ফ্রি কল ও মেসেজ দেয়ার সেরা অ্যাপ ডাউনলোড করুন

একটা সময় ছিল যখন পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবের মাঝে যোগাযোগটা মোবাইলের ভয়েস কল ও এসএমএস এর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। আবার টাকা খরচ এড়াতে কখনো কখনো যোগাযোগটা মিসড কলের মাধ্যমেও চলতো। একটা মিসড কল দিলে এক অর্থ, দুইটা মিসকল দিলে আলাদা অর্থ। তবে বর্তমানে অনলাইন ভিত্তিক বেশ কিছু ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ এই চিত্র পালটে দিয়েছে। মনে রাখবেন, এখানে ফ্রি বলতে সেসব সেবাকে বোঝানো হয়েছে যারা আপনার কাছ থেকে টাকা নেয়না

যেমন ধরুন ফেসবুকের মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ। এসব অ্যাপ কিন্তু আপনার কাছ থেকে কলের জন্য টাকা নেয়না। আপনি মোবাইল কোম্পানি অথবা ওয়াইফাই কোম্পানির কাছ থেকে ডাটা কিনে এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। আবার একই ডাটা আপনি চাইলে ইউটিউবে ভিডিও দেখেও খরচ করতে পারবেন।

গত কয়েক বছরে ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের ব্যাপক প্রসারের ফলে যোগাযোগ শুধুমাত্র ব্যাসিক কল/এসএমএসের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং প্রায় পুরোটাই ইন্টারনেট ভিত্তিক হয়ে গিয়েছে। মোবাইল ফোনে সরাসরি ভয়েস কল বা এসএমএস/মেসেজ পাঠানোর চেয়ে অনলাইন মেসেজিং সার্ভিস ব্যবহারে খরচ কম হওয়ায় ব্যবহারকারীরা অনলাইন মেসেজিং অ্যাপগুলোর উপর ঝুঁকে পড়েছে।

বর্তমানে ৮-১০টা মেসেজিং সার্ভিসের নাম যে কেউ বলে দিতে পারবেন। কিন্তু এদের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য সেরা? এই দ্বিধা দূর করতেই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে সুবিধাজনক মেসেজিং অ্যাপগুলো নিয়ে এখানে আলোচনা করব। এগুলোর জন্য ইন্টারনেট বা এমবি দরকার হবে।

সুতরাং আপনি যদি ইন্টারনেট এমবি ব্যবহার করাকে ফ্রি বলতে নারাজ হন তাহলে আপনার শুধুমাত্র মেসেঞ্জারের ফ্রি টেক্সট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আর আপনার যদি স্কুল, কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে ফ্রি ওয়াইফাই থাকে তাহলে আপনি খরচ ছাড়াই এসব অ্যাপ ব্যবহার করে ফ্রি কল করতে ও মেসেজ দিতে পারবেন।

ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ

ফেসবুক মেসেঞ্জার

মেসেজিং সার্ভিসগুলোর জনপ্রিয়তা বুঝতে পেরে ফেসবুক তাদের সাইটের চ্যাট ফিচারকেই আলাদা করে আরও নতুন কিছু ফিচারের সাথে মেসেঞ্জার নামে চালিয়ে আসছে। তবে মেসেঞ্জারের সাম্প্রতিক ভার্সনগুলোর ক্ষেত্রে ফেসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভ থাকলেও আপনি এই সার্ভিস ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া সরাসরি মেসেঞ্জার থেকেই আপনার মোবাইল ক্যারিয়ারের মেসেজগুলোও কন্ট্রোল করতে পারবেন।

এই ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ ক্রস-প্লাটফর্ম হওয়াতে প্রায় সব ডিভাইসেই ব্যবহার করতে পারবেন। এটার সম্পূর্ণ ওয়েব ভার্সন থাকাতে ব্যাসিক কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে আনসাপোর্টেড ডিভাইসেও। ম্যাসেঞ্জারে টেক্সট মেসেজ আদানপ্রদান, ছবি পাঠানো, পারসন-টু-পারসন অডিও ও ভিডিও কলের পাশাপাশি গ্রুপ কল এবং গ্রুপ মেসেজিংও করতে পারবেন।

মেসেঞ্জারের মধ্যেই গেম খেলা, লিঙ্ক ব্রাউজ করার ও ফাইল শেয়ার করার মত ফিচারও যুক্ত হয়েছে। মেসেঞ্জার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর বিশাল কম্যুনিটি। প্রায় সবারই ফেসবুক বা মেসেঞ্জার একাউন্ট থাকায় মেসেঞ্জার অনেকটা ইউনিভার্সাল যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বর্তমানে এটাকে শুধু একটা মেসেজিং অ্যাপ না বলে প্ল্যাটফর্ম বলাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব মোবাইল অপারেটরই অল্প দামে/কোন ডেটা খরচ ছাড়াই মেসেঞ্জারে টেক্সট পাঠানো ও রিসিভ করার সুযোগ দিচ্ছে।

ফেসবুক মেসেঞ্জার

ফেসবুক মেসেঞ্জারের দুটি ভার্সন রয়েছে। একটি হচ্ছে মূল মেসেঞ্জার যাতে এর সব ফিচার আছে। আরেকটি হচ্ছে মেসেঞ্জার লাইট, যা কম ডেটা খরচ করে স্লো নেট কানেকশনেও ভাল চলে।

মেসেঞ্জার ডাউনলোড লিংকঃ

মেসেঞ্জার লাইট বর্তমানে শুধুমাত্র এন্ড্রয়েডের জন্যই আছে। এই লিংক থেকে মেসেঞ্জার লাইট ডাউনলোড করুন।

👉 ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিঃশব্দে মেসেজ পাঠানোর উপায়

হোয়াটসঅ্যাপ

হোয়াটসঅ্যাপ

এটাও মেটা বা ফেসবুকের মালিকানাধীন একটি অনলাইন মেসেজিং অ্যাপ। ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপকে কিনে নেয় ফেসবুক। তবে মেসেঞ্জার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ অনেকটাই আলাদা। এর পলিসি ও উদ্দেশ্যও ভিন্ন। যারা মূলত সোশ্যাল নেটওয়ার্কের হইচই পছন্দ করেন না, শুধুমাত্র একটা সহজ কল ও মেসেজ অ্যাপ চান, পরিবার ও কাছের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখতে তাদের জন্য এটা আদর্শ। হোয়াটসঅ্যাপে আপনি পারসন-টু-পারসন অডিও ও ভিডিও কল করতে পারবেন।

টেক্সট চ্যাট, হাই রেজ্যুলেশনের ছবি থেকে শুরু করে ভিডিও, অডিও ও ডকুমেন্ট পাঠাতে পারবেন। হোয়াটসঅ্যাপে এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞাপন চালু হয়নি। আপনার কন্টাক্টে থাকা যে নম্বরগুলো হোয়াটসএপ ব্যবহার করে তাদের সাথে আপনাকে অটোমেটিক এড করে দেয়া হবে। এতে রয়েছে শক্তিশালী গোপনীয়তার জন্য এনক্রিপশন ফিচার।

তবে অনেকের কাছে এর যে ফিচারটি খারাপ লাগতে পারে সেটি হলো হোয়াটসঅ্যাপ আপনার কোন ডেটা তাদের সার্ভারে সেইভ করে না। ফলে একটি নির্দিষ্ট ডিভাইসে পড়ে ফেলা মেসেজগুলো অটোমেটিক আপনি অন্য ডিভাইস থেকে পড়তে পারবেন না, এবং একসাথে অনেক ডিভাইসে লগইন করতে পারবেন না। তবে আপনার চ্যাট ডেটাগুলোকে চাইলে ম্যানুয়ালি ব্যাকআপ ও রিস্টোর করতে পারবেন। মূলত ভালো সিকিউরিটি দিতেই এইসব ফিচার দিচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ।

👉 হোয়াটসঅ্যাপ একাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর উপায়

হোয়াটসঅ্যাপ ক্রস প্ল্যাটফর্ম। এর ইউজার ইন্টারফেসও সহজ। হোয়াটসঅ্যাপের ডেস্কটপ ভার্সনও আছে তবে তা চালাতে হলে আপনার মোবাইলের একাউন্টের সাথে পেয়ার করে নিতে হবে। বাংলাদেশে অনেক অপারেটরই শুধু হোয়াটসঅ্যাপ চালানোর জন্য কম খরচে ডেটা প্যাক অফার করছে। এই লিংক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করুন।

ইমো

ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ হিসেবে ইমো বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে এর সিম্পল ইউজার ইন্টারফেস  ও কম স্পিড এর ইন্টারনেটেও ভালোভাবে চলার কারণে। শুধুমাত্র ফোন নম্বর দিয়ে লগইন করে আপনি আপনার কন্টাক্টে থাকা মানুষগুলোর সাথে ভয়েস ও ভিডিও কল করতে পারবেন। টেক্সটের পাশাপাশি ছবি, অডিও ও ভিডিও মেসেজও ইমো ব্যবহার করে পাঠানো যায়।

ইমো

এন্ড্রয়েড, আইওএস ও উইন্ডোজ ফোনের জন্য ইমো অ্যাপ রয়েছে। বিশেষ করে যারা এতো ফিচার চান না কিন্তু টুজি নেটওয়ার্কে ভিডিও ও ভয়েস কল করতে চান তাদের জন্য ইমো অত্যন্ত সুবিধাজনক। ইমো ডাউনলোড করতে এই লিংক ভিজিট করুন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

স্কাইপ

স্কাইপ

মাইক্রোসফটের মালিকানাধীন এই মেসেজিং অ্যাপটি একসময় অডিও ও ভিডিও কলের ক্ষেত্রে রাজত্ব করলেও বর্তমানে আরও সিম্পল, মোবাইল ফ্রেন্ডলি সার্ভিসগুলোর ভিড়ে এর আবেদন অনেকটাই কমে গেছে। তবে প্রফেশনাল মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে এখনো স্কাইপের কদর রয়েছে। ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ হিসেবেও স্কাইপের নামডাক আছে।

স্কাইপ যথেষ্ট ফিচারবহুল। এর উইন্ডোজ ফোন, পিসি, এন্ড্রয়েড, আইওএস, লিনাক্স ও ম্যাক ভার্সন অ্যাপ রয়েছে। স্কাইপের একটা আকর্ষণীয় ফিচার হলো কল করার সময় ইনস্ট্যান্ট ট্রান্সলেট ফিচার। আপনার মাইক্রোসফট আউটলুক/হটমেইল/লাইভ একাউন্ট কিংবা নতুন স্কাইপ একাউন্ট খুলেই স্কাইপ ব্যবহার করতে পারবেন। স্কাইপ ডাউনলোড করতে এই লিংক ভিজিট করুন।

কোনটি ব্যবহার করব?

এই পোস্টে উল্লেখকৃত চারটি ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ এর মধ্যে আমার মতে ফেসবুক মেসেঞ্জার সব থেকে এগিয়ে আছে। তবে তুলনামূলক কম ডেটা খরচ করে বলে ইমো অনেকের জন্যই সুবিধাজনক হবে। আপনার যদি স্লো ইন্টারনেট থাকে, তাহলে আপনার জন্য ইমো ভাল হবে। আর মাঝামাঝি বা তার চেয়ে ভাল নেট কানেকশন হলে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা স্কাইপ, সবগুলোই ভাল চলবে। ফোনে একাধিক মেসেজিং অ্যাপ ইনস্টল করা থাকলে অবস্থা বুঝে ব্যবহার করা যায়। সে দিকটাও ভেবে দেখবেন।

ইন্টারনেটে যোগাযোগের জন্য আরও অনেক ফ্রি কল ও মেসেজ অ্যাপ আছে যেমন ভাইবার, গুগল ডুয়ো, স্ন্যাপচ্যাট, টেলিগ্রাম প্রভৃতি। আশা করি সেগুলো নিয়েও ভবিষ্যতে কথা হবে। প্রযুক্তি বিষয়ক আরো অনেক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইল ইনবক্সে পেতে এখানে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করে নিন

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,550 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *