মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বা মোবাইলে আর্থিক সেবা মূলত একটি প্রযুক্তিগত লেনদেন ব্যবস্থা। একে সংক্ষেপে এমএফএস ও বলা হয়। সাধারণ জনগণের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী এর যাত্রা শুরু হয়।
প্রচলিত ব্যাংক বা ব্যাংকিং সেবা গণমানুষের চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করতে সক্ষম না হওয়ার ফলে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস এর যাত্রা শুরু হয়। ব্যাংকে না গিয়ে দৈনন্দিন ছোট ছোট নানা প্রয়োজনে মানুষ এখন মোবাইলে আর্থিক সেবার আশ্রয় নিচ্ছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা প্রচলিত ব্যাংকিং সেবা এবং মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এফএফএস এর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে জানবো।
এমএফএস কি?
এমএফএস হলো সম্পূর্ণ মোবাইল ভিত্তিক একটি আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া যার সাহায্যে গ্রাহক তার মোবাইলের মাধ্যমে দৈনন্দিন লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে ও অন্যান্য আর্থিক পরিষেবার সুবিধা ভোগ করতে পারে। উদাহরণঃ বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায় প্রভৃতি। মোবাইলে আর্থিক সেবার মধ্যে গ্রাহকেরা মোবাইল রিচার্জ, মূল্য পরিশোধ, বিল প্রদান, টাকা পাঠানো, টাকা তোলা, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স গ্রহণ সহ আরো নানান ধরনের সেবা পেয়ে থাকে। তবে কোম্পানি ভেদে এই সেবার মধ্যে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
প্রচলিত ব্যাংকিং সেবা কি?
প্রচলিত ব্যাংক হল এক ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা মানুষের সঞ্চয় এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। এ কারণে ব্যাংককে একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও বলা যায়। সাধারণত ব্যাংকের অর্থ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী কে ব্যাংকিং সেবা বলা হয়। চলতি, সঞ্চয়ী ও মেয়াদী হিসেবে অর্থ গ্রহণ করা, গ্রাহকদের চেক গ্রহণ করা, দাবি পরিশোধ করা, ঋণ দেওয়া, বিলবাট্টা করা, গ্রাহকদের অর্থ এক স্থান থেকে অন্য স্থানের স্থানান্তরের সাহায্য করা ইত্যাদি সেবা ব্যাংকিং সেবার আওতাভুক্ত। দেশে অনেকগুলো ব্যাংক রয়েছে যেমন, সোনালি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক প্রভৃতি।
মোবাইল আর্থিক সেবা এবং প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার মধ্যে পার্থক্য কি?
মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ঘরে বসেই ছোট খাটো লেনদেন খুব সহজেই দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা যায়। অন্য দিকে প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে সেবা নেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। মোবাইল আর্থিক সেবা নেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে না। সপ্তাহের যেকোনো দিনে যেকোনো সময়ে মোবাইল আর্থিক সেবা নেওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রচলিত ব্যাংকিং সেবায় ব্যাংক দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় খোলা থাকে এবং দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। এজন্য যদি আমাদের শুক্রবার বা শনিবার চেকের মাধ্যমে টাকার প্রয়োজন পড়ে বা নির্দিষ্ট ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার দরকার পরে আমাদের কে ব্যাংকের সাপ্তাহিক ছুটি শেষ হবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তবে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও এটিএম/সিআরএম সেবার মাধ্যমে এসব সীমাবদ্ধতা অনেকটাই কেটে যাচ্ছে।
[★★] মোবাইল দিয়ে টাকা আয় করার উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন
👉 বাংলাটেক ইউটিউবে সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন, দারুণ ভিডিও দেখুন
মোবাইল আর্থিক সেবার সুবিধা সমূহ কি?
দেশের প্রচলিত ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত আপামর জনসাধারণের দোর গড়ায় আর্থিক সেবা পৌঁছে দেবার লক্ষ্যে দেশে ২০১১ সাল হতে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস এর প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এই সেবার আওতায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য উপযোগী এবং প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হচ্ছে। মোবাইল আর্থিক সেবার আওতায় সকল সেবা ও সুবিধা সমূহ নিম্নে দেওয়া হলো –
নিজ একাউন্টে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট
নিজ মোবাইল একাউন্টে ইলেকট্রনিক অর্থে গ্রহণ করাকে ক্যাশ ইন এবং মোবাইল হিসাবে ইলেকট্রনিক অর্থকে নগদ অর্থে রূপান্তর করা কে ক্যাশ আউট বলা হয। এমএফএস এর আওতায় সাধারণ জনগন খুব সহজেই এই সুবিধা গ্রহন করতে পারে।
ব্যক্তি কর্তৃক ব্যক্তির একাউন্টে অর্থ স্থানান্তর
এ ধরনের লেনদেনের আওতায় একজন মোবাইল হিসাব গ্রাহক দেশের অভ্যন্তরে অপর একজন মোবাইল হিসাব গ্রাহককে নিজের মোবাইল হিসাব থেকে যেকোনো সময় যে কোন স্থানে টাকা স্থানান্তর করতে পারেন।
ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অর্থ পরিশোধ
নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি ও ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়ে এই সেবা এমএফএস ব্যবহারকারীদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। বর্তমানে একজন মোবাইল হিসাব গ্রাহক তার হিসেবে রক্ষিত অর্থ থেকে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে পারেন। এছাড়া দেশের অনেক বিপণী বিতানে এমএফএস এর মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার সুবিধা থাকায় ক্রেতা পণ্য ও সেবার মূল্য বিপণী বিতানের এমএফএস এর একাউন্টে প্রদান করতে পারেন। বর্তমানে দেশে এই সেবা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 👉 বিকাশ লোন নেওয়ার উপায় – জামানত ছাড়া সিটি ব্যাংক ও বিকাশ ঋণ!
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যক্তিকে অর্থ পরিশোধ
এসে এবার আওতায় একটি প্রতিষ্ঠান তার কর্মচারীদের বেতন ভাতা সহজে ও দ্রুততর সময়ের মধ্যে প্রদান করতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সময় এবং শ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে, অপরদিকে গ্রাহকরাও ঘরে বসে তাদের মোবাইল একাউন্টে টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে তাদের অতিরিক্ত শ্রম, সময় ও খরচ করতে হচ্ছে না।
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
👉 বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের লোন সম্পর্কে যেসব তথ্য আপনার জানা দরকার
সরকার কর্তৃক ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান
অবসর ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি সহ সরকার কর্তৃক ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভাতা ই মোবাইল একাউন্টের মাধ্যমে প্রকৃত সত্বভোগীর নিকট সহজেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। এতে এসব ভাতা বিতরণে সরকারের বাড়তি জনবলের প্রয়োজন নেই এবং প্রশাসনিক রাজসহ সংশ্লিষ্ট খাতে দুর্নীতি হ্রাস পাবে। ইতিমধ্যে রূপালী ব্যাংক কর্তৃক এফএমএস ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদের উপবৃত্তির অর্থ তাদের মায়ের মোবাইল একাউন্টে প্রদান করা হয়েছে।
রেমিট্যান্স এর টাকা বিতরন
এ সেবার মাধ্যমে বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীরা তাদের পরিবার পরিজনের মোবাইল একাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন। যদিও এ ব্যবস্থায় ব্যাংক রেমিটেন্স এর অর্থ সংগ্রহ করে এমএফএস এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগী হিসেবে অর্থ প্রেরণ করে থাকে। এতে করে প্রবাসী আইগ্রহীতাদের ব্যাংকে গিয়ে টাকা তোলার খরচ এবং সময় নষ্ট হয় না। ঘরে বসেই তিনি তার মোবাইল একাউন্টে পেতে পারেন এবং বাড়ির পাশের এজেন্ট পয়েন্ট হতে প্রয়োজন মত যে কোনো সময় সে অর্থ তুলতে পারেন। 👉 বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠানোর ও আনার উপায়
প্রচলিত ব্যাংকের সুবিধা সমূহ
প্রচলিত ব্যাংকের গুরুত্ব মানুষের জীবনে অপরিসীম। ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া বৃহদায়তন ব্যবসা-বাণিজ্য এখনো কল্পনা করা যায় না। ব্যাংক শুধু টাকা পয়সা দিয়েই ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা সচল রাখেনা উপরন্ত ব্যবসায়ীকে পরামর্শ দিয়েও সাহায্য করে। তাই ব্যাংককে বিশ্ব বাণিজ্যের দিকদর্শন যন্ত্র নামে অভিহিত করা হয়। ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সেবা সমূহ নিম্নরুপ-
সঞ্চয় সংগ্রহ, মূলধন গঠন ও বিনিয়োগ
ব্যাংকগুলো বিভিন্ন জনগণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে। ফলে সঞ্চিত অর্থ মূলধনে পরিণত হয় এবং ব্যাংক তা কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ঋণ প্রদান
প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ব্যাংক আমানতের একটি অংশ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীদের স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সহায়তা করে থাকে। 👉 মোবাইলে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক ‘সুবিধা’ অ্যাপ
বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি
ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে। এতে আর্থিক বিনিময় সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত হয়। যেমন চেক, পে অর্ডার, ড্রাফট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি হলো বিনিময়ের মাধ্যম। এগুলো ব্যবহার করলে আর্থিক বিনিময় শুধু সহজই হয় না ঝুঁকিমুক্ত ও থাকে।
অর্থ স্থানান্তরে সহায়তা
আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিরাপদে ও দ্রুত অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে লেনদেন ও ব্যবসা বাণিজ্য সংস্থার করেছে।
এমএফএস বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস মূলত প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটি ক্ষুদ্র কিন্তু আধুনিক রূপ। এমএফএস এর মাধ্যমে ঘরে বসে স্বল্প পরিমান অর্থের লেনদেন করা যায়। এছাড়া এমএফএস এ একজন গ্রাহক প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে এমএফএস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও বৃহৎ আর্থিক সেবার ক্ষেত্রে এটি এখনো মূলধারায় যেতে পারেনি।
প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেম এ ব্যাপারে গ্রাহকদের প্রধান পছন্দ হতে পারে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। নিত্য নতুন টেকনোলজি বিষয়ক আর্টিকেল পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।