দীর্ঘদিন ধরে ইমেইল ব্যবহারকারীদের একটি বড় সীমাবদ্ধতার কথা প্রায় সবাই জানতেন। একবার ইমেইল ঠিকানা খুলে ফেললে সেটি আর পরিবর্তন করার কোনো উপায় ছিল না। নামের বানান ভুল, আনপ্রফেশনাল ইউজারনেম কিংবা সময়ের সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়া ইমেইল ঠিকানা, সব ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীদের নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হতো। কিন্তু অবশেষে সেই নিয়ম বদলাতে যাচ্ছে গুগল।
সম্প্রতি গুগলের সাপোর্ট ডকুমেন্ট থেকে জানা গেছে, গুগল অবশেষে জিমেইল ব্যবহারকারীদের ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে জিমেইলের ইতিহাসে এটি হবে অন্যতম বড় ও ব্যবহারকারী-বান্ধব পরিবর্তন।
জিমেইল ঠিকানা এতদিন পরিবর্তন করা যেত না কেন?
জিমেইল চালুর শুরু থেকেই গুগল একটি বিষয় পরিষ্কার করে রেখেছিল, জিমেইল ঠিকানা শুধু একটি ইমেইল নয়, এটি ব্যবহারকারীর ডিজিটাল পরিচয়। এই একটি ঠিকানার সঙ্গেই যুক্ত থাকে গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, গুগল ফটোস, প্লে স্টোরসহ অসংখ্য ওয়েবসাইট ও অ্যাপের লগইন ব্যবস্থা। এই কারণেই হয়ত গুগল দীর্ঘদিন ধরে জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের অনুমতি দেয়নি। একবার ঠিকানা বদলাতে দিলে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে এবং পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের আকাংখা
অনেক ব্যবহারকারী স্কুল বা কলেজ জীবনে মজা করে একটি জিমেইল আইডি খুলেছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটিই হয়ে ওঠে চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং বা অফিসিয়াল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তখন নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে সব ইমেইল, ফাইল, কনট্যাক্ট ও লগইন স্থানান্তর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার অনেকেই নিজের পুরো নাম বা জন্মসাল ব্যবহার করায় স্প্যাম ও ফিশিং ইমেইলের শিকার হচ্ছেন। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার দিক থেকেও এটি বড় সমস্যা তৈরি করে। এসব কারণেই জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের দাবি বহু বছর ধরেই উঠছিল।
গুগল কেন এখন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?
সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগল এখন তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনাকে আরও নমনীয় করতে চায়। বর্তমানে গুগল অ্যাকাউন্টে ফোন নম্বর, রিকভারি ইমেইল, প্রোফাইল নামসহ অনেক তথ্যই পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু মূল জিমেইল ঠিকানাটি ছিল একেবারেই অপরিবর্তনীয়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের নতুন ফিচারটি কীভাবে কাজ করতে পারে?
এখনো পর্যন্ত গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত দিন-তারিখ ও নির্দেশনা প্রকাশ করেনি। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের অপশনটি গুগল অ্যাকাউন্ট সেটিংসের মধ্যেই যুক্ত হতে পারে। ব্যবহারকারী চাইলে নিজের বর্তমান অ্যাকাউন্টের জন্য একটি নতুন প্রাইমারি ইমেইল ঠিকানা নির্ধারণ করতে পারবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুরনো জিমেইল ঠিকানাটি পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে যাবে না। সেটি এলিয়াস হিসেবে থেকে যাবে, ফলে পুরনো ঠিকানায় পাঠানো ইমেইল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ঠিকানায় চলে আসবে। এতে করে পুরনো কনট্যাক্ট বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আলাদা করে ইমেইল আপডেট করার ঝামেলা অনেকটাই কমে যাবে।
সব ব্যবহারকারী কি একসঙ্গে এই সুবিধা পাবেন?
গুগল সাধারণত নতুন ফিচার একসঙ্গে সবার জন্য চালু করে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধাপে ধাপে এই সুবিধা উন্মুক্ত করা হয়। ফলে শুরুতে সীমিত সংখ্যক ব্যবহারকারী এই অপশন দেখতে পারেন, পরে ধীরে ধীরে এটি সবার জন্য চালু হতে পারে।
প্রথমে ব্যক্তিগত জিমেইল অ্যাকাউন্টে এই সুবিধা আসতে পারে, এরপর গুগল ওয়ার্কস্পেস বা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টেও এটি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে এটি কবে পুরোপুরি পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো সময়সূচি জানানো হয়নি।
জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনে ব্যবহারকারীদের কী সুবিধা হবে?
এই পরিবর্তনের ফলে ব্যবহারকারীরা তাদের ডিজিটাল পরিচয় নতুনভাবে সাজানোর সুযোগ পাবেন। পেশাগত জীবনের জন্য আরও ক্লিন ও প্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করা সহজ হবে, তাও আবার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার ঝামেলা ছাড়াই।
যারা দীর্ঘদিন ধরে স্প্যাম বা অপ্রয়োজনীয় ইমেইলের সমস্যায় ভুগছেন, তারা নতুন ঠিকানা ব্যবহার করে সেই চাপ অনেকটাই কমাতে পারবেন। একই সঙ্গে পুরনো গুগল অ্যাকাউন্টের সব ডেটা, সাবস্ক্রিপশন ও লগইন অক্ষত থাকবে।
👉 জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করার নিয়ম
সম্ভাব্য সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা
যেকোনো বড় আপডেটের মতোই জিমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। যেমন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কতবার ঠিকানা পরিবর্তন করা যাবে, তার ওপর সীমা আরোপ করা হতে পারে।
এছাড়া জনপ্রিয় বা ইতোমধ্যে ব্যবহৃত ইউজারনেম পাওয়া যাবে না, সেটিও স্বাভাবিক। নিরাপত্তার স্বার্থে গুগল টু-স্টেপ-ভেরিফিকেশন, ফোন নম্বর কনফার্মেশন বা রিকভারি ইমেইল আপডেট বাধ্যতামূলক করতে পারে।
বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য কেন এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশে জিমেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিপুল। শিক্ষার্থী, ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা কিংবা কর্পোরেট কর্মী, সবার ডিজিটাল জীবনের কেন্দ্রেই রয়েছে জিমেইল। অনেকেই এখনো অপ্রফেশনাল বা পুরনো ধাঁচের ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করছেন শুধুমাত্র তথ্য হারানোর ভয়ে।
এই নতুন সুবিধা চালু হলে তারা সহজেই নিজেদের ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারবেন, তাও আবার আগের সব ইমেইল, ফাইল ও অ্যাকাউন্ট অক্ষত রেখেই। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস, ব্যাংকিং সেবা, সরকারি পোর্টাল কিংবা আন্তর্জাতিক যোগাযোগে এটি বড় সুবিধা এনে দেবে।
জিমেইল এখন আর শুধু ইমেইল পাঠানো বা পড়ার টুল নয়। এটি চ্যাট, ভিডিও মিটিং, ফাইল শেয়ারিং এবং কাজের সমন্বয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার অর্থ হলো, গুগল ব্যবহারকারীদের আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ ও কাস্টমাইজেশনের সুযোগ দিতে চায়।
আগামী দিনে জিমেইলে আরও উন্নত এলিয়াস ব্যবস্থাপনা, স্মার্ট ফরোয়ার্ডিং কিংবা একাধিক ঠিকানা ব্যবস্থাপনার সুবিধা যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, জিমেইল ইমেইল ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ চালু হওয়া ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর। এটি শুধু একটি সাধারণ সেটিংস আপডেট নয়, বরং ডিজিটাল পরিচয়ের ওপর ব্যবহারকারীর অধিকার বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।

আমাদের যেকোনো প্রশ্ন করুন!