এন্ড্রয়েড ভক্তরা আইফোনের যে বিষয়গুলো অপছন্দ করেন

অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস, দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী অপারেটিং সিস্টেম। উভয় অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা একই কাজ সম্পাদন হলেও দুইটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য ঠিকই চোখে পড়ে। যার ফলে এক অপারেটিং সিস্টেম থেকে অপর অপারেটিং সিস্টেমে সুইচ করা কারো কারো কাছে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। আপনি যদি একজন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী অথবা এন্ড্রয়েড ভক্ত হন, তবে আইওএস এর কিছু বিষয় আপনার অপছন্দ হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত।

নোটিফিকেশন ম্যানেজমেন্ট

গত কিছু বছরের মধ্যে আইওএস এর নোটিফিকেশন সিস্টেমে বেশ উন্নতি নিয়ে এসেছে অ্যাপল। তবুও এখনো আইওএস এর নোটিফিকেশন ম্যানেজমেন্ট তেমন একটা সুবিধার নয়। একই অ্যাপের নোটিফিকেশন বান্ডেল হিসেবে প্রদর্শিত হলেও একই অ্যাপের জন্য একাধিক ব্যানার দেখা যায়।

অ্যান্ড্রয়েড এর নোটিফিকেশন ম্যানেজমেন্ট আইওএস এর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এর নোটিফিকেশন সিস্টেম বর্তমানে যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম এর চেয়ে অধিক উন্নত। অন্যদিকে একই বিষয়ে আইওএস অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে।

অ্যান্ড্রয়েডে কোনো অ্যাপের নোটিফিকেশন সরাসরি উক্ত অ্যাপ থেকেই ম্যানেজ করা যায়। অন্যদিকে আইওএস এর ক্ষেত্রে একই কাজ করতে সেটিংস থেকে নোটিফিকেশন সেকশনে প্রবেশ করে উক্ত অ্যাপ খুঁজে নিতে হয়। এখানেই সমস্যা শেষ নয়। আইওএস নোটিফিকেশন ম্যানেজমেন্ট বেশ গোলমেলে, যা একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

থার্ড পার্টি ইন্টিগ্রেশন

আইফোনে থার্ড-পার্টি ইন্টিগ্রেশনের অবস্থা খুব একটা কাস্টমাইজেবল নয়। অ্যাপল প্রাইভেসির কথা বলে অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধতা রেখে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি গুগল এর বিভিন্ন অ্যাপ, যেমনঃ ইউটিউব, জিমেইল, গুগল ডকস, ইত্যাদি নিয়মিত ব্যবহার করে থাকেন, তবে অ্যান্ড্রয়েড থেকে আইওএস এ সুইচ করাটা আপনার জন্য একটু আলাদা অভিজ্ঞতা মনে হতে পারে। অ্যাপ উভয় প্ল্যাটফর্মে একইভাবে কাজ করলেও কিছু অ্যাপের ক্ষেত্রে পার্থক্য বিদ্যমান।

এন্ড্রয়েডে গুগল অ্যাপ যেভাবে ইন্টিগ্রেট হয় আইফোনে এগুলো সেভাবে পাবেন না। এন্ড্রয়েড যেহেতু গুগল ডেভলপ করছে তাই এতে গুগলের সেবাগুলো খুব ভালোভাবে যুক্ত হয়। কিন্তু আইফোন যেহেতু অ্যাপলের তাই এখানে অ্যাপলের নিজেদের সার্ভিসগুলো বেশি প্রধান্য পায়। গুগল ম্যাপ কিংবা গুগলের কিবোর্ড, সবগুলোর ক্ষেত্রেই এন্ড্রয়েডে অনেক ভাল অভিজ্ঞতা মিলবে আইফোনের তুলনায়।

কাস্টমাইজেশন

এই বিষয়টি সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। এই কয়দিন আগেও আইফোনে শুধুমাত্র ওয়ালপেপার ছাড়া আর তেমন কিছুই পরিবর্তন করা যেতোনা। কাস্টমাইজেশন সুবিধার অভাবের ফলে সকল আইফোন প্রায় একই দেখতে লাগতো। আইওএস ১৫ এ আসা অ্যাপ আইকন, অ্যাপ ড্রয়ার, উইজেটস, ইত্যাদি ফিচার এর কল্যাণে আইওএস এর এই বদনাম একটু হলেও কমেছে।

তবে কাস্টমাইজেশন প্রশ্নে অ্যান্ড্রয়েডকে হারানো বলতে গেলে অসম্ভব। প্রতিটি অ্যাপের আইকন থেকে শুরু করে এনিমেশন পর্যন্ত, প্রায় সকল বিষয় অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কাস্টমাইজ করা যায়। অন্যদিকে অ্যাপল ডিভাইসে অল্পকিছু কাস্টমাইজেশন ফিচার সম্প্রতি যোগ হলেও তা অ্যান্ড্রয়েড এর তুলনায় কিছুইনা।

অ্যান্ড্রয়েডে যেখানে লঞ্চার ব্যবহার করে পুরো ফোনের লুক বদলে দেওয়া যায়, সেখানে আইওএস এর ক্ষেত্রে সামান্য কাস্টম অ্যাপ আইকন সেট করতেও অনেকটা বেগ পোহাতে হয়। 

👉 আইফোনে এই লুকানো সুবিধাটি চালু করে ডাটা সাশ্রয় করুন!

অর্থাৎ আপনার ফোনকে আপনার নিজের মত করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে অ্যান্ড্রয়েড। অন্যদিকে আইফোনের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর হয়ে সকল সিদ্ধান্ত অ্যাপলই গ্রহণ করে, যার ফলে আইওএস এ আহামরি কাস্টমাইজেশনের কোনো সুযোগ নেই। 

সম্প্রতি কাস্টমাইজেশন ফিচার এর দিকে অ্যাপল কিছুটা হলেও নজর দিয়েছে। এবার দেখার বিষয় হলো সেই উদ্যম বজায় রেখে আইওএস এ কতটুকু কাস্টমাইজেশন যোগ করা হয়।

শপিং

আইফোন ব্যবহার করে ইন্টারন্যাশনাল কোনো প্ল্যাটফর্মে শপিং করা দুঃস্বপ্নের মত। এর কারণ হলো অ্যাপল এর পেমেন্ট প্রক্রিয়া ব্যবহার করেনা এমন অ্যাপসমূহের পেমেন্ট সিস্টেম আইওএস ডিভাইসে ভালোভাবে কাজ করেনা। মূলত ইন-অ্যাপ পারচেজের রেভিনিউ থেকে বঞ্চিত হয় বলে অ্যাপল এমন করে থাকে। সম্প্রতি আমরা এপিক গেমস ভার্সেস অ্যাপল এর মধ্যে একটি চলমান মামলা দেখেছি যা থেকে অ্যাপ স্টোর নিয়ে অ্যাপল এর কড়াকড়ির ব্যাপারটি উঠে আসে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

স্ক্রিন মিররিং

অ্যান্ড্রয়েড এর অন্যসব অপশনের মত মিররিং ফিচারটি বেশ সহজে ব্যবহার করা যায়। প্রায় যেকোনো অ্যাপ থেকে অ্যান্ড্রয়েড এর মাধ্যমে মিরর করা যায়। নেটফ্লিক্স এর কথাই ধরা যাক। নেটফ্লিক্স অ্যাপ এয়ারপ্লে সাপোর্ট করেনা, যার ফলে অ্যাপল এর সবচেয়ে সেরা একটি ফিচার এই জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের সাথে একসাথে উপভোগ করা যাবেনা।

ভলিউম কন্ট্রোল

সকল মোবাইল ডিভাইসে ভলিউম আপ ও ভলিউম ডাউন বাটন থাকবেই। তবে কার্যকরিতার দিক দিয়ে এই ভলিউম বাটন বেশ আলাদা অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই ভলিউম বাটন ব্যবহার করে সকল ধরণের ভলিউম কন্ট্রোল করা যায়। অর্থাৎ কোনো অ্যাপ ব্যবহারের সময় সরাসরি ঐ অ্যাপ থেকে সিস্টেম ভলিউম সেটিংস পরিবর্তন করা যাচ্ছে। অন্যদিকে আইওএস এর ক্ষেত্রে ভলিউম কন্ট্রোল বেশ বিভ্রান্তিকর।

👉 হারানো আইফোন বন্ধ থাকলেও যেভাবে খুঁজে পেতে পারেন!

ভলিউম বাটনের মাধ্যমে আইওএস এ রিংগার ভলিউম ও মিডিয়া কমানো বাড়ানো বিভ্রান্তিকর একটি প্রক্রিয়া। অর্থাৎ ফোনের ভলিউম কন্ট্রোল আইফোন এর ক্ষেত্রে অনেকটা গোলমেলে অ্যান্ড্রয়েড এর তুলনায়।

ইউএসবি টাইপ সি

পুরো বিশ্ব বর্তমানে ইউএসবি-সি কে আদর্শ হিসেবে মেনে নিলেও আইফোন এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠা করেনি অ্যাপল। অ্যাপল এর অন্য প্রোডাক্টে ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট থাকলেও আইফোন এর পোর্ট সেকেলের লাইটনিং পোর্টেই রেখে দিয়েছে অ্যাপল।

এই বিষয়টি বেশ হতাশাজনক। কেননা বর্তমানে প্রায় মোবাইল ডিভাইসে ইউএসবি টাইপ-সি বিদ্যমান। আর আইফোনে লাইটনিং পোর্ট থাকায় জরুরি প্রয়োজনে আইফোন এর চার্জার খুঁজে পেতে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

👉 আইফোন ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়ানোর উপায়

আবার সকল ডিভাইস একই ইউএসবি টাইপ সি ক্যাবল দ্বারা চার্জ করা গেলেও আইফোনে টাইপ-সি না থাকার কারণে আলাদা লাইটনিং ক্যাবল সবসময় সাথে রাখতে হয়। আবার ফোনের বক্সে চার্জার দেয়না অ্যাপল।

একজন অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হিসেবে আইফোন বা আইওএস এর কোন  বিষয়টি আপনার বিরক্ত লাগে? আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *