বিকাশ অ্যাপের সেরা সুবিধাগুলো জানুন

মোবাইল ওয়ালেট হিসেবে বিকাশ বর্তমানে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। টাকা পাঠানো এবং পাওয়াকে খুব সহজ করে তুলেছে বিকাশ। বিকাশের মাধ্যমে এখন বেশিরভাগ স্থানেই আপনি মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। তাছাড়া বিকাশের এজেন্টও বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে গিয়েছে। তাই বিকাশ লেনদেনের অতি পরিচিত একটি নাম হয়ে উঠেছে।

তবে একটা বড় অংশের বিকাশ ব্যবহারকারীই শুধু টাকা পাঠানো ও টাকা পাওয়ার জন্যই বিকাশ ব্যবহার করেন। কিন্তু বিকাশ আরো অনেক ধরণের সেবা নিয়ে এসেছে। শুধু কোড ডায়াল করে বিকাশ ব্যবহার করলে এসব সেবার বেশিরভাগই আপনার ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল ওয়ালেট হিসেবে বিকাশ অনেক ফিচারসমৃদ্ধ অ্যাপ এনেছে অনেকদিন আগেই। এই অ্যাপে নিয়মিত তারা বিভিন্ন নতুন ফিচার যুক্ত করছে।

টাকা পাঠানো বা টাকা রিসিভ করা, মোবাইল রিচার্জ, পেমেন্ট এসব কাজ আপনি বিকাশের কোড *২৪৭# ডায়াল করে যেকোনো ফোন হতেই করতে পারবেন। তবে অ্যাপ ব্যবহার করে এগুলো ছাড়াও অনেক কাজ করা যায়। তার জন্য আপনার স্মার্টফোন দরকার হবে। আমাদের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো বিভিন্ন ফিচার ও সেবা সম্পর্কে যা শুধু বিকাশ অ্যাপেই পাওয়া যাবে। তাই স্মার্টফোন থাকলে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে লেনদেনের অনেক কাজই আপনি সহজ করে ফেলতে পারবেন।

১. লেনদেনের ইতিহাস

লেনদেনের ইতিহাস চাইলে আপনি কোড ডায়াল করেও দেখতে পারবেন। কিন্তু তাতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। লেনদেনের সুন্দর বিবরণ ও ইতিহাস বিকাশ অ্যাপ হতে পেয়ে যাবেন আপনি। মাসে কত লেনদেন করেছেন, মাসের শুরুর ব্যালেন্স এবং শেষের ব্যালেন্স, কোন খাতে মোট কত লেনদেন করেছেন এর সকল হিসাব অ্যাপ আপনাকে দিতে পারবে।

যারা ব্যাবসার কাজে বিকাশ ব্যবহার করেন তাদের কাছে লেনদেনের বিস্তারিত বিবরণ বা স্টেটমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো ব্যবহারকারীর এই স্টেটমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। তাই অ্যাপের এই ফিচারটি অনেক কাজের। বিকাশ অ্যাপের উপরে কোণায় ডানপাশে বিকাশ লোগোটি ট্যাপ করলে স্টেটমেন্ট অপশনটি দেখতে পাবেন। এছাড়া আপনি আপনার মাসিক ও দৈনন্দিন লিমিটের কতটুকু ব্যবহার করেছেন সেটিও দেখতে পাবেন ‘লিমিট’ অপশন হতে।

২. বিকাশ টু ব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার

ক্যাশ আউট থেকে অনেক কম খরচেই চাইলে সরাসরি আপনি আপনার বিকাশ থেকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারেন। এর জন্য আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিকাশের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। এরপর সাথে সাথেই আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতে পারবেন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। তবে এই পদ্ধতিতে টাকা পাঠাতে হলে আপনার ব্যাংকটি বিকাশের তালিকায় থাকতে হবে। বিকাশ থেকেই সাপোর্টেড ব্যাংকের তালিকাটি দেখে নিতে পারেন।

তবে কিছুদিন আগে বিকাশ ভিসা কার্ডে ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা চালু করেছে। অর্থাৎ আপনার যে ব্যাংকই হোক, ভিসা কার্ড থাকলে কার্ডের মাধ্যমেই ব্যাংকে টাকা পাঠাতে পারবেন। তবে এ পদ্ধতিতে টাকা যেতে ৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অ্যাপের মধ্যে ‘বিকাশ টু ব্যাংক’ হতে এই অপশনটি ব্যবহার করতে পারবেন।

👉 বিকাশ থেকে ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানোর উপায়

৩. সেভিংস

টাকা জমাতে আমরা অনেকেই ব্যাংকে গিয়ে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলি। মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নির্দিষ্ট সময় ধরে জমা করা যায় এসব অ্যাকাউন্ট হতে। এর জন্য ব্যাংকে গিয়ে লম্বা ফর্ম পূরণ করতে হয় এবং বিভিন্ন তথ্য দিতে হয় যা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ। কিন্তু বিকাশ অ্যাপ হতে আপনি সহজেই কয়েকটি অপশন সিলেক্ট করে আপনার নিজস্ব সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন।

এক্ষেত্রে ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত সময়ের জন্য মাসে ৫০০ টাকা হতে জমাতে পারবেন। টাকা বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়ে যাবে। সাধারণ ব্যাংকের মতো লভ্যাংশও পেয়ে যাবেন। বর্তমানে সাধারণ এবং ইসলামিক দুই ধরণের সেভিংস অ্যাকাউন্ট দিচ্ছে বিকাশ। বিকাশ ডিপিএস খুব কাজের একটি ফিচার। ‘সেভিংস’ নামের অপশনটি বিকাশ অ্যাপ খুললেই দেখতে পাবেন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

বিকাশ অ্যাপের সেরা সুবিধাগুলো জানুন

৪. লোন

বিকাশের আরেকটি কাজের ফিচার পার্সোনাল লোন। বিকাশ আপনার লেনদেনের উপর নির্ভর করে আপনাকে টাকা ধারও দেবে। তবে এই ফিচার সবার জন্য নয়। আপনাকে বিকাশের নিয়মিত ব্যবহারকারী হতে হবে এবং নিয়মিত বড় পরিমাণে লেনদেন করতে হবে। অ্যাপ ওপেন করে লোন অপশন হতে দেখে নিতে পারেন যে আপনি লোনের জন্য নির্বাচিত কিনা। বিকাশ এই সেবা সিটি ব্যাংকের লোনের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। তারাই নির্ধারণ করে যে আপনি লোন পাবেন কিনা বা পেলে কত টাকা পর্যন্ত পাবেন।

👉 বিকাশ লোন নেওয়ার উপায়

৫. রেমিট্যান্স

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন এই অপশনটি খুবই কাজের একটি অপশন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার পেওনিয়ারের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশে নিয়ে আসেন। পেওনিয়ার হতে ব্যাংকে টাকা আনতে কিছুটা সময় লাগে। তবে পেওনিয়ারের সাথে চুক্তি করে বিকাশ অর্থ সাথে সাথে নিয়ে আসার ফিচার চালু করেছে। এই ফিচার পেতে আপনাকে বিকাশ রেমিট্যান্স অপশন হতে আগে আপনার পেওনিয়ারের অ্যাকাউন্টটি সংযুক্ত করে নিতে হবে।

৬. কিউআর কোড দিয়ে লেনদেন

বিকাশের কিউআর ফিচারের কথা অনেকেই জানেন না। বিকাশ কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা রেখেছে। বিকাশ অ্যাপ হতেই আপনি ক্যামেরার মাধ্যমে কিউআর কোড হতে নম্বর নিয়ে নিতে পারেন। এতে নম্বর ভুল হবার চিন্তা থাকে না এবং দ্রুত লেনদেন সম্ভব হয়। বিকাশ প্রত্যেকের জন্যই আলাদা কিউআর রেখেছে তাদের অ্যাপে। বামপাশে উপরে কোণায় আপনার প্রোফাইল পিকচারের উপর ট্যাপ করে আপনার কিউআর পেতে পারেন। আপনি এই কিউআর কোড নম্বরের বদলে যে কাউকে পাঠিয়ে দিতে পারেন।

👉 বিকাশ QR কোড দিয়ে ক্যাশ আউট এবং দোকানে পেমেন্ট করার নিয়ম

👉 বিকাশে QR কোড দিয়ে টাকা পাঠানোর নিয়ম

৭. প্রিয় নাম্বার

প্রিয় নাম্বার বিকাশের তুলনামূলক নতুন একটি ফিচার। বিকাশে অন্য কাউকে সেন্ড মানি করে ১০০+ টাকা পাঠাতে গেলে ৫ টাকা করে চার্জ করে বিকাশ। কিন্তু যার সাথে আপনি নিয়মিত লেনদেন করেন তার সাথে প্রতিবার লেনদেনে ৫ টাকা করে দেয়া খরচ বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি প্রিয় নাম্বার ফিচার ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারেন। ৫টি নাম্বার আপনি আপনার লিস্টে রাখতে পারবেন যাদের কাছে আপনি ফ্রিতে টাকা পাঠাতে পারবেন। ‘সেন্ড মানি’ অপশনের মধ্যে আপনি এই ফিচারটি পেয়ে যাবেন। এখান থেকে আপনি মাসে ৫ টি নাম্বারকে প্রিয় নাম্বার হিসেবে রাখতে পারবেন যাদের কাছে মাসে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত ফ্রিতে পাঠাতে পারবেন।

৮. প্রিয় এজেন্ট

প্রিয় নাম্বারের মতো কম খরচে ক্যাশ আউট সুবিধা দিতে প্রিয় এজেন্ট নাম্বার নির্বাচন করে রাখার সুবিধাও দিচ্ছে বিকাশ। হাজারে ১৪.৯০ টাকায় ক্যাশ আউট করতে পারবেন মাসে একজন এজেন্টের কাছ থেকে। ‘ক্যাশ আউট’ অপশনে গিয়ে আপনি প্রিয় এজেন্টের নাম্বার সেট করতে বা মুছে দিতে পারবেন।

অ্যাপ হতে এই সুবিধাগুলো আপনার বিকাশ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে করবে সমৃদ্ধ। তাই বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে আজই ইনস্টল করে নিতে পারেন প্লেস্টোর হতে অথবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর হতে

👉 আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে সাথেই থাকুন। এখানে ক্লিক করে সাবস্ক্রিপশন কনফার্ম করুন!

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

2 comments

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      এর নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ জানায়নি বিকাশ। তারা শুধু নিয়মিত বিকাশ একাউন্টে লেনদেন করার কথা বলেছে। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *