প্রযুক্তির আয়নাবাজিঃ মাইক্রোসফট সার্ফেস স্টুডিও ও শাওমি এমআই মিক্স ফোন

surface-studio-3

বাংলায় “চমক” আর ইংরেজিতে “সারপ্রাইজ”, বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মুহূর্তে চমকপ্রদ কোনো কিছুর অন্য নাম হচ্ছে “আয়নাবাজি”। অমিতাভ রেজার এই চলচ্চিত্র যেভাবে সবাইকে চমৎকৃত করেছে ও সবার মুখে মুখে ফিরছে, ঠিক সেভাবেই প্রযুক্তি বিশ্বেও আলাদা আলাদাভাবে চমক নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট ও শাওমি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও চীনা ইলেকট্রনিকস কোম্পানি শাওমি অনেকটা আয়নাবাজির মতই “ভেলকি” লাগিয়ে দিয়েছে।

এই পোস্টে চঞ্চল-নাবিলা অভিনীত আয়নাবাজির নাম উল্লেখ করার একমাত্র কারণ হচ্ছে ছবিটি দর্শকদের মধ্যে যেরকম ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে, মাইক্রোসফট ও শাওমির সাম্প্রতিক প্রদর্শিত কিছু পণ্যও সোশ্যাল মিডিয়ায় সেরকমই সাড়া ফেলে দিয়েছে।

অ্যাপলের সাম্প্রতিক কাজকর্মে অনেকেই কোম্পানিটির প্রতি কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, আইফোন সেভেনে তেমন চমক দেয়ার মত নতুন কোনো ফিচার নেই, বরং হেডফোনের জ্যাক না থাকায় এটি ব্যবহারকারীদের জন্য অস্বস্তির কারণ হবে। ঠিক এমন সময়ে মাইক্রোসফট নতুন নতুন সুবিধা সমৃদ্ধ সার্ফেস স্টুডিও ডেস্কটপ কম্পিউটার উন্মোচন করল। ওদিকে চীনা কোম্পানি শাওমি এমআই মিক্স মডেলের অসম্ভব সুন্দর একটি স্মার্টফোন বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে। আর এগুলো নিয়ে পুরো প্রযুক্তি বিশ্ব এখন মাতামাতি করছে।

mi-mix-4

আয়নাবাজি মুক্তি পাওয়ার পর ঢাকাই ছবির দর্শকরা যেভাবে চমৎকৃত হয়েছিলেন, প্রযুক্তি বিশ্বে সার্ফেস স্টুডিও পিসি ও এমআই মিক্স স্মার্টফোনের ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই।

কী আছে সার্ফেস স্টুডিও পিসিতে?

প্রশ্নটি হওয়া উচিত ছিল আসলে ‘কী নেই সার্ফেস স্টুডিওতে?’। একজন সাধারণ বা প্রায় অসাধারণ পর্যায়ের কম্পিউটার ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি যা যা চিন্তা করতে পারবেন, তা সহ আরও অনেক কিছুই আছে সার্ফেস স্টুডিও কম্পিউটারে। এটি উইন্ডোজ ১০ প্রো অপারেটিং সিস্টেমে চলবে। এর স্ক্রিন সাইজ ২৮ ইঞ্চি, যা মাত্র ১২.৫ মিলিমিটার পুরু।

surface-studio-1

সার্ফেস স্টুডিওর ৪৫০০ x ৩০০০পি রেজ্যুলেশনের টাচস্ক্রিনে ১৩.৫ মিলিয়ন পিক্সেল রয়েছে। এটি 4K’র চেয়েও ৬৩% বেশি রেস্যুলেশনে ছবি দেখাতে সক্ষম।

সার্ফেস স্টুডিও এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে আপনি এটি টেবিলের ওপর ডেস্কটপের মত ব্যবহার করতে পারবেন, আবার মনিটরটি বাঁকিয়ে ট্যাবলেটের মত করে ফ্রি-হ্যান্ড ব্যবহার করা যাবে।

সার্ফেস স্টুডিওর সাথে ‘সার্ফেস ডায়াল’ নামের গোলাকার নতুন একটি ডিভাইস তৈরি করেছে মাইক্রোসফট, যেটি সার্ফেস কম্পিউটারের স্ক্রিনের ওপর রাখলে স্ক্রিনে দরকারী ও সৃষ্টিশীল অনেকগুলো ফাংশনালিটি পাওয়া যাবে, যা এতদিন কেউ চিন্তাও করেনি! সাথে আরও আছে নতুন ডিজাইনের ওয়্যারলেস কিবোর্ড, মাউস ও সার্ফেস পেন।

সার্ফেস স্টুডিও হচ্ছে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উইন্ডোজ কম্পিউটার যা ডিজাইন ও থ্রিডি সম্পর্কিত কাজের জন্য আলাদাভাবে নজর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এর স্পেসিফিকেশনও অসাধারণ। সার্ফেস স্টুডিওতে রয়েছে সিক্সথ জেনারেশন ইনটেল কোর আই ৫ অথবা কোর আই ৭ প্রসেসর, ৪জিবি পর্যন্ত এনভিডিয়া জিফোর্স জিপিইউ, ৩২জিবি পর্যন্ত র‍্যাম ও ২ টেরাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ।

সার্ফেস স্টুডিওর দাম শুনে একে আপনি অনেকটা ‘সাদা হাতি’ (ব্যয়বহুল শখ) বলতে পারেন। তবে হ্যাঁ, প্রফেশনাল কাজের জন্য এই দাম একেবারে বেমানান নয়। সার্ফেস স্টুডিওর সর্বনিম্ন দাম ২,৯৯৯ হাজার ডলার। আর সর্বোচ্চ মডেলটির দাম ৪,১৯৯ ডলার।

ব্যাপক প্রশংসিত শাওমি এমআই মিক্স

ওদিকে সুদূর চীন দেশ থেকে চমক দেখাচ্ছে শাওমি। তাদের নতুন ডিজাইনের ফোন এমআই মিক্স যেনো আরেক “আয়নাবাজি”। মার্কিন টেক নিউজ সাইট দি নেক্সট ওয়েব বলছে “সম্ভবত এমআই মিক্স হচ্ছে ২০১৬ সালের সবচেয়ে সুন্দর স্মার্টফোন”।

এমআই মিক্স ফোনের ডিজাইন আসলেই বিস্ময়কর। ফোনটির সামনের অংশে উপরের দিকে পুরোটাই স্ক্রিন। খুব সম্ভবত সেলফি ক্যামেরার জন্য জায়গা করে দিতেই ফোনটির সম্মুখভাগে নিচের অংশে কিছুটা জায়গায় স্ক্রিনের দেখা মেলেনি। এরকম ধারণা অনেক আগে থেকেই অনেকে কল্পনা করে এসেছেন। দু-একটি কোম্পানি চেষ্টাও করেছে, তবে এতটা সফল হয়নি। বড় বড় কোম্পানি যেমন অ্যাপল বা স্যামসাং তাদের ফ্ল্যাগশিপ ফোনেও এমন ডিজাইন এখন পর্যন্ত আনতে পারেনি। সেটিই করে দেখিয়েছে শাওমি।

mi-mix-2

শাওমি এমআই মিক্স ফোনের স্পেসিফিকেশনও চমৎকার। এতে আছেঃ

  • ৬.৪ ইঞ্চি ২০৪০ x ১০৮০পি (৩৬২ পিপিআই) ডিসপ্লে। এর স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও ৯১.৩%, যেখানে আইফোন ৭ প্লাসের স্ক্রিন-টু-বডি রেশিও ৬৭.৭% ও গুগল পিক্সেল এক্সএল এর ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৭১.২ শতাংশ। এখানে দারুণ চমক দেখিয়েছে শাওমি।
  • স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ২.৩৫ গিগাহার্টজ কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮২১ প্রসেসর।
  • এড্রিনো ৫৩০ জিপিইউ।
  • ৪জিবি র‍্যামের ভার্সনে পাবেন ১২৮জিবি স্টোরেজ। ৬জিবি র‍্যামের ভার্সনে থাকছে ২৫৬জিবি স্টোরেজ। তবে কোনো মেমোরি কার্ড স্লট নেই। (দরকার আছে কি?)
  • ১৬ মেগাপিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা, ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা।
  • এন্ড্রয়েড ৬ মার্সম্যালো অপারটিং সিস্টেম, এমআইইউআই, ডুয়াল সিম, ফোরজি, এনএফসি, ব্যারোমিটার, ফাস্টচার্জ ৩.০ প্রযুক্তি প্রভৃতি।
  • ফোনের পেছনের দিকে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফ্ল্যাশ।
  • ৪৪০০ এমএএইচ ব্যাটারি সমৃদ্ধ এই ফোনটির ওজন হবে ২০৯ গ্রাম ও পুরুত্ব ৭.৯ মিলিমিটার।

চলতি বছর নভেম্বরের ৪ তারিখে চীনে বিক্রি শুরু হবে শাওমি এমআই মিক্স। ৪জিবি/১২৮জিবি ভার্সনের দাম হবে ৫১৬ ডলার এবং ৬জিবি/২৫৬ জিবি ভার্সনের দাম হবে ৫৯০ ডলার। ৬জিবি র‍্যামের ভার্সনের এমআই মিক্স ফোনের পেছনের ক্যামেরা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের চারপাশে ১৮ ক্যারাট স্বর্ণের গোলাকার রিং দেয়া আছে। আশা করা হচ্ছে ফোনটির পারফর্মেন্স মুগ্ধ করে রাখবে ব্যবহারকারীদের।

mi_mix_04-0

এই ছিল অক্টোবর জুড়ে প্রযুক্তি বিশ্বে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চমক, যার অপর নাম ‘আয়নাবাজি’র সাথে রূপক অর্থে মিলেই যায়। আপনি কী মনে করেন?

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,568 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *