শাওমি কেন এত জনপ্রিয়?

কখনো ভেবে দেখেছেন কি শাওমি এতো জনপ্রিয় কেনো? বিজ্ঞাপন, অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রায় সকল স্থানে শাওমি ব্র‍্যান্ড চোখে পড়তে বাধ্য। তবে এই চাইনিজ টেক জায়ান্ট সবসময় কিন্তু এমন ছিলোনা। তাহলে কি কারণে এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শাওমি? চলুন আলোচনা করি সে ব্যাপারে।

স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রির কথা বিবেচনা করলে অনেক কোম্পানির তুলনায় শাওমি নতুন একটি কোম্পানি। জেনে অবাক হবেন যে শাওমি’র প্রথম প্রোডাক্ট কোনো স্মার্টফোন ছিলোনা। শাওমি’র প্রথম প্রোডাক্ট ছিলো কাস্টম অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম মিইউআই (MIUI)। মিইউআই এর সফলতার কারণে চীনে শাওমি মি ১ ফোন নিয়ে আসে কোম্পানিটি। বর্তমানে সাব-ব্র‍্যান্ডসমূহকে সাথে নিয়ে বেস্ট সেলিং স্মার্টফোন ব্র‍্যান্ডের মধ্যে শাওমি একটি।

শাওমি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এমন কিন্তু না। সময়ের সাথে সাথে গ্রাহকদের মন জয় করার মত সব প্রোডাক্ট বাজারে এনে তবেই শাওমি বর্তমানের জনপ্রিয় ব্র‍্যান্ডে পরিণত হয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক শাওমি কেনো এতো জনপ্রিয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

সঠিক কৌশল অনুসরণ

সুলভ মূল্যে ব্যবহারকারীদের হাতে সেরা পণ্য তুলে দিতে শাওমি সবসময় বদ্ধ পরিকর। শাওমি প্রোডাক্ট এবং শাওমি মোবাইলের দাম কম হওয়ার পেছনে তাদের ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট ব্রিক্রির স্ট্রেটেজি বা কৌশল আসল ভূমিকা পালন করে। স্টাফসহ বিশাল সংখ্যার ফিজিক্যাল স্টোর না খুলে বরং ই-কমার্স এর মাধ্যমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনলাইনেই ফোন বা যেকোনো প্রোডাক্ট বিক্রি করে শাওমি।

এছাড়াও শাওমি কোনো স্মার্টফোন গণহারে তৈরী করেনা। কোনো স্মার্টফোন নতুন বাজারে আনলে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইউনিট তৈরী করা হয়, যাতে বাড়তি ইউনিট স্টকে ফেলে রেখে ক্ষতির মুখোমুখি হতে না হয়। অর্থাৎ “ডিমান্ড অনুসারে সাপ্লাই” এর নিয়ম অনুসরণ করে শাওমি। এই কারণে যেকোনো শাওমি স্মার্টফোন বাজারে আসার কিছুদিনের মধ্যেই স্টক আউট হতে দেখা যায়।

এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী বিজনেস মডেল এর অংশ হিসেবে সুলভ মূল্যে ফোন বিক্রি করে শাওমি। তৎক্ষণাৎ ফোন বিক্রি থেকে বেশি আয় না করে বরং সময়ের সাথে রেভিনিউ তুলে নেওয়ার বিজনেস মডেল অনুসরণ করে শাওমি। বিগত সময়গুলোতে কম দামে ফোন বিক্রি করে পরে ইউআই তে এড দেখিয়ে ঠিকই লাভ তুলে নিয়েছে শাওমি। এছাড়াও অ্যাপস, অনলাইন ভিডিও, থিমস, ইত্যাদি সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে শাওমি।

ইকোসিস্টেম

শুধুমাত্র স্মার্টফোন কোম্পানি নয় শাওমি। স্মার্টফোন এর পাশাপাশি স্মার্ট হোম প্রোডাক্ট বিক্রি করে তারা। শুধুমাত্র ভালো ফোন বানিয়ে থেমে নেই শাওমি। স্মার্টফোন এর পাশাপাশি বৃহৎ একটি মোবাইল ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে শাওমি। ইকোসিস্টেম নির্ভর প্রোডাক্ট লাইন আপ বজায় রাখায় শাওমিকে “Apple of China” নামে ডাকতেও দেখা যায়।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

শাওমি তাদের স্মার্ট লিভিং সিস্টেম ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র এনেছে। আবার এই সকল প্রোডাক্ট একটি অন্যটির সাথে খুব ভালোভাবে কাজ করে। এতো অল্প সময়ের মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান এতো উন্নতি করা আসলেই অবাক করার মত ব্যাপার।

শুধুমাত্র স্মার্টফোন বা স্মার্ট হোম গ্যাজেটস তৈরি করেই থেমে নেই শাওমি। ৫জি ও আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পন্ন গ্যাজেট তৈরিতেও শাওমি প্রচুর পরিমাণে ইনভেস্ট করেছে। অর্থাৎ ক্রমবর্ধমান এই ইন্ডাস্ট্রিতে শাওমি তাদের অবস্থান একদম পাক্কা করে নিয়েছে। যদিওবা বর্তমানে শাওমির রেভিনিউ এর বিশাল অংশ আসে স্মার্টফোন বিক্রি থেকে, তবে ভবিষ্যতে এটি পরিবর্তিত হতে চলেছে।

👉 আসল শাওমি ফোন চেনার উপায়

প্রোডাক্টে বৈচিত্র্য

শাওমির ব্যাপারে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়ই তাদের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। বলছি শাওমি প্রোডাক্টের বৈচিত্র্যময় লাইন আপের কথা। গ্রাহকরা যাতে প্রোডাক্ট কেনার সময় নিজেদের পছন্দমত শাওমি প্রোডাক্ট কিনতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে অসংখ্য প্রোডাক্ট তৈরি করে শাওমি। এন্ট্রি-লেভেল ডিভাইস থেকে শুরু করে ফ্ল্যাগশিপ-গ্রেড ফোন পর্যন্ত সব ধরনের গ্যাজেট তৈরি করে কোম্পানিটি।

তবে শুধুমাত্র স্মার্টফোন দ্বারা শাওমি এতো জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে সেটা ভাবলে ভুল হবে। স্মার্টফোন ও ওয়্যারেবলস ছাড়াও ঘরের জন্য স্মার্ট বালব, ভ্যাকিউম ক্লিনার, স্মার্ট রাইস কুকার এর মতো প্রোডাক্ট ও তৈরি করে শাওমি। অর্থাৎ কিচেনে থাকা ইনডাকশন কুকার থেকে শুরু করে লিভিং রুমে থাকা স্মার্ট টিভি পর্যন্ত, দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শাওমি তাদের প্রোডাক্ট রেখেছে। 

শাওমি কেনো এতো জনপ্রিয়?

এতোসব শুনে অবাক লাগলেও শাওমির যাত্রা এখানেই থেমে নেই। শাওমি অ্যাপস এর মাধ্যমে চালিত স্মার্ট কার আসতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। এছাড়াও ইতিমধ্যে ইলেকট্রিক স্কুটার বাজারে নিয়ে এসেছে শাওমি।

শাওমি’র লক্ষ্য একটাইঃ একটি অল-ইন-ওয়ান নির্ভরযোগ্য ও বৈচিত্র্যময় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। এমন একটি স্মার্ট হোম এর কথা চিন্তা করুন যা ফোন থেকে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অর্থাৎ শাওমি’র লক্ষ্য হচ্ছে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারকে একই ছাতার নিচে এনে একটি অসাধারণ ইউনিভার্সাল ইকোসিস্টেম তৈরি করা।

যেসব প্রতিষ্ঠান সবসময় এক ধাপ আগে ভাবতে পছন্দ করে, তাদের সাধুবাদ জানানো যায়। শাওমিও ঠিক এমনই একটি প্রতিষ্ঠান। কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে গ্রাহকের মনে জায়গা করে নিতে হয়, তার উপায় শাওমি’র জানা। শাওমি’র এই উন্নয়নের ধারা অব্যহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে শাওমি এক অদম্য শক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *