আইফোন ৬এস বনাম শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো

সম্পাদকের কথাঃ এই পোস্টটি আমাদের সাইটের একজন নিয়মিত পাঠক অনিক বিশ্বাস লিখে পাঠিয়েছেন। তিনি নিজে একজন শাওমি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী, যিনি একই সাথে একটি আইফোন ৬এস ফোনও ব্যবহার করছেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম সারির একটি ওয়েব অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জুমশেপার এ কর্মরত অনিক এবং আমরা সবাই ভালোভাবেই জানি যে, আইফোনের সাথে কম বাজেটের কোনো ফোনের তুলনা হয়না, তার পরেও শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করার জন্যই এই পোস্টটি পাঠিয়েছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী অনিক।

আমাদের এই অতিথি লেখক শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এবং অ্যাপল আইফোন ৬এস ব্যবহার করে যে পার্থক্যগুলো অনুভব করেছেন তা তারই লেখা বর্ণনায় নিচে তুলে ধরা হলো।

ক্যামেরা

আমি শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এর ক্যামেরা নিয়ে বিরক্ত। এর ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল বলা হলেও ইমেজ কোয়ালিটি সেই তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের! যদি বলেন, দামটা অনেক কম হওয়ার কারণে হয়তো ক্যামেরা ভালো করতে পারেনি, তাহলে আমি বলবো অপো কিংবা হুয়াওয়ের সমান দামের মোবাইল শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’র থেকে অনেক ভালো ইমেজ দেয়।

অবশ্যই ক্যামেরার দিক থেকে আইফোন ৬এস অনেক ভালো। হুয়াওয়ে, অপো বা শাওমির কিছু দামি ফোন আইফোন ৬এস ফোনের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল ছবি দেয়। কিন্তু আমার মতে আইফোন ৬এস ট্রু ইমেজ দেয়। ক্যামেরার দিক থেকে আমি আইফোন ৬এস কে এগিয়ে রাখবো।

স্ক্রিন এবং টাচ

আইফোন ৬এস এর টাচ অনেক ভালো। কিন্তু শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এর টাচও খারাপ না! বাস্তব চোখে আমার কাছে কোন পার্থক্য মনে হয়নি। দুইটা ফোনই অনেক স্মুথ। শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো ফোনের ডিসপ্লের রেজুলেশন আইফোন ৬এসের থেকে অনেক ভালো মনে হয়েছে আমার অভিজ্ঞতায়। এদিক থেকে আমি শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’কে এগিয়ে রাখবো।

অ্যাপ্লিকেশন

অ্যান্ড্রয়েড মার্কেটিং পলিসি হচ্ছে বিজ্ঞাপন ভিত্তিক। বিভিন্ন ফ্রি অ্যাপের ভিতর যেখানে সেখানে তারা বিজ্ঞাপন দিতে দিচ্ছে। এতে বিজ্ঞাপনটা আমার মতে খুব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আর ইন্টারনেট কানেক্টেড থাকলে তো কথাই নেই, বিজ্ঞাপন না দেখে আপনি অনেক গেমের নেক্সট স্টেজে যেতেই পারবেন না। হ্যাঁ একটা ওএস, বিশাল একটা ডেভেলপার কমিউনিটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিজ্ঞাপনের ভূমিকাটা অনেক। কিন্তু এটা আমার মতে একটা মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারণ করেছে।

অপরদিকে আইফোন ইকোসিস্টেমকে এদিক থেকে অনেক এগিয়ে রাখবো আমি। আইওএসে ফ্রি অ্যাপগুলোতে বিজ্ঞাপন অনেক কম। যেখানে সেখানে অ্যাপল বিজ্ঞাপন দিতে দেয় না। যতগুলো অ্যাপ আমি দেখেছি, সবগুলোই মোটামুটি ভালো ইউএক্স দেয়। অ্যাপ্লিকেশন স্ট্যান্ডার্ড যদি আমি দেখি, তাহলে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (App Store) অনেক এগিয়ে। গুগল প্লে (Google Play) অনেক আজে বাজে অ্যাপ দিয়ে ভর্তি, ভালো অ্যাপ খুঁজে পেতে অনেক টাইম লাগে।

সেটিংস

অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সেটিংসের বিশালতা নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকার কথা না; আমারও নেই। এতো এতো সেটিংস যে আপনি নিজেই সেটিংস খুঁজে পেতে দ্বিধায় পড়ে যাবেন। আর শাওমি এমআইইউ আই ৮ এর এক্সট্রা ফিচার তো আছেই।

তবে আইওএস’এ সেটিংস অনেক কম, খুব কম সেটিংস থাকার দরুণ আপনি সহজেই মনে রাখতে পারবেন কোথায় কী আছে। তবুও আমি এদিক থেকে শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো ফোনকে এগিয়ে রাখবো, কারণ সেটিংস খুঁজতে কষ্ট হলেও এতে ফ্লেক্সিবিলিটি অনেক বেশি।

সিপিইউ এবং র‍্যাম

আমার শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’তে হেক্সা কোর সিপিইউ এবং ৩জিবি র‍্যাম আছে। স্পিড নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। আমি বাস্তবে ১ বারের জন্যেও ফোনটিকে স্লো হতে বা অ্যাপ আটকে যেতে দেখিনি।

আইফোন ৬এস ফোনে ডুয়াল কোর সিপিইউ এবং ২জিবি র‍্যাম আছে। আমি একজন সাধারণ ইউজার, আমার মোবাইলে যেমন “এক টেরাবাইট র‍্যাম” (kidding) প্রয়োজন নেই তেমনি সুপার সনিক প্রসেসরও দরকার নেই। ডিভাইসটির জন্যে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু হলেই চলবে। শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এবং আইফোন ৬এস এর কর্মক্ষমতার দিক থেকে অনেকের কাছে দুটোই সমান মনে হলেও আইফোন ৬এস ফোনে জনপ্রিয় ফুটবল গেম Dream League Soccer 2017 অনেক স্মুথলি চলে। এদিক থেকে আমি আইফোন ৬এস কে এগিয়ে রাখবো।

স্টোরেজ

আমার শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’তে ৩২জিবি স্টোরেজ। আইফোন ৬এস এর স্টোরেজ নিয়ে আমার কথা আছে। শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’তে আপনি এক্সটারনাল মেমোরি কার্ড লাগাতে পারবেন, কিন্তু আইফোন ৬এসে পারবেন না। যারা আইফোনের কোনো মডেলের ১৬জিবি ভার্সন কিনেছেন তাদেরকে দেখেছি ছবি তুলতে ভয় পান, স্টোরেজ ফুল হয়ে যাবে সেই ভয়! একবিংশ শতাব্দীতে এসে এটা কল্পনাই করা যায় না। তাই আমি এক্ষেত্রে শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’কে এগিয়ে রাখবো।

ব্যাটারি

শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এর ব্যাটারি ৪০৫০ এমএএইচ। খুব দ্রুত চার্জ হয়। শাওমির সবথেকে ভালো দিক কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় এর ব্যাটারি ব্যাকআপ।

আইফোন ৬এস এর ব্যাটারি ১৭১৫ এমএএইচ। কোনোভাবে আপনি একদিন চালাতে পারবেন। ফোন একটু বেশি ব্যবহার করলে আপনাকে আবার চার্জ দিতে হবে। তাই আমি শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো’কে এই দিক থেকে এগিয়ে রাখবো ।

ফিচার

আপনার যদি শাওমি এমআইইউআই ৮ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থেকে থাকে তাহলে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আমার কাছে খুব ভালো মনে হয়েছে। এরা সাপ্তাহিক আপডেট দেয়। ফোরামে এরা খুব একটিভ, কোনো বাগ ইস্যু হলে নেক্সট উইকে আপডেট পাওয়ার আশা করতে পারেন।

অ্যাপল আমাদেরকে অনেক ফিচারের সাথে পরিচয় করিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তারা এখনো অনেক ফিচার ইচ্ছা করেই ফোনে দেয়না। আমার দৃষ্টিতে ফিচারের দিক থেকে শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এগিয়ে।

বিল্ড কোয়ালিটি

শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি খুব একটা ভালো না। বডিতে অল্পতেই দাগ পড়ে যায়। এর উপরের এবং নিচের অংশে খুব নিম্নমানের প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।

আইফোন ৬এস এর বিল্ড কোয়ালিটি খুব ভালো। এক কথায় অসাধারণ। আমি এক্ষেত্রে আইফোন ৬এস ফোনকে এগিয়ে রাখবো।

উপসংহার

পরিশেষে, এটা কিন্তু বলতেই হবে, ১৪,০০০ টাকা আর ৫০,০০০ টাকা দামের ফোনের মধ্যে তো পার্থক্য থাকবেই। টাকার মূল্যমান হিসেব করলে আসলে আইফোন ৬এস ফোনের থেকে শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এগিয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা যখন পণ্য কিনি শুধু সেই পণ্য কিন্তু কিনি না! সাথে তার ব্র্যান্ড ভ্যালুটাকেও কিনি।

আইফোন ৬এস বনাম শাওমি রেডমি নোট ৩ প্রো এর ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী?

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *