বিকাশ একাউন্টে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে করণীয়

বিকাশ একাউন্ট সংক্রান্ত প্রতারণার খবর আমরা প্রায়সই শুনে থাকি। নিজেদের কাস্টমারদের বিকাশ বিভিন্নভাবে সচেতন করলেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার বিষয়টি টের পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এই পোস্টে আমরা এমন কিছু বিষয় জানবো যেগুলোর মাধ্যমে প্রতারকরা প্রতারণা করে থাকে। সেই সাথে কিভাবে এই প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তাও আলোচনা করব।

লটারি

বিকাশে প্রতারণার সবচেয়ে কমন টেকনিক হচ্ছে লটারি জিতেছেন বলে লোভ দেখানো। এই ক্ষেত্রে আপনাকে ফোন করে বলা হবে আপনার নাম্বারে লটারি জিতেছেন, যা বিকাশ নাম্বারে যোগ হয়ে যাবে। আপনার নাম্বার এর ভেরিফিকেশনের জন্য কোড যাবে যা প্রদান করতে বলা হবে।

মূলত এই কোড হয়ে থাকে বিকাশ পেমেন্টের ওয়ান টাইম কোড, যার মাধ্যমে একাউন্টে থাকা অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রতারক। তাই ফোন করে কেউ যদি এমন লটারি জেতার কথা বলে যা আপনি কখনো কিনেননি, বুঝে নিবেন এটি নিছক প্রতারণা মাত্র। আর ফোনে আসা কোড কাউকেই দিবেন না। ফোনের মেসেজগুলো খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন কোন কোডের কী কাজ।

বন্ধুর দুর্ঘটনা

পরিবার ও বন্ধু হলো আমাদের সবচেয়ে প্রিয় দুইটি নাম। প্রতারকরা এতো বেশি লোভী হয়ে গিয়েছে যে তারা পরিবার ও বন্ধুর দুর্ঘটনার নাম করে বিকাশে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এই ক্ষেত্রে মূলত আপনাকে ফোন করে বলা হবে আপনার পরিচিত কেউ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, যার জন্য টাকা দরকার। প্রয়োজনীয় টাকা আপনাকে বিকাশে পাঠাতে বলা হবে।

বন্ধুর দুর্ঘটনার কথা শুনলে যেকেউ দ্বিতীয়বার না ভেবে টাকা পাঠাবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এই ইমোশনের ফায়দা লুটে প্রতারকগণ। এই ধরনের ঘটনার শিকার হলে একবার বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে তবেই আগান। বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট জায়গায় ফোন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারেন।

বিকাশে টাকা চেয়ে ফেসবুকে মেসেজ

সম্প্রতি বিকাশ সংক্রান্ত সবচেয়ে কমন প্রতারণা হয়ে গিয়েছে ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া। আগে ফেসবুক একাউন্ট হ্যাক করে হ্যাকারগণ অর্থ দাবি করতো একাউন্ট ফেরত দেওয়ার জন্য। এখন একাউন্ট হ্যাক করে ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে টাকা চেয়ে মেসেজ দেওয়া হয়।

এইরকম আপনার কোনো ফ্রেন্ড যদি আপনার কাছে টাকা চায়, তবে টাকা পাঠানোর আগে তার ফোন নাম্বারে কল করে বিষয়টি জেনে নিন। আর বন্ধুর একাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকলে তা অন্যদেরকেও জানিয়ে দিন যাতে তারা কোনো ধরনের প্রতারণা  থেকে বাঁচতে পারে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ভুয়া কাস্টমার সাপোর্ট

টিভিতে দেখানো বিজ্ঞাপনে আমরা দেখে থাকি যে বিকাশ কখনো নিজ থেকে কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করে বিকাশ পিন জানতে চায়না। কেউ যদি আপনাকে ফোন করে বিকাশ কাস্টমার সাপোর্ট থেকে বলছে বলে জানায় ও আপনার একাউন্টের কোনো সমস্যার কারণে পিন জানতে চায়, তাহলে ধরে নিবেন আপনার সাথে প্রতারণার চেষ্টা করা হচ্ছে।

gmail account security digital security

অনেক সময় আপনার পিন সরাসরি জানতে না চেয়ে বরং পিনের সাথে বিভিন্ন অংক যোগ/বিয়েওগ বা গুণ করে তা বলতে বলা হয়, যা থেকে পিন বের করা বেশ সহজ।

আবার বিকাশ ওটিপি চাওয়া হয় যার মাধ্যমে একাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এর নাম করে ফোন করলে তা এড়িয়ে চলুন। সম্ভব হলে বিকাশ হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন করে প্রতারকের নাম্বার সম্পর্কে জানিয়ে দিন।

👉 বিকাশ পিন লক হলে করণীয়

তথ্য আপডেট

উল্লিখিত উপায়ে ছাড়াও তথ্য আপডেটের নাম করেও প্রতারক আপনার কাছ থেকে ওটিপি কোড চাইতে পারে। আপনাকে ফোন করে বলা হবে যে বিকাশে তথ্য আপডেটের কাজ চলছে, যার জন্য আপনার ফোনে একটি কোড পাঠানো হয়েছে। এই কোড মূলত ওটিপি হয়ে থাকে যার মাধ্যমে অটো পেমেন্ট করিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

বিকাশ বারবার করে তাদের বিজ্ঞাপনসমূহে জানায় যে তারা কখনো গ্রাহকদের গোপনীয় তথ্য জানার ফোন করেনা। তাই বিকাশ কাস্টমার কেয়ার বলে এসব কল আসলে সাবধানে বিষয়টি মোকাবেলা করুন।

👉 বিকাশে ডিপিএস খোলার ফিচার ‘বিকাশ সেভিংস’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বিকাশ একাউন্ট লক

এই প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকগণ সবচেয়ে বেশি সফল হয়ে থাকে। বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এর নামে ফোন করে বলা হয় যে আপনার বিকাশ একাউন্ট লক হয়ে গিয়েছে ও আপনার একাউন্ট সাধারণভাবে ব্যবহার করতে আনলক করতে হবে। একাউন্ট লক হয়ে গিয়েছে শুনলে যেকেউ ঘাবড়ে গিয়ে অজান্তে প্রতারককে তার লক্ষ্য সাধনে সাহায্য করে ফেলে।

মূলত বিকাশ একাউন্ট লক হয়ে গেলেও বিকাশ থেকে তা ফোন করে কখনো জানানো হয়না। কেউ যদি বিকাশ একাউন্ট লক এর নাম করে আপনাকে ফোন করে, তাহলে বুঝবেন সে প্রতারক ও আপনার অর্থ হাতিয়ে নিতে চাচ্ছে। তাই বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এর নামে কেউ যদি ফোন করে বলে যে আপনার বিকাশ একাউন্ট লক হয়েছে, তাহলে তা বিশ্বাস করবেন না।

👉 বিকাশ একাউন্টের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য করণীয়

আর নিজে কোনো ধরনের লেনদেন না করা স্বত্বেও কেউ ওটিপি খুঁজলে তা দিবেন না। মনে রাখবেন, আপনার বিকাশ একাউন্টের নিরাপত্তা মূলত নির্ভর করছে আপনার উপর। তাই সবসময় সচেতন থাকুন। সচেতনতাই আপনার বিকাশ একাউন্টকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *