লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এর নাম আমরা কমবেশি সবাই হয়ত শুনেছি। সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে উইন্ডোজের মত জনপ্রিয় না হওয়ায় অনেকের মাঝে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে লিনাক্স ভিত্তিক ওএস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণার অভাব রয়েছে। এই পোস্টে আমরা মূলত লিনাক্স ভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কথা বলব।
লিনাক্স ভিত্তিক মূলধারার অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ফিচার ও সিকিউরিটির অনন্য সংমিশ্রণ থাকে। এগুলো সাধারণত ফ্রি ও ওপেন-সোর্স হয়ে থাকে। মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ও অ্যাপল মাকওএস এর অসাধারণ বিকল্প হতে পারে লিনাক্স ভিত্তিক ওএসগুলো। তবে লিনাক্স তাদের কোড ও ভিত্তি আলাদা হওয়ায় চিরাচরিত উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিংস সিস্টেম থেকে এদেরকে আলাদা মনে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক লিনাক্স কি ও কিভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। এই পোস্টে জানবেনঃ
- লিনাক্স কি
- লিনাক্স এর সুবিধাসমুহ
- লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন কি
- ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট কি
- লিনাক্স ওএসে সফটওয়্যার ইন্সটল করা
- লিনাক্স কমান্ড লাইন
লিনাক্স কি
টেকনিক্যালি, লিনাক্স হচ্ছে একটি “কার্নেল”, যা অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যারের প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী অংশ। লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয় যেমন উবুন্টু, কুবুন্টু, রেডহ্যাট প্রভৃতি। এমনকি এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমও লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি। যখন আমরা “লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম” কথাটি বলছি তখন আমরা মূলত লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি অপারেটিং সিস্টেমকেই বোঝাচ্ছি।
কার্নেল হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের সেই অংশ যা ডিভাইসের হার্ডওয়্যার এবং অন্যান্য সফটওয়্যার কম্পোনেন্টের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। যেমন, আপনি যদি আপনার ল্যাপটপের ক্যামেরা অ্যাপ ওপেন করেন তখন কার্নেল আপনার ক্যামেরা অ্যাপ থেকে আপনার নির্দেশনা নিয়ে ক্যামেরার হার্ডওয়্যারের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর ক্যামেরা চালু হলে স্ক্রিনে তা দেখায়। এখানে অবশ্যই অন্যান্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের কাজ হয়। এটি একটি সরল উদাহরণ।
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম পরিবার এতো বড় যে এটি নিয়ে সারাদিন আলোচনা করা যাবে। লাইট বালব থেকে শুরু করে আগ্নেয়াস্ত্র, ল্যাপটপ থেকে বিশাল কম্পিউটার সার্ভার পর্যন্ত প্রায় যেকোনো ধরনের কম্পিউটার সিস্টেম চালনায় সক্ষম লিনাক্স। ফোন থেকে শুরু করে রেফ্রিজারেটর পর্যন্ত, দৈনন্দিন ব্যবহার্য সকল স্মার্ট গ্যাজেট লিনাক্স দ্বারা চালানো সম্ভব। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ প্রথম লিনাক্স সংস্করণ মুক্তি পায়।
লিনাক্স এর সুবিধা কি?
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করার পক্ষে অনেক যুক্তি রয়েছে। এর মধ্যে লিনাক্স ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ হলোঃ
- ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়
- অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমসমূহ থেকে ম্যালওয়্যার থেকে অধিক সুরক্ষিত
- অন্যান্য কম্পিউটার অপারেটং সিস্টেমের চেয়ে লিনাক্সে অধিক আপডেট পাওয়া যায়
- লিনাক্সের মূলে কাস্টমাইজেশন থাকায় যেকোনো ফিচার এড করা বা ডিলিট করা অপেক্ষাকৃত সহজ
- অসংখ্য ডিস্ট্রিবিউশন থাকায় নিজের সুবিধামত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বেছে নেওয়া যায়
- ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফোরামের সুবাদে অসাধারণ কমিনিউটি সাপোর্ট পাওয়া যায়
- ডিস্ট্রিবিউশন বা সফটওয়্যার যাতে প্রয়োজনের বাইরে কোনো ব্যক্তিগত ডাটা কালেক্ট করতে না পারে তা নিশ্চিত করে লিনাক্স
- বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ও ওয়ার্কস্টেশনে হাই পারফরম্যান্স প্রদানে সক্ষম
- নেটওয়ার্কিং সম্পর্কিত সুযোগসমূহ লিনাক্সে ব্যবহার অধিক সুবিধাজনক
- লিনাক্স ইন্সটল করা বেশ সহজ; এমনকি ইন্সটল না করে ইউএসবি ড্রাইভ (পেনড্রাইভ) থেকেও লিনাক্স ব্যবহার করা যায়
🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥
লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন কি
লিনাক্স কার্নেল অনেকটা ইঞ্জিনের মত কাজ করে, যেখানে ডিস্ট্রিবিউশন হলো একটি গাড়ি যা এটি দ্বারা চালিত। লিনাক্স এর জন্য শতাধিক ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে। একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হতে পারে আপনার জন্য পরিপূর্ণ একটি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। প্রতিটি ডিস্ট্রিবিউশন আলাদা কাজ ও ব্যবহারকারীর জন্য নির্মিত। প্রচলিত কিছু লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হলোঃ
- লিনাক্স মিন্টঃ ব্যবহারে কম কম্পিউটার দক্ষতা প্রয়োজন, ইন্সটল করা সহজ ও উইন্ডোজের মত দেখতে ডেস্কটপ রয়েছে
- ডেবিয়ানঃ বিনামূল্যে ট্রু লিনাক্স এক্সপেরিয়েন্স দিতে সক্ষম এই ডিস্ট্রিবিউশন
- উবুন্তুঃ একটি মডার্ড লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, যা খুব সহজে ইন্সটল ও ব্যবহার করা যায়
- ফেডোরাঃ সবচেয়ে দ্রুত ফিচার দিয়ে আপডেটেড থাকা লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন
- সেন্টওসঃ কমার্সিয়াল লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত
- মাঞ্জারোঃ আর্ক লিনাক্স এর উপর ভিত্তি করে নির্মিত মাঞ্জারো ব্যবহারে সুবিধা ও প্রায় আপডেট পাওয়া যায়
- আর্কঃ বেশ শক্তিশালী, কিন্তু নতুন ব্যবহারকারীদের কাছে কঠিন মনে হতে পারে
- এলিমেন্টারিঃ ম্যাক এর মত দেখতে ইন্টারফেস যাদের পছন্দ, তাদের জন্যেটি আদর্শ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন
সংক্ষেপে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনকে লিনাক্স ডিস্ট্রো ও বলা হয়। আপনি যদি লিনাক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম আপনার কম্পিউটারে চালাতে চান তাহলে উবুন্টু দিয়ে শুরু করতে পারেন। এছাড়া উপরে উল্লিখিত (বা এর বাইরে) কোনো ডিস্ট্রো খুঁজে নিতে পারেন।
ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট কি
ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হচ্ছে একটি বান্ডল যেখানে বিভিন্ন GUI কম্পোনেন্ট থাকে। GUI হচ্ছে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস। আপনি পিসিতে যে আইকন, ডেস্কটপ উইজেট, ওয়ালপেপার, মেনু, প্রভৃতি দেখেন এই সবগুলো নিয়েই ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট গঠিত হয়।
কিছু লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনে শুধুমাত্র একটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট থাকে। তবে সফটওয়্যার রিপজিটরি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট ইন্সটল সম্ভব। কিছু কমন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট হলো সিনামন (Cinnamon), জিনোম (GNOME), ইউনিটি, কেডিই (KDE), এনলাইটেনমেন্ট, এক্সএফসিই (XFCE), ইত্যাদি।
সিনামন অনেকটা উইন্ডোজ ৭ এর মত দেখতে একটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট। এটিতে বোটমে একটি প্যানেল, একটি মেন্যু, সিস্টেম ট্রে আইকন ও কুইক লঞ্চ আইকন রয়েছে।
👉 উইন্ডোজ ১০ এবং উইন্ডোজ ১১ এর মধ্যে পার্থক্য কি? কোনটি বেশি ভাল?
জিনোম ও ইউনিটি প্রায় একই ধরনের দুইটি ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট। এই দুইটি মডার্ন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন সিলেক্টের ক্ষেত্রে লঞ্চার আইকন ও ড্যাশবোর্ড স্টাইলের ডিসপ্লে ব্যবহার করে। এছাড়াও কোর অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকছে থিম এর সাথে ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এর ইন্টিগ্রেশন আরো উন্নত করার সুযোগ।
অন্যদিকে কেডিই (KDE) হলো একটি ক্লাসিক ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট যেখানে বিভিন্ন ধরনের কাস্টম ফিচার ও কো অ্যাপ্লিকেশন থাকে। এসব ফিচার ও অ্যাপ ইচ্ছামত কাস্টমাইজ করার সুযোগ রয়েছে। এনলাইটেনমেন্ট, এক্সএফসিই, ইত্যাদি হলো লাইট-ওয়েট ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট যাতে প্যানেল ও মেন্যু থাকে।
লিনাক্সে সফটওয়্যার ইন্সটল করার নিয়ম
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে সফটওয়্যার ইন্সটল করার নিয়ম উইন্ডোজের মত নয়। লিনাক্সে প্যাকেজ ম্যানেজার রিপজিটরি অ্যাকসেস করে যাতে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার থাকে। মূলত এই প্যাকেজ ম্যানেজারকে অ্যান্ড্রয়েড প্লে স্টোর বা মাইক্রোসফট স্টোর এর সাথে তুলনা করা চলে। প্যাকেজ ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করে যেকোনো সফটওয়্যার, খোঁজা, ইন্সটল, আপডেট, এমনকি রিমুভ ও করা যায়।
তবে ডিস্ট্রিবিউশন ভেদে প্যাকেজ ম্যানেজার ভিন্ন হয়ে থাকে। অবশ্য কিছু কমন কমান্ড লাইন টুল প্রায় সব ডিস্ট্রিবিউশনে কাজ করে। যেমনঃ উবুন্তু, লিনাক্স মিন্ট ও ডেবিয়ান apt-get প্যাকেজ ম্যানেজার ব্যবহার করে। আবার ফেডোরা ও সেন্টওএস ইয়াম (yum) প্যাকেজ ম্যানেজার ব্যবহার করে। অন্যদিকে আর্ক (Arch) ও মাঞ্জারোতে প্যাকম্যান (Pacman) এর দেখা মিলবে।
লিনাক্স শেল
বর্তমানে মডার্ন ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এর কল্যাণে লিনাক্স এ বেশ পরিবর্তন আসলেও এর মূলে কিন্তু রয়েছে শেল সেশন। ম্যাকওএস এর ভাষায় শেল কে বলা হয় টার্মিনাল ও উইন্ডোজ এ বলা হয় কমান্ড প্রোম্পট।
👉 এনক্রিপশন কী? এটা কী কাজে লাগে?
মডার্ন লিনাক্স ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট এর গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করে সব কাজ সারা গেলেও লিনাক্স সম্পর্কিত বেশিরভাগ অনলাইন এডুকেশন কিন্তু এখনো শেল এর উপর নির্ভর করে। শেল এর ব্যবহার সকল ডিস্ট্রিবিউশনে একই হওয়ার ফলে সকল ডিস্ট্রিবিউশনে শেল ভালোভাবে কাজ করে। লিনাক্স শিখতে চাইলে শেল এর ব্যবহার অপরিহার্য। শেল এ লেখা বিভিন্ন কমান্ড লাইনের মাধ্যমে লিনাক্সে যেকোনো কিছু করা সম্ভব।
লিনাক্স সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
কিছু লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন উইন্ডোজ বা ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের মতো ইউজার ফ্রেন্ডলি নয়। তবে অধিকাংশ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার যেকোনো সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জন্য তেমন একটা কঠিন নয়।
অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে গেমিংয়ের জন্য লিনাক্স খারাপ নয়। কিন্তু এখনো সকল গেমের সাপোর্ট না থাকায় লিনাক্সে গেমিং তেমন একটা জনপ্রিয় নয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিনাক্স অধিক দ্রুত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রচুর সার্ভিস চালু রেখে অসংখ্য ফিচার কোনো সমস্যা ছাড়াই ব্যবহার করতে চাইলে লিনাক্স একটি আদর্শ পছন্দ।
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।