আপনার বাসার ওয়াইফাই সুরক্ষার জন্য এই পরামর্শগুলো জেনে নিন

আমাদের সকল ডিজিটাল ডিভাইসগুলোকে একসাথে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত রাখতে ওয়াইফাই সেরা মাধ্যম। তবে ওয়াইফাইয়ের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে ওয়াইফাই হতে নিরাপত্তা ঝুঁকিও দিন দিন বেড়ে চলেছে। ওয়াইফাই রাউটার হ্যাক করার মাধ্যমে অনেকের বাসার নেটওয়ার্কের মধ্যেই ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ফলে সকল অনলাইন অ্যাকাউন্ট ও তথ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকছে সবসময়। তাই ওয়াইফাইয়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা বেশ জরুরী হয়ে পড়েছে। আজকে আমরা এই পোস্টে ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো। এর ফলে আপনার ওয়াইফাই যেমন সুরক্ষিত থাকবে তেমনি আপনার তথ্য হ্যাক হবার ঝুঁকিও কমে যাবে অনেকটাই।

রাউটারের ডিফল্ট লগিন তথ্য পরিবর্তন

আপনার রাউটারের সেটিংসে যেন আপনি ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আপনার রাউটার সেটিংসে প্রবেশ করা গেলে আপনার ওয়াইফাইয়ের নাম, পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য বিভিন্ন তথ্য সহজেই পরিবর্তন করে ফেলা যায়। এজন্য আপনার রাউটারের ডিফল্ট লগিন তথ্য সাথে সাথেই পরিবর্তন করে ফেলা উচিত। এটি করতে আপনাকে রাউটারের আইপি এড্রেস ব্রাউজারে টাইপ করতে হবে ওয়াইফাইয়ে যুক্ত থাকা অবস্থায়। এছাড়া আজকাল অনেক রাউটারের সেটিংস পরিবর্তন করতে মোবাইল অ্যাপও রয়েছে।

আপনার রাউটারের এই ডিফল্ট লগিন তথ্য আপনার ওয়াইফাই আইডি ও পাসওয়ার্ড থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত রাউটারের পিছনে এই তথ্য আপনি খুঁজে পাবেন। এছাড়া আগে যদি এই তথ্য পরিবর্তন করা হয়ে থাকে এবং তা আপনার জানা না থাকে তবে রাউটারে থাকা রিসেট বাটন চেপে সকল তথ্য আবারও নিজের মতো করে সেট করা যায়।

গেস্ট ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক তৈরি করা

প্রত্যেকের বাসায় মেহমান এলেই ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড চাওয়া এখন বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গিয়েছে। তবে আপনার মূল ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড সবাইকে চাইলেই দিয়ে দেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য আপনি চাইলে মেহমানদের জন্যই আলাদা গেস্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিতে পারেন আপনার রাউটার থেকে। এর ফলে মেহমানদের জন্য আলাদা একটি ওয়াইফাই তৈরি হবে যার পাসওয়ার্ড আপনি নিজের ইচ্ছামতো দিতে পারেন যা মূল ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের পাসওয়ার্ড থেকে ভিন্ন। এতে করে আপনার মেহমানদের ডিভাইসে আপনার মূল ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড সেভ হয়ে থাকবে না। মেহমান চলে গেলে এই গেস্ট নেটওয়ার্ক সহজেই বন্ধ করে দিতে পারেন।

wifi security tips

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

রাউটারের অবস্থান ঠিক করুন

আপনার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সবার আগে জরুরী স্মার্টভাবে আপনার ঘরের নেটওয়ার্ক সেটআপ করা। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার নজর দেয়া উচিত আপনার রাউটারটি ঘরের কোথায় স্থাপন করছেন সেদিকে। কেননা রাউটার একইসাথে তার নিজের অবস্থান থেকে চারদিকে ওয়াইফাইয়ের সিগন্যাল ছড়িয়ে দেয়। তাই আপনার রাউটারকে এমন অবস্থানে রাখা প্রয়োজন যাতে করে এই সিগন্যাল আপনার পুরো ঘরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

যেমন আপনি যদি আপনার ঘরের কোন এক পাশে রাউটারটি স্থাপন করেন তবে দেখা যাবে সে পাশে আপনার প্রতিবেশিরা বেশ ভালো সিগন্যাল পাবে। বরং আপনি ঘরের অপর পাশে ভালো সিগন্যাল নাও পেতে পারেন। কোনভাবে আপনার প্রতিবেশির পক্ষে যদি আপনার ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড জানা সম্ভব হয় তবে সে বেশ ভালো গতিতে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে। এতে আপনার ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে এবং অন্যান্য অনেক নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তাই রাউটার সবসময় ঘরের মাঝ বরাবর রাখতে চেষ্টা করুন।

সংযুক্ত ডিভাইস চেক করুন

আপনার রাউটারের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো নিয়মিত চেক করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে শুধুমাত্র আপনার পরিচিত ডিভাইসগুলোই রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে কিনা। এখানে কোন সন্দেহজনক ডিভাইস দেখা গেলে সাথে সাথে সেই ডিভাইসটি ব্লক করে দিয়ে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলুন। এভাবে করে আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন এবং হ্যাকিং ও তথ্য চুরি যাওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন সহজেই।

ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হোন

শক্তিশালী একটি পাসওয়ার্ড দেয়ার মাধ্যমে আপনার ওয়াইফাইকে সুরক্ষিত রাখা যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ সেটি সবাই জানেন। তাই অবশ্যই এমন পাসওয়ার্ড দিন যেটি অন্য কেউ জানবে না বা অনুমান করতে পারবে না। জনপ্রিয় পাসওয়ার্ড বা সহজে অনুমান করা যায় এমন কিছু না দেয়াই ভালো। যেমনঃ আপনার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার কিংবা অন্য সাধারন কোন তথ্য। সহজ পাসওয়ার্ড দিলে তা মনে রাখা সহজ হলেও এসব পাসওয়ার্ড অন্যের পক্ষে অনুমান করাও সহজ হয়ে যায়।

এছাড়াও পাসওয়ার্ড নিয়মিত পরিবর্তন করা একটি ভালো অভ্যাস। অন্তত প্রতি ৩ মাসে একবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করলে আপনার ওয়াইফাইয়ে অন্যের প্রবেশের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও যদি কখনও আপনার মনে সন্দেহ জাগে তবে সাথে সাথে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

👉 ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক লুকিয়ে রাখার উপায়

ফায়ারওয়াল অন করা এবং ওয়াইফাইয়ে এনক্রিপশন চালু রাখা

বেশিরভাগ রাউটারেই আলাদা করে ফায়ারওয়াল ফিচার থাকে যা বাইরে থেকে বিভিন্ন হ্যাকিং থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে। আর ওয়াইফাই এনক্রিপশন বাইরের কাউকে আপনি ওয়াইফাই দিয়ে কি ডাটা আদানপ্রদান করছেন তা জানতে দেয় না। সাধারণত এই দুটি ফিচারই প্রথম থেকেই একটিভ করা থাকে, তবে এগুলো চালু আছে কিনা তা চেক করে নিতে পারেন রাউটারের সেটিংস হতে। যদি কোন কারণে এসব অপশন অফ করা থাকে তবে সঙ্গে সঙ্গে তা চালু করে নিন।

রাউটার ও ডিভাইস আপডেটেড রাখা

সফটওয়্যার আপডেট আপনার সামনে হাজির হয় অনলাইন হলেই। যদিও এটা কিছুটা বিরক্তিকর, তবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এসব আপডেটের মাধ্যমেই বিভিন্ন নতুন সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত করা হয় এবং পুরানো সিকিউরিটি ঝুঁকিগুলো ঠিক করা হয়। অর্থাৎ যখন কোন ঝুঁকির তথ্য নতুন করে জানা যায় তখন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ডিভাইস এসব আপডেট প্রদান করে সুরক্ষিত রাখে।

আপনার রাউটার ও রাউটারের মাধ্যমে ব্যবহৃত সকল ডিভাইস আপডেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরী। এতে করে আপনার নিরাপত্তা ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় এবং বিভিন্ন হ্যাকিং ও ম্যালওয়্যারের থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। আপনার রাউটারের সেটিংস হতে অটোমেটিক আপডেট অন করে রাখতে পারেন। এতে রাউটার নিজেই নতুন আপডেট খুঁজে নিয়ে একা একাই আপডেট করে নিতে পারবে।

ভিপিএন ব্যবহার

ভালো একটি ভিপিএন ব্যবহার করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। রাউটারের মাধ্যমে সরাসরি ইন্টারনেট ব্রাউজ করলে আপনার মূল নেটওয়ার্কের আইপি ইন্টারনেটে পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। হ্যাকার এই আইপি ব্যবহার করে সহজেই আপনার নেটওয়ার্ক হ্যাক করার চেষ্টা করতে পারে। তবে একটি ভালো ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি থাকে না। ভিপিএন আপনার আইপি লুকিয়ে ফেলতে পারে, এছাড়া আপনার ব্রাউজিং তথ্য ভিপিএন মুছে দিতে পারে সহজেই।

যখন কোন পাব্লিক ওয়াইফাইয়ে আপনি যুক্ত হন তখন এই ভিপিএন ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী। আপনার প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার জন্য ভিপিএন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে অনেক রকম ভিপিএন থাকলেও জনপ্রিয় ও ভালো সুনামযুক্ত ভিপিএন ব্যবহার করাই ভালো।

👉 ভিপিএন কী? এটা কী কাজে লাগে?

WPA3 রাউটার ব্যবহার

WPA3 হচ্ছে তুলনামূলক নতুন প্রযুক্তির সিকিউরিটি প্রোটোকল। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই নিজেকে আরও বেশি নিরাপদ রাখতে পারবেন। তবে আগের দিনের বিভিন্ন রাউটারে এই প্রযুক্তি নেই। তাই নতুন রাউটার কেনার মাধ্যমে নিজেকে আরও সুরক্ষিত রাখতে পারেন। নতুন রাউটার কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে নিন যে রাউটারটি WPA3 প্রযুক্তি সাপোর্ট করে কিনা।

রিমোট রাউটার এক্সসেস বন্ধ রাখা

আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের বাইরের কেউ রাউটারে যাতে প্রবেশ না করতে পারে সেজন্য রিমোট রাউটার এক্সেস বন্ধ রাখা জরুরী। কাজে না লাগলে বা বাইরে থেকে আপনার রাউটার সেটিংস পরিবর্তন করার প্রয়োজন না হলে রাউটার সেটিংস হতে এই অপশনটি বন্ধ রাখাই শ্রেয়। এটা অনেক রাউটারে ডিফল্টভাবে অন করা থাকতে পারে। তাই এটি সাথে সাথেই বন্ধ করে দেয়া উচিত।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *