কম্পিউটার ব্যবহারকারী মাত্রই “ভাইরাস” শব্দটির সাথে পরিচিত। এক্ষেত্রে “ভাইরাস” মূলত ক্ষতিকর কম্পিউটার প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীর অজান্তেই তার কম্পিউটারে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন করে। সময়ের সাথে সাথে কম্পিউটার যেমন আধুনিক ও শক্তিশালী হচ্ছে, তেমনি ভাইরাসেরও বিবর্তন হয়েছে।
এসব ক্ষতিকর সফটওয়্যার থেকে রক্ষা পেতে তৈরি হয়েছে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এন্টিভাইরাসও এক ধরনের প্রোগ্রাম যাতে ভাইরাসের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া থাকে। এর ফলে এন্টিভাইরাসগুলো ভাইরাস খুঁজে বের করে নিষ্ক্রিয় করে দেয়- অন্তত চেষ্টা করে।
ব্যবহারকারী বেশি হওয়ার কারণে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ভাইরাস আক্রমণের জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ন একটি প্ল্যাটফর্ম। মাইক্রোসফট তাদের উইন্ডোজ ওএসের জন্য তাদের নিজস্ব এন্টিভাইরাস এবং সিকিউরিটি টুল “উইন্ডোজ সিকিউরিটি এসেনশিয়ালস” ডেভেলপ করেছিল। এটি খুব একটা ভালো কাজ না করলেও উইন্ডোজ ১০ এর জন্য তারা উইন্ডোজ ডিফেন্ডার নামক এন্টিভাইরাস ডিফল্টভাবে দিয়ে দিচ্ছে। এটা যথেষ্ট আধুনিক ও কার্যকর। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি উইন্ডোজ পিসির জন্য ফ্রি এবং পেইড এন্টিভাইরাস নিয়ে এসেছে।
একাধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা কি ভালো নাকি ক্ষতিকর?
যেহেতু এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলো ম্যালওয়্যার (ক্ষতিকর সফটওয়্যার) বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় তাই অনেক নতুন কম্পিউটার ব্যবহারকারীই ভাবেন তাহলে একের অধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহার করলে হয়তো কম্পিউটারকে একদম শতভাগ সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা না। অনেক ক্ষেত্রেই এটা উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে।
আপনি যদি জেনুইন উইন্ডোজ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার আপনাকে ভালোই সুরক্ষা দিবে। আপনি যদি রেগুলার উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের ভাইরাস ডেফিনিশন আপডেট রাখেন তাহলে আপনি আপনার পিসি নিয়ে মোটামুটি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। যেহেতু বর্তমানে উইন্ডোজ এর ডিফল্ট এন্টিভাইরাসই যথেষ্ট শক্তিশালী তাই অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে, সেক্ষেত্রে আপনার আর কোনো থার্ড-পার্টি এক বা একাধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
বরং আপনি একের অধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহার করলে নিচের সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন।
এরা একে অপরকে ‘ভাইরাস’ মনে করতে পারে
এন্টিভাইরাসগুলো আপনার পিসিকে চোখে চোখে রাখে বলে সারাক্ষণই এরা আপনার সিস্টেম বিষয়ক ইনফরমেশন মনিটর করতে থাকে। যেহেতু এরা ভাইরাস সনাক্ত ও ধ্বংস করার কাজ করে তাই এসব এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলো একে অপরের আচরণও অনেকটা ভাইরাসের মতই মনে করতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনার একটি এন্টিভাইরাসকে অন্য এন্টিভাইরাসটি ‘ভাইরাস’ হিসেবে গণ্য করতে পারে এবং একে অন্যের পেছনে লাগতে পারে। ফলে বারবার আপনার কাছে নোটিফিকেশন আসবে এবং স্বাভাবিক কম্পিউটারের কাজকর্ম ব্যহত হবে। অনেক সময় এটি পিসিকে খুব বাজে ভাবে হ্যাং করে দিতে পারে যা অত্যন্ত বিব্রতকর।
ভাইরাস নিয়ে অযথা কাড়াকাড়ি করতে পারে
মনে করুন, আপনি দুটি এন্টিভাইরাস অ্যাপ ব্যবহার করছেন। এক্ষেত্রে অন্য যে সমস্যা হতে পারে সেটি হলো, পিসিতে কোনো ভাইরাস এলে ঐ দুটি এন্টিভাইরাসই সেই ভাইরাসকে সনাক্ত করবে। আচ্ছা, এ পর্যন্ত খুবই ভালো কথা! কিন্তু চিন্তার ব্যপার হলো, কোনো একটি এন্টিভাইরাস যদি আগে সেই ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে দেয় তাহলে অন্য এন্টিভাইরাসটি তা সাথে সাথে জানবে না। সেটা আগে সনাক্ত করা ভাইরাসটি এখনো আছে বলে মনে করবে এবং আপনাকে ওয়ার্নিং নোটিফিকেশন দিবে।
তার ওপর পুনরায় স্ক্যান করতে ও ভাইরাসটি রিমুভ করতে গিয়েও ২য় এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামটি বেকায়দায় পড়বে, কারণ তার ডেটাবেজে এইমাত্র আসা ভাইরাসটির কোনো ট্রেস সে পাচ্ছেনা, আবার নিজেও এ ব্যাপারে কোনো কূলকিনারা করতে পারবেনা! এ থেকেও পিসিতে একটা অস্থিতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেবে
এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামগুলো সারাক্ষণ চালু থাকে বলে আর কিছু না হোক, এরা অন্তত আপনার পিসির র্যামের বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে রাখবে। এছাড়া সিপিইউ ব্যবহারও বাড়িয়ে দেয়। ফলে পিসি স্বাভাবিকের চেয়ে স্লো মনে হবে। এছাড়া ল্যাপটপের ক্ষেত্রে দ্রুত চার্জ ফুরাবে।
উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে করণীয়
উইন্ডোজ ১০ হচ্ছে মাইক্রোসফটের এ পর্যন্ত সবচেয়ে আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম যার মধ্যে শক্তিশালী এন্টিভাইরাস ফিচার দেয়াই আছে। একটু আগেই যেমনটি বলেছি, উইন্ডোজ ডিফেন্ডার নিয়মিত আপডেটেড রাখলে অন্য কোনো (এমনকি প্রিমিয়াম) এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইনস্টল না করেও আপনি নিরাপদে থাকতে পারবেন।
কিন্তু একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে অনেক থার্ড-পার্টি পেইড এন্টিভাইরাস আছে যেগুলো উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের চেয়ে বেশি ফিচার অফার করে থাকে।
তাই আপনি যদি উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের পাশাপাশি অন্য কোনো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে চান, তাহলে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারের কিছু ফাংশন বন্ধ করে রাখতে হবে। অবশ্য, ২য় কোনো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম এক্টিভেট করলে উইন্ডোজ নিজেই উইন্ডোজ ডিফেন্ডার/উইন্ডোজ সিক্যুরিটি অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। সেক্ষেত্রে এটি আপনার ২য় এন্টিভাইরাসের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াবেনা।
সহজ কথা, একই সময়ে একটির বেশি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করা ঠিক না। মাইক্রোসফট নিজেও একই সময়ে একটির বেশি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করা সমর্থন করেনা। বিভিন্ন এন্টিভাইরাস নির্মাতা কোম্পানি যেমন ক্যাসপারস্কি, সিমানটেক এরাও একই সময়ে একাধিক এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক মত দিয়েছে।
তাই, একই সাথে একের অধিক এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার না করাই উচিত।
এ ব্যাপারে আপনার কী মতামত?
বোনাস
- এনক্রিপশন কী? এটা কী কাজে লাগে?
- সেরা ৫ ফ্রি এন্টিভাইরাস
- ল্যাপটপ নাকি ডেস্কটপ? কোনটি কিনলে ভাল হবে?
- উইন্ডোজ পিসি নাকি অ্যাপলের ম্যাক? কোনটি কিনবেন?
- বাংলাটেক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
- বাংলাটেক ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন।
- বাংলাটেক ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
- গুগল নিউজে বাংলাটেক সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
- বাংলাটেক সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে।
- প্রযুক্তির সব তথ্য জানতে ভিজিট করুন www.banglatech24.com সাইট।