ডাটা এন্ট্রি করে আয় করার উপায়

ইন্টারনেট হচ্ছে ডাটা বা তথ্যের বিশাল এক সমারোহ। আর এই বিশাল পরিমাণ ডাটা সঠিকভাবে সাজানো বা বিন্যস্ত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই কাজকেই বলা হয় ডাটা এন্ট্রি। ভাল ব্যাপার হলো, ডাটা এন্ট্রির কাজ করে আয় করা সম্ভব। ঘরে বসেই যে-কেউ ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবে। এই পোস্টে আমরা জেনে নিবো ডাটা এন্ট্রি কি, ডাটা এন্ট্রি করতে কি কি লাগে, ডাটা এন্ট্রি করে আয় করার নিয়ম সম্পর্কে সকল বিস্তারিত।

ডাটা এন্ট্রি কি? What is Data Entry?

ডাটা এন্ট্রি কি ধরনের কাজ, তা এর নাম থেকেই ধারণা পাওয়া যায়। মূলত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ডাটা ইনপুট করার কাজকে বলা হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি। এই ডাটা এন্ট্রি বিভিন্ন ডিভাইসে সম্পন্ন করা যেতে পারে।

কোনো টেক্সট ইনপুট থেকে শুরু করে কোনো প্রোগ্রামের ডাটা স্প্রেডশিটে সরবরাহ করা পর্যন্ত সকল কাজ ডাটা এন্ট্রির অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও ডকুমেন্ট স্ক্যান করা বা অডিও ফাইলকে লেখায় পরিণত করাকেও ডাটা এন্ট্রির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের ডাটা এন্টার বা ইনপুট এর কাজই ডাটা এন্ট্রি হিসেবে বিবেচিত হবে।

ডাটা এন্ট্রি করতে কি লাগে

ডাটা এন্ট্রি করে বলতে গেলে যে কেউ আয় করতে পারে, এটিই ডাটা এন্ট্রি করে আয়ের সবচেয়ে ভালো বিষয়। যে কেউ খুব সহজে ডাটা এন্ট্রি কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারে। ডাটা এন্ট্রি করতে যেসব বিষয় সম্পর্কে দক্ষতা থাকা জরুরিঃ

  • দ্রুত টাইপ করার দক্ষতা
  • ইন্টারনেট থেকে তথ্য খুঁজে বের করা
  • বেসিক ইংরেজি জ্ঞান
  • কাজ বুঝে নেওয়ার দক্ষতা
  • ওয়ার্ড ও এক্সেল ব্যবহারের জ্ঞান

ডাটা এন্ট্রি করে আয় | ডাটা এন্ট্রি ইনকাম

একাধিক ডাটা এন্ট্রির কাজ করে আয় করা সম্ভব। ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপলপারআওয়ার এর মতো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে ডাটা এন্ট্রির কাজ করা যাবে। প্রচুর কোম্পানি দৈনিক এসব ওয়েবসাইটে ডাটা এন্ট্রির কাজের জন্য লোক খোঁজে। আপনি যদি টাইপিংয়ে যথেষ্ট দক্ষ হোন ও নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে জানেন, তবে খুব সহজে প্রচুর ডাটা এন্ট্রির কাজ পেতে পারেন।

এছাড়াও একই ক্লায়েন্ট থেকে ডাটা এন্ট্রির কাজ পাওয়ার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা থাকে। তাই মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মসমূহে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডাটা এন্ট্রির কাজ করে আয় করা যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডাটা এন্ট্রি করে আয় করার কিছু উল্লেখযোগ্য উপায়, মাধ্যম ও ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত।

ক্যাপচা এন্ট্রি

ক্যাপচা দেখে দেখে তাতে থাকা লেখা ইনপুট করার কাজই হচ্ছে ক্যাপচা এন্ট্রি। এটি ডাটা এন্ট্রির কাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সহজ বলে যেকেউ এটি করতে পারে। তবে সহজ হওয়ায় এই কাজ পাওয়া অধিক কঠিন।

ক্যাপচা এন্ট্রির কাজ করে আয়ের বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। ক্যাপচা এন্ট্রি করে আয়ের পরিমাণ নির্ণয় করে টাইপিং স্পিডের উপর। যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে ক্যাপচা এন্ট্রির ক্ষেত্রে কাজ পাবেন কিনা, তা নির্ভর করে আপনার টাইপিং স্পিডের উপর। তাই ক্যাপচা এন্ট্রি থেকে আয় করতে হলে ভালো টাইপিং স্পিড থাকা আবশ্যক।

ইমেইল প্রসেসিং

ইমেইল রিডিং বা ই-মেইল প্রসেসিং একটি জনপ্রিয় ডাটা এন্ট্রির ধরন। এই ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদত্ত মেইলসমূহ প্রসেস করতে হয়। ই-মেইল প্রসেসিং এর কাজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সময় কাজের সাথেই কিভাবে কি করতে হবে তা উল্লেখ করা থাকে। এই কাজ হতে পারে ইমেইল গুছিয়ে লেখা কিংবা প্রদত্ত ইমেইল এড্রেসসমূহে মেইল ফরওয়ার্ড করা।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

এই কাজ করতেও ইংরেজি ভাষা বুঝতে ও লিখতে পারার দক্ষতা থাকতে হবে। বিশাল অংকের ইমেইল নিয়ে কাজ করতে হয় বলে অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তবে ধৈর্যসহকারে কাজ করলে ই-মেইল প্রসেসিং করে বেশ ভালো মানের আয় সম্ভব।

ওয়েব সিস্টেম

বিভিন্ন ক্যাটালগ থেকে ডাটা কালেক্ট করে ওয়েব সিস্টেমে সংগ্রহকৃত তথ্য লেখা ডাটা এন্ট্রির অন্যতম কাজ। বিভিন্ন ধরনের ডাটা বা তথ্য লেখা এই ক্যাটাগরির কাজের অন্তর্ভুক্ত। প্রদত্ত সোর্সকে কাজে লাগিয়ে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট বা এক্সেল স্প্রেডশিটে তথ্য সাজানো হয়।

ডাটা এন্ট্রি করে আয় করার উপায়

ডাটা ফরম্যাটিং

ডাটা ফরম্যাটিং মানে প্রদত্ত ডাটাকে সঠিকভাবে ফরম্যাট অর্থাৎ সাজানোকে বুঝানো হয়েছে। এই ধরনের কাজে বিশাল ডাটাকে সঠিক ও সুন্দরভাবে সাজাতে হয়। আয়ের পরিমাণ অধিক হওয়ার পাশাপাশি শ্রমের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয় ডাটা ফরম্যাটিং এর কাজের ক্ষেত্রে।

কপি করে পেস্ট করা

নাম শুনেই বুঝে থাকবেন যে এটি সবচেয়ে সহজ ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজ। এই কাজে শুধুমাত্র এক ফাইল থেকে অন্য ফাইলে কোনো লেখা কপি করে (ওয়ার্ড ডকুমেন্ট বা এক্সেল স্প্রেডশিটে) পেস্ট করতে হয়। সাধারণ ইংরেজি বুঝার ক্ষমতা আছে এমন যে কেউ এই সহজ কাজ করে আয় করতে পারেন।

👉 অনলাইনে ইনকাম করার সেরা ১০ উপায়

ইমেজ টু টেক্সট

এই কাজের নাম শুনেই এটি কি ধরনের কাজ তা বুঝা যায়। মূলত কোনো ছবি, যেমনঃ স্ক্রিনশট, ডকুমেন্ট, ইত্যাদি থেকে কোনো লেখা ওয়ার্ড ডকুমেন্ট বা এক্সেল স্প্রেডশিটে লিখতে হয় এই কাজের ক্ষেত্রে। সাধারণ শব্দসমূহের পাশাপাশি নতুন শব্দের দেখা পেয়ে যেতে পারেন এই কাজ করতে গিয়ে।

ফরম্যাটিং ও কারেকশন

কোনো ধরনের লেখাকে ফরম্যাটিং করা বা ভুলসমূহকে সংশোধন করা ডাটা এন্ট্রির অন্যতম পরিচিত অংশ। বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট ফরম্যাটিং বা কারেকশন এর কাজ দেওয়া হতে পারে এই ডাটা এন্ট্রির কাজের ক্ষেত্রে। লেখার ভুলসমূহ, যেমনঃ গ্রামারে ভুল, শব্দে ভুল, ইত্যাদি সংশোধন করা এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।

👉 ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়

অডিও টু টেক্সট

কোনো অডিও শুনে শুনে তা ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড লেখা ডাটা এন্ট্রির আরেকটি ক্যাটাগরি। এতে সাধারণত কোনো বিষয় ইংরেজিতে শুনে তা লিখতে হয়, তাই এই কাজ করতে হলে অবশ্যই ইংরেজি ভাষা শোনার ও শুনে লিখার প্রখর জ্ঞান প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজগুলোর জন্য বেশ অংকের অর্থ পাওয়া যায়।

👉 ডাটা এন্ট্রি জব করার ৯টি ওয়েবসাইট

ডাটা ক্যাপচারিং

বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করাকে বলা হয় ডাটা ক্যাপচারিং। এসব তথ্য যথাযথভাবে ওয়ার্ড বা এক্সেল স্প্রেডশিটে সংগ্রহ করা হলো এই ধরনের কাজ।

👉 ফেসবুক থেকে আয় করার উপায়

ক্যাপশনিং

কোনো ছবির বা ভিডিও এর টাইটেল লিখাকে বলা হচ্ছে ক্যাপশনিং। এই ধরনের কাজ করে আয় করা গেলেও তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায়না এই ধরনের কাজ। তাই অন্য ডাটা এন্ট্রির কাজ বা অন্য যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং কাজের পাশাপাশি ক্যাপশনিং এর কাজ করা শ্রেয়।

কাস্টমাইজড রিপোর্ট

বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টের রিপোর্ট তৈরী করা ডাটা এন্ট্রি করে আয়ের অন্যতম একটি উৎস। মূলত ক্লায়েন্ট প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরী করে কাস্টমাইজড রিপোর্ট প্রদান করতে হয় এই কাজে। এই ধরনের কাজে শ্রম কিছুটা বেশির পাশাপাশি আয়ের পরিমাণ ও বেশ ভালো।

ডাটা এন্ট্রি করে আয় এর ক্ষেত্রে বেশ ধৈর্যের প্রয়োজন। ডাটা এন্ট্রি করে শুরুর দিকে কাজ পাওয়া বা ভালো আয় করা বেশ কঠিন। তবে ধৈর্য সহকারে কাজ চালিয়ে যেতে পারলে ডাটা এন্ট্রি করেও ভালো আয় সম্ভব। তবে হ্যাঁ, একথা সত্যি যে ডাটা এন্ট্রি করার সুযোগ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে, কেননা সবকিছু অটোমেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি করে থাকেন তাহলে এখন উচিত হবে অন্য কোনো দক্ষতা শিখে নেয়া।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

3 comments

  1. Chanchal Kumar Kanjilal Reply

    Very very good and helpful content for us. Thank you very much.

    • আরাফাত বিন সুলতান Reply

      You are most welcome! Please be with us for more helpful content…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *