টুইটারের বিকল্প ‘মাসটোডন’ হঠাত তুমুল জনপ্রিয় – লাখ লাখ নতুন ব্যবহারকারী!

ইলন মাস্ক টুইটার কিনে নিয়ে একের পর এক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েই যাচ্ছেন। কিছু মানুষ তার এসব পদক্ষেপকে বাহবা দিলেও অনেকে আবার এগুলোকে নেতিবাচক হিসেবেও বর্ণনা করছেন। আর টুইটার ব্যবহারকারীদের এই পরিস্থিতির জেরে আরেকটি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর ব্যবহারকারী বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক ব্যবহারকারী টুইটার ছেড়ে নতুন একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগ দিচ্ছেন।

কথা বলছি মাসটোডন কে নিয়ে। এই সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কে বর্তমানে ৬৫৫,০০০ এর অধিক মেম্বার রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে সকল মেম্বারের মধ্যে ২৩০,০০০ মেম্বার গত সপ্তাহে এই প্ল্যাটফর্মটিতে যুক্ত হয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো মাসটোডন কিন্তু অনেকটা টুইটারের মতোই। এই প্ল্যাটফর্মটিতে পোস্ট করা যায় যাকে “toots” নামে অবিহিত করা হয়, লাইক, রিপ্লাই, ও রি-পোস্ট করা যায়। আবার সকল ব্যবহারকারী একে অপরকে ফলো করার ফিচার তো থাকছেই।

মাসটোডন আবার হবহু একদম টুইটার এর মত নয়। কিছু বিষয়ে মাসটোডন বেশ ভিন্নভাবে কাজ করে। সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে নতুন ব্যবহারকারী প্ল্যাটফর্মটিতে যোগ দেওয়ার কারণে অধিকাংশ ব্যবহারকারীর এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ছয় বছর পুরোনো একটি প্ল্যাটফর্ম হলেও বর্তমানে সবচেয়ে বেশি একটিভ মাসটোডন কমিউনিটি। এই পোস্টে মাসটোডন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

মাসটোডন কি?

২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া মাসটোডন তৈরি করেন সফটওয়্যার ডেভলপার ইউজেন রোচাকো। মাসটোডন এর ভাষ্যমতে এটি একটি “ফ্রি, ওপেন-সোর্স ডিসেন্ট্রালাইজড সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম” যা মূলত টুইটার এর একটি অসাধারণ বিকল্প হতে পারে। ওপেন-সোর্স হওয়ায় যেকেউ পাবলিকলি এভেইলএবেল থাকা কোড ব্যবহার করতে পারবে, নতুন ফিচার এড করতে পারবে, অনুবাদ করতে পারবে।

মাসটোডন সার্ভার এর যত কথা

মাসটোডন একাউন্ট খোলার পরপর একটি সার্ভার সিলেক্ট করতে হয়। প্ল্যাটফর্মটিতে অনেক সার্ভার রয়েছে। এসব সার্ভার মূলত স্থান, ইন্টারেস্ট, ইত্যাদির ভিত্তিতে তৈরী। এসব সার্ভার কি বা কিভাবে কাজে আসে তা তো জানা হলোনা, সেটা আগে বলি শুনুন। বলে রাখা ভালো দেখতে টুইটার এর মত হলেও মাসটোডন এর ধারণাটি অনেকটা জটিল। মাসটোডন মূলত কোনো একটি প্ল্যাটফর্ম নয়। এটি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি দ্বারা কোনো সাইটও নয়।

মাসটোডনে থাকা সার্ভারগুলো একসাথে লিংক করা থাকে ও একটি কালেক্টিভ নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এসব সার্ভার আবার আলাদা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা তৈরী। এই প্রযুক্তিকে ডিসেন্ট্রালাইজড বলা হয় যা কোনো সিংগেল এনটিটি দ্বারা তৈরী বা কেনা-বেচা সম্ভব নয়।

তবে এর সমস্যা হলো আপনি যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে আছেন, তার উপর আপনার একাউন্ট অনেকাংশে নির্ভরশীল। কোনো কারণে উক্ত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সার্ভার বন্ধ করে দিলে আপনার একাউন্ট হারাতে হবে। মাসটোডন সার্ভারের মালিকদের সার্ভার বন্ধের কমপক্ষে তিন মাস আগে থেকে জানিয়ে রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন মাসটোডন কতৃপক্ষ।

তবে আপনি যে সার্ভারই সিলেক্ট করুন না কেনো, সকল ব্যবহারকারীকে আপনি ও অন্যরা আপনাকে ফলো করতে পারবেন। তবে শুরুতে নিজের ইন্টারেস্ট আছে এমন একটি সার্ভার বেছে নেওয়া উত্তম। সোশ্যাল বা যুক্তরাজ্য এর মত সার্ভারগুলো হঠাৎ চাপের মুখে পড়ে বেশ স্লো হয়ে গিয়েছে সম্প্রতি সময়ে। MastodonApp.UK সার্ভার চালান রায়ান ওয়াইল্ড, তিনি জানান ২৪ঘন্টায় ৬,০০০ এর অধিক নতুন জয়েনার দেখে তিনি রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখতে বাধ্য হন।

👉 টুইটার ব্লু ব্যাজের জন্য মাসে ৮ ডলারের প্যাকেজ এলো (পরীক্ষামূলক)

টুইটারের বিকল্প 'মাসটোডন' হঠাত তুমুল জনপ্রিয় - লাখ লাখ নতুন ব্যবহারকারী!

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

অন্যদের কিভাবে খুঁজে পাবো?

মাসটোডন একাউন্ট খোলার সময় যে সার্ভার সিলেক্ট করবেন সেটি আপনার ইউজার নেম এর অংশ হয়ে যাবে। ধরুন আপনার ইউজারনেম abc ও আপনি UK সার্ভারে যুক্ত হলেন, তাহলে [email protected] হবে আপনার ইউজারনেম। একই সার্ভারে থাকা ব্যাক্তিগণ শুধুমাত্র ব্যাক্তির নাম ব্যবহার করে খুঁজে বের করতে পারবেন এক অপরকে, তবে অন্য সার্ভারে থাকা ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করতে সম্পূর্ণ এড্রেসের প্রয়োজন হবে। এছাড়া হ্যাশট্যাগ দ্বারা সার্চ করা যাবে মাসটোডনে। তবে টুইটার এর মত কোনো ধরনের একাউন্ট সাজেশন সিস্টেম নেই মাসটোডনে।

টুইটার ও মাসটোডন এর পার্থক্য

টুইটার হলো একটি মাত্র সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, যাতে ব্যবহারকারীগণ একাউন্ট খুলে যা ইচ্ছা শেয়ার করে থাকেন। অন্যদিকে মাসটোডন হলো মূলত অনেকগুলো সার্ভার বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর কালেকশন মাত্র যা বিভিন্ন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দ্বারা চালিত। মাসটোডন হলো ফেডিভার্স বা ফেডারেটেড ইউনিভার্স এর অংশ যা মূলত যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম শেয়ার করে চলে এমন ফেডারেটেড প্ল্যাটফর্ম।

মাসটোডনে (https://joinmastodon.org/) থাকা পোস্টগুলো ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডারে সাজানো, টুইটার এর মত এলগরিদম এর ভিত্তিতে সাজানো নয়। এখানে কোনো এড নেই ও প্ল্যাটফর্মটির অধিকাংশ অংশ ক্রাউড ফান্ডেড। দেখতে টুইটার এর মত হলেও কোর ফাংশনালিটি এর দিক দিয়ে মাসটোডন এর বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

মাসটোডন কি তাহলে অনিয়ন্ত্রিত?

মাসটোডন যদি স্বাধীনভাবে চালিত সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর কালেকশন হয়, তবে প্রশ্ন আসতে পারে এটা ঠিকভাবে মডারেশন বা নিয়ন্ত্রণ এর দায়িত্বে কি কেউ নেই? এখানে মূলত সকল সার্ভার নিজেদের নিয়ম ঠিক করে ও সেগুলো মেম্বারগণ মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করে। কিছু সার্ভার তো বট কিংবা বিতর্কিত একাউন্ট আছে এমন সার্ভারের সাথে লিংকই রাখেনি। এছাড়া সার্ভার এডমিন বরাবর কোনো পোস্ট রিপোর্ট করা যাবে। তবে হেইট স্পিচ বা ইলিগ্যাল কনটেন্ট নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এই প্ল্যাটফর্মটিতে বেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে বলা যায়।

মাসটোডনে কি বিজ্ঞাপন রয়েছে?

না, মাসটোডনে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন নেই। তবে যেকেউ নিজের বা কোম্পানির প্রোডাক্ট বা সেবার বিজ্ঞাপন করতে পারে, এতে কোনো বাধা নেই।

মাসটোডন কি ফ্রিতে ব্যবহার করা যাবে?

মাসটোডন ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার হলেও বিনামূল্যে একাউন্ট খুলে ব্যবহার করা যাবে কিনা তা আপনি কোন সার্ভারে আছেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত করে। অধিকাংশ সার্ভার ফ্রিতে ব্যবহার করা গেলেও কিছু সার্ভার হয়ত ডোনেশন চাইতে পারে।

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *