জিমেইল ব্যাকআপ করার সহজ উপায়

বর্তমান সময়ের ডিজিটাল যুগে আমরা অনেক বৃহত্তর পরিসরে ডাটা সংগ্রহ করে থাকি। আমাদের প্রত্যেকের ইমেইল এর ইনবক্সগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। ইমেইল সেবাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি সেবা হলো জিমেইল। গুগল এই জিমেইল ব্যবহারকারীদের সাধারণত ১৫ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ বিনামূল্যে প্রদান করে থাকে। ১৫ জিবি স্টোরেজ অনেকের কাছে বেশি মনে হলেও এটি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যেতে পারে। কেননা গুগলের এই ১৫ জিবি স্টোরেজ তাদের সকল সেবার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

এছাড়াও এই স্টোরেজ এটাচমেন্ট, ডকুমেন্ট এবং অনেক বছর ধরে আসা পুরানো ইমেইলের কারণে অনেক দ্রুত ভরে যেতে পারে। যদি আপনার স্টোরেজ সীমা অতিক্রম হওয়ার পর্যায়ে চলে যায় তাহলে আপনার ইমেইলগুলো সুরক্ষিত রাখার জন্য জিমেইল ব্যাকআপ রাখা খুব ভাল একটি সমাধান হতে পারে। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কিভাবে জিমেইলে ব্যাকআপ করা যাবে এবং জিমেইল ব্যাকআপ করলে কি সুবিধা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

জিমেইল স্টোরেজ সম্পর্কে ধারনা 

জিমেইল ব্যাকআপ করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমাদের সবার প্রথমে জিমেইল স্টোরেজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আপনার জিমেইল স্টোরেজ বলতে মূলত ইমেইল, এটাচমেন্ট এবং গুগল ড্রাইভে থাকা ফাইল সব কিছুকেই বুঝায়। গুগল সাধারণত ১৫ জিবি পর্যন্ত ডাটা স্টোরেজ বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে। যদি আপনি যদি এই লিমিট অতিক্রম করে ফেলেন তাহলে আপনার অতিরিক্ত স্টোরেজের জন্য বাড়তি টাকা দেয়ার প্রয়োজন পড়বে। গুগল আলাদা আলাদা স্টোরেজের জন্য আলাদা করে টাকা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে ১০০ জিবি স্টোরেজ প্রতি মাসে ২ ডলার, ২০০ জিবি স্টোরেজ প্রতি মাসে ৩ ডলার এবং ২ টেরাবাইট প্রতি মাসে ১০ ডলারের মাধ্যমে ক্রয় করে নিতে হবে।

আপনার জিমেইল ব্যাকআপ করা কেন প্রয়োজন? 

বর্তমান সময়ে জিমেইলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান প্রদান করা হয়ে থাকে। অফিসিয়াল থেকে শুরু করে একান্তই নিজের বিভিন্ন ইনফরমেশন আমরা জিমেইল এর মাধ্যমে একে অপরের সাথে শেয়ার করে থাকি। এসকল দিক বিবেচনা করে জিমেইল ব্যাকআপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। নিচে এর আরো কিছু কারণ দেওয়া হলো- 

  • আপনার জিমেইলে একে অপরের সাথে মূল্যবান কথোপকথন, নথি এবং অনেক ফাইল এটাচমেন্ট রয়েছে। ব্যাকআপ করার ফলে আপনি যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে ফেলছেন না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়। 
  • আপনার কাছে থাকা ইমেইলগুলো দক্ষতার সাথে ব্যাকআপ করার মাধ্যমে আপনি আপনার জিমেইল স্টোরেজ ফ্রি ১৫ জিবি এর সীমার মধ্যে রাখতে পারবেন। যার ফলে আপনাকে অতিরিক্ত স্টোরেজ কেনার জন্য বাড়তি খরচ করতে হবে না। 
  • ডেটা ব্রিচ কিংবা আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টে অপ্রত্যাশিত যেকোনো ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে ব্যাকআপ করা থাকলে এটি নিশ্চিত করা যাবে যে আপনার ইমেইল এবং ডেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। 
  • আপনি যদি নতুন কোন ইমেইল সেবায় সুইচ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন তাহলে ইমেইলের ব্যাকআপ আপনাকে আপনার পুরনো ইমেইল সরবরাহ করার কাজ সহজ করে দেয়।

আপনার জিমেইল কিভাবে ডাউনলোড করবেন? 

গুগল আপনাকে আপনার জিমেইল মেসেজগুলো সেভ করার জন্য খুব সহজ একটি উপায় তৈরি করে রেখেছে। এর জন্য প্রথমে আপনাকে গুগল বা জিমেইল একাউন্টে লগইন করে আপনার প্রোফাইল আইকনে ক্লিক করতে হবে। সেখান থেকে ম্যানেজ ইউর গুগল একাউন্ট অপশনটি নির্বাচন করতে হবে। তারপর ডাটা এন্ড প্রাইভেসি অপশন সিলেক্ট করে নিচের দিকে স্ক্রল করে ডাউনলোড অর ডিলিট ইউর ডাটা অপশনে যেতে হবে। 

জিমেইল

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

ডাউনলোড ইওর ডাটা অপশনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনি ৫০ টিরও বেশি আলাদা আলাদা ডাটা থেকে নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন। এর মধ্য ক্যালেন্ডার, ক্রোম, কন্টাক্ট, ড্রাইভ, গুগল ফটোস এবং লোকেশন হিস্টোরির মতো ডাটা রয়েছে। এখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ অনুসারে যেকোনো একটি ডাটা সিলেক্ট করে তার রেকর্ড সহজেই সেভ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা যেহেতু আজকে ইমেইল নিয়ে কথা বলছি তাই এর স্বার্থে মেইলের পাশে থাকা বক্স নির্বাচন করুন।

এই বক্স নির্বাচন করার পরে নিচের দিকে স্ক্রল করে পরবর্তী ধাপে এগিয়ে যান। এখানে আপনি আপনার ডাউনলোডের ঠিকানা এবং ডাউনলোড করার ফ্রিকোয়েন্সি নির্বাচন করতে পারবেন। আপনি যদি একবারের জন্য করতে চান তাহলে এক্সপোর্ট ওয়ান অপশনটি নির্বাচন করুন। বাকি সেটিংস গুলো আপনি যেমন আছে তেমন রেখে ক্রিয়েট এক্সপোর্ট অপশনে ট্যাপ করুন। 

এরপর আপনাকে শুধুমাত্র অপেক্ষা করতে হবে। গুগল সকল এক্সপোর্ট হওয়ার প্রসেস নিয়ে কাজ করবে এবং যখন এটি তৈরি হয়ে যাবে তখন আপনাকে জানিয়ে দিবে। আপনি যদি ভায়া ইমেইল অপশন নির্বাচন করে থাকেন তাহলে আপনার ইনবক্সে এক্সপোর্ট করা জিমেইল গুলো থাকবে। এবার আপনি এটি আপনার কম্পিউটারে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন যাতে করে পরবর্তী যেকোনো সময় আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। 👉 জিমেইলের স্টোরেজ ফাঁকা করার সহজ কিছু উপায়

ডাউনলোড করা জিমেইল ইমেইলগুলো কিভাবে পড়তে হয়? 

আপনার ইমেইল মেসেজগুলো অন্য কোথাও সেভ করে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আপনি যদি সেই মেসেজগুলো পড়তেই না পারেন তাহলে আপনার লাভ কি হলো! কেননা আপনি এই ফাইলগুলোকে সরাসরি টেক্সট file হিসেবে পড়তে পারবেন না কারণ এগুলো .mbox ফাইল আকারে সেভ হয়ে থাকে। এজন্য আপনাকে মজিলা থান্ডারবার্ড নামে একটি ওপেন সোর্স ইমেইল ক্লাইন্ট ডাউনলোড করে নিতে হবে। 

প্রথমে আপনাকে আপনার পছন্দমত যে কোন ইমেইল একাউন্ট দিয়ে  লগ ইন করে নিতে হবে। আপনি লগইন করার পরে প্রথমে ফাইল অথবা মেনু অপশনে গিয়ে নিউ সেকশন থেকে ফিড একাউন্টে ক্লিক করতে হবে। এটিকে একটি নাম প্রদান করে সেটিং করা শেষ করুন। থান্ডারবার্ড আপনাকে অটোমেটিক্যালি নতুন ফিডে নিয়ে যাবে। এখান থেকে প্রথমে একাউন্ট সেটিংসে ক্লিক করে পরে লোকাল ডিরেক্টরি এর পাশে থাকা ব্রাউজ অপশনে ক্লিক করুন। এই অপশনটি আপনাকে .mbox ফাইল নির্বাচন করার সু্যোগ প্রদান করে। এবার আপনি আগে যেই ফোল্ডারটি তৈরি করেছিলেন সেটি নির্বাচন করে থান্ডারবার্ড রিস্টার্ট করুন। 

অ্যাপটি যখন পুনরায় চালু হবে তখন এটি আপনার ইমেল গুলো লোড করতে কিছু সময় নিবে। কিন্তু একবার যখন এটি হয়ে যাবে তখন আপনি আপনার ম্যাসেজ গুলো স্বাভাবিক ভাবেই ব্রাউজ করতে পারবেন। আপনি যদি আপনার জিমেইলের জায়গা বাঁচানোর জন্য আপনার ইনবক্সে থাকা মেইল গুলো ডিলিট করতে চান তাহলে প্রথমে সেই মেসেজ গুলোর একটি .mbox ফাইল বানিয়ে সেটি অন্য কোথাও সেভ করে রাখতে পারেন। 👉 জিমেইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস

জিমেইলে আমাদের অনেক দরকারি তথ্য থাকায় এটি সেভ করে রাখা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সীমিত স্টোরেজের কারণে একটা সময় অনেকেরই প্রতি মাসে টাকা খরচ করে ইমেইল সেভ করা লাগে। তবে আমাদের আজকের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি হয়তো খুব সহজেই এখন থেকে জিমেইল সেভ করে রাখতে পারবেন। জিমেইলের ডাটা ব্যাকআপ রাখার সম্পর্কিত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *