অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ কী, এর সুবিধা জানুন

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতির সাথে সাথে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোনগুলোও বেশ শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ের মধ্যম বাজেটের ফোনগুলোও কিছু বছর আগের একদম উপরের সারির ফোন থেকেও শক্তিশালী। এর মানে এই নয় যে আমাদের ফোনগুলো এখানেই থেমে থাকবে।

প্রতি বছরই ফোন থেকে আরও বেশি পারফর্মেন্স পেতে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি আসছে। এমনকি আপনার হাতে থাকা ফোন থেকে একদম সব পারফর্মেন্স নিংড়ে নিতে আলাদা ‘‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ থাকতে পারে। কিন্তু আমরা অনেকেই এই বিষয়ে জানি না। আজকের এই পোস্টে আমরা জানাবো কীভাবে আপনার ফোনে ‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ আছে কিনা সেটি আপনি চেক করতে পারবেন এবং এটি অন করে ব্যবহার করতে পারবেন।

হাই-পারফর্মেন্স মোড কী?

এটি বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে আলাদা ফিচার হিসেবে দেয়া থাকতে পারে। সাধারণত এই মোড ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনের সিপিইউ এবং জিপিইউ থেকে যতটা পারফর্মেন্স পাওয়া সম্ভব সেটি পেতে পারেন। আমরা অনেকেই মনে করি আমাদের ফোন সবসময় তার পূর্ণ শক্তি দিয়ে চলছে। আসলে ব্যাপারটি সেরকম নয়। ব্যাটারির খরচ বাঁচাতে ফোন যখন দরকার হয় না তখন খুব কম শক্তি ব্যবহার করে চলে। শুধুমাত্র ভারী কোন কাজ করতে গেলেই আপনার স্মার্টফোন তার পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করতে চেষ্টা করে।

একটা সময় অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে কাস্টম রম বেশ জনপ্রিয় ছিল ফোনের পূর্ণ পারফর্মেন্স বের করে নিতে। কাস্টম রমে আলাদা করে ফোনের সিপিইউ ওভারক্লক করার মাধ্যমে এই কাজটি করা হতো। সিপিইউ ওভারক্লক করার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের সিপিইউকে একদম পূর্ণ শক্তিতে চলতে বাধ্য করতে পারেন এর স্বাভাবিক অবস্থা থেকে। এতে করে আপনার সিপিইউতে সমস্যাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত আপনার ফোনকে নিরাপদ রাখতেই সিপিইউকে পূর্ণ শক্তিতে চলতে দেয়া হয় না। ‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ ব্যবহার করে এই কাজটিই বর্তমানে নিরাপদে করতে দেয় কিছু কিছু ফোন কোম্পানি।

সাধারণত ফোনের প্রসেসরে দুই ধরণের কোর থাকে, হাই পারফর্মেন্স কোর এবং লো পারফর্মেন্স কোর। হালকা কাজগুলো স্মার্টফোন লো পারফর্মেন্স কোরের মাধ্যমে করে থাকে আর হাই পারফর্মেন্স কোর ব্যবহার করে ভারী কাজ বা গেমিং করবার ক্ষেত্রে। ‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ ব্যবহার করে ওভারক্লকিং করার বদলে বরং আপনার স্মার্টফোন সকল কাজ হাই পারফর্মেন্স কোরের মাধ্যমে করে থাকে। এতে করে পারফর্মেন্স বেড়ে গেলেও ব্যাটারি বেশি খরচ হয়। পারফর্মেন্সে পার্থক্য খেয়াল করবার মতো নাও হতে পারে আপনার জন্য। কিন্তু দরকার হলে আপনার ফোনের প্রসেসরকে পূর্ণ দমে কাজে লাগাতে পারেন এই ফিচার ব্যবহার করে।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এফ২৩

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

মূলত খুব শক্তিশালী কোন প্রসেসরের ফোন যেমন গ্যালাক্সি এস২২ আলট্রাতে এই ফিচার ব্যবহারে আপনি পারফর্মেন্সের পার্থক্য নাও বুঝতে পারেন। কিন্তু কোন বাজেট ফোন বা কম শক্তিশালী ফোন যেমন ওয়ানপ্লাস নর্ড ব্যবহার করলে এই ফিচারে বেশ ভালো পার্থক্য লক্ষ্য করতে পারবেন।

হাই-পারফরম্যান্স মোড কি করে

হাই-পারফরম্যান্স মোডের গিগবেঞ্চ রেজাল্ট ও সাধারণ অবস্থায় রেজাল্ট দেখলেই নিশ্চিত হওয়া যায় এই বাড়তি ফিচার আসলে হার্ডওয়্যারকে কি পরিমাণ পুশ করে থাকে। মূলত হার্ডওয়্যার থেকে বাড়তি পারফরম্যান্স বের করেই আনা এর মূল উদ্দেশ্য। একে অনেকটা কম্পিউটার ওভারক্লক করার সাথেও তুলনা করে যেতে পারে।

তবে গিগবেঞ্চ রেজাল্ট কোনো কাজের বিষয় নয় যদি দৈনন্দিন ব্যবহারে এই ফিচার কোনো কাজে না আসে। মূলত স্মার্টফোনে গেমিং এর ক্ষেত্রে হাই-পারফরম্যান্স মোড অধিক সাহায্য করে থাকে। বর্তমানে গেমিং টাইটেলগুলো আগের চেয়েও অনেক বেশি গ্রাফিক্স ডিমান্ডিং হয়ে উঠছে যার ফলে হার্ডওয়্যারকেও পাল্লা দিয়ে শক্তিশালী হওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় হাই পারফরম্যান্স মোড কাজে আসে।

সাধারণ ব্যবহার,যেমনঃ সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রলিং কিংবা ছবি তোলার ক্ষেত্রে হাই-পারফরম্যান্স আহামরি কোনো পার্থক্য নিয়ে আসেনা। মূলত এই ফিচার ব্যবহার করে মূল কাজ হলো হেভি ইউজারদের। 

আপনার ফোনে ‘হাই-পারফর্মেন্স মোড’ আছে কিনা কীভাবে জানবেন?

এই ফিচারটি মূল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ফিচার নয়। এটা সাধারণত বিভিন্ন ফোন ব্র্যান্ড আলাদা করে তাদের ফোনে নিজেরাই দিয়ে থাকে। মূলত এই ফিচারটি স্যামসাংয়ের ফোনেই বেশি দেখা যায়। এছাড়া ওয়ানপ্লাসের কিছু ফোনেও এই ফিচারের দেখা মেলে।

স্যামসাং, অপো, ভিভো, ওয়ানপ্লাস, রিয়েলমি, আইকো, এর মত অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ফোনে হাই পারফরম্যান্ড মোড এর সেটিংস ব্যাটারি সেটিংসে রাখে। তবে প্রতিটি ব্র্যান্ড এই ফিচারের আলাদা নাম প্রদান করেছে। 

যেমনঃ স্যামসাং এর ফোনগুলোতে “Enhanced Processing” ফিচার রয়েছে। আইকো ফোনগুলোটে রয়েছে “Monster Mode” যেখানে সরাসরি “High-Performance Mode” পেয়ে যাবেন ওয়ানপ্লাস, অপো, ও রিয়েলমি ব্র্যান্ডের ফোনে। শাওমি ও রেডমি ফোনগুলোতে Peformance মোড এর টোগল পেয়ে যাবেন।

সরাসরি আপনার ডিভাইসের সেটিংসে প্রবেশ করে ব্র্যান্ড নাম অনুসরণ করে উপরে লেখা থাকা নামগুলো লিখে সার্চ করলে কাংখিত সেটিংস পেয়ে যাবেন। এভাবে বেশ সহজে আপনার এন্ড্রয়েড ফোনে থাকা হাই-পারফরম্যান্স মোড খুঁজে বের করতে পারবেন।

আগেই বলেছি স্যামসাং এই ফিচারটির নাম দিয়েছে ‘এনহ্যান্সড প্রসেসিং’ এবং এই ফিচারের আসল কাজ সম্পর্কে তেমন কিছু বলাও নেই তাদের ফোনে। সেটিংসে গেলে আপনি দেখতে পাবেন তারা বলছে ‘গেম ছাড়া দ্রুত ডাটা প্রসেসিং করতে ব্যবহার করুন। বেশি ব্যাটারি খরচ হবে।’ অর্থাৎ গেমে আলাদা করে ভালো পারফর্মেন্স পেতে হলে আপনাকে স্যামসাংয়ের গেম বুস্টার টুল ব্যবহার করতে হবে। 

আপনার যদি স্যামসাংয়ের ফোন থাকে তবে এই ফিচারটি অন করা বেশ সহজ। নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করে এটি চালু করে নিতে পারেনঃ

  • উপর থেকে নিচের দিকে সোয়াইপ করে নোটিফিকেশন প্যানেল ওপেন করুন।
  • ডানপাশের উপরের কোণা থেকে গিয়ার আইকনে ট্যাপ করুন এবং সেটিংস ওপেন করে নিন।
  • এবার ‘Battery & Device Care’ সেকশনে চলে যান ট্যাপ করে।
  • ‘Battery’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
  • এবার নিচের দিকে স্ক্রল করে ‘More Battery Settings’ খুঁজে বের করে ট্যাপ করুন।
  • ‘Enhanced Processing’ লেখার পাশে থাকা টগলটি চালু করে দিন একবার ট্যাপ করে।

👉 অ্যান্ড্রয়েডের লুকায়িত সেটিংস এবং সেগুলোর ব্যবহার জানুন

এটি করলেই আপনার ফোন দ্রুত কাজ করা শুরু করবে। ফোনের উপর ভিত্তি করে আপনি তেমন কোন পার্থক্য নাও দেখতে পারেন, বরং এটি আপনার ফোনের ব্যাটারি আরও দ্রুত খরচ করতে পারে। তাই আপনার যদি এতে তেমন কোন সুবিধা না হয় তবে এই ফিচারটি অফ করে রাখাই ভালো। তবে কম শক্তিশালী স্যামসাং ফোনে ফিচারটি বেশ কাজে দিতে পারে। কিন্তু ব্যাটারি লাইফের ব্যাপারটি মাথায় রাখবেন।

শাওমি / রেডমি ফোনের High-Performance মোড
শাওমি / রেডমি ফোনের High-Performance মোড

ওয়ানপ্লাস ফোনের ক্ষেত্রে সেটিংসে গিয়ে ‘High Performance Mode’ লিখে সার্চ করে এই ফিচারটি খুঁজে পেতে পারেন সহজেই। শাওমি ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাটারি সেকশনে গেলেও পারফর্মেন্স মোড পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সেখান থেকে ফিচারটি চালু করতে পারবেন। মনে রাখবেন, এতে ব্যাটারি দ্রুত খরচ হবে।

বলে রাখা ভালো ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোতে এই হাই-পারফরম্যান্স মোড এর আহামরি কোনো কাজ নেই। কেননা ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর পারফরম্যান্স সাধারণ এমনিও ভালো হয়ে থাকে যার চেয়ে বেশি তেমন কোনো ব্যবহারকারীরই দরকার হয়না। 

বিশেষ করে বাজেট ফ্রেন্ডলি ফোনগুলোতে এই ফিচার বেশি কাজে আসবে। মিডিয়াম স্পেসিফিকেশন নিয়ে ভালো মানের পারফরম্যান্স পেতে এসব ফোনে এই ফিচার অনেকদূর সাহায্য করে। যারা বাজেট ফোনেও গেমিং এর মত হেভি টাস্ক করে থাকেন, তাদের জন্য এই ফিচার অবশ্যই কাজে আসবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,571 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *