আনঅফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ থেকে হতে পারে বিপদ!

মেসেজিং ও কলিং অ্যাপ হিসেবে হোয়াটসঅ্যাপ সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। আর তাই বাড়তি কিছু সুবিধা দিতে হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন মডিফাইড ভার্সন অনলাইনে পাওয়া যায়। এই আনঅফিসিয়াল ভার্সনগুলো অনেক আকর্ষণীয় ফিচার দিয়ে থাকে যেগুলো অফিসিয়াল ভার্সনে আপনি পাবেন না। তবে আকর্ষণীয় হলেও এসব মডিফাইড ভার্সনের অ্যাপ ব্যবহার করলে আপনার হোয়াটস্যাপ একাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে। 

এমন একটি আনঅফিসিয়াল মডিফাইড ভার্সন হচ্ছে ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ। সম্প্রতি বিশ্লেষকেরা এই  অ্যাপের একটি মোডিফাইড ভার্সনে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি হওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। এসব তথ্য ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে ব্যবহার হতে পারে।

ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ কী?

ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের একটি মোডিফাইড আনঅফিসিয়াল ভার্সন। অন্য সকল মডিফাইড হোয়াটসঅ্যাপ ভার্সনের মতোই এটিও জনপ্রিয় এর কিছু বাড়তি ফাংশনের জন্য যা অফিসিয়াল ভার্সনে পাওয়া যাবে না। ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপের ইন্টারফেস ও চেহারা পাল্টে ফেলতে বিভিন্ন অপশন দিয়ে থাকে, এছাড়াও এতে বাড়তি কিছু প্রাইভেসি ফিচারও রয়েছে। ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ আপনি প্লেস্টোরে পাবেন না, এটা ইন্সটল করতে হলে আপনাকে অন্যান্য বিভিন্ন অনিরাপদ জায়গা হতে ডাউনলোড করতে হবে।

ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ কেন অনিরাপদ?

ইয়োহোয়াটসঅ্যাপের একটি মডিফাইড ভার্সন ম্যালওয়্যার ছড়াতে ব্যবহার হয়েছে বলে জানিয়েছে ‘সিকিউর লিস্ট’। স্ন্যাপটিউব নামের একটি ওয়েবসাইটে অ্যাডের মাধ্যমে এই মডিফাইড ম্যালওয়্যারযুক্ত ভার্সনটি ছড়ানো হয়েছে। এটা শুধু ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করতেই মডিফাই করা হয় নি, ব্যবহারকারীদের অজান্তে বিভিন্ন প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনে সাইন আপ করে দিতেও মডিফাই করা হয়েছে।

এই পুরো অ্যাপটি ডিজাইন করা হয়েছে ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে। এটা শুধু যে ব্যবহার করছে তার জন্যই অনিরাপদ নয়, বরং তার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা সকল হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর জন্যই বিপজ্জনক। যখন কেউ এই অ্যাপটি ইন্সটল করে তার সাথে সাথে ট্রায়াডা ট্রোজান নামের একটি ম্যালওয়্যারও ইন্সটল হয়ে যায়। এই ট্রোজানের মাধ্যমে বিভিন্ন পেইড সাবস্ক্রিপশনে ব্যবহারকারীদের সাইন আপ করে দেয়া হয় যা থেকে সাইবার অপরাধীরাও ভাগ পেয়ে থাকে। এটা প্রমান করে যে সাইবার অপরাধীরা জনপ্রিয় অ্যাপগুলোর অনুরূপ ভার্সন তৈরি করে ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি করতে।

কেন আনঅফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ আপনার নিরাপত্তার জন্য হুমকি?

কেন এসকল আনঅফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ আপনার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ সেটি বুঝতে হলে আগে আমাদের বুঝতে হবে হোয়াটসঅ্যাপ অফিসিয়ালভাবে কীভাবে কাজ করে। 

হোয়াটসঅ্যাপ ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেল নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে এর সকল সার্ভিসের জন্য। এর মানে হল যখন আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন তখন আপনার অ্যাপটি হোয়াটসঅ্যাপের সার্ভারের সাথে একটি বিশেষ প্রোটোকল ব্যবহার করে তথ্য পাঠায়। এই প্রোটোকলটি সবার জন্যই উন্মুক্ত বলে ইয়োহোয়াটসঅ্যাপের মতো মডিফাইড অ্যাপগুলোও এই পদ্ধতিতে সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হলো এসব আনঅফিসিয়াল অ্যাপ ব্যবহার করতে হলে আপনার ডাটা দিয়ে লগিন করতে হয়। যখন আপনি অফিসিয়ালভাবে লগিন করেন তখন আপনি লগিনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য হোয়াটসঅ্যাপের কাছেই দেন। কিন্তু যখন আনঅফিসিয়াল অ্যাপ হতে লগিন করেন আপনি তখন জানতে পারছেন না হোয়াটসঅ্যাপ ছাড়াও এই তথ্য আপনি কাকে দিচ্ছেন। এজন্য এই অ্যাপগুলো সাইবার অপরাধীদের পছন্দের। 

আনঅফিসিয়াল অ্যাপগুলো স্ক্যামারদেরও পছন্দের তালিকায় শীর্ষে কেননা এসব অ্যাপ প্লেস্টোরের বাইরে হতে ডাউনলোড করতে হয়। তাই এটা সাইবার অপরাধীদের সুযোগ করে দেয় মডিফাইড ভার্সনের অ্যাপ আপলোড করে সেটার অনেক বেশি বিজ্ঞাপন দেবার মাধ্যমে অসংখ্য ব্যবহারকারীদের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার। ইয়োহোয়াটসঅ্যাপ যিনি তৈরি করেছেন তিনি সরাসরি এর সাথে জড়িত নন। সাইবার অপরাধীরা এই অ্যাপের জনপ্রিয়তা বুঝে অ্যাপটি মডিফাই করে ছড়িয়ে দিয়েছে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

👉 হোয়াটসঅ্যাপ এর নতুন ৮টি ফিচার

আনঅফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে কী কী সমস্যায় পড়তে পারেন এবং তা হতে বাঁচার উপায়

প্রথম এবং সবথেকে খারাপ যে সমস্যায় পড়তে পারেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে সম্পূর্ণভাবে। এরপর কি হতে পারে তা সম্পূর্ণ হ্যাকারের উপর নির্ভর করে। হ্যাক হবার পড়ে আপনি নিজের অ্যাকাউন্টে আর প্রবেশ করতে পারবেন না এবং আপনার সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারের হাতে চলে যাবে। আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পরিচয় লুকিয়ে আপনার পরিচিত মানুষদের কাছ হতে আপনার নামে বিভিন্ন সুবিধা নেবার চেষ্টাও করতে পারে। 

ট্রায়াডা ট্রোজান আপনার ফোনে এসএমএস পাঠানো এবং রিসিভের অনুমতিও নিয়ে নেয়। এর মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন সাবস্ক্রিপশনে আপনার অজান্তেই আপনার নামে সাইন আপ করে নিতে পারে। সুতরাং এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এর থেকে বাঁচতে হলে শুধুমাত্র অফিসিয়াল জায়গা হতে অ্যাপ ইন্সটল করতে পারেন। প্লেস্টোর তাদের সার্ভারে থাকা সকল অ্যাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারে। তাই প্লেস্টোর ছাড়া অন্য কোন উৎস হতে অ্যাপ না ইন্সটল করাই ভালো। এছাড়া ফোনে থাকা সকল অ্যাপের বিভিন্ন পারমিশন চেক করে ব্লক করেও দিতে পারেন কোনটি নিয়ে সন্দেহ হলে। আর আনঅফিসিয়াল অ্যাপগুলো বিভিন্ন বাড়তি সুবিধা দিলেও ব্যবহার না করাই ভালো। তাহলেই আপনার ফোনকে আপনি নিরাপদ রাখতে পারবেন সকল ম্যালওয়্যার হতে।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,548 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *