শাওমি রেডমি নোট ৫ স্মার্টফোন রিভিউ

শাওমি রেডমি নোট ৫

সম্পাদকের কথাঃ এই পোস্টটি আমাদের বাংলাটেক টোয়েন্টিফোর ডটকম এর একজন নিয়মিত পাঠক রন্তিদেব হাওলাদার পাঠিয়েছেন। লেখাগুলো সম্পাদনা করে এখানে পাবলিশ করে দেয়া হল।

চীনের অ্যাপল খ্যাত শাওমি বরাবরই সাধ্যের মধ্যে স্মার্টফোনে অসাধারণ সব ফিচার দেযার জন্য এর ব্যবহারকারীদের নিকট বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এশিয়ায় শাওমি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। বাংলাটেক২৪.কম এ রেডমি নোট ৫ (যেটি স্থানভেদে রেডমি ৫ প্লাস নামেও পরিচিত) এর একটা বিবরণ দেখে আমার ফোনটির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এবং যেহেতু, নিজের পুরনো স্মার্টফোনটি রেখে নতুন একটি স্মার্টফোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাই রেডমি নোট ৫ ছিলো পছন্দের তালিকার শীর্ষে।

রেডমি ৫ প্লাস দুটি ভ্যারিয়েন্ট ৩/৩২ এবং ৪/৬৪ এ এসেছে। আমি ৩/৩২ ব্যবহার করছি। এতো এতো ফিচার আর স্বল্পমূল্য এবং অনলাইনে এর অনেক পজিটিভ রিভিউ দেখে গত ১০ মার্চ ২০১৮ এ ফোনটা কিনেই নিলাম।

শাওমি রেডমি নোট ৫ বা রেডমি ৫ প্লাস স্পেসিফিকেশন

  • ১৮:৯ র‍্যাশিওর ৫.৯ ইঞ্চি স্ক্রিন। ডিসপ্লের চারপাশে বাড়তি জায়গা খুবই কম।
  • স্ক্রিন রেজ্যুলেশন ১০৮০ x ২১৬০ পিক্সেল। ৪০৩ পিপিআই পিক্সেল ডেনসিটি। গরিলা গ্লাস প্রটেকশন।
  • এন্ড্রয়েড ৭.১.২ নোগাট ভিত্তিক এমআইইউআই ৯ অপারেটিং সিস্টেম।
  • স্ন্যাপড্রাগন ৬২৫ প্রসেসর।
  • ৩জিবি র‍্যামের সাথে ৩২জিবি স্টোরেজ, ৪জিবি র‍্যামের সাথে ৬৪জিবি স্টোরেজ।
  • ১২ মেগাপিক্সেল ব্যাক ক্যামেরা, এলইডি ফ্ল্যাশ।
  • ৫ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা।
  • ডুয়াল সিম, সেকেন্ড সিমে মেমোরি কার্ড স্লট (১২৮জিবি পর্যন্ত)।
  • ফোরজি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার।
  • ৪০০০ এমএএইচ ব্যাটারি।
  • কালার ভ্যারিয়েশনঃ ব্ল্যাক, গোল্ড, লাইট ব্লু, রোজ গোল্ড।

এক মাস ফোনটি ব্যবহারের পর আমার অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরলাম।

স্ক্রিন

১৮:৯ র‍্যাশিওর ৫.৯ ইঞ্চি স্ক্রিনের ডিসপ্লের চারপাশে বাড়তি জায়গা খুবই কম, যা আমার কাছে ভালো লেগেছে। ফোনটি হাতে নিলে একটা প্রিমিয়াম ফিল আসে।

ডিসপ্লের আলো নিয়ে একটু সমস্যা মনে হয়েছে বিশেষ করে রোদে। তবে হাই কনট্রাস্ট মুডে চালালে আর কোন সমস্যা হবেনা। মানে, চোখের উপর খুব একটা প্রভাব পড়বেনা। তবে কড়া রোদ থেকে বাহিরে গেলে স্বাভাবিক ভাবে চালাতে অবশ্যই হাই কনট্রাস্ট মুড থেকে অটোমেটিক মুডে পরিবর্তন করে নিবেন।

ডিসপ্লের চারকোনা একটু বাকানো এবং ১৮:৯ র‍্যাশিওর হওয়ায় ইউটিউব ভিডিও দেখতে সমস্যা হতে পারে। যদিও ভিডিওর বাইরের বাকি অংশটা কালো হয়ে যায়। আপনি চাইলে ভিডিওর র‍্যাশিওটা একটু জুম দিয়ে অপটিমাইজ করে নিতে পারেন। তবে, এতে ভিডিওর কিছু অংশ কাটা পড়তে পাররে।

যেসব অ্যাপ ১৮:৯ র‍্যাশিওর না সেগুলো শাওমি তাদের রম থেকে বেশ ভালোই অপটিমাইজ করতে পেরেছে। এরপরও যেগুলো অপটিমাইজ করতে পারেনি তার উপরে এবং নিচে ডিসপ্লের কিছু অংশ কালো আসে। আমার কাছে এসব কোন সমস্যাই মনে হয়নি।

আমি অল্প-স্বল্প পড়ালেখা মোবাইল ফোনেও করি। মানে, পিডিএফই আমার পড়ার খিদে মিটানোর সবথেকে বড় ভরসা। তাই বড় ডিসপ্লে আর এর রিডিং মুডটা আমাকে বারবার স্বস্তির ঢেকুর তোলার মতো কারণ তৈরি করে দিয়েছে।

রিডিং মুড যেভাবে চালু করবেনঃ ফোনের সেটিংন প্যানেলে গিয়ে ডিসপ্লে, এরপর রিডিং মুড চালু করে দিন। এটি ডিসপ্লের নীল আলোর ইমিশনটা বন্ধ করে দেয় যা স্বচ্ছন্দে অনেক সময় একটানা ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে থাকতে সাহায্য করে।

ক্যামেরা

১৫-১৮ হাজার টাকা বাজেটে এর থেকে ভালো ক্যামেরা আশা করা যায়না। ক্যামেরা কোয়ালিটি অ্যাভারেজ।

রাতের ছবি তেমন ভালোনা। তবে, এক্সপার্ট হাতের ছোঁয়ায় রাতেও মোটামুটি ভালো ছবি তুলতে পারবেন।

সেলফি ক্যামেরাও অ্যাভারেজ। অবশ্য আমার কাছে এই বাজেটে এটাই যথেষ্ট মনে হলো।

বলে রাখি, গুগল ক্যামেরা পোর্ট করে ছবি তুললে আপনি ছবির প্রেমে পড়ে যাবেন। তবে, এক্ষেত্রে আপনার ফোনের ওয়ারেন্টি অকার্যকর হয়ে যাবে এবং ফোনে যেকোন সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে সেট রুট করার ফলে আপনার ফোনের সুরক্ষাব্যবস্থা একদম নিম্নতম হবে।

ফোন কেনার সময় এমআইইউআই ৯.২.০ পেয়েছিলাম। হয়তো এখনও তেমনি দেয়। তবে ৯.৫.৩.০ এ ফুল স্ক্রিন ডিসপ্লে এবং আইফোন জেশ্চারের স্বাদ পাবেন।

গেইমিং

গেইমিং এর ব্যাপারে বলতে গেলে মোটামুটি সকল গেইমই স্মুথলি চলে। আমি জিটিএ, নিড ফর স্পীড, ফিফা, ডিএলএস গেইম নিয়মিত খেলি। এক্ষেত্রে সেটের কোন হিটিং ইস্যু পাইনি। তবে, অনেকের সেটে হিটিং ইস্যু থাকতে পারে। আমি গ্রীনিফাইয়ের সাথে আইসল্যান্ড ব্যবহার করে অনেককিছু আমার মত করে কাস্টমাইজ করে নিয়েছি যে কারনে র‍্যাম ইউজেস কম হয়। যেটা হয়তো এই হিটিং ইস্যু ফেস না করার অন্যতম কারণ।

ব্যাটারি

এবার আসি ব্যাটারি ব্যাকআপ প্রসঙ্গে। আগেই বলেছি, আমি মোবাইলে পিডিএফ পড়ি। তো, পিডিএফ পড়ার ক্ষেত্রেতো একটু সময় নিতেই হয়। শুধু পিডিএফ পড়ে আমি ১৬ ঘন্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ পেয়েছি। এছাড়া, রেগুলার ইউজ যেমন ইন্টারনেট ব্রাউজিং, গান শোনা, ছবি তোলার মত কাজে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে একটা দিন পার করে দিতে পারবেন।

৫.৯৯ ইঞ্চি ডিসপ্লের একটা ফোনে এই ব্যাটারি ব্যাকআপ আমাকে সন্তুষ্টি দিয়েছে। আর সারারাতে (অর্থাৎ ইউজ না করলে) ২% এর মত চার্জ যায়।

সর্বোপরি, ১৮ হাজার টাকা বাজেটে আমার কাছে এই ফোনটিকে বাজারের অন্যতম সেরা মনে হয়েছে। গত ৩ এপ্রিল আমার কাকার জন্য রেডমি নোট ৫ প্রো নিয়েছি। এবং গত এক সপ্তাহ যাবৎ আমি সেটিও ব্যবহার করতেছি। আশা করি অতি দ্রুত নোট ৫ প্রোর ও হ্যান্ডস অন রিভিউ দিতে পারবো।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,545 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *