বিটকয়েন ‘উদ্ভাবক’ এর পরিচয় প্রকাশ, প্রযুক্তি বিশ্বে ধোঁয়াশা

ডিজিটাল ক্রিপ্টোগ্রাফিক মুদ্রা বিটকয়েন এর উদ্ভাবক প্রকৃতপক্ষে কে তা নিয়ে এতদিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল পুরো বিশ্ব। এক এক সময় একাধিক ব্যক্তিকে বিটকয়েন এর নির্মাতা বলে মনে করা হলেও আসলে ব্যক্তিটি কে ছিলেন তা নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারেননি। অপরদিকে সন্দেহের তীর যেসব ব্যক্তির দিকে ছিল, তারাও বিটকয়েন তৈরির কথা স্বীকার করেননি। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ান এক উদ্যোক্তা ক্রেইগ রাইট নিজেকে বিটকয়েন আবিষ্কারক হিসেবে দাবী করলেন।

বিবিসি, দ্যা ইকোনমিস্ট ও জিকিউ এই তিন সংবাদমাধ্যমের নিকট মিঃ ক্রেইগ নিজের পরিচয় ও বিটকয়েনে তার ভূমিকার কথা প্রকাশ করেছেন। বিটকয়েন সিস্টেমের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী সূত্র থেকেও এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। ক্রেইগ রাইট এর আগে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু বিটকয়েন কোর সিস্টেমের বাইরের কেউ এই ব্যক্তির খবর জানতেন না।

অবশ্য মিঃ ক্রেইগ দাবী করেছেন, তিনি ইচ্ছে করে নিজেকে প্রকাশ করেননি। তাকে চাপ প্রয়োগ করে বিটকয়েন উদ্ভাবকের রহস্য প্রকাশে বাধ্য করা হয়। তিনি আরও বলেন, তিনি কোনো নামডাক চান না, শুধু কাজ করে যেতে চান।

তবে এই খবর প্রকাশের পর প্রযুক্তি বিশ্বের অনেকেই এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

আপডেট ৬ মে ২০১৬: ক্রেইগ রাইট তার বিটকয়েন উদ্ভাবনের দাবি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন

পত্রপত্রিকায় জানা যায়, মিঃ ক্রেইগ এর মালিকানায় বর্তমানে এক মিলিয়ন বিটকয়েন আছে যার বাজারমূল্য প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বিশ্বে বর্তমানে মোট ১৫ মিলিয়নের মত বিটকয়েন আছে।

বিটকয়েন সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় জানা যায়, “বিটকয়েন হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রনকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করেন। তিনি এই মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অভিহিত করেন।

বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়। একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়। ২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়েনগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরী হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরী করা হবে না।

বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোন কেন্দ্রীয় নিকাশঘরের মধ্য দিয়ে যায় না কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। বিটকয়েন মাইনারের মাধ্যমে যেকেউ বিটকয়েন উৎপন্ন করতে পারে। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াটা সবসময় অনুমানযোগ্য এবং সীমিত। বিটকয়েন উৎপন্ন হওয়ার সাথে সাথে এটি গ্রাহকের ডিজিটাল ওয়ালেটে সংরক্ষিত থাকে। এই সংরক্ষিত বিটকয়েন যদি গ্রাহক কর্তৃক অন্য কারও একাউন্টে পাঠানো হয় তাহলে এই লেনদেনের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রনিক সিগনেচার তৈরী হয়ে যায় যা অন্যান্য মাইনার কর্তৃক নিরীক্ষিত হয় এবং নেটওয়ার্কের মধ্যে গোপন অথচ সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষিত হয়। একই সাথে গ্রাহকদের বর্তমান লেজার কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে হালনাগাদ হয়।

বিটকয়েন দিয়ে কোন পন্য কেনা হলে তা বিক্রেতার একাউন্টে পাঠানো হয় এবং বিক্রেতা পরবর্তীতে সেই বিটকয়েন দিয়ে পুনরায় পন্য কিনতে পারে, অপরদিকে সমান পরিমাণ বিটকয়েন ক্রেতার লেজার থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারন করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়।”

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,573 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *