শাওমি রেডমি নোট ৭ প্রো রিভিউ

নোট ৭ প্রো কেনার এক সপ্তাহ পর আজ শেয়ার করব আমার এ ক’দিনের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স। সঙ্গে বোনাস হিসেবে থাকছে নিজের হাতে তোলা চমৎকার এই ডিভাইটির কিছু ফটো।

পারফরমেন্স

প্রথমেই আসি পারফরমেন্স সেক্টরে। আমার ইউনিটটা ৬/১২৮ জিবি ভ্যারিয়েন্ট। ৬ জিবি র‍্যাম থাকায় মাল্টিটাস্কিং এবং ভারী এপস চালানোর সময় প্রত্যাশা অনুযায়ী ভাল পারফরমেন্স পেয়েছি। এক কথায় বাটার স্মুথ পারফরমেন্স। তবে চাইনিজ রম ব্লটওয়ারে ভরপুর, তা নাহলে ওভারঅল পারফরমেন্স আরো বেটার হত বলেই আমার ধারনা। প্রসেসর ১১ ন্যানোমিটারের স্ন্যাপড্রাগন ৬৭৫, তাই সবকিছুই ছিল ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস!

ক্যামেরা

রেয়ার ক্যামেরা বাজেট বিবেচনায় আউটস্ট্যান্ডিং। এই ফোনের সবচেয়ে সেরা দিক সম্ভবত এটাই। আর কোন কিছু যদি আপনাকে সন্তুষ্ট করতে নাও পারে অন্তত ক্যামেরা ডিপার্টমেন্ট আপনার পয়সা উসুল করে দেবে। ডিফল্ট ক্যামেরার নাইট মুড কিংবা প্রো মুডের ম্যানুয়াল ফাংশন ব্যবহার করে চমৎকার সব ছবি তোলা যায়। তার উপরে রয়েছে বিল্ট ইন গুগল ক্যামেরা সাপোর্ট।

ডিফল্ট ক্যামেরাতেই যদি দারুন সব ছবি তুলতে পারেন তাহলে গুগল ক্যামেরা ব্যবহার করলে কি হতে পারে আন্দাজ করে নিন। সেলফি ক্যামেরা নিয়ে নেগেটিভ অনেক কিছু শুনেছি, তবে আমার কাছে খারাপ লাগেনি। এমনিতে আমি সেলফি টেলফি তুলি না, তাই খুব একটা এক্সপেরিমেন্ট করা হয়নি। যেটুকু দেখলাম তাতে আমি সন্তুষ্ট।

ডিসপ্লে

প্রথমেই বলে নিই, আইপিএস ডিসপ্লে আমার একদমই পছন্দ না। সেই ২০১৪ সাল থেকে দীর্ঘদিন স্যামসাংয়ের সুপার এমোলেড ডিসপ্লে ব্যবহার করেছি, এরপর থেকে কোন আইপিএস ডিসপ্লেই আমার মন ভরাতে পারেরি, এমনকি আইফোন ৭ পর্যন্ত না। আইপিএস যত ভালই হোক এমোলেডের সাথে কমপেয়ার করলে সাদামাটাই লাগবে।

এই যখন অবস্থা তখন নোট ৭ প্রো এর আইপিএস ডিসপ্লে নিয়ে আমি খুব বেশি কিছু আশা করিনি। তবে এমোলেডের বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারলে নোট ৭ প্রো এর ডিসপ্লে নিয়ে আপনি অসন্তুষ্ট হবেন না। আইপিএস হিসেবে বেশ ভালই বলতে হবে।

গেমিং

আমি গেমার নই। অকেশনালি যে গেম খেলি না তা নয়, তবে এই ফোনে এখন পর্যন্ত আমি কোন গেমই ইন্সটল করিনি। তাই গেমিং পারফরমেন্স নিয়ে কিছু বলতে পারছি না।

তবে পারফরমেন্স যদি আশানুরূপ নাও হয় আমি মনে করি সেটা সাময়িক সমস্যা। এই ফোনের সফটওয়ার এখনো প্রাথমিক অবস্থায় আছে। আগামী অন্তত ২ বছর অফিসিয়াল সফটওয়ার আপডেট আসবে, আর প্রতিটা আপডেটেই পারফরমেন্সে ইম্প্রুভমেন্ট হবে এবং অপটিমাইজেশনও দিন দিন বেটার হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

সাউন্ড

লাউড এন্ড ক্লিয়ার। এভরিথিং ওকে।

আউটলুক ও ডিজাইন

এটা সম্পর্কে সবাই জানেন, তাই বেশি কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না। এক কথায় বলতে গেলে, মিডরেঞ্জে বেস্ট প্রিমিয়াম লুকিং ডিভাইস এটাই। অলমোস্ট ফ্লাগশিপ লেভেলের ডিজাইন ও প্রিমিয়াম বডি এই ফোনের সবচেয়ে আকর্ষনীয় দিক। তবে খারাপ দিক হল এর ক্যামেরা বাম্প- যা খুবই বিপদজনকভাবে বের হয়ে থাকে, ওখানটায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা থেকেই যায়, যদি না আপনি খুব সতর্কভাবে ফোনটা ব্যবহার করেন। তাই সাবধান!

ডিউরেবিলিটি

যেহেতু দুই দিকেই গ্লাস, তাই খুব সাবধানে এটা ব্যবহার করতে হবে। এমনিতে ডিউরেবিলিটি ভালই মনে হল। হাত থেকে পড়লে কখনো টিকে যাবে আবার কখনো ভেঙেও যেতে পারে, পুরো ব্যাপারটা নির্ভর করছে কোন এঙ্গেল আর কত উচ্চতা থেকে এবং কিসের উপর পড়ল সেটার উপর। এইসব জিনিসের উপর যেহেতু আপনার হাত নেই তাই সাবধানে ব্যবহার করার কোন বিকল্প নেই। যদি সেটা না পারেন তবে এক্সট্রা একটা ব্যাক কভার মাস্ট!

ব্যাটারি

এখনো সেভাবে হেভি ইউজ শুরু করিনি। এভারেজ ব্যবহারে ২-৩ দিন চলে যাচ্ছে আরামসে। SOT ৮-৯ ঘন্টার মত পাওয়া যায়। এককথায় 4000mah হিসেবে যতটুকু SOT এক্সপেক্ট করেছিলাম ঠিক ততটুকুই পেয়েছি- বেশিও না আবার কমও না। তবে চায়না ভার্সন কেনায় বক্সেই পেয়েছি ১৮ ওয়াটের ফাস্ট চার্জার। মূলত এটার জন্যই চাইনিজ ভ্যারিয়েন্ট কিনেছি। কাজে দিচ্ছে জিনিসটা। দেড় ঘন্টার চেয়ে একটু বেশি সময় লাগে ফুল চার্জ হতে।

সফটওয়্যার

চাইনিজ রম চায়নার বাইরে তেমন একটা ব্যবহার উপযোগী নয় এটা জেনেই আমি চাইনিজটা কিনেছি। কারন এটাকে আনলক করে কাস্টম MIUI ফ্লাশ দেব। এখন পর্যন্ত বুটলোডার আনলকের পারমিশন পাইনি, তাই আপাতত চাইনিজ রম ব্যবহার করতে হচ্ছে। আর সেটা তেমন ভাল কোন অভিজ্ঞতা নয়। যদিও চায়না রমে বাগ কম থাকে, কিন্তু তবু অনেক কিছুই মিসিং চায়না রমে।

বিভিন্ন এপসের ভাষা চায়নিজ, জিপিএস প্রবলেম, প্রচুর পরিমানে আজাইরা ব্লটওয়ার, গুগলের দরকারী এপস মিসিং- এসব সমস্যার সমাধান একটাই- গ্লোবাল অথবা কাস্টম MIUI ফ্লাশ দেয়া। আমি ফ্লাশ দেব miui eu, এটা গ্লোবালের চেয়েও বেশি গ্লোবাল এবং পারফেক্ট একটা রম।

প্ৰযুক্তি নিয়ে লেখালেখি করতে চান? এক্ষুণি একটি টেকবাজ একাউন্ট খুলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পোস্ট করুন! হয়ে উঠুন একজন দুর্দান্ত টেকবাজ! এখানে ক্লিক করে নতুন একাউন্ট তৈরি করুন।

যারা রম চেঞ্জ করতে জানেন না অথবা এসব ঝামেলায় যেতে চান না, তারা চাইনিজ ভ্যারিয়েন্টের ফোন না কিনে বরং ইন্ডিয়ানটা কিনলেই ভাল করবেন। আর যারা নিজের মত করে রম ফ্লাশ দিতে পারবেন তাদের জন্য চায়নাটা বেস্ট।

শর্টকাট রিভিউ

  • ডিজাইন: ৯/১০
  • বিল্ড কোয়ালিটি: ৭.৫/১০
  • পারফরমেন্স:৯/১০
  • ডিসপ্লে: ৭.৫/১০
  • মেইন ক্যামেরা: ৯/১০
  • সেলফি ক্যামেরা: ৭.৫/১০
  • সফটওয়্যার: ৮/১০
  • সাউন্ড:৮.৫/১০
  • ব্যাটারি: ৮.৫/১০
  • ওভারঅল রেটিং: ৮.৫/১০

তাহলে ২৫ হাজার টাকার আশেপাশে কোনটা বেস্ট হবে? Note 7 Pro, Poco নাকি A50? এটা নির্ভর করছে ইউজারের ধরনের উপর।

পোকোফোনের তুলনায় অবশ্যই Note 7 Pro এবং A50 দুইটাই গতিতে অনেক পিছিয়ে থাকবে। তবে পার্থক্যটা কেবল গেমিং অথবা বিশাল আকারের এপস লোডিংয়ের বেলায় বুঝা যাবে। এমনিতে সাধারন ব্যবহারে পার্থক্য বুঝা মুশকিল। ডেইলি রুটিন ইউজের জন্য Note 7 Pro এবং A50 দুইটাই মোর দ্যান এনাফ। দুইটা ফোনই মিডরেঞ্জে দারুন কিছু অফার করছে।

A50 মোটেও পিছিয়ে নেই। প্লাস্টিক বডি কোন ব্যাপার না, কভার লাগিয়ে নিলে সবই সমান। আর ডিসপ্লের দিক দিয়ে এটা মিডরেঞ্জের সব ফোনের বস এটা মানতেই হবে। যারা স্মার্টফোন ইউজ করেন মূলত মুভি ও ইউটিউব ভিডিও দেখার জন্য, A50 তাদের জন্য বেস্ট চয়েজ হতে পারে। তবে সবকিছুর কম্বিনেশনে পারফেক্ট প্যাকেজ বলে যদি কিছু থাকে সেটা হল Note 7 Pro। শর্টকাটে বলতে গেলে- পোকোফোন যদি হয় মিড রেঞ্জের সেরা ব্যাটসম্যান, তাহলে Note 7 Pro হল মিড রেঞ্জের বেস্ট অলরাউন্ডার!

ক্রেডিটঃ রিভিউ লিখেছেন Farhan Muntasir

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *