গুগল পে নাকি অ্যাপল পে? কোনটি সেরা? পার্থক্য কী?

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল পেমেন্ট এখন খুব প্রচলিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগদ টাকার বদলে অনেকেই এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমে খুব সহজেই পেমেন্ট সেরে ফেলেন। এই মোবাইল পেমেন্ট সেবার মধ্যে গুগল পে (Google Pay) এবং অ্যাপল পে (Apple Pay) বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত দুটি জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে এদের মধ্যে পার্থক্য ঠিক কোথায়? কার সুবিধা বেশি? কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত? চলুন সহজ ভাষায় এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নেওয়া যাক।

গুগল পে হচ্ছে গুগলের তৈরি একটি ডিজিটাল ওয়ালেট ও অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম। এটি মূলত অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এটি নতুন রূপে চালু হয়, যেখানে পূর্বের Android Pay ও Google Wallet একত্রিত হয়। গুগল পে ব্যবহার করে আপনি বাংলাদেশেও দোকানের কেনাকাটার পেমেন্ট পরিশোধ করতে পারেন। মোবাইলের মাধ্যমে, কার্ড কিংবা নগদ টাকা বহন করা ছাড়াই।

অন্যদিকে, অ্যাপল পে হলো অ্যাপলের নিজস্ব ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস, যা শুধুমাত্র অ্যাপল ডিভাইস যেমন আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাকবুক ও অ্যাপল ওয়াচে ব্যবহার করা যায়। এটি ২০১৪ সালে চালু হয়েছিল এবং শুরু থেকেই অ্যাপল তাদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার উপর জোর দিয়ে এটি ডিজাইন করেছে।

অ্যাপল পে দিয়ে পেমেন্ট করতে হলে ব্যবহারকারীকে ফেস আইডি, টাচ আইডি বা পাসকোড ব্যবহার করে অথেনটিকেশন নিশ্চিত করতে হয়। কার্ডের আসল তথ্য ডিভাইসে সংরক্ষিত থাকে না; বরং ‘টোকেনাইজেশন’ নামে পরিচিত একটি নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যার ফলে লেনদেন আরও নিরাপদ হয়। অ্যাপল পে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এটি বিশেষ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়।

দুটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্য হলো – কোন ডিভাইসে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল পে অ্যান্ড্রয়েড ফোন, কিছু স্মার্টওয়াচ এবং ওয়েব ব্রাউজারে ব্যবহার করা যায়, যেখানে অ্যাপল পে একান্তভাবেই অ্যাপল ইকোসিস্টেমে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, আপনি যদি আইফোন ব্যবহার না করেন, তাহলে বলা যায় অ্যাপল পে ব্যবহারের সুযোগই নেই।

Google Pay vs Apple Pay

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ব্যবহারযোগ্যতার দিক থেকে গুগল পে তুলনামূলকভাবে বেশি দেশে এবং বেশি প্ল্যাটফর্মে সাপোর্ট করে। 

নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার দিক থেকেও কিছু পার্থক্য রয়েছে। গুগল পে এনক্রিপশন এবং টোকেনাইজেশন ব্যবহার করলেও, অ্যাপল পে ব্যাপারটিকে অন্যভাবে ডিল করে। তারা ব্যবহারকারীর পেমেন্ট তথ্য কখনোই নিজেদের সার্ভারে সংরক্ষণ করে না, এবং প্রতিটি লেনদেনের জন্য আলাদা অথেনটিকেশন বাধ্যতামূলক করে দেয়। অ্যাপলের গোপনীয়তামূলক নীতিমালা বরাবরই বেশ শক্ত, যা অ্যাপল পে-কে একটি নিরাপদ বিকল্প করে তোলে।

তবে গুগল পে-এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো এর ইকোসিস্টেম ইন্টিগ্রেশন। আপনি যদি গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন, তাহলে Gmail বা Google Maps-এর মধ্যেও আপনি পেমেন্ট রিমাইন্ডার, ইনভয়েস বা বিলিং ডিটেইলস পেয়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে, অ্যাপল পে মূলত আইক্লাউডঅ্যাপল আইডি (Apple ID)-র সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে।

অবশেষে বলা যায়, আপনি কোন ডিভাইস ব্যবহার করছেন এবং কোন ফিচার আপনার বেশি প্রয়োজন, তার উপর ভিত্তি করে সেরা পছন্দ নির্ভর করে। আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারী হন এবং একটি ফ্লেক্সিবল, বহুমুখী পেমেন্ট অ্যাপ চান, তাহলে গুগল পে (গুগল ওয়ালেট) আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। আর যদি আপনি অ্যাপলের পণ্য ব্যবহার করেন তাহলে অ্যাপল পে হবে সেরা পছন্দ।

ভবিষ্যতে যদি বাংলাদেশে এই দুই পরিষেবা ব্যাপকভাবে চালু হয়, তাহলে আমাদের ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ, দ্রুত এবং নিরাপদ হয়ে উঠবে। ডিজিটাল পেমেন্টের এই দুনিয়ায় সচেতন ব্যবহারকারীর মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এসব পার্থক্য জানা অত্যন্ত জরুরি। 👉 গুগল পে ব্যবহারের নিয়ম (বিস্তারিত)

আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! আপনি যদি এর মধ্যে কোনোটি ব্যবহার করে থাকেন, আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে জানাতে পারেন – আমরা অপেক্ষায় থাকবো।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,497 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *