বর্তমানে আমাদের দেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। সেই সাথে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশনও অনেক গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কিন্তু কাজের সময় যদি কাঙ্ক্ষিত ইন্টারনেট স্পিড না পাওয়া যায় তাহলে ব্যাপারটি খুবই হতাশাজনক। তখন ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করলে এর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।
অনেক সময় দেখা যায় আপনার মোবাইল অপারেটর তাদের নেটওয়ার্ক যথেষ্ট শক্তিশালী না করেই ফোরজির আশা দেখাচ্ছে। অথবা আপনি যেখান থেকে ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিয়েছেন তারা আপনার প্যাকেজ অনুযায়ী স্পিড দিচ্ছে না। আপনি হয়ত তাদেরকে বললেন যে নেট স্লো, কিন্তু তারা আপনাকে বলে দিচ্ছে যে নেট ঠিক আছে, রাউটার বন্ধ করে চালু করুন!
আবার এমনও হতে পারে যে নেট স্পিড ভালোই আছে কিন্তু আপনি যে ওয়েবসাইট ভিজিট করছেন সেই সাইটের সার্ভার স্লো!
সুতরাং আপনি যদি আপনার ইন্টারনেট সংযোগের মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চান তাহলে ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করতে হবে। নেট স্পিড চেক করার বেশ কয়েকটি উপায় আছে। চলুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট আসলে কী?
ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট মূলত আপনার নেট সংযোগের ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড নির্ণয় করার উপায়। সেই সাথে এর ল্যাটেনসিও (রেসপন্স টাইম) জানা যায়।
ডাউনলোড স্পিড
আপনি যখন কোনও ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তখন সেই সাইটের সার্ভার থেকে আপনার পিসি বা মোবাইলে ডাটা ডাউনলোড হয়। সাইটের বিভিন্ন লেখা, ছবি প্রভৃতি ডাউনলোড হয় বলেই আপনি সেগুলো দেখতে পান।
👉 ইন্টারনেট কি ও কিভাবে কাজ করে
এছাড়া যখন ইউটিউবে কোনও ভিডিও দেখেন, তখন ইউটিউব সার্ভার থেকে ঐ ভিডিও ফাইলটি আপনার ফোন বা পিসিতে ডাউনলোড হতে থাকে ও প্লে হতে থাকে। (যদিও এই ভিডিও ফাইল প্লে হওয়ার সাথে সাথে আবার মুছে যায়)। যদি আপনার ডাউনলোড স্পিড কম থাকে তাহলে ওয়েব সাইট ব্রাউজিং বা নেটে ভিডিও দেখার কাজ ধীরগতিতে হয়।
👉 ৫জি কি? ৫জি এর সুবিধা কি? ৫জি নেটওয়ার্ক কবে চালু হবে?
আপলোড স্পিড
অন্যদিকে আপনি যদি ইউটিউবে কোনো ভিডিও আপলোড করেন, তখন আপনার ফোন বা পিসি থেকে ভিডিও ফাইলটি ইউটিউব সার্ভারে পাঠানো হয়। আপনার ইন্টারনেটের আপলোড স্পিড কম থাকলে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে বেশি সময় লাগবে। আপলোড স্পিড বেশি হলে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ফাইলটি আপলোড করতে পারবেন। একই কথা যেকোনো ফাইল আপলোড এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এছাড়া আপনার বিভিন্ন কমান্ড যেমন বিভিন্ন সাইটের লিংক ক্লিক বা বাটন ক্লিক কিংবা ফরম পূরণ করার সময়ও মূলত আপনি কিছু ডেটা আপলোড করছেন।
ইন্টারনেট ডাউনলোড এবং আপলোড স্পিড সাধারণত মেগাবিট পার সেকেন্ড (Mbps) এ প্রকাশ করা হয়। আপনি নিশ্চয়ই “মেগাবাইট” শব্দটি শুনেছেন? একটি ৫ মিনিটের অডিও এমপিথ্রি গান সাধারণত ৩ থেকে ৪ মেগাবাইট সাইজের হয়ে থাকে।
👉 মোবাইল হটস্পট দিয়ে ইন্টারনেট শেয়ার করার নিয়ম
মেগাবাইট এবং মেগাবিট এর মধ্যে পার্থক্য আছে। ১ মেগাবিট হচ্ছে ১ মেগাবাইটের ৮ ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ, আপনার ইন্টারনেট ডাউনলোড স্পিড যদি ৮ এমবিপিএস (Mbps) হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার একটি ১ মেগাবাইট সাইজের ফাইল ডাউনলোড করতে ১ সেকেন্ড সময় লাগবে। তার মানে আপনি প্রতি সেকেন্ডে ১ মেগাবাইট তথ্য ডাউনলোড করতে পারবেন। মেগাবাইটকে MBps আকারেও প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, B বড় হাতের লেখা থাকে আরকি।
👉 আনঅফিসিয়াল ফোন যাচাই ও নিবন্ধন করার নিয়ম
পিং বা ল্যাটেনসি
ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করার সময় আরেকটি বিষয় টেস্ট করা হয়। সেটি ল্যাটেনসি যা পিং নামেও পরিচিত। পিং এর মান সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি সাধারণত মিলিসেকেন্ড এ প্রকাশ করা হয়। ১ মিলিসেকেন্ড হচ্ছে ১ সেকেন্ডের ১ হাজার ভাগের ১ ভাগ। পিং বা ল্যাটেন্সি যত কম হয় তত ভালো। অর্থাৎ আপনার নেট কানেকশন তত কম সময়ে তথ্য আদানপ্রদান করতে পারে। গেম খেলার সময় এটা অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কারণ আপনার গেমিং সার্ভারে আপনার গেমের কমান্ড পৌঁছাতে দেরি হলে গেম খেলে মজা পাবেন না। অনেক সময় দেখা যাবে আপনার প্রতিযোগীরা কম ল্যাটেন্সির ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে আপনাকে হারিয়ে দিচ্ছে।
এখন আপনি ইন্টারনেট স্পিড এর ব্যাপারে মূল তথ্যগুলো সম্পর্কে জেনে গেলেন। এবার চলুন দেখি কিভাবে ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করা যায়।
👉 মোবাইল ডাটা সাশ্রয়ে কার্যকর কিছু ট্র্যাকার অ্যাপ
ইন্টারনেট স্পিড কিভাবে চেক করে?
ইন্টারনেট স্পিড চেক করা আসলে খুবই সহজ। বেশ কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো ভিজিট করলে এরকম টুল পাওয়া যায়। এদের মধ্যে অন্যতম পরিচিত দুটি হচ্ছে স্পিডটেস্ট ডট নেট এবং ফাস্ট ডট কম।
ফাস্ট ডটকমঃ এই সাইটটি নেটফ্লিক্সের বানানো। আপনি যদি যেকোনো ব্রাউজার থেকে fast.com ভিজিট করেন, সাথে সাথে দেখবেন এটি আপনার ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করা শুরু করে দিয়েছে। একটু সময় অপেক্ষা করলেই আপনি আপনার নেট স্পিড স্ক্রিনে দেখতে পাবেন। এটি সাধারণত আপনার নেট কানেকশনের ডাউনলোড স্পিড দেখায়।
তবে আপনি স্ক্রিনে “Show more info” লেখা একটি বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে আপনার আপলোড স্পিড, ডাউনলোড স্পিড এবং ল্যাটেন্সি সহ আরও কিছু তথ্য দেখতে পাবেন।
স্পিডটেস্ট ডটনেটঃ আপনি হয়ত এই সাইটটির নাম আগেও শুনেছেন। speedtest.net সাইটটি যেকোনো পিসি বা মোবাইল ব্রাউজারে ভিজিট করলে সেখানে GO লেখা একটি গোল বাটন দেখতে পাবেন। সেটাতে ক্লিক করলে একটু পরেই আপনার নেটের ডাউনলোড স্পিড, আপলোড স্পিড এবং পিং দেখতে পাবেন। এজন্য কিছুটা সময় দরকার হবে।
মনে রাখা ভালো, ইন্টারনেট স্পিড টেস্ট করার সময় ঐ সাইটগুলো আপনার পিসি বা ফোনে কিছু ডাটা আপলোড ও ডাউনলোড করে থাকে। তাই আপনি যদি মোবাইল ডাটা ব্যবহার করেন, তাহলে বার বার স্পিড টেস্ট করলে আপনার মোবাইল ডাটা খরচ হবে।
👉 বিভিন্ন অপারেটরে ইমারজেন্সি ইন্টারনেট লোন নেয়ার পদ্ধতি
তো আমরা জানতে পারলাম কীভাবে ইন্টারনেট এর গতি নির্ণয় করা যায়। আপনার ইন্টারনেট স্পিড নিয়ে কি আপনি সন্তুষ্ট? আপনার নেট স্পিড কত? কমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারেন!
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।
Understood clearly. Thanks.
Thanks a lot for your kind words. Please stay with us!