আপনার ফোনের OLED ডিসপ্লে যেভাবে কাজ করে

আপনার স্মার্টফোনে ডিসপ্লে হলো এমন একটি জিনিস যেটি আপনি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন কিন্তু কখনো এটি নিয়ে ভাবেন না। এটি সবসময় দেখতে ভালো হতে হবে, ভালোভাবে কাজ করতে হবে এবং অপব্যবহারের ক্ষেত্রে সমস্ত উপায় সহ্য করতে হবে। তবে আপনি কি কখনো চিন্তা করেছেন এই সব কিছুর পিছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? ওলেড ডিসপ্লে এমন একটি ফিচার যেটি সম্পর্কে কেউ কথা বলে না, কিন্তু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ওলেড ডিসপ্লে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

ডিসপ্লে প্যানেল

বর্তমান সময়ের সকল প্রিমিয়াম ফোনেই ওলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। ওলেড বলতে মূলত ওরগানিক লাইট এমিটিং ডায়োড বোঝায় এবং এটি দারুন একটি টেকনোলজি। ওলেড ডিসপ্লেগুলো এলইডি ব্যবহার করে যা জৈব অণুর মাধ্যমে আলোকিত হয় এবং আলাদা আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওলেড ডিসপ্লেতে প্রতিটি পিক্সেল তাদের নিজস্ব আলো নির্গত করে বিধায় ফোনের মতো ডিভাইসের ক্ষেত্রে এটি অনেক ভালো আউটপুট দিয়ে থাকে।

প্রযুক্তিটি কিভাবে কাজ করে তা সত্যিই দূর্দান্ত এবং সংশ্লিষ্ট উচ্চ স্তরের ব্যাখ্যাটি বোঝা তুলনামূলক সহজ। দুটি স্তর যেগুলো বিদ্যুৎ সঞ্চালন করে থাকে সেগুলোর মধ্যে জৈব ফিল্মের পাতলা স্তর দিয়ে স্যান্ডউইচ তৈরি করা হয়। যখন তাতে বিদ্যুৎ প্রদান করা হবে সেখানে একটি উজ্জ্বল আলো নির্গত হবে। সেটি অন্যান্য স্তরগুলোর সাথে একত্রিত হয় যা বিদ্যুৎ স্থানান্তর করতে এবং সহায়তা প্রদান করতে ব্যবহৃত হয়। তারপর লক্ষ লক্ষ পৃথক পিক্সেল সমন্বিত একটি ডিসপ্লে তৈরি করতে একত্রে প্যাকেজ করা হয়। ওলেড ডিসপ্লে তৈরি করা এলসিডি প্যানেল তৈরি করার থেকে বেশি কঠিন। যার ফলে ওলেড স্ক্রিন আরো বেশি ব্যয়বহুল।

ওলেড ডিসপ্লেগুলো খুব বেশি কন্ট্র‍্যাস্ট সম্পন্ন, এবং কম শক্তি ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া স্ক্রিনগুলো অবিশ্বাস্যভাবে পাতলা এবং হালকা ও নমনীয়। সেকারণেই স্মার্টফোনের মধ্যে ওলেড টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে ওলেড ডিসপ্লেগুলোর অন্যতম অসুবিধা হলো ব্যবহারযোগ্য জীবন কাল। লাল এবং সবুজ সাবপিক্সেল তৈরি করতে ব্যবহৃত ফিল্মগুলো নীল সাবপিক্সেলগুলোর জন্য ব্যবহৃত ফিল্মগুলোর তুলনায় বেশি সময় ধরে থাকে। এই তিনটি রঙ ছাড়া ডিসপ্লে খুব ভালো ভাবে কাজ করেনা। ডিসপ্লে তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এসকল সমস্যা নিয়ে কাজ করছে। 

টাচস্ক্রিন

আপনার ফোনে থাকা ডিসপ্লে বেশি উপযোগী কেননা এটিতে টাচ স্ক্রিন থাকে। কেউ তাদের ফোন ব্যবহার করার জন্য আলাদা করে কী বোর্ড কিংবা মাউস ব্যবহার করতে চায় না। আপনি যদি এর ব্যাসিক সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে এটি বুঝে ফেলা খুব সহজ। এটিও অত্যন্ত দারুন একটি টেকনোলজি। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে মূলত ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়। ক্যাপাসিটিভ টাচ স্ক্রিন গুলো এক্ষেত্রে ব্যবহার উপযোগী কেননা এটি তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তা এবং খুব সুনির্দিষ্ট হতে পারে।

আপনি আপনার ফোনে কখন এবং কোথায় স্পর্শ করছেন তা জানার জন্য টাচস্ক্রিন একটি বৈদুতিক চার্জ ব্যবহার করে তবে টাচ স্ক্রিন সাধারণত কাঁচের তৈরি হয় যেটি মূলত অন্তরক হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। এটি কাজ করার জন্য টাচ স্ক্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো একটি খুব পাতলা পরিবাহী আবরণ ব্যবহার করে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইন্ডিয়াম টিন অক্সাইড ব্যবহার করা হয় কেননা এটি অনেক স্বচ্ছ। যার ফলে আমরা পিছনের সুন্দর গ্রাফিক্স দেখতে পারি। এই লেয়ার ইলেক্ট্রিক্যাল চার্জ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। আপনি যখন আপনার আঙ্গুল দিয়ে এটি স্পর্শ করবেন তখন এটি আপনার কাছে যেতে পারে। তবে এটি এতোটাই সূক্ষ্ম যে আপনি এটি বুঝতেও পারবেন না বা এর জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হবে না। 

সুন্দর করে দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা

একটি ওলেড ডিসপ্লে এবং একটি পরিষ্কার ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিনের সুবিধা সঠিক ডিসপ্লে ক্রমাঙ্কন এবং টিউনিং ছাড়া পাওয়া সম্ভব না। এটি মূলত যেই কোম্পানি এটি তৈরি করছে তারাই সম্পন্ন করে দেয় তবে কিছু কিছু প্রিমিয়াম ডিসপ্লে রয়েছে যেগুলো অন্যগুলোর তুলনায় ভালো। আরো এগিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যালিব্রেশন, ব্রাইটনেস এবং প্রকৃত আরজিবি (লাল, সবুজ এবং নীল) মান দরকার হয়। 👉 অলওয়েজ অন ডিসপ্লে কী? এটা কি ফোনের জন্য ক্ষতিকর?

phone screen

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

প্রতিটি ওলেড ডিসপ্লে ক্যালিব্রেট ও সামঞ্জস্য করা হয় তবে কিছু কিছু অন্যদের থেকে বেশি মনোযোগ পায়। গুগল সম্প্রতি পিক্সেল ৮ প্রো ফোনে সুপার একটুয়া ডিসপ্লে এনেছে। এদিকে অ্যাপেলের নিজস্ব সুপার রেটিনা ডিসপ্লে রয়েছে এবং স্যামসাং এর নিজস্ব ওলেড ডিসপ্লে রয়েছে। এগুলো বেশিরভাগই নামকরণের একটি রীতি। এমনকি সংক্ষিপ্ত রূপ AMOLED (এক্টিভ ম্যাট্রিক্স অরগানিক লাইট এমিটিং ডায়োড) অন্য যেকোনো কিছুর মতোই একটি মার্কেটিং টার্ম।

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি একটি লেজার ডিসপ্লের মতো একই টেকনোলজি ব্যবহার করলেও এই ডিসপ্লেগুলো আরো ভালো দেখায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্যানেল তৈরি করার পর এই ডিসপ্লেগুলো আরো ভালো দেখা যায়। তবে এদের মধ্যে স্যামসাং এর সুপার এমোলেড একটু ভিন্নতর। এটি ডিসপ্লে প্যানেল এবং টাচ স্ক্রিন ডিজিটাইজার রাখার জন্য একটি সিংগেল ডিসপ্লে ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে আরো ভিভিড কালার এবং দ্রুত রেসপন্স টাইম চলে আসে। আপনি যদি সুপার এমোলেড ডিসপ্লের কালার পছন্দ নাও করে থাকেন, তাও এদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন। 

শেষ কথা

আমাদের এই বিষয়ে জানা উচিত যে সব স্মার্টফোনের ডিসপ্লে এক ধরনের না। সেরা ডিসপ্লে গুলোর দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই থাকে। আপনি আপনার ফোনের এই জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকেন। তাই এটির জন্য অতিরিক্ত কিছু খরচ করা আপনার জন্যই লাভজনক হবে। সূত্রঃ এন্ড্রয়েড সেন্ট্রাল। এই আর্টিকেলটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *