আজকের ইফতারের সময়

রমজান মাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য এক বরকতের মাস। দীর্ঘ এক মাস রোজা পালনের মাধ্যমে মুসলিমরা এই মাস পালন করে থাকে। এই মাসের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ইবাদাত হচ্ছে সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করে সেহরি সম্পন্ন করা এবং রোজা পালন শুরু করা এবং দিনশেষে সঠিক সময়ে ইফতার করার মাধ্যমে রোজা খোলা। এই দুটি কাজই সঠিক সময়ে করার গুরুত্ব অনেক।

তবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্য আলাদা আলাদা সময়ে ওঠে এবং অস্ত যায়। তাই এলাকা ও দিনভেদে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময়ও পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই রোজাদারদের জন্য এই সময় জানা অনেক জরুরি সঠিকভাবে রোজা পালন করতে হলে। ইফতারের ফজিলত ও বরকত অনেক। ইফতারে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও এর গুরুত্ব জানাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই পোস্ট থেকে আপনি রমজান ২০২৪ এর প্রতিদিনের সঠিক ইফতারের সময় জেনে নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে ইফতারের ফজিলত, গুরুত্ব ও কী খাবার খাওয়া উত্তম সেটি নিয়েও আলোচনা করবো আমরা।

আজকের ইফতারের সময়

ছক থেকে আজকের ইফতারের সময় দেখে নিতে পারেনঃ

Sehri and Iftar Time 2024

উপরের ছক শুধুমাত্র ঢাকা জেলার জন্য প্রযোজ্য। বিভিন্ন এলাকার জন্য সময় যোগ বা বিয়োগ করে নিতে হবে। কোন জেলায় কত সময় যোগ বা বিয়োগ করতে হবে তা নিচের ছক থেকে জেনে নিতে পারেন।

Sehri Iftar Time Difference 2024

ইফতারের গুরুত্ব ও সময় অনুযায়ী কেন ইফতার করা উচিত

সারাদিন কষ্ট করে রোজা রাখবার শেষে ইফতার এক আনন্দময় অনুভূতির সৃষ্টি করে। সৃষ্টিকর্তার কাছেও রোজাদারদের এই কষ্ট শেষে ইফতার করার আনন্দ অনেক পছন্দের। তাই ইফতার সঠিকভাবে ও সময়মত করা সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদাত। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (মুসলিম)। এখান থেকেই ইফতারের গুরুত্ব আমরা বুঝে নিতে পারি।

কাজেই ইফতার শুধুমাত্র রোজা ভেঙ্গে ক্ষুধা নিবারনের জন্য নয় বরং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এক ইবাদত স্বরূপ। একারণেই সঠিক নিয়মে ইফতার করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া ইফতারের সময়কে পবিত্র সময় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইফতার টাইমে দোয়া কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। তাই এসময় বেশি বেশি করে দোয়া করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। ইফতারের জন্য নির্দিষ্ট দোয়া রয়েছে। এছাড়া চাইলে নিজের ভাষায়ও আপনি সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করতে পারেন।

শুধু ইফতার করাই ফজিলতের নয়, বরং কাউকে ইফতার করানোও অত্যন্ত বরকতময়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ অর্থাৎ বাড়তি ইবাদাত ও সওয়াবের অংশিদার হতে অন্যদের ইফতার করানো যেতে পারে।

ইফতারের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা মুমিনদের জন্য সুন্নাত। ‘ইফতারি’ বলতে বোঝানো হয় সারাদিন রোজা রাখবার পড়ে যে পানীয় ও খাবারের মাধ্যমে এই রোজা শেষ করা হয় তাকেই। খাবার সামনে নিয়ে ধৈর্য ধারণ করে নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করা আল্লাহর কাছে পছন্দের। মহানবী (সা.) এভাবেই ইফতার পালন করতেন। ইফতার করবার ক্ষেত্রে দেরি করা উচিত নয়। আজান শুনবার সঙ্গে সঙ্গে বা সঠিক সময় হয়ে গেলেই ইফতার করে ফেলা উত্তম। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন যে, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।’ (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)। এছাড়াও হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, ‘যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৩)। এই বিষয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস, ‘যতদিন লোকেরা দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন দ্বীন স্পষ্ট ও বিজয়ী থাকবে, কেননা ইহুদি ও খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতারি করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫০)।

অর্থাৎ সঠিক সময়ে ইফতার করার ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাই ইফতার করবার ক্ষেত্রে সময়ের আগে করে ফেললে রোজা নষ্ট হয়ে যাবার যেমন সম্ভাবনা থাকে তেমনি দেরি করে করাও ভালো কোন বিষয় নয়। তাই ইফতারের সময় সম্পর্কে অধিক সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। ইফতার শুধুমাত্র পানি ও খেজুরের মতো সাধারণ খাবার দিয়েই করে ফেলা সম্ভব। তাই ইফতারের ক্ষেত্রে আলাদা আয়োজনের প্রয়োজন নেই। ওয়াক্ত বা ইফতারির সময় হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই রোজা ভেঙ্গে ফেলা উচিত।

ইফতারের দোয়া

ইফতার একটি পবিত্র সময় এবং আল্লাহ তায়ালা এসময় বান্দার দোয়া কবুল করতে পছন্দ করেন। তাই এসময় বেশি বেশি দোয়া করা সুন্নাত। এই সময়ের পবিত্রতা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি ইফতারের সময় এবং প্রতি রাতে লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।’ (ইবনে মাজাহ হাদিস : ১৬৪৩)।

ইফতারে রাসুলুল্লাহ (সা.) যে ইফতারের দোয়া পড়তেন সেটি হল, ‘আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’। এর অর্থ হচ্ছে, ‘হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি, আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ, সাওম অধ্যায়)। এছাড়াও নিজের ভাষায় নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী বিভিন্ন দোয়া পড়তে পারেন।

ইফতার শেষ হবার পরেও দোয়া পড়া যেতে পারে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে নবীজি (সা.) ইফতার করার পর দোয়া পড়তেন, ‘জাহাবাজ জামায়ু ওয়া ইবতাল্লাতিল আরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু।’ অর্থাৎ পিপাসা দূর হয়ে গেছে, রগ সিক্ত হয়ে গেছে এবং আল্লাহ চাইলে প্রতিদান পাক্কা হয়ে গেছে।’ (আবু দাউদ হাদিস : ২৩৫৪)।

ইফতারে কী খাওয়া উচিত

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ২০০০ – ২৫০০ ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করতে হয় সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য। তবে রোজার সময় স্বাভাবিকভাবেই এই পরিমাণ ক্যালোরি পাওয়া যায় না। রোজার সময় ১০০০ – ১৫০০ ক্যালোরি খাবার গ্রহণ করাই যথেষ্ট। তবে এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং তা শরীরের ক্ষতিকর কোষগুলোকে পরিষ্কার করে ফেলতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াকে অটোফেজি বলা হয়।

রোজায় অন্যান্য সময় থেকে কম খাওয়া ভালো। স্বাভাবিক সময়ের থেকে এক তৃতীয়াংশ খাবার কম খেলে রোজায় সুস্থ থাকা যাবে। তবে এক্ষেত্রে খাবার হতে হবে অবশ্যই পুষ্টিকর। ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ইফতারে ৬০০ ক্যালোরির মতো খাবার গ্রহণ করা উচিত। 

ইফতারে পূর্ণ পেট খাওয়া উচিত নয়। নবীজি (সা.) কখনই অধিক খাবার খেতেন না ইফতারে। স্বাভাবিক পরিমাণ খাবার খেয়েই তিনি ইফতার শেষ করতে পছন্দ করতেন। এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.) ইফতারে খেজুর খেতে পছন্দ করতেন। তাই খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং শর্করার অন্যতম উৎস। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন রয়েছে।

এছাড়াও ইফতারে তেলজাতীয় জিনিস খাওয়া থেকে বিরত থাকা উত্তম। ফলমূল ইফতারে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রধান উৎস হতে পারে। এতে দেহে প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া সম্ভব হয় এবং সুস্থ থাকা যায়। ফলের মধ্যে কলা অত্যন্ত উপকারি। প্রতিটি কলায় ১০৫ ক্যালোরি থাকে।

এছাড়া ছোলা-বুট অল্প পরিমানে খাওয়া উচিত। কেননা ছোলা-বুট পরিপাকে বেশি সময়ের দরকার হয়। ইফতারে ডিম খেতে পারেন। একটি দিমে ৮০ ক্যালোরি থাকে এবং তা স্বাস্থ্যসম্মত। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন ফল খেতে পারেন ইফতারে। যেমনঃ কমলা, আপেল, পেয়ারা, তরমুজ ইত্যাদি। এসব ফল সারাদিনের পানিশূন্যতা পূরণে সাহায্য করবে।

যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাওয়া ইফতারে অত্যন্ত জরুরি। কেননা সারাদিনের পানিশূন্যতা পূরণ করতে হয় সুস্থ থাকবার জন্য। এক্ষেত্রে সাধারণ পানি ও স্বাস্থ্যকর শরবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ডাবের পানি, ইসবগুলের ভুসি, লেবুর শরবত এগুলো অত্যন্ত উপকারি।

অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার যেমনঃ পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, জিলাপি ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সৃষ্টি করে এবং সহজেই অসুস্থ করে দিতে পারে আপনাকে। এছাড়া ঝাল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। ঝাল খাবারও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

ইফতারের খাবারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে হালাল খাবার খাওয়া। তাই সঠিকপথে উপার্জন করা আপনার রোজা কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান একটি শর্ত। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার আয়োজন না করে বরং সবাইকে নিয়ে ইফতারি করা উচিত।

পুরো রোজার মাসটিই সংযমের মাস। তাই ইফতারের ক্ষেত্রেও সংযম পালন করা জরুরি। এই মাস আমাদের ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয়। ইফতার গ্রহনের ক্ষেত্রেও এটি মাথায় রাখা উচিত। আর তাই ইফতারের খাবার হওয়া উচিত সহজ ও স্বাভাবিক। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বনি আদমের জন্য তো এতটুকু খাবারই যথেষ্ট যার দ্বারা তার পিঠ সোজা থাকে। যদি এর চেয়ে বেশি খেতে হয়, তা হলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)। তাই তার এই নির্দেশনা অনুযায়ী ইফতারেও খাবার গ্রহণ করা উচিত। সঠিক ভাবে সংযমের সাথে ও সঠিক সময়ে ইফতার পালন করবার মাধ্যমে রোজার মর্যাদা বজায় রাখা প্রতিটি মুসলমানের জন্যই দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *