু করার জন্য প্রথমে ফাইল মেনুতে ক্লিক করে পেজ সেট আপ নির্বাচন করুন। এই পেজ সেট আপ ডায়ালগ বক্সে পেজলেস ট্যাবে সুইচ করে ওকে বাটনে ক্লিক করুন। এটি করার ফলে আপনার বর্তমান ডকুমেন্টে শুধু মাত্র পেজলেস ফরম্যাট চালু হয়ে যাবে। আপনি যদি আপনার সকল ডকুমেন্টই পেজলেস ফরম্যাটে চান তাহলে সিলেক্ট এজ ডিফল্ট অপশন নির্বাচন করতে পারেন।

ডকুমেন্ট ট্রান্সলেট করা 

আপনি যদি এমন কোনো ভাষার ডকুমেন্ট পেয়ে যান যেটি আপনি বুঝতে পারছেন না তাহলে চিন্তার কোনো কারন নেই। আপনাকে এর জন্য আলাদা করে গুগল ট্রান্সলেট চালু করতে হবে না। আপনি এর পরিবর্তে গুগল ডক ট্রান্সলেটর ব্যবহার করতে পারেন। এই ট্রান্সলেটর এক্সেস করার জন্য আপনাকে টুলস মেনু চালু করার পরে ট্রান্সলেট ডকুমেন্ট নির্বাচন করুন। এবার এখানে যে ডায়ালগ বক্স আসবে সেখান থেকে আপনি আপনার ডক কোনো ভাষায় ট্রান্সলেট করতে চান সেটি নির্বাচন করে ট্রান্সলেট বাটনে ক্লিক করুন। এর পরে ডকস আপনার ডকুমেন্টের জন্য ট্রান্সলেট করা আলাদা একটি কপি নতুন ট্যাবে সেভ করে ফেলবে। 

অটোমেটিক মার্ক ডাউন

আপনি যদি একটি হেডিং ব্যবহার করার জন্য কিংবা কোনো শব্দ গুচ্ছকে বোল্ড করার প্রয়োজনে টুলবারে মাউস নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাহলে আপনার ডকে মার্ক ডাউন চালু করা উচিত। মার্ক ডাউন আপনাকে কী বোর্ড ইনপুট দিয়ে আপনার টেক্সট ফরম্যাট করতে সহায়তা করে। এটি আপনার মূল্যবান অনেক সময় বাঁচাবে।

ডকে অটোমেটিক মার্ক ডাউন চালু করার জন্য প্রথমে মেনু থেকে টুলে গিয়ে প্রেফারেন্স অপশনটি নির্বাচন করতে হবে। সেখান থেকে অটোমেটিকালি ডিটেক্ট মার্ক ডাউন বক্সে টিক দিয়ে ওকে বাটনে ক্লিক করুন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

google docs

👉 গুগল ফটোসের যে ৯টি ফিচার আপনার ব্যবহার করা উচিত

ডাবল ফুল স্ক্রিন 

আপনি যদি আপনার কাজ করার সময় আরো বেশি ফোকাসড থাকতে চান কিংবা কাজের মধ্যে খুব বেশি একটা বাধা না চান তাহলে আপনার ব্রাউজারের ফুল স্ক্রিন এবং ডকের ফুল স্ক্রিন দুইটি ব্যবহার করে লেখালেখির জন্য দারুন একটা আবহাওয়া তৈরি করে ফেলতে পারবেন। প্রথমে ভিউ মেনুতে ক্লিক করে ফুল স্ক্রিন সিলেক্ট করুন। এটি আপনার ডকের ফুল স্ক্রিন চালু করে দিবে।

এর পরে আপনার স্ক্রিনের ডান দিকের উপরে থাকা তিনটি ডটে ক্লিক করুন। এটি আপনার ব্রাউজার সেটিংস চালু করে দিবে। এখান থেকে জুম এ যাওয়ার পরে ফুল স্ক্রিন আইকনে ক্লিক করুন। কিংবা আপনি চাইলে F11 অথবা Fn + F11 (কিংবা আপনার কম্পিউটারের সিস্টেম শর্টকাট যেমন থাকবে সেভাবে) প্রেস করে ব্রাউজারের ফুল স্ক্রিন মোড চালু করতে পারেন। ফুল স্ক্রিন মোড চালু করার ফলে ভিজুয়াল ক্লাটার কমানো সম্ভব হয়।

বর্তমান সময়ে কোনো কিছু লেখার জন্য গুগল ডকসের ব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও ক্লাউড স্টোরেজের সুবিধা থাকায় এসকল ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ কম থাকে বিধায় সবাই এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলের সকল ফিচার ব্যবহারের ফলে আপনাদের গুগল ডকসে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেড়ে যাবে। আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,546 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

https://www.google.com/recaptcha/api.js?ver=1.23