NID’তে সর্বোচ্চ ১০টি সিম – অতিরিক্ত সিম বন্ধ করবে বিটিআরসি

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। এখন থেকে একজন ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) মাধ্যমে সর্বাধিক ১০টি সিমকার্ড নিবন্ধন করে রাখতে পারবেন। আপনি চাইলে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল বা টেলিটক, যে কোনো অপারেটরের সিম ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু সব মিলিয়ে সংখ্যা যেন ১০টির বেশি না হয়।

এই সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো দেশে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, অবৈধ সিম ব্যবহার ও প্রতারণা প্রতিরোধ করা এবং নাগরিকদের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে, অনেক ব্যবহারকারীর নামে অজানা সিম নিবন্ধিত রয়েছে, যা পরবর্তীতে বেআইনি কার্যকলাপে ব্যবহৃত হতে পারে। এনআইডি-ভিত্তিক সিম নিবন্ধন চালুর পরও এই সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। এবার বিটিআরসি নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে এই নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করছে।

কতগুলো সিম রাখা যাবে?

বিটিআরসি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, একজন ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ১০টি সিম রাখতে পারবেন। এই ১০টি সিম একাধিক অপারেটরের হতে পারে, কিন্তু সম্মিলিত সংখ্যা যেন ১০ অতিক্রম না করে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ চাইলে গ্রামীণফোনের চারটি, রবির তিনটি, বাংলালিংকের দুটি এবং টেলিটকের একটি সিম রাখতে পারেন। এর বেশি হলে তা অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে সেই অতিরিক্ত সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

৩০ অক্টোবর ২০২৫ – গুরুত্বপূর্ণ শেষ তারিখ

যাদের নামে ইতিমধ্যেই ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত আছে, তাদের জন্য এখনই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিটিআরসি জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবর ২০২৫-এর মধ্যে প্রত্যেক ব্যবহারকারীকে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে অতিরিক্ত সিমগুলোর নিবন্ধন বাতিল করতে হবে বা অন্য কারও নামে মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। এটি ব্যবহারকারীর হাতে থাকা সুযোগ, যাতে তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোন ১০টি সিম রাখতে চান এবং কোনগুলো বাদ দিতে চান।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ডি-রেজিস্টার মানে কী?

বিটিআরসির বিজ্ঞপ্তিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ রয়েছে- “দৈবচয়ন”। নিজ এনআইডিতে পছন্দমতো ১০ (দশ) টি সিমকার্ড রেখে অতিরিক্ত সিমকার্ডসমূহ ৩০ অক্টোবর ২০২৫ এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারের মাধ্যমে ডি-রেজিস্টার (নিবন্ধন বাতিল)/মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। উক্ত সময়ের পর অতিরিক্ত সিমকার্ডসমূহ দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ডি-রেজিস্টার করা হবে।

sim

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

এখানে “দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ডি-রেজিস্টার” বলতে বোঝানো হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যবহারকারী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিজে থেকে সিদ্ধান্ত না নেন কোন সিম রাখবেন, তাহলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং এলোমেলোভাবে সেই অতিরিক্ত সিমগুলোর কিছু বন্ধ করে দেবে। অর্থাৎ, আপনি যদি নিজের পছন্দের ১০টি সিম আগে থেকে ঠিক না করেন, তাহলে সিস্টেমের র‍্যান্ডম নির্বাচন অনুযায়ী কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিমও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এই কারণে বিটিআরসি ব্যবহারকারীদের আগেভাগে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আপনি যদি ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক কারণে একাধিক সিম ব্যবহার করেন, তবে এখনই আপনার পছন্দের ১০টি সিম বেছে রেখে বাকিগুলো বাতিল বা অন্যের নামে হস্তান্তর করা উচিত।

নিজের নামে কতগুলো সিম নিবন্ধিত, কীভাবে জানবেন?

বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই জানেন না তাদের নামে ঠিক কতগুলো সিম নিবন্ধিত রয়েছে। কিন্তু এখন এটি জানা খুবই সহজ। যেকোনো মোবাইল থেকে *16001# ডায়াল করুন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চারটি সংখ্যা লিখে “Send” করুন। সঙ্গে সঙ্গেই আপনার নামের অধীনে নিবন্ধিত সিমগুলোর তালিকা দেখা যাবে। এই সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং সব অপারেটরের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

যদি ১০টির বেশি সিম পান

যদি আপনি দেখেন আপনার নামে ১০টির বেশি সিম নিবন্ধিত রয়েছে, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা। সেখানে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে আপনি অতিরিক্ত সিমগুলো ডি-রেজিস্টার করতে পারেন বা অন্য কারও নামে ট্রান্সফার করতে পারেন।

বর্তমানে অনেক মোবাইল অপারেটর অনলাইন মাধ্যমেও সিম বাতিল বা মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন গ্রহণ করছে। অপারেটরদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে লগইন করে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়।

যদি কেউ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই পদক্ষেপ না নেন, তাহলে ৩০ অক্টোবর ২০২৫-এর পর থেকে বিটিআরসি নিজ উদ্যোগে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে অতিরিক্ত সিমগুলো ডি-রেজিস্টার করবে। তখন কোন সিম সক্রিয় থাকবে আর কোনটি বন্ধ হয়ে যাবে, সেটা ব্যবহারকারীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

👉 বিটিসিএল আনবে নতুন মোবাইল সিম, থাকছে যেসব সুবিধা

কেন এই সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে?

একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর ১০টির বেশি সিম রাখার প্রয়োজন সাধারণত হয় না। অনেক সময় একাধিক সিম ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা, জালিয়াতি বা অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত হয়। সেই ঝুঁকি কমাতেই এই সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষে কোনো অপরাধ তদন্তের সময় সঠিক মালিককে শনাক্ত করা সহজ হবে।

এই সীমা আরোপের আরেকটি বড় সুবিধা হলো টেলিকম ডাটাবেসে অপ্রয়োজনীয় সিম সংখ্যা কমে যাবে, যা নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ও তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

অপারেটরদের সহায়তা

বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর ইতোমধ্যেই ব্যবহারকারীদের সহায়তার জন্য বিশেষ সাপোর্ট ব্যবস্থা চালু করেছে। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ও টেলিটক, প্রতিটি অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে গিয়ে এই বিষয়ে তথ্য ও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। ব্যবহারকারীরা চাইলে এসব মাধ্যমেই তাদের সিমের অবস্থা যাচাই করতে পারেন এবং অতিরিক্ত সিম ডি-রেজিস্ট্রেশনের আবেদন করতে পারেন।

বিটিআরসি দীর্ঘদিন ধরে দেশের টেলিকম সেক্টরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এনআইডি-ভিত্তিক সিম নিবন্ধন চালুর পর থেকে অবৈধ সিম ব্যবহারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

এখনই যা করবেন

এখনই নিজের নামে থাকা সিমের সংখ্যা যাচাই করে দেখুন। *16001# ডায়াল করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি জানতে পারবেন কতগুলো সিম আপনার এনআইডিতে নিবন্ধিত আছে। যদি সংখ্যা ১০টির বেশি হয়, তাহলে আর দেরি না করে অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন।

আপনার গুরুত্বপূর্ণ সিমগুলো বেছে রাখুন এবং অপ্রয়োজনীয়গুলো ডি-রেজিস্টার করুন। এতে করে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন যে, দৈবচয়ন পদ্ধতির কারণে আপনার কোনো প্রয়োজনীয় নম্বর বন্ধ হয়ে যাবে না।

শেষ কথা

বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, এটি দেশের টেলিকম খাতে একটি যুগোপযোগী সংস্কারও বটে। এটি নাগরিকদের নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করছে ব্যবহারকারীদের সচেতনতার ওপর।

আপনার নিজের নামে থাকা সিমের দায়িত্ব নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ অক্টোবর ২০২৫-এর আগে যদি আপনি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে অতিরিক্ত সিমগুলো দৈবচয়ন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডি-রেজিস্টার হয়ে যাবে। তাই এখনই পদক্ষেপ নিন, আপনার পছন্দের সিমগুলো রেখে বাকিগুলো বাতিল বা ট্রান্সফার করে দিন। আপনার সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপই আপনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করবে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,402 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *