উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর কী? কেন দরকার? ব্যবহারের নিয়ম

উইন্ডোজ কম্পিউটারের অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটরের নাম শুনেছেন। তবে আমরা অনেকেই জানি না উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর আসলে কী ধরনের কাজে দরকার হয়। এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যার মাধ্যমে পুরো কম্পিউটার কোনো সমস্যা ছাড়াই চলতে পারে। সাধারণত উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি ডিফল্টভাবে যেটি দেয়া থাকে সেটিই পুরো কম্পিউটার ঠিকভাবে চালাতে যথেষ্ট। তবে অনেক দক্ষ কম্পিউটার ব্যবহারকারী এই রেজিস্ট্রি এডিট করার মাধ্যমে বাড়তি ফিচার বা বাড়তি কিছু সুবিধা আদায় করে নিতে পারেন। তবে রেজিস্ট্রি এডিট করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ। ভুল কিছু করে ফেললে পুরো কম্পিউটার ব্যবস্থাই ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই পোস্টে আমরা জানবো উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর সম্পর্কে।

রেজিস্ট্রি এডিটর কী?

রেজিস্ট্রি এডিটর সম্পর্কে জানবার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি আসলে কী। উইন্ডোজের ভেতরে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও অ্যাপের সিস্টেম কনফিগারেশন যেখানে জমা থাকে সেটাই হচ্ছে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি। এটি একটি ডাটাবেজ যেখানে বিভিন্ন ভ্যালু তৈরি করা থাকে ডিফল্টভাবে। এসব ভ্যালু হতেই পুরো কম্পিউটার সঠিক সেটিংসে চলতে পারে। রেজিস্ট্রিতে থাকা তথ্যগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন বুট আপ ফাংশন, স্টার্টআপ অপশন, ইনস্টল করা সফটওয়্যার ফাংশন, ড্রাইভার, বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের তথ্য ইত্যাদি। বিভিন্ন থার্ড পার্টি প্রোগ্রামও তাদের সেটিংস রেজিস্ট্রিতে সংরক্ষণ করে থাকে। রেজিস্ট্রিতে প্রতিটি নতুন জিনিস একটি সাবকি হিসেবে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে।

আর রেজিস্ট্রি এডিটর হচ্ছে একটি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস যা মাইক্রোসফট তাদের রেজিস্ট্রি এডিট করতে উইন্ডোজের সাথেই দিয়ে থাকে। এটি মাইক্রোসফট ১৯৯২ সালে উইন্ডোজ ৩.১ ভার্সনের সাথে প্রথম এনেছিলো। রেজিস্ট্রি অনেকটাই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের মেরুদণ্ডের মতো কাজ করে এবং সিস্টেম পারফর্মেন্সে প্রভাব ফেলতে পারে।

খুব অ্যাডভান্সড লেভেলের ব্যবহারকারী ছাড়া কারোই উইন্ডোজ রেজিস্ট্রির কিছু এডিট করা ঠিক নয়। শুধুমাত্র কম্পিউটার অ্যাডমিন তার কাজে দক্ষ হলে এটি এডিট করতে পারেন। উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটরের মাধ্যমে মূল রেজিস্ট্রির একটি ব্যাকাপ রেখে দেয়া ভালো। কেননা যদি কখনও কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় তবে আপনি সহজেই এই ব্যাকাপ রিস্টোর করে কম্পিউটারকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন। উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর ওপেন করতে আপনি উইন্ডোজের সার্চ বারে সার্চ করতে পারেন। কিংবা চাইলে Windows+R কী চেপে রান ওপেন করে regedit লিখে এন্টার প্রেস করলেও এই রেজিস্ট্রি এডিটরে প্রবেশ করতে পারবেন।

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

মূলত পুরো উইন্ডোজের পারফরমেন্স ঠিক রাখতে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর বেশ গুরত্বপূর্ণ। তাছাড়া পুরো রেজিস্ট্রি ঠিক রাখতে অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারীদের জন্যও এটি দরকারী। একদম সিস্টেম থেকে কিছু পরিবর্তন করতে চাইলে রেজিস্ট্রি এডিটরের দরকার হয়। রেজিস্ট্রি এডিটরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

সিস্টেম পারফর্মেন্স: আপনার রেজিস্ট্রির মধ্যে বিভিন্ন কী যদি ভুল হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তবে সেটা আপনার পুরো সিস্টেমকে ক্রাশ করিয়ে দিতে পারে। উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে আপনি সহজেই এই কী ঠিক করে নিয়ে বিভিন্ন পারফর্মেন্সের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

কনফিগারেশন সেটিংস: স্টার্টআপের সময় বিভিন্ন প্রোগ্রাম, ডিসপ্লে বা ডেস্কটপের ভিতরের বিভিন্ন সেটিংস সবসময় ব্যবহারকারীর জন্য সঠিকভাবে কনফিগার করা থাকে না। উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে এই কনফিগারেশন ঠিক করে নিতে পারবেন আপনি। বাড়তি ফিচার, যেমন বাড়তি কিছু থিম এনাবল করে নেয়া যায় উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিট করার মাধ্যমে 👉 উইন্ডোজ ১১ এর লুকানো থিম চালু করার উপায়

রেজিস্ট্রি ক্লিনার: উইন্ডোজের বিভিন্ন রেজিস্ট্রি এন্ট্রি অনেকসময় একাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যদিও আধুনিক উইন্ডোজে এটা হয় না বললেই চলে। এগুলো ঠিক করতে অযাচিত রেজিস্ট্রি এন্ট্রি পরিষ্কার করা দরকার হয়। উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর এই কাজ সহজেই করে ফেলতে পারে।

রেজিস্ট্রি এরোর: বিভিন্ন কাজের ফলে রেজিস্ট্রিতে গোলমাল দেখা দিতে পারে। লোডশেডিংয়ের ফলে রেজিস্ট্রি ঠিকভাবে সেভ না হলে বা তার থেকেও খারাপ হবে কোনো ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস ঢুকে পুরো সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রেজিস্ট্রির তথ্য পরিবর্তন করে ফেললে। সমস্যার মূল খুঁজে বের করে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর টুল ব্যবহার করে আপনি সবকিছু ঠিক করে নিতে পারবেন।

দূর থেকে রেজিস্ট্রি এডিট: একই নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা অন্য কম্পিউটারের রেজিস্ট্রি পরিবর্তন করা যায় রেজিস্ট্রি এডিটরের মাধ্যমে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর যেভাবে ব্যবহার করবেন

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটরের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করা যায়। তার মধ্যে কিছু কাজ সম্পর্কে এখানে ধারণা দেয়া হলো।

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি ব্যাকাপ রাখা

  • প্রথমে রেজিস্ট্রি এডিটর ওপেন করে নিন।
  • এবার যে কী বা সাবকী এর ব্যাকাপ রাখতে চান সেটি সিলেক্ট করুন তার উপর ক্লিক করে।
  • এবার উপরে ট্যাব হতে File অপশনে ক্লিক করে Export অপশনে ক্লিক করুন। নতুন একটি ডায়ালগ বক্স ওপেন হবে।
  • এবার ব্যাকাপটি কোথায় সংরক্ষণ করবেন সেটি সিলেক্ট করে দিন এবং ফাইলের একটি নাম দিয়ে দিন পছন্দমত।
  • এবার Save অপশনে ক্লিক করুন। .reg এক্সটেনশনে একটি ফাইল সেভ হয়ে যাবে আপনার পছন্দমত লোকেশনে।

👉 উইন্ডোজের ৮টি কাজের ফিচার যা সবার জানা উচিত

রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি ক্লিন করা

বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ও গোলেমেলে রেজিস্ট্রি এন্ট্রি আপনি রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে পরিষ্কার করে ফেলতে পারবেন। বিভিন্ন প্রোগ্রাম আনইন্সটল করার পরে আপনি সেই প্রোগ্রামের রেজিস্ট্রি এন্ট্রি মুছে দিতে পারেন। এটা শুধুমাত্র অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারীদের করা উচিত। এই কাজ করার আগে রেজিস্ট্রি পুরোপুরি একবার ব্যাকাপ করে নিন যাতে কোনো সমস্যা হলে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারেন।

  • HKEY_LOCAL_MACHINE সেকশনটি এক্সপ্যান্ড করুন রেজিস্ট্রি এডিটর হতে।
  • এবার SOFTWARE ফোল্ডার এক্সপ্যান্ড করুন। এখানে বিভিন্ন প্রোগ্রাম যা আপনি ইনস্টল করেছিলেন তার রেজিস্ট্রি এন্ট্রির তালিকা দেখতে পাবেন।
  • যে প্রোগ্রাম ব্যবহার করেন না এবং আনইনস্টল করে দিয়েছেন সেই প্রোগ্রামের এন্ট্রি খুঁজে বের করে নিন এবং তার উপর রাইট ক্লিক করুন।
  • ড্রপ ডাউন মেনু থেকে Delete সিলেক্ট করে দিন।
  • এরপর ডায়ালগ বক্সে Yes চেপে এই এন্ট্রি মুছে ফেলার ব্যাপারটি কনফার্ম করে দিন।

উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি এডিটর ব্যবহার করে রেজিস্ট্রি কী এবং ভ্যালু পরিবর্তন করা

  • প্রথমে রেজিস্ট্রি এডিটর ওপেন করে কে কোনো কী খুঁজে বের করুন যেটি পরিবর্তন করতে চান।
  • এই কী এর নাম পরিবর্তন করতে রাইট ক্লিক করে Rename সিলেক্ট করুন। এবার নতুন নাম দিয়ে এন্টার চাপ দিয়ে সেভ করে ফেলুন।
  • রেজিস্ট্রির ভ্যালু পরিবর্তন করতে কী এর উপর রাইট ক্লিক করে Rename সিলেক্ট করে নতুন ডায়ালগ বক্সে Value data পরিবর্তন করে নিন।
  • এরপর OK দিয়ে কনফার্ম করুন।

রেজিস্ট্রি কী ও ভ্যালু পরিবর্তন করার আগে কী কাজে এবং কেন তা পরিবর্তন করছেন তার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিন। নাহলে উইন্ডোজ ব্যবহারে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

👉 উইন্ডোজ ১১ এর লকস্ক্রিন বাদ দেওয়ার নিয়ম

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *