গোপন ফাইল ও ফটো নিরাপদ রাখার উপায়

আপনার ডিজিটাল ফাইল থেকে শুরে করে আপনার গ্যালারিতে থাকা পরিবারের ছবি, আপনার আর্থিক লেনদেনের ডকুমেন্ট সব কিছুই আপনার কাছে অনেক বেশি মূল্যবান। সে কারণে এসব জিনিসের নিরাপত্তা প্রদান করা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে নিরাপত্তা প্রদান করা মানে শুধুমাত্র আপনার ফোন বা ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে বোঝানো হচ্ছে না। এগুলো বাদেও আপনি চাইলে আরো অনেক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে পারেন যেটি সেটআপ করা বেশ সহজ এবং এতে করে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা ছবি অন্যের হাতে পড়া থেকে বেঁচে যাবেন। 

আমরা আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার জন্য এখান থেকে যেকোনো একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করবো। এগুলো কনফিগার করার জন্য আপনার অল্প কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে এবং আপনি কোনো একদিন অবশ্যই এ ব্যাপারে খুশি হবেন যে আপনি আপনার ফাইলগুলোতে এ রকম নিরাপত্তা বলয় দিয়ে রেখেছিলেন। এই নিরাপত্তা বলয় নিশ্চিত করবে যে শুধুমাত্র আপনি আপনার সংবেদনশীল গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো এক্সেস করতে পারেন। চলুন তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোকে কিভাবে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসা যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

ছবি এবং ভিডিও লুকিয়ে রাখুন

এন্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় অপারেটিং সিস্টেমেই কিংবা আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে গুগল ফটোস এবং অ্যাপল ফটোস যেসকল ছবি বা ভিডিও আপনি অন্য কাউকে দেখাতে চান না সেগুলো হাইড করে রাখার সুবিধা প্রদান করে থাকে। আপনার বন্ধু বা চেনা পরিচিত কোনো ব্যক্তি এমনকি অচেনা কোনো ব্যক্তি যদি আপনার ফোন হাতে পেয়ে যায় সেক্ষেত্রে আপনি আপনার মিডিয়া গ্যালারির একটি নির্দিষ্ট অংশ তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দূরে রাখতে পারবেন।

এন্ড্রয়েডে গুগল ফটোসে যেকোনো একটি ছবি বা ভিডিও প্রেস করে হোল্ড করে রেখে সিলেক্ট করে নিন। এরপরে আপনি চাইলে আরো কিছু ফাইল সরানোর জন্য সিলেক্ট করতে পারবেন। এরপর নিচের মেনুতে থাকা মুভড টু লক ফোল্ডারে ট্যাপ করুন। এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রথমবারের মতো এই সুবিধা ভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য বলা হবে। পাসওয়ার্ড প্রদান করার পর থেকে আপনার নির্বাচন করা ছবি, ভিডিও বা ফাইলগুলো ট্রান্সফার হওয়া শুরু করবে। আপনি আপনার ফোন যেই পাসওয়ার্ড দিয়ে খুলে থাকেন সেটি ব্যবহার করে এই ফোল্ডারে ঢুকতে পারবেন। এজন্য আপনাকে লাইব্রেরি ট্যাব থেকে ইউটিলিটি ফোল্ডার ব্যবহার করতে হবে।

অন্য দিকে আইওএস এর অ্যাপল ফটোস এর লাইব্রেরি ট্যাবে গিয়ে সিলেক্ট বাটনে ট্যাপ করুন। এবার আপনি যেসকল ছবি বা ভিডিও হাইড করতে চান সেগুলো এক এক করে নির্বাচন করুন। এরপরে নিচের ডান দিকে থাকা তিনটা ডটে ক্লিক করে হাইড অপশন নির্বাচন করে আপনার বাছাই করা ছবি বা ভিডিও হাইড করে ফেলুন। আপনাকে এই লুকানো ফাইলগুলো খুঁজে পাবার জন্য অ্যালবামে থাকা হিডেন অপশনে ক্লিক করতে হবে। এই অপশনে ঢোকার জন্য আপনার ফোনের লক হিসেবে ফেস আইডি বা পাসওয়ার্ড যেটাই থাকুক না কেন সেটি ব্যবহার করতে হবে। 

পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড ডকুমেন্ট 

এই পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড ডকুমেন্ট মানে আপনার কাছে যে ফাইলটি আছে সেটি যদি অন্য কেউ পেয়েও যায় তারপরও সে ওই ফাইল ওপেন করতে পারবে না। আপনার ফোন, কম্পিউটার বা ক্লাউড একাউন্টে যে নিরাপত্তা মেথডই ব্যবহার করা হোক না কেন এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি অতিরিক্ত লেয়ারের নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে পারবেন। বিভিন্ন ডিভাইস বা বিভিন্ন লোকের কাছে ফাইল আদান প্রদানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা আপনার জন্য লাভজনক হবে।

কিভাবে আপনি এই পদ্ধতি অবলম্বন করবেন এটি মূলত নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন তার উপরে। আপনি যদি উইন্ডোজে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এক্সেল ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ফাইল মেনুতে থাকা ইনফো সেকশনে ক্লিক করতে হবে। এর পরে প্রোটেক্ট ডকুমেন্ট সেকশন থেকে এনক্রিপট উইথ পাসওয়ার্ড অপশনটি ক্লিক করতে হবে। এই একই ফাংশন আপনি চাইলে অ্যাপল কর্তৃক ডেভেলপ করা পেজেস এবং নাম্বার এপ্লিকেশনেও পেতে পারেন। সেখানে আপনি ফাইল সেকশন থেকে সেট পাসওয়ার্ড এ ক্লিক করে আপনার ডকুমেন্টটি পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড নির্বাচনের সময় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যেটি ভবিষ্যতে আপনার ভুলে যাবার সম্ভাবনা কম। কেননা এই পাসওয়ার্ড ছাড়া ওই সকল ডকুমেন্টে প্রবেশ করা সম্ভব না।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

lock privacy

ফ্লাশ ড্রাইভ এনক্রিপট করুন

দুইটি ডিভাইসের মধ্যে ফাইল ট্রান্সফার করার ক্ষেত্রে ইউএসবি ফ্লাশ ড্রাইভ খুব কার্যকরী একটি গ্যাজেট হিসেবে কাজ করে। এনক্রিপ্টিং মানে মূলত আপনার ডেটা কোনো একটি পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে লক করে রাখা। এই পাসওয়ার্ড ছাড়া ফ্লাশ ড্রাইভ এর মধ্যে থাকা ডাটা রিড করা এমনকি কোনো ফাইল ওপেন করা সম্ভব না।

উইন্ডোজ এবং ম্যাকওস দুটি অপারেটিং সিস্টেমেই এই ফাংশনের সুবিধা থাকলেও সেটি ব্যবহার করা তুলনামূলক ভাবে একটু জটিল। উইন্ডোজের ক্ষেত্রে আপনার এর প্রো/এন্টারপ্রাইজ ভার্শন ব্যবহার করে এই সেটিংস চালু করতে হবে। তবে আপনি যে ধরনের ই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন না কেন ভালো একটি উপায় হলো এই কাজের জন্য VeraCrypt নামের একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা। 👉 উইন্ডোজ বিটলকার কি? এর সুবিধা ও ব্যবহারের নিয়ম জানুন

লিংকের মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ নির্বাচন করুন

বর্তমান সময়ে আমরা যেকোনো ধরনের ফাইল অন্য কম্পিউটারে বা কোনো মানুষের সাথে শেয়ার করার জন্য ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস ব্যবহার করে থাকি। এই শেয়ার করা ফাইল অথবা ফোল্ডারে অনেক সময় পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড অথবা অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তা বলয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এসকল ক্ষেত্রে আরো একটি সুবিধা রয়েছে যেটি হয়তোবা আপনি নাও জানতে পারেন সেটি হলো লিংকে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্বাচন করা।

ধরুন আপনি কোনো একটি কাজের জন্য একটি লিংক তৈরি করে সেটিকে সাত দিন সময়ের জন্য মেয়াদ দিয়ে দিলেন। এখন যদি কেউ আপনার এই লিংক পেয়ে যায় এবং এক মাস পরে সেই লিংকে ঢোকার চেষ্টা করে তাহলে সে ওই লিংকে ঢুকতে পারবে না। যার ফলে ওই লিংকে থাকা আপনার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সেই ব্যাক্তি এক্সেস করতে পারবে না। এটি আপনার ফাইল বা ছবি কিংবা ভিডিওকে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের হাতে পড়ার থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে। 👉 এনক্রিপশন কী? এটা কী কাজে লাগে?

আমাদের ফোন, কম্পিউটার কিংবা ক্লাউড স্টোরেজে থাকা যেকোনো ডকুমেন্ট কিংবা ছবি বা ভিডিও সব কিছুর নিরাপত্তা জোরদার করা আমাদের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আপনার এসকল গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অথবা ছবি ও ভিডিওর জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারবেন। নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক নানা ধরনের তথ্য এবং টিপস এন্ড ট্রিকস পেতে চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,569 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *