অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনা কি ঠিক? সুবিধা ও অসুবিধা জানুন

বর্তমানে ব্যবহৃত আইফোন প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে দেশের বাজারে। অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কিনে অর্থ সাশ্রয় তো হবে, কিন্তু এটি সবসময় সেরা আইডিয়া নয়। ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে অবশ্যই এর সুবিধা-অসুবিধাসমূহ আমলে নেওয়া উচিত।

বাজারের সেরা ফোনগুলোর মধ্যে আইফোন উপরের দিকেই রয়েছে। আইফোনে অসাধারণ হার্ডওয়্যার এর পাশাপাশি লম্বা সময় ধরে সফটওয়্যার সাপোর্ট পাওয়া যায়। তবে নতুন আইফোন কিনতে যেয়ে দামের কারণে পিছিয়ে আসতে হয় অনেকের। তবে সেকেন্ড-হ্যান্ড আইফোন কেনায় খরচ কমতে পারে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক অন্যের ব্যবহৃত আইফোন ব্যবহার এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে। বলে রাখা ভালো সবচেয়ে শেষের পয়েন্টটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি ভালোভাবে পড়ুন।

অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার সুবিধা

প্রথমে জানতে পারবেন অ্যাপল বা অন্য রিটেইলার এর কাছ থেকে ব্যবহৃত আইফোন কেনার সুবিধাসমূহ সম্পর্কে।

নতুন আইফোন এর চেয়ে দামে কম

নতুন আইফোন কেনার চেয়ে ব্যবহৃত আইফোন কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্যবহৃত আইফোন এর দাম অপেক্ষাকৃত অনেক কম থাকে। ডিভাইসের কন্ডিশন, বয়স, মডেলসহ অন্যান্য ফ্যাক্টর এর উপর নির্ভর করছে অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে কি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। আবার ডিভাইস কোথা থেকে কিনছেন তার উপরেও নির্ভর করে আইফোনের দাম। থার্ড-পার্টি ওয়েবসাইট বা স্টোর থেকে ব্যবহৃত আইফোন কিনলে তার দাম অবশ্যই অ্যাপল এর রিফারবিশড আইফোন এর চেয়ে কম হবে।

পরিবেশ-বান্ধব

ব্যবহৃত আইফোন কেনা পরিবেশ-বান্ধব একটি সিদ্ধান্ত। এন্ড্রয়েড ফোনগুলোর মতই আইফোন তৈরী হয় পৃথিবী মাইন করে পাওয়া বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফোনসমূহ ব্যবহার শেষে আর রিসাইকেল করা হয়না। অল্প সংখ্যক ফোন রিসাইকেল করা হলেও অধিকাংশ ফোন ইলেকট্রনিক বর্জ্যে পরিণত হয়। WEEE Forum এর তথ্যমতে ২০২২ সালের মধ্যে ৫.৩ বিলিয়ন মোবাইল ফোন ইলেকট্রনিক বর্জ্যে পরিণত হয়েছে বলে ধারণা যায়। এইক্ষেত্রে একটি ব্যবহৃত ফোন কেনার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি রোধ করা যায়।

পুরোনো মডেলে ডিসকাউন্ট

আপ-টু-ডেইট আইফোন মডেল কিনলে তার সাথে লেটেস্ট সব ফিচার তো পাবেন, তবে আপনি যদি ডিসকন্টিনিউ করা কয়েক বছর আগের কোনো মডেলের খোঁজে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে সেকেন্ড-হ্যান্ড মার্কেটই আপনার শেষ ভরসা। যেমনঃ বর্তমান সময়ে ব্র্যান্ড-নিউ আইফোন ১০ বা আইফোন ১১ খুঁজে পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য বিষয়। এই ডিভাইসগুলো কিনতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনার কাছে একমাত্র অপশন হলো অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনা।

পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে সুবিধা

নতুন আইফোন এর চেয়ে পুরোনো আইফোনগুলো পুনরায় বিক্রি অধিক সুবিধাজনক। ধরুন আপনি একটি ব্র‍্যান্ড নিউ আইফোন ১৫ কিনলেন, এটি আপনি একদিন ব্যবহার করুন বা এক মাস, এর ভ্যালু অনেকটাই কমে যাবে এবং যে দামে কিনেছেন তার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে হবে। অন্যদিকে ব্যবহৃত আইফোন পুনরায় বিক্রির ক্ষেত্রে আহামরি দাম কমাতে হয়না। যেহেতু আপনি এমনিই কম দামে ব্যবহৃত আইফোন কিনেছেন, সেক্ষেত্রে ব্যবহারের পরেও এটি প্রায় একই দামের কাছাকাছি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার অসুবিধা

অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার অনেক সুবিধা তো জানলেন, এবার চলুন জানি অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার অসুবিধাসমূহ।

কম রিসেল ভ্যালু

ডিসসকাউন্টেড দামের জন্য ব্যবহৃত আইফোন তাদের ভ্যালু লম্বা সময় ধরে ধরে রাখে। তবে সেকেন্ড-হ্যান্ড মার্কেটে পুরোনো ব্যবহৃত আইফোন বিক্রি করতে গেলে সেক্ষেত্রে নতুন আইফোন এর চেয়ে অনেক কমদামে রিসেল করা যায়। বিশেষ করে অফিসিয়াল লঞ্চ এর লম্বা সময় পর কোনো ব্যবহৃত আইফোন সেল করতে হলে সেক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হয় দাম নিয়ে।

ওয়ারেন্টির অভাব

ব্যবহৃত আইফোন কেনার সবচেয়ে বড় ডাউনসাইড হলো এসব ফোনে কোনো ধরনের ওয়ারেন্টি থাকেনা। কিছু কিছু কোম্পানি হয়ত পুরোনো আইফোনেও ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে, তবে নতুন ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে যে সুবিধা পাওয়া যায় তা এর ধারেকাছেও নেই।

তবে অ্যাপল সার্টিফাইড রিফার্বিশড আইফোন কিনলে নতুন আইফোন এর মতই এক বছরের ওয়ারেন্টি পাওয়া যাবে। তবে এইক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা পরের পয়েন্টে আলোচনা করা হয়েছে। 👉 আইফোন নতুন নাকি রিফার্বিশড বোঝার উপায় (খুবই গুরুত্বপুর্ণ)

iPhone in hand

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

সীমিত অপশন

নতুন আইফোন কেনার ক্ষেত্রে কালার থেকে শুরু করে স্টোরেজ পর্যন্ত সবকিছু কাস্টমাইজ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু সেকেন্ড-হ্যান্ড মার্কেট থেকে অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে এই সুবিধা বেশ সীমিত।

এক্সেসরিজ এর অভাব

বেশিরভাগ ব্যবহৃত আইফোন এর সাথে অরিজিনল প্যাকেজিং বক্সই থাকেনা। অনেক সময় দেখা যায় অরিজিনাল বক্সসহ ব্যবহৃত আইফোন কিনতে চাইলে বাড়তি অর্থ প্রদান করতে হয়। সাধারণত পুরোনো আইফোন কিনতে গেলে এর সাথে কোনো এক্সেসরিজ প্রদানই করা হয়না, সব নিজ থেকে নতুন করে কিনতে হয়। থার্ড-পার্টি এক্সেসরিজ দামে কম হলেও এগুলো আইফোনের ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকে। 👉 আইফোনের সাথে যা অবশ্যই কেনা উচিত

সফটওয়্যার সাপোর্ট এর অভাব

অ্যাপল তাদের আইফোনগুলোকে গড়ে প্রায় ছয় বছর পর্যন্ত সফটওয়্যার সাপোর্ট দিয়ে থাকে। তবে আপনি যত পুরোনো ব্যবহৃত আইফোন কিনবেন, উক্ত ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যার সাপোর্ট তত কম হবে। যেমন: আপনি ৩ বছর পুরোনো মডেল কিনলে সেক্ষেত্রে আরো দুই থেকে তিন বছর উক্ত ডিভাইসে আইওএস আপডেট পাবেন। যেসব ডিভাইসে অ্যাপল আর সফটওয়্যার আপডেট দিবেনা, উক্ত ডিভাইসসমূহ না কেনাই উত্তম। 👉 আইফোনে চমকপ্রদ ফিচার নিয়ে আসছে আইওএস ১৭

নিরাপত্তাগত ঝুঁকি

এবার আসি অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধায়।

বর্তমানে দেশের বাজারে প্রচুর বেড়েছে ব্যবহৃত আইফোন এর চাহিদা। সবাই কমবেশি বিলাসিতার বশে হলেও ব্যবহৃত আইফোন কিনতে চায়। তবে এর সাথে এসেছে নতুন একটি সমস্যা: চুরি যাওয়া আইফোন কেনা-বেচা।

সম্প্রতি চুরি যাওয়া ব্যবহৃত আইফোন কিনে অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। আপনার আশেপাশে যারা এসব বিষয়ে খবর রাখে তাদের জিজ্ঞেস করলেই অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন। তাই ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে অপরিচিত কোনো ব্যাক্তি থেকে ব্যবহৃত আইফোন না কিনে কোনো পরিচিত ব্যাক্তি বা ট্রাস্টেড শপ থেকে ইউজড আইফোন কেনাই অধিক নিরাপদ।

এছাড়া ব্যবহৃত আইফোন এর বিভিন্ন পার্টস অনেক সময় রিপ্লেস করে দেওয়া থাকে। ব্যাটারি বা ডিসপ্লে রিপ্লেস করা খারাপ কিছু তো না, তবে অধিকাংশ সময়ে এসব পার্টস অরিজিনাল হয়না। তাই ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে এসব অসুবিধার সম্মুখীন হবেন যা মাথায় রাখা জরুরি।

অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনা কি ঠিক?

এখন প্রশ্ন হচ্ছে অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনা কি ঠিক হবে নাকি ভুল?

এই প্রশ্নের উত্তর সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আপনার প্রয়োজন ও সাধ্যের উপর। আপনার যদি মনে হয় অপেক্ষাকৃত কম দামে কিছু ফিচার কম থাকলেও ব্যবহৃত আগের মডেলের আইফোন ব্যবহারে আপনার কোনো সমস্যা নেই, সেক্ষেত্রে অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কিনতেই পারেন।

তবে সবসময় অবশ্যই পরামর্শ থাকবে নতুন ডিভাইস কেনার চেষ্টা করার। নতুন যেকোনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাগত বা টেকনিক্যাল ঝুঁকি কম থাকে।

পুরোনো বা ব্যবহৃত যেকোনো ফোন কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় দেখা উচিত, সেগুলো জানতে নিচে লিংক করা পোস্টসমূহ ঘুরে আসুন।

👉 কম দামে পুরাতন আইফোন কেনা কি ঠিক? জানুন

👉 ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে

অন্যের ব্যবহৃত আইফোন কেনার ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? ব্যবহৃত আইফোন কেনা-বেচার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তা বাংলাটেক এর পাঠকদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কমেন্ট সেকশনে। 

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *