মোবাইল ও কম্পিউটারে বেঞ্চমার্ক টেস্ট কি? কিভাবে করে?

বর্তমান সময়ে আপনি যেকোনো ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কিংবা অন্য কোন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অথবা আপনার স্মার্টফোনই কেনেন না কেন আপনি অবশ্যই এটার পারফরম্যান্স যাতে সেরা হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। নতুন কোন ব্যবহারকারী কোন ডিভাইস কেনার আগে সেটি স্পেসিফিকেশন দেখেন কিংবা ইউজারদের থেকে মতামত নেন অথবা ইউটিউব বা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ডিভাইসটির রিভিউ দেখে নেন। আরো গভীর ডিটেইলস জানার জন্য তারা বেঞ্চমার্ক স্কোর চেক করেন। 

বর্তমান সময়ে মার্কেটে থাকা প্রায় প্রত্যেকটি ডিভাইস এবং কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের আলাদা আলাদা বেঞ্চমার্কিং স্কোর চার্ট রয়েছে। কিন্তু এই বেঞ্চমার্কিং স্কোর দিয়ে মূলত কি বোঝানো হয় সেটাই অনেকে জানে না। কিংবা এই বেঞ্চমার্কিং স্কোরের কোনো গুরুত্ব আছে কিনা সে ব্যাপারেও আমাদের সকলের অনেক সময় সঠিক ধারণা নাও থাকতে পারে। এজন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলে আমরা বেঞ্চমার্কিং স্কোর সম্পর্কে এবং এটি কিভাবে করতে হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বেঞ্চমার্ক কি?

এই বেঞ্চমার্ক বলতে মূলত একটি টেস্ট করাকে বোঝানো হয়। যেখানে কিছু নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করে একটি ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন পারফরম্যান্স পরিমাপ করা হয়। যেকোনো ধরনের কম্পিউটিং রিলেটেড জিনিসের উপরেই বেঞ্চমার্কিং করা যেতে পারে। এটি বলতে কোন ডিভাইস, হার্ডওয়্যার বা নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশের স্পিড অথবা পারফরম্যান্স এর তুলনা করাকে বোঝানো হয়। এছাড়া যে কোনো ধরনের সফটওয়্যার প্রোগ্রাম এবং ইন্টারনেট কানেকশনও বেঞ্চমার্কিং করা যেতে পারে। 

হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার বা স্মার্টফোন পারফরম্যান্স টেস্টিং এর ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়, যেটা একের পর এক ম্যাথ ব্যবহার করে পারফরমেন্স টেস্ট করে এবং একটি রেজাল্ট সামনে উপস্থাপন করে। কোন কম্পিউটারের বেঞ্চমার্কিং করার সময় তার সমস্ত হার্ডওয়্যার গুলোর পারফরম্যান্স চেক করা হয়। যেমন প্রসেসর বা জিপিইউ কতগুলো ইন্সট্রাকশন হ্যান্ডেল করতে পারছে কিংবা কত দ্রুত ডাটা এনক্রিপ্ট বা ডিক্রিপ্ট করতে পারছে অথবা র‍্যাম কত স্পিডে র‍্যানডম ডাটা গুলোকে ট্রান্সফার করতে পারছে।

এছাড়াও হার্ড ড্রাইভের রিড অথবা রাইট স্পিড কেমন পাওয়া যাচ্ছে কিংবা কমন সফটওয়্যার গুলো রান করাতে কম্পিউটার থেকে কেমন পারফরম্যান্স পাওয়া যাচ্ছে অথবা গ্রাফিক্স কার্ড কত ফ্রেম রেট দিতে সক্ষম হচ্ছে ইত্যাদি বিভিন্ন সিরিজ টেস্ট চালানো হয়। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও তেমন ফোনটির র‍্যাম, প্রসেসর, জিপিইউ, বিভিন্ন সেন্সর, ক্যামেরা ইত্যাদি যাবতীয় সব কিছুর একটি সফটওয়্যার নির্ভর টেস্ট চালানো হয় এবং সে অনুসারে একটি ফাইনাল স্কোর জেনারেট করা হয়। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে বেঞ্চমার্কিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি টার্ম। কেননা প্রায় প্রত্যেকটি ফোন রিভিউতেই স্কোরের সাথে আলাদা ফোনকে তুলনা করা হয়। এছাড়া আমরা নিজেরাও এই স্কোর দিয়ে আমাদের ফোনের সাথে বন্ধুদের ফোনের পারফরম্যান্স তুলনা করে থাকি। 

কেন বেঞ্চমার্ক করানো প্রয়োজন?

বেঞ্চমার্কিং থেকে যে কোন হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার বা যে কোনো কম্পিউটার ডিভাইসের একটি পারফরম্যান্স স্কোর পাওয়া যায়। আর এই স্কোর কাজে লাগিয়ে দুইটি ডিভাইস বা হার্ডওয়্যারকে তুলনা করা অনেক সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে কোন হার্ডওয়্যার তাদের বিজ্ঞাপনে কতটা পারফরম্যান্স প্রতিশ্রুতি করে আসলে কতটা পারফরম্যান্স দিচ্ছে সেটা যাচাই করা সম্ভব হয়ে ওঠে। যদিও কন্ডিশন ভেদে এর রেজাল্টে ১০০% সঠিক হওয়া সম্ভাবনা খুবই কম থাকে তারপরও একটি ধারণা নিশ্চিত ভাবে পাওয়া যায়। এর ফলে ডিভাইসটি বা হার্ডওয়্যারটি একটি নির্দিষ্ট কাজে কতটা ওয়ার্কলোড নিতে পারবে সে ব্যাপারেও ধারণা পাওয়া সম্ভব। 

উদাহরণ হিসেবে মনে করুন আপনি আপনার স্মার্টফোনে একটি হাই এন্ড ভিডিও গেম ইন্সটল করার পরিকল্পনা করছেন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে আপনার স্মার্টফোনে বেঞ্চমার্ক চালিয়ে দেখতে হবে গেমটি আপনার সিস্টেমে ঠিকঠাক ভাবে চলবে কিনা। মূলত বেঞ্চমার্ক সফটওয়্যারগুলো রিয়েল টাস্ক এর উপরে ভিত্তি করে প্রায় সমান পরিমাণের ওয়ার্ক লোড আপনার সিস্টেমের উপর চাপিয়ে দেয়। এই এক্সপ্রেস টেস্টিং থেকে ১০০% নিশ্চিত না হলেও অনেকটা সঠিক ধারণা পাওয়া যায় যে আপনার স্মার্টফোনে ওই হাই এন্ড গেমটি ঠিকমতো চলতে পারবে কিনা। 👉 ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় ও কেনার আগে করণীয়

কিভাবে বেঞ্চমার্কিং করবেন? 

অনলাইনে অনেক ফ্রি সফটওয়্যার টুল রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং স্মার্টফোন বেঞ্চমার্কিং করতে পারবেন। কম্পিউটারের জন্য বেস্ট টুল গুলোর মধ্যে একটি নোভাবেঞ্চ (Novabench) — এটি একটি ফ্রী টুল যা উইন্ডোজ এবং ম্যাক কম্পিউটারে সিপিইউ, জিপিইউ, র‍্যাম, হার্ড ড্রাইভ ইত্যাদি চেক করতে সক্ষম। সাথে এদের একটি রেজাল্ট পেজ আছে, যেখানে আপনার স্কোরের সাথে আলাদা কম্পিউটার স্কোর তুলনা করতে পারবেন। তাছাড়া আরো অনেক ফ্রী টুল রয়েছে, যেমনঃ 3DMark,  CINEBENCH,  Prime95,  PCMark,  Geekbench, এবং SiSoftware Sandra। আপনার ইন্টারনেট স্পীড বেঞ্চমার্কিং করতে Speedtest.net বা fast.com ব্যবহার করতে পারেন।

স্মার্টফোন বেঞ্চমার্কিং করার জন্য অনেক টুল প্লে-স্টোর বা অ্যাপ স্টোরে পেয়ে যাবেন। AnTuTu,  Quadrant Standard Edition,  Base mark OS II,  Geekbench 3,  NenaMark2,  Vellamo Mobile Benchmark,  3DMark Sling Shot Benchmark — ইত্যাদি ফ্রী অ্যাপ গুলো ব্যবহার করে আপনি বেঞ্চমার্কিং টেস্ট চালাতে পারেন। স্মার্টফোনে পিসির মতোই সবকিছুর পারফর্মেন্স চেক করা হয়, কিন্তু আরো আলাদা কিছু জিনিসও দেখা হয়, যেমন মেমোরি কার্ড রীড/রাইট স্পীড, এটি কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ টেস্টিং এর মতোই। এখানে মেমোরি কার্ডের স্পীড মেগাবাইট/সেকেন্ডে পরিমাপ করা হয়, যত ফাস্ট রেজাল্ট পাওয়া যায় তত ভালো পারফর্মেন্স ফোনটি থেকে আশা করা যেতে পারে। কিছু বেঞ্চমার্কিং অ্যাপ যেমন AnTuTu, ডিভাইসের ডাটাবেজ রীড/রাইট স্পীড চেক করে, এখানে কম স্কোর মানে ডিভাইসটির সম্পূর্ণ পারফর্মেন্সে কমতি দেখা দিতে পারে।

🔥🔥 গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন 🔥🔥

phone pc benchmark

স্ট্রেস টেস্টিং বনাম বেঞ্চমার্ক 

ট্রেস টেস্টিং আর বেঞ্চমার্ক অনেকটা একই জিনিস হলেও এদের টার্ম গুলো আলাদা হয়ে থাকে। বেঞ্চমার্কিং এ কোন হার্ডওয়্যার ডিভাইসের পারফরম্যান্স টেস্ট করে সেটা কত স্পিড দিতে সক্ষম তা পরিমাপ করা যায়। তবে স্ট্রেস টেস্টিং এ কোনো ডিভাইস বা হার্ডওয়্যার সম্পূর্ণ ব্রেক করার পূর্বে কতটা ওয়ার্কলোড নিতে সক্ষম তা নির্ণয় করা যাবে। দুইটি বিষয়েরই আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। যেমন আপনি একটি জিপিইউ বেঞ্চমার্কিং করে বুঝতে পারবেন কোন নির্দিষ্ট ভিডিও গেম সেখানে কতটা স্মুথ ভাবে চলতে পারবে। অন্যদিকে স্ট্রেস টেস্টিং করে বুঝতে পারবেন জিপিইউ টি সম্পূর্ণ কাজ করা বন্ধের আগে কতটুকু লোড নিতে সক্ষম। 

নতুন যেকোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন ফোন কিংবা ল্যাপটপ কেনার আগে তার বেঞ্চমার্ক রেজাল্ট দেখে নেওয়া সব সময় উত্তম। এতে করে আপনি সেই ডিভাইসটির সকল বিষয়ে অত্যন্ত বিশদভাবে জানতে পারবেন এবং বুঝতে পারবেন যে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ডিভাইসটি সঠিক কিনা। বেঞ্চমার্কিং সম্পর্কিত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা আমাদের কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিয়ে দিতে পারেন।

📌 পোস্টটি শেয়ার করুন! 🔥

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 8,543 other subscribers

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *