চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যা জানা দরকার

বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়। আপনি যেখানেই যান না কেন আপনি লোকদের তাদের চাকরি ছেড়ে দেওয়া এবং তাদের ক্যারিয়ার নিজের হাতে নেওয়ার গল্প শুনতে পান। এক্ষেত্রে আপনারও অনেক সময় মাথায় এটি চিন্তা আসে যে আপনারও একই কাজ করা উচিত হবে কিনা। কেননা কে তাদের নিজস্ব বস হতে চায় না এবং নমনীয় সময়সূচী রাখতে চায় না?

তবে আপনার পেশা পরিবর্তন করার আগে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

অস্থিতিশীল আয়

একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে সবচেয়ে বেশি যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে সেটি হল অস্থিতিশীল আয়। এটাই একজন ফ্রিল্যান্সার এবং প্রথাগত কর্মজীবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য। একজন কর্মজীবী ব্যক্তি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট স্যালারি পেয়ে থাকে কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সার প্রতি মাসে তার ক্লায়েন্ট সংখ্যা এবং সে কতটুকু প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে এবং প্রতি প্রজেক্ট অনুযায়ী তার চার্জ হিসেবে মাসে ইনকাম করবে। 

আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হবার জন্য পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে আপনাকে এই রিস্ক এবং আর্থিক অস্থিতিশীলতা সহ্য করার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। এমনকি অনেক অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার যারা অনেক বছর যাবত ফ্রিল্যান্স নিয়ে কাজ করছে তারাও অনেক সময় আর্থিক খাতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। এই সমস্যার ঝুঁকি কমানোর জন্য আপনাকে প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং একটি সহকারী পেশা হিসেবে শুরু করতে হবে। এর ফলে আপনি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং থেকে অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হয়ে যান তাহলে আপনি এটিকে প্রধান পেশা হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের চাপ 

প্রায় সকল ধরনের ফ্রিল্যান্সারই একটি ব্যাপার নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ জানায়। সেটি হলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের চাপ। এক মাসে এমন হতে পারে যে আপনি কাজ করতে করতে বিশ্রাম নেয়ারও সময় পাচ্ছেন না কিন্তু অন্য মাসে দেখা গেল এমন হয় যে আপনি কোন কাজই খুঁজে পাচ্ছেন না। সৌভাগ্যক্রমে এটি একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা। কেননা বর্তমানে অনেক গুলো প্রকল্প পরিচালনার সরঞ্জাম রয়েছে যা আপনাকে আপনার কাজগুলো সংগঠিত করতে এবং আপনার উৎপাদনশীলতা সর্বাধিক করার জন্য সময় নষ্ট করা এড়াতে সহায়তা করতে পারে। 

আপনি এই টুল ব্যবহার করে আপনার লক্ষ্য এবং জীবনযাত্রার উপর নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সময়সূচী তৈরি করে নিতে পারবেন। এছাড়া যে সকল ক্লায়েন্ট আপনাকে দ্রুততম সময়ে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার কথা বলবে আপনি তাদের কাছ থেকে এক্সট্রা চার্জ নিতে পারবেন। পাশাপাশি যারা আপনার সিডিউল করার জন্য ডেডলাইন পিছিয়ে নিতে পারবে তাদেরকে সামান্য ডিসকাউন্ট দিতে পারেন। 

অতিরিক্ত সুবিধা?

একজন চাকরিজীবী হিসেবে আপনি অতিরিক্ত অনেক সুবিধা যেমন পেইড লিভ, হেলথ ইনসুরেন্স, রিটায়ার্মেন্ট প্লান এবং আরো অনেক কিছু পেয়ে থাকেন। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি এই সুবিধা পাবেন না কেননা ক্লায়েন্টের সাথে আপনার কাজ করা পর্যন্ত অল্প সময় সাক্ষাৎ হবে। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে তখন তাদের সাথে আপনাদের সম্পর্কও শেষ হয়ে যাবে। আপনি কখন এবং কত সময় ধরে ছুটি নিবেন সেটি আপনার উপর নির্ভর করবে। এছাড়া রিটায়ারমেন্ট এর পরে আপনার প্লান আপনার নিজে থেকেই করতে হবে। 

প্রচুর প্রতিযোগিতামূলক ইন্ডাস্ট্রি 

ফাইভার, আপওয়ার্ক, এবং ফ্রিল্যান্সারের মত অনেক প্লাটফর্ম আপনার ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্ট এর মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং কাজ করা অনেক বেশি সহজ করে তুলেছে। এগুলো ফ্রিল্যান্সিং করা অনেক সহজ করে দেয়ার কারণে বাকি সবার থেকে আলাদা হওয়া তুলনামূলক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সকল ওয়েবসাইটের ranking সিস্টেমের কারণে অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা বেশিরভাগ সময় নতুন প্রজেক্ট পান, যেখানে নতুন ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

👉 ফ্রিল্যান্সিংয়ের কিছু সুবিধা যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে

বিচ্ছিন্নতা এবং একাকিত্ব 

সময়ের সাথে সাথে একজন ফ্রিল্যান্সারের যে বিচ্ছিন্নতা আসে তা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। একজন কর্মজীবী ব্যক্তি হিসেবে আপনি প্রতিদিন আপনার সহকর্মীদের সাথে কাজ এবং কাজ ব্যতীত অন্যান্য অনেক বিষয়ে কথা বলতে পারেন যা আপনার সামাজিক চাহিদা পূরণ করে থাকে। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে বেশিরভাগ সময়ই বাড়িতে একা কাজ করতে হবে। 

বর্ধিত দায়িত্ব 

আপনার নিজের বস নিজে হওয়া একটি দুর্দান্ত অনুভূতি, তবে এটি বিনামূল্যে আসে না। যদিও আপনি আপনার সময় এবং আয়ের উপর বৃহত্তর নিয়ন্ত্রণ উপভোগ করতে পারবেন, তবে আপনাকে নতুন ক্লায়েন্টও খুঁজতে হবে, তার সাথে চুক্তি করতে হবে, আপনার নিজস্ব সময়সীমা সেট করতে হবে এবং কত চার্জ করবেন তা নির্ধারণ করা সহ আরো অনেক কিছু নিজের দ্বারাই করতে হবে। 

আপনাকে আপনার নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে, নিজেকে মার্কেটে এভেলেবল রাখতে হবে, ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করতে হবে, আপনার পরিকল্পনাগুলো পরিচালনা করতে হবে এবং এর মধ্যে আপনার দক্ষতা আপডেট করতে হবে। আপনার কাছে যদি এ সকল কাজ খুব বেশি চাপের মনে হয় তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য নয়। আপনি সাধারণ চাকরির জন্য আরও বেশি উপযুক্ত। 

মূল্য দক্ষতা অমিল 

ফ্রিল্যান্স প্রজেক্টের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। যদি আপনার ফি আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা স্তরের সাথে উপযুক্ত না হয় তবে ক্লায়েন্ট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে আপনার অগ্রাধিকার হলো একটি শক্ত পোর্টফোলিও তৈরি করা এবং ইতিবাচক ক্লায়েন্ট রিভিউ পাওয়া।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

freelancing

নিজের সরঞ্জাম নিজে কেনা

একজন চাকরিজীবী ব্যক্তি হিসেবে আপনার নিয়োগকর্তা আপনাকে আপনার কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। তবে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনাকে সবকিছু নিজে থেকেই কিনতে হবে। এর অর্থ হল আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার সময় একটি বড় খরচ হবে। এবং এই খরচ নির্ভর করবে আপনি কি ধরনের ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গঠন করতে চান তার উপরে। 

যদি আপনার কাজটি এমন হয় যে এটির জন্য প্রচুর কম্পিউটিং শক্তি দরকার হয় তাহলে আপনাকে আরো শক্তিশালী কম্পিউটার ক্রয় করতে হবে। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হন তবে আপনাকে একটি ভাল মনিটর কিনতে হবে যা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। এছাড়া আপনাকে যদি একটি হোম অফিস সেটআপ করতে হয় তাহলে এর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ অর্থ খরচ হবে। 

বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রে একটি স্থির বেতনের সাথে কাজ করা ফ্রিল্যান্সার হওয়ার চেয়ে ভালো হতে পারে এবং এতে কম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আপনি যদি উপরে বর্ণিত সকল ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারেন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য আরো বেশি লাভজনক হতে পারে। কিন্তু এই ঝুঁকিগুলো মোকাবেলা করার জন্য আপনাকে এমন কিছু দক্ষতা শিখতে হবে যা আপনি একজন কর্মজীবী হিসেবে শেখার কোন প্রয়োজন বোধ করেননি।

আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য তত সহজ হতে থাকবে। ফ্রিল্যান্সিং কাজের ঝুঁকি সম্পর্কিত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,549 other subscribers

3 comments

  1. Md. Murshed Alam Reply

    আপনাদের এই আর্টিকেলটি আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী মনে হয়েছে। উপদেশগুলো বিবেচনায় রাখলে অনেকের উপকার হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *