অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে করণীয়

আপনি কি ই-কমার্স এর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনা করে নিজের অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চান? একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বিশ্বাসযোগ্যতার। একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা আর অনলাইন ব্যবসা শুরু করার মধ্যে কিন্তু ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

একজন উদ্যোক্তা হিসেবে অনলাইন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রেখে চলা একান্ত জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে করণীয়সমুহ সম্পর্কে বিস্তারিত।

অনলাইন ব্যবসা শুরু ও পরিকল্পনা

জনপ্রিয় বই, “রিচ ড্যাড, পুওর ড্যাড” এর লেখক, রবার্ট কিয়োসাকি এর মতে ফোকাস হচ্ছে সফলতা পর্যন্ত কোনো একটি নির্দিষ্ট পথে হাঁটার অন্য নাম।

আজকের দিনে শত শত ডিজিটাল বিজনেস মডেল থেকে আপনার পছন্দেরটা বেছে নিতে পারেন। আপনি অনলাইন স্টোর তৈরি করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে পারেন, ফ্রিল্যান্সার হতে পারেন, আপনার নিজের ব্লগ শুরু করতে পারেন ও আরো অনেক কিছুই করতে পারেন।

এতোসব সুযোগের ভীড়ে উদ্যোক্তা হিসেবে হারিয়ে যাওয়া অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু এই সুবিধা এক ধরনের অসুবিধাও বটে। কেননা অনলাইন ব্যবসার শুরুতে উদ্যোক্তাগণ অল্প সময়ে সফলতা না পেলেই একের পর এক বিজনেস মডেল পরিবর্তন করতে থাকে।

একাধিক বিজনেস মডেল অনুসরণ করার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে ব্যবসা অনেক জটিল হয়ে যায় ও ম্যানেজ করাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনলাইন ব্যবসার শুরুতে যেকোনো একটি ব্যবসায় মডেল অনুসরণ করে যুক্তিসঙ্গত একটা দীর্ঘ সময়ের জন্য চালিয়ে যেতে চেষ্টা করুন।

সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ

আপনার ব্যবসার একমাত্র চালিকাশক্তি যদি আপনি একজন হন ও অনলাইন ব্যবসা শুরু থেকে ব্যবসা বৃদ্ধি পর্যন্ত সব কাজ আপনার হাতে থাকে, তাহলে এইসব ব্যাপারের মধ্যে একাকিত্বে ভুগতে পারেন। আপনার ব্যবসায় পার্টনার থাকলেও অন্য ব্যবসার মালিকদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারেন।

অনলাইন ব্যবসার শুরুতে হয়ত প্রোডাক্টিভিটিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে শুধুমাত্র মালিক হিসেবে প্রোডাক্টিভ হলেও ব্যবসার উন্নতি কিন্তু সম্ভব নয়। একই মন মানসিকতার মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে একান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার মত একই সেক্টরে কাজ করে এমন একজন মেন্টর খুঁজে পেলে কিংবা একই ধরনের মানুষের দলে যুক্ত হতে পারলে, সমস্যা সমাধান বেশ সহজ হয়। এছাড়াও সম্পর্কের খাতিরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও খুব সহজে পেয়ে যেতে পারেন অন্যদের থেকে।

আরো জানুনঃ অনলাইনে ইনকাম করার সেরা ১০ উপায়

যখন আপনি একই ইন্ডাস্ট্রির অন্য মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন, তখন সমস্যা সমাধান আসলেই সহজ হয়ে যায়। কোনো সমস্যা সমাধানের পেছনে ঘণ্টার পর ঘন্টা ব্যয় না করে যারা ইতিমধ্যে একই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছে তাদের থেকেই পরামর্শ নেওয়া উত্তম।

বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ড ও বিভিন্ন স্থানের একই মনোভাবের মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারটা অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। যদিওবা এসব সম্পর্ক তৈরী করতে প্রতি মাসে আপনার কয়েক ঘন্টা মাত্র ব্যয় হবে, কিন্তু এর থেকে আপনি বিনিময়ে যা পাবেন তা অর্থের মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব নয়।

অতিরিক্ত কাজ নয়, সঠিক সিদ্ধান্ত জরুরি

অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশি কাজ সম্পন্ন করার চক্করে অনেক ডিজিটাল উদ্যোক্তা তাদের শরীরের অবনতির দিকে নজর দেন না। ডিজিটাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হয়ত শ্রম ও ত্যাগ জরুরি, কিন্তু সফলতার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনাকে যুক্তিসংগত পরিমাণ পরিশ্রম করতে হবে এবং সে সাথে কৌশলী হতে হবে।

অনেকেই একই পদ্ধতি বারবার অনুসরণ করতে থাকে শুধুমাত্র সফলতার আশায়। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার কাজ হলো ভ্যালু প্রদান করা ও তা বিক্রি করা। এইজন্য আপনার উচিত অধিক ভ্যালু আছে এমন কাজগুলো শুরুতেই নিশ্চিত করা।

এভাবে কাজ করলে ব্যবসার লক্ষ্য অর্জন সহজ হয় ও কোম্পানির সফলতাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। অধিক ভ্যালু আছে এমন কাজের পেছনেই আপনার অধিকাংশ সময় ও শক্তি ব্যয় করা উচিত।

আরো জানুনঃ এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করার উপায়

আপনি যদি অনলাইন স্টোর শুরুর পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে আপনার কোম্পানির জন্য সেরা নাম বাছাইয়ের পেছনে হয়ত ভালোই সময় ব্যায় করবেন। তবে ভুলে যাবেন না যে আপনার পণ্য বিক্রির উপায় নিয়ে ফোকাস করাও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার হয়ে থাকেন, তবে আপনার ওয়েবসাইট সেটাপ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলসমুহ সাজানোর পেছনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে পারেন। তবে ক্ল্যায়েন্ট পিচ করা বা লেখায় আপনার প্রধান ফোকাস হলে অধিক সুবিধা পাবেন।

অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে করণীয়

সুযোগের অপেক্ষা করা বোকামি

বেশিরভাগ মানুষ এমন একটি বিশাল সুযোগের আশায় বসে থাকে যা তাদের জীবন পাল্টে দিবে। তবে বেশিরভাগ মানুষের মত আপনিও সুযোগের অপেক্ষায় বসে থেকে বোকামি করবেন না। নিজেই নিজের জন্য সুযোগ তৈরীর কাজে লেগে পড়ুন।

আপনি যদি ব্যবসার ক্ষেত্রে যথাযথ সুযোগ এর অপেক্ষা করতে থাকেন, তাহলে সুযোগের আশায় অনেক সময় নষ্ট হতে পারে। ইন্টারনেটে ব্যবসা শুরু ও বড় করা, অনলাইন স্টোর ম্যানেজ করা, ডিজিটাল কোর্স বিক্রি করা, ইত্যাদি সম্পর্কিত অনেক ব্লগ পোস্ট ও ভিডিও রয়েছে। সুযোগের অপেক্ষায় আপনার বসে থাকার প্রয়োজন নেই বরং যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করে তৎক্ষণাৎ কাজ নেমে পড়ুন।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

লেখার হাত ভালো করুন

লেখালেখির ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা উন্নত করুন বা এমন কাউকে খুঁজে বের করুন যার লেখার দক্ষতা ভালো। আপনি যদি একজন রাইটার না ও হয়ে থাকেন, তবুও ডিজিটাল উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার লিখতে হতেই পারে।

আপনার অনলাইনে ব্যবসার ক্যারিয়ারের কোনো না কোনো সময়ে ইমেইল, সেলস পেজ, প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন, ওয়েবসাইট এর কপি, বিজ্ঞাপন, এমনকি ব্লগের জন্য আর্টিকেল লেখারও প্রয়োজন পড়তে পারে। ভালো লেখা শুধুমাত্র সময় বাঁচাতে পারে শুধু তাই নয়, বরং আপনার উপার্জন বাড়াতেও সক্ষম।

আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে লেখা যত ভালো হবে, আপনার কাস্টমার আপনার ব্যবসার প্রতি তত বেশি আকৃষ্ট হবে ও আপনার অনলাইন ব্যবসার ট্রাফিক ও সেলস বাড়বে। আপনার যদি লেখার হাত কাচাঁ হয়, তবে দক্ষ কাউকে সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

👉 কম পুঁজির কিছু অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া

অনলাইন ব্যবসা শুরু করার আগে ও পরে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করুন

বর্তমানে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হয় শুধুমাত্র ফাউন্ডার এর দূরদর্শিতার অভাবে। বেশিরভাগ মানুষ তাড়াতাড়ি বিশাল অর্থ অর্জন করতে এই রোলারকোস্টারে চেপে পড়ে বলে তাৎক্ষণিক চিন্তার নিরিখে তৈরী হয় এসব ব্যবসা ও অল্প সময়েই ভেঙে পড়ে।

আপনার ব্যবসা অনলাইন হোক বা অফলাইন, সবসময় একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্ব প্রদান করুন। সবসময় ব্যবসার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামুন। ভালো একটি বিজনেস মডেল অনুসরণ করে ব্যবসা চালিয়ে যান। যত দীর্ঘ সময় ধরে নির্ভরযোগ্য সেবা দিয়ে যাবেন, ব্র‍্যান্ড হিসেবে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা তত বাড়বে।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সবচেয়ে বেশি শেখা যায়

আপনি যদি অনলাইন ব্যবসা মাত্র শুরু করে থাকেন, তবে ইন্টারনেটে থাকা অনলাইন ব্যবসা সম্পর্কিত সকল জ্ঞান আত্মস্থ করায় ব্যস্ত হওয়া কিন্তু ঠিক নয়। কেননা আপনি যতই পড়ালেখা করুন না কেনো, পরীক্ষার খাতায় না লেখা পর্যন্ত আপনার পড়ালেখার মূল্যায়ন সম্ভব নয়। ঠিক একইভাবে ব্যবসা শুরু না করলে শুধুমাত্র জ্ঞান দ্বারাই সবকিছু শেখা/করা সম্ভব নয়।

আরো জানুনঃ

আপনি হয়ত “কিভাবে ভালো একজন লেখক হতে হয়” তা নিয়ে ১০টি বই পড়লেন। কিন্তু আপনি লেখা শুরু না করলে কিন্তু সেই অধরাই থেকে যাবে আপনার লেখার দক্ষতা। আবার অনলাইন শপ সেটাপ করার ২০টি ভিডিও দেখলেই সেল জেনারেট করতে পারবেন না। তার জন্য দরকার হবে ব্যবসাতে নেমে পড়ার।

কোনো বিষয়ে ভালোভাবে জ্ঞান রাখা জরুরি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ শেখার পেছনে এতোটাই সময় ব্যয় করে ফেলে যে তারা ভুলেই যায় যে সেরা শিক্ষাসমুহ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আসে। নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে সকল ভুল এড়িয়ে চলা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব। তাই আপনি যত দ্রুত এসব ভুল করবেন, তত দ্রুত এর সমাধানও পেয়ে যাবেন।

শেষকথা

বর্তমানে যে হারে সমৃদ্ধ বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে, আপনার স্বপ্নের ডিজিটাল কোম্পানি শুরু করার জন্য এর চেয়ে সেরা সময় আর হতে পারেনা। আপনার পড়ালেখা কিংবা চাকরির পাশাপাশিও আপনার ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন এমন অসংখ্য বিজনেস মডেল বর্তমানে বিদ্যমান।

তাই আজই আপনার ডিজিটাল ব্যবসা নিয়ে প্ল্যান করা শুরু করে দিন ও উল্লিখিত টিপসসমুহ অনুসরণ করে যত দ্রুত সম্ভব আপনার অনলাইন ব্যবসা শুরু করে দিন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,581 other subscribers

6 comments

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      We’re glad that you liked it. Thanks!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *